somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আচ্ছা। এই তাহলে সম্পর্ক।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. মৃত্যুঞ্জয় মিঠু আচার্য্য, মাসুদ গ্রুপের এলইডি টেলিভিশনের মার্কেটিং ম্যানেজার। অনেক দিন ধরেই এই কোম্পানির জন্য নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বাড়িতে আছে তার ১০ বছরের ছেলে। স্ত্রী চৈতালি গত হয়েছে ৫ বছর হল। পরে আর বিয়ে করা হয় নি। নিজেই ছেলেকে মানুষ করছে। অফিসে যখন থাকে, পিসির কাছে রেখে আসে। তার সব স্বপ্ন ছেলেকে নিয়ে। সারাদিন কাজ শেষে যখন বাড়ী ফিরে ছেলের মুখ দেখে, কোথায় যে সারা দিনের ক্লান্তি চলে যায়। নিয়মিত ছেলেকে যত্ন করেন। একদিন ছেলে তার অনেক অনেক বড় হবে। ছেলের নাম রেখেছেন নিজের নামের সাথে মিল করে। মৃত্যুঞ্জয় টিটু আচার্য্য। ছেলেকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন।

২. শারমান আর অরনি খুব ভাল বন্ধু। এক সাথে সেই গবর্মেন্ট বয়েজ হাই স্কুল থেকে বন্ধুত্ব। তবে মজার বিষয় হল। তার দুই জন দুই মেরুর বাসিন্দা। কোন বিষয়েই তাদের কোন মিল নাই।

শারমান ধর্ম কর্মের মাঝে নাই। অরনি আবার ধর্মীয় নীতি মেনে চলার চেষ্টা করে।

শারমান অল্পতেই রেগে যায়। অরনিকে হাজার খোঁচালেও রাগে না।

শারমান মেধাবী ছাত্র। অরনি মিডিওকর ছাত্র।

শারমান প্রেম করে বিয়ে করেছে। অরনি এখনো সিঙ্গেল।

শারমান মাঝে মাঝে লাল পানি খায়। অরনি জীবনেও এর ধারের কাছে যায় নাই। ব্লা ব্লা ব্লা।

নানান বিষয় নিয়ে এই দুই জনের মধ্যে ঝগড়া হয়, হাতাহাতি হয়। পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশী গরম হয় যখন অরনি শারমান কে ধর্মের কথা বলে। ধর্মের কথা শুনলেই শারমান কেন জানি গা জ্বলতে থাকে। অরনিকে অনেক মানা করার পরও সে সুযোগ পেলেই
শারমান কে ভাল হবার জন্য বলে। লাল পানি খাওয়া বাদ দিতে বলে। এসব শুনে শারমান অসন্তুষ্ট হয়। সে চলতে চায় "দুনিয়াটা মস্ত বড়। খাও দাও মজা কর স্টাইলে।" এই অরনি প্রতিবারই বাগড়া দেয়। ভাবে এই বদ পোলার সাথে সম্পর্ক এখনি শেষ। এই সব হুজুর মার্কা ফ্রেন্ড তার দরকার নাই। তার দরকার আধুনিক বন্ধু। এত কিছুর পরও তাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরে না। বন্ধুত্ব টিকে আছে কোন এক অজানা কারনে। শারমান বা অরনি কেউই এর কারন খুজে পায় না।

৩. এশার পর টিপটপ মসজিদে তালিম হয়। নামায শেষ করে আরনি আজ ঝিম মেরে তালিম শুনছি। একটা মজার হাদিস পড়া হল। মূল থিমটা অনেক টা এরকম।

মানুষকে সন্তুষ্ট করার জন্য, কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে। তবে আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হন। এবং যাদের কে সন্তুষ্ট করার জন্য আল্লাহ কে অসন্তুষ্ট করেছিল। আল্লাহ তাদের অন্তরে (সেই সব সন্তুষ্ট হওয়া মানুষের মনে) সেই ব্যাক্তির প্রতি অসন্তুষ্টি সৃষ্টি করেন।

আবার আল্লাহ কে সন্তুষ্ট করার জন্য, যদি কোন ব্যক্তি মানুষকে অসন্তুষ্ট করে। তবে আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হন। এবং যাদের কে অসন্তুষ্ট করার করে আল্লাহ কে সন্তুষ্ট করেছিল, আল্লাহ তাদের অন্তরে (সেই সব অসন্তুষ্ট হওয়া মানুষের মনে) পরবর্তীতে সেই ব্যাক্তির প্রতি সন্তুষ্টি সৃষ্টি করেন।

অরনির কাছ এখন বিষয়টা পরিষ্কার হল। কেন শারমান প্রতিবার তার উপর রেগে অসন্তুষ্ট হবার পরও তাকে সরি টরি বলে সম্পর্ক ভাল করে ফেলে। হু আর ভয় পায় কে। ভাল কথা বলেই যাবার সিদ্ধান্ত নিল অরনি। মানুষ তার কথা শুনে অসন্তুষ্ট হলেও, সে এখন জেনে গিয়েছে, আল্লাহ অসন্তুষ্ট হওয়া মন সন্তুষ্টি দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিবেন।

৪. শারমান আজ খানিক টা লাল পানি খেয়েছে। মনে হয় একটু বেশীই গিলেছে। সোডিয়াম লাইট হলুদ না দেখে নীল নীল দেখছে। লে বাবা। রাস্তা, ফুট ওভার ব্রিজ, ফুটপাত সব এক কাতারে মনে হচ্ছে। গাড়ীর ব্যলেন্স রাখতেও কষ্ট হচ্ছে। কোথাও পার্ক করে বমি করা দরকার। এভাবে বাসা পর্যন্ত যাওয়া যাবে না। ভাবতে ভাবতে বনানী এলাকার এক গলির ভিতর শাঁ করে তার গাড়ী ঢুকিয়ে দিল। কি দিয়ে কি যে হল। গাড়ী ফুটপাতে দাঁড়ানো এক লোকের উপর উঠে গেল। না বাবা এই সব আর খাওয়া যাবে না। বন্ধু অরনির কথা মত ভাল হয়ে যেতে হবে। এ সব ভাবতে ভাবতেই গাড়ী নিয়ে সেই লোকের উপর দিয়েই আবার টান। হুস হুস করে গাড়ী যায়। পিছনে পড়ে থাকে, নাম না জানা এক পথচারীর চ্যপ্টা লাশ।

৫. অক্টোবর ৩০, ২০১৪ রাত ৭ টা ৮ মিনিটে প্রথম আলোর সংবাদ। "বনানীতে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় প্রাণ গেল পথচারীর"। নাম তার মৃত্যুঞ্জয় মিঠু আচার্য্য। মৃত্যুঞ্জযয়ের স্বপ্ন মৃত্যুঞ্জয় হয়ে বেড়ে উঠুক তার ছেলের মধ্য দিয়ে। যে এখন গভীর জলে পড়ে গিয়েছে।
খবরের লিংকঃ http://goo.gl/MqqAaU


সম্পর্কঃ পৃথিবীর সব ঘটনাই একটা আরেকটার সাথে সম্পর্কিত। কারো কারো ভাল কাজের ছোট চেষ্টা বদলে দিতে পারে অনেকের জীবন। অরনির কথা শুনে যদি শারমান আজ ভাল থাকতো তবে আজ মৃত্যুঞ্জযয় তার স্বপ্ন পূরন করে যেতে পারতো।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:২৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×