somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খরা ও মরুময়তার হুমকিতে বাংলাদেশ

২৯ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খরা ও মরুময়তার হুমকিতে বাংলাদেশ
আমিনুল ইসলাম সুজন

জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বব্যাপী। দেখা দিচ্ছে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ঝড়, জলোচ্ছাস, বন্যা, সাইক্লোন, টর্ণেডো। বেড়ে যাচ্ছে তাপমাত্রা এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে বাতাস হয়ে পড়ছে শুস্ক, কমছে ভূ-উপরিস্থ সাধু পানির আধার বা জলাশয়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বরং বালাদেশে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি।

ইতোমধ্যে দেশে অনেক জলাশয় ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার কিংবা ড্রেজিং এর অভাবে নদীর নাব্যতা ক্রমশ কমে গিয়ে অনেক নদী বৃষ্টির পানি ধারণ ক্ষমতা হারিয়েছে, কোথাও কোথাও নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। যে কারণে বর্ষায় প্রায়শই বন্যা দেখা যায়। আবার এই একই কারণে, অর্থাৎ নদী নাব্যতা হারিয়ে বিলীন হওয়ায় খরার প্রকোপও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত, রাজশাহী-নওগাঁসহ বরেন্দ্র অঞ্চল শুষ্ক মৌসুমে প্রায় প্রতিবছরই খরায় আক্রান্ত হচ্ছে।

অধিক তাপমাত্রার পাশাপাশি নাব্যতা হারিয়ে নদী শুকিয়ে বিলীন হয়েছে, কিংবা মরা খালে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে দূষণ ও দখলের শিকার হয়েও ঢাকাসহ অন্যান্য শহরের কাছাকাছি নদীগুলো দখল-দূষণে জর্জরিত। শহরের জলাশয়গুলোর অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। এ চিত্র ঢাকায় যেমন, চট্টগ্রাম বা অন্যান্য শহরেও তেমনিপ্রায়।

আরেকটি কারণে বাংলাদেশের নদী-খালগুলো শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। পদ্মা, তিস্ত, যমুনা নদীসহ শতাধিক বৃহৎ নদী ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। কিন্তু সীমান্তের ওপারে ভারত নদীর উপর বাঁধ দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে দেয়। বাংলাদেশের প্রায় সব বড় নদী যেহেতু ভারত হয়ে এসেছে তাই শুস্ক মৌসুমে এগুলোর উপর বাঁধ দিয়ে পানি আটকালে বাংলাদেশের কৃষির উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। পানি প্রবাহমান ও প্রাকৃতিক উৎস। সে পানির গতিকে অন্যায়ভাবে ভারত আটকে রাখে। দুর্বল প্রতিবেশী হিসাবেই ভারত এ অন্যায় বছরের পর বছর করে যাচ্ছে। কোন সরকারই এ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করতে পারেনি। এখানে ভারত সরকারেরও দৈন্যতা লক্ষ্যনীয়। ভারতের বাণিজ্যই মুখ্য বলে অনেকে মনে করেন। কারণ বাংলাদেশের কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা ভারতের উপর আরও বেশি নির্ভরশীল হব। আর যত বেশি নির্ভরশীল হব তত বেশি সুবিধা ভারত আদায় করে নেবে।

পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে ভারত বাঁধ উন্মুক্ত করে দেয়ায় বৃষ্টির পানিও বাংলাদেশে চলে আসে। তখন আবার সেটা বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি এ সময় পানির সঙ্গে পলি এসে নদীর নাব্যতাও ক্রমান্বয়ে কমেছে। যে কারণে সুবিশাল পদ্মা একদিকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বর্ষায় ভারত থেকে পানি আসার গতি নতুন নতুন গতিপথ তৈরি করে ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন করছে। ভারত সরকার নদীর উপর অন্যায়ভাবে বাঁধ দিয়ে প্রকৃতি তথা নদীর স্বাভাবিক গতি রুখে দিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি সমুদ্র বিজয় করেছে। আনন্দের কথা। কিন্তু সমুদ্রের চাইতে নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা জয় অতীব জরুরি। কিন্তু এ বিষয়ে যাদের অতিতৎপর থাকা উচিত, প্রায়শই তাদের নীরবত লক্ষ্য করা যায়।

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, “দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার”। বলা যায়, ভারত-বাংলাদেশ এর সম্পর্কে প্রবাদটি প্রযোজ্য। দুর্বল প্রতিবেশী হওয়ায় ভারত অনেক অন্যায়ভাবে নদীর পানি আটকে দিচ্ছে। তারউপর বৃহত্তর রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের খরা বৃদ্ধির পর ভারত এখন সিলেট অঞ্চলেও খরা ও মরুময়তার হুমকিতে পড়েছে। যদি ভারত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করে তবে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে পানি সঙ্কট দেখা দিবে, যা প্রকারান্তরে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোকে মরুময়তার দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ থেকে ভারতকে বিরত রাখতে কূটনীতিক ও আইনগত, সবভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।

ভারত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। গবেষক, কৃষিবিদ, পরিবেশবিদসহ বাংলাদেশের প্রায় সকল মানুষই এই টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিপক্ষে। কিন্তু কতিপয় সুবিধাভোগী বলা শুরু করেছে, টিপাইমুখ বাঁধ হলে বাংলাদেশের নাকি কোন ক্ষতি হবে না। এসব সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে রাখা উচিত। কারণ, বাধা সত্বেও ভারত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের দিকেই এগুচ্ছে।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, যদি টিপাইমুখ বাঁধ হয় তবে ঢাকার কাছাকাছি এলাকা পর্যন্ত নদীর পানি লবনাক্ত হয়ে পড়বে। যা নোয়াখালী, লক্ষীপুর, কুমিল্লাসহ অনেক জেলার কৃষি ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই যে কোন মূল্যে টিপাইমুখ প্রতিহত করতে হবে।

১৭ জুন আন্তর্জাতিক খরা ও মরুময়তা দিবস। ১৯৯৪ সালের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দিবসটি ঘোষিত হয় এবং ১৯৯৫ সাল থেকে দিবসটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়ে আসছে। মূলত, খরা ও মরুময়তা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন এবং খরা ও মরুময়তা প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণে সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াসে দিবসটি উদযাপিত হয়। এ বছর মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার কথা বলা হয়েছে। প্রতিপাদ্য হিসাবে বলা হয়েছে; “মানুষের জীবনের জন্য মাটির স্বাস্থ্য: ভূমির প্রাকৃতিক নিশ্চিত করি”।

এতে আরও বলা হয়, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা বাড়ছে। আগামী ২০ বছরে খাদ্যচাহিদা ৫০ভাগ বাড়বে, জ্বালানি চাহিদা ৪০ভাগ এবং পানির চাহিদা ৩৫ভাগ বাড়বে। বর্তমান সম্পদ বিবেচনায় এসব অতিরিক্ত চাহিদার যোগান দেয়া কঠিন। তাই যে কোন ভাবেই কৃষি জমি ধ্বংস রোধ করাকে গুরুত্ব দেয়ার আহবান জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘ এ দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালনের আহবান জানালেও বাংলাদেশে দিবসটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন হচ্ছে না। অথচ অনেক গুরুত্বহীন দিবসও সাড়ম্বরে পালিত হতে দেখা যায়। বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় বাংলাদেশে দিবসটির তাৎপর্যময় উদযাপন প্রত্যাশা করি।

আন্তর্জাতিক খরা ও মরুময়তা দিবস বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করুক। খরা ও মরুময়তা প্রতিরোধসহ কৃষিজমি রক্ষায় ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র যার যার অবস্থান থেকে সক্রিয় হোকÑএ প্রত্যাশা থাকল।


৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×