somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চৈত্র সংক্রান্তির দিন এলো

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


‘জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে যাক, মুছে যাক গ্লানি’-- আজ ৩০ চৈত্র ১৪১৯। বাংলা সনের শেষদিন। শেষদিন ঋতুরাজ বসন্তেরও। আজ চৈত্র সংক্রান্তি। বাংলা বছরের শেষ দিন হওয়ায় চৈত্র মাসের শেষ এ দিনটিকে চৈত্র সংক্রান্তি বলা হয়।

বাংলা বছরের হিসাব চলে সূর্যের সাথে সাথে। সৌরবছর আমাদের। এখানে সময়ের শেষ বা শুরু বলে কিছু নেই। বারো মাসের বছরের শেষ মাস চৈত্রে’ও বছরের ‘শেষ’ হয় না। চৈত্রে ‘সংক্রান্তি’ হয় আগামী বছরের সাথে। চৈত্র সংক্রান্তি।

সংক্রান্তি মানে এক ক্রান্তি থেকে- এক কিনারা থেকে আরে কিনারায় যাওয়া। ক্রান্তির সঞ্চার। সাঁতার। মহাকালের অনাদি ও অশেষের মাঝে ঋতুর বদল করতে করতে সূর্যের ও আরো অনেক গ্রহ-উপগ্রহ-গ্রহাণু-উল্কার সাথে সাথে সাঁতরে চলা। এ এক চক্রের মতো, চরকার মতো, সূর্য সাঁতরে চলে, ঋতুরা ফিরে ফিরে আসে। ঘুরে ঘুরে ফিরে আসে সময়। নতুন নাই, পুরাতনও নাই।

উপমহাদেশের সনাতন প্রথা অনুসারী মানুষেরা এই দিনটিকে খুবই পুণ্যের দিন বলে মনে করেন। সনাতন পঞ্জিকা মতে দিনটিকে গণ্য করা হয় মহাবিষুব সংক্রান্তি। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী এই দিনটিকে নানা উৎসবের মাধ্যমে পালন করে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য বিজু ও বৈসাবি উৎসব।


সাধারণত চৈত্রসংক্রান্তির আলোচনাতে মেলা, গাজন, পুঁজার কথা বলা হয়। কিন্তু এর বাইরে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাথে জড়িত আছে চৈত্র সংক্রান্তি। যা শুধু উৎসব নয়, এক ধরণের কথা চলাচলি। নিজের ও প্রকৃতির খোঁজ নেয়া। এই খোঁজ নেয়ার দায়িত্ব পড়ে নারীর ওপর। যেটা কৃষিজীবি মানুষের প্রজ্ঞার দারুণ প্রকাশ।

বাংলাপিডিয়া সূত্রে জানা যায় , অতীতে চৈত্র সংক্রান্তি মেলা উপলক্ষে গ্রামাঞ্চলের গৃহস্থরা নাতি-নাতনিসহ মেয়েজামাইকে সমাদর করে বাড়ি নিয়ে আসত। গৃহস্থরা সবাইকে নতুন জামাকাপড় দিত এবং উন্নতমানের খাওয়া-দাওয়ারও আয়োজন করত। মেলার কয়েকদিন এভাবে তারা সবাই মিলে আনন্দ উপভোগ করত। বর্তমানে শহুরে সভ্যতার ছোঁয়া লাগায় আবহমান গ্রামবাংলার সেই আনন্দমুখর পরিবেশ আর আগের মতো নেই। তবে এখন শহরাঞ্চলের নগর সংস্কৃতির আমেজে চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব বা মেলা বসে, যা এক সর্বজনীন মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।

সনাতন মতে বাংলা মাসের শেষ দিনে শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি ক্রিয়াকর্মকে পুণ্যের কাজ বলা মনে করা হয়।

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে উদ্বিগ্ন কৃষককুল নিজেদের বাঁচার তাগিদে বর্ষার আগমন দ্রুত হোক, এই প্রণতি জানাতেই পুরো চৈত্র মাসজুড়ে উৎসবের মধ্যে সূর্যের কৃপা প্রার্থনা করে। এখন সূর্য তার রুদ্ররূপে প্রতিভাত। তাই চৈত্র সংক্রান্তিতে নানা উপাচারের নৈবেদ্য দিয়ে তাকে তুষ্ট করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

চৈত্র সংক্রান্তিতে দেশজুড়ে এখন চলছে নানা ধরনের মেলা, উৎসব। হালখাতার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাজানো, লাঠিখেলা, গান, আবৃত্তি, সঙযাত্রা, রায়বেশে নৃত্য, শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠান আর ভূত তাড়ানোর মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে চৈত্র সংক্রান্তি।

নতুন বছরকে বরণের প্রস্তুতির পাশাপাশি শেষ দিনটিতে থাকে বর্ষবিদায়ের নানা আয়োজন। চৈত্র সংক্রান্তিতে পুরান ঢাকায় ওঝা সেজে হাতে ঝাড়ূ নিয়ে বিশেষ ভঙ্গিমায় ছোট শিশুরা ভূত তাড়ানোর খেলায় মেতে ওঠে।


দেশের হিন্দুপ্রধান অঞ্চলে যুগ যুগ ধরে চৈত্র সংক্রান্তির নানা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে বারোয়ারি মেলা অন্যতম। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, দিনাজপুরের ফুলছড়িঘাট এলাকা, কুমিল্লার লাঙ্গলকোট ও ঢাকার সাভার, ধামরাইয়ে চৈত্র সংক্রান্তির মেলা বসে।

চৈত্র সংক্রান্তির দিন সন্ন্যাসীরা কিংবা সাধারণ লোকের কারও কারও শূলফোঁড়া, বাণফোঁড়া ও বড়শিগাঁথা অবস্থায় চড়কগাছে ঘোরাসহ প্রভৃতি ‘ভয়ঙ্কর’ ও দৈহিক কলাকৌশল দেখা যায়।

রাজধানী ঢাকাতেও নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে চৈত্র সংক্রান্তি।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×