somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ আলী আকন্দ
আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

বিংশ শতাব্দীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র -- ত্রয়োদশ পর্ব

০৩ রা মে, ২০১৭ রাত ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ন্যায়সঙ্গত আচরণ 'Fair Deal'

আমেরিকার ৩৩ তম প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস. ট্রুম্যান আমেরিকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনকল্যাণের জন্য ১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন কংগ্রেসে ২১ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এই প্রস্তাবলিকে ফেয়ার ডিল বলে। কংগ্রেস এরমধ্যে অনেকগুলি প্রস্তাবকে বাস্তবায়নের জন্য আইন প্রণয়ন করে। এতে আমেরিকানদের অর্থনৈতিক জীবনে অনেক মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব হলো, বেকারদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করা; সর্বনিম্ন বেতন উল্ল্যেখযোগ্য পরিমানে বৃদ্ধি করা; পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রন করা যাতে জীবনযাত্রার খরচ কমের দিকে রাখা যায়; যুদ্ধের সময় যেসমস্ত সংস্থা গঠন করা হয়েছিল বা যেসমস্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছিল সেগুলি পর্যায়ক্রমে তুলে নেয়া; সব বেকারের কর্মসংস্থানের জন্য আইন প্রণয়ন করা; কর্মচারীদের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণের জন্য আইন প্রণয়ন করা; যাতে সুষ্ঠু শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক বজায় থাকে এই মর্মে আইন করা; যুদ্ধ ফেরত সৈনিকদের জন্য কর্মসংস্থান করা এবং তাদের ভাতা বৃদ্ধি করা; কৃষকদের সাহায্য সহযোগিতা বৃদ্ধি করা; সব নাগরিকের জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করা; বিদ্যমান কর কাঠামোকে পুনর্বিন্যাস করা; সরকারের অব্যবহৃত জমি বন্দোবস্ত দেয়া; ক্ষদ্র ব্যবসায়ীদের সহায়তা করা; উন্নয়নমূলক কাজে সরকারি ব্যয় বাড়ান; প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ও উত্তোলন বৃদ্ধি করা; বিচারক, জনপ্রতিনিধি সহ সকল সরকারি কমকর্তাদের বেতন-ভাতা উল্লেখযোগ্য হরে বাড়ানো ইত্যাদি।

কোরিয়ান যুদ্ধ

১৯১০ সাল থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত কোরিয়া জাপানের অধীনে ছিল। ১৯৪৫ সালের অগাস্ট মাসে সোভিয়েত ইউনিয়ন জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চুক্তি মোতাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ৩৮তম অক্ষাংশ রেখার উত্তরে কোরিয়ার অংশ জাপানের কাছ থেকে মুক্ত করে, যে অংশকে এখন উত্তর কোরিয়া বলা হয়। আর যুক্তরাষ্ট্র ৩৮তম অক্ষাংশ রেখার দক্ষিণের অংশে অবস্থান নেয়, যে অংশকে এখন দক্ষিণ কোরিয়া বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ু-যুদ্ধ বা শীতল-যুদ্ধের (Cold War) প্রভাবে ১৯৪৮ সালে কোরিয়া ৩৮তম অক্ষাংশ রেখা বরাবর দুইটি পৃথক রাষ্ট্রে ভাগ হয়ে যায়, উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া। দুই কোরিয়াতেই পৃথক পৃথক সরকার গঠিত হয়। উভয় কোরিয়ান সরকারই নিজেদেরকে একমাত্র বৈধ সরকার বলে সমগ্র কোরিয়ার উপরই সার্বভৌমত্ব দাবি করে এবং দুই দেশের মধ্যে কোনো সীমানা অস্বীকার করে। ১৯৫০ সালের ২৫ জুন উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের সহায়তায় দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করলে দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ওই দিনই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এক প্রস্তাবে উত্তর কোরিয়ার আচরণকে আক্রমণ হিসাবে গণ্য করে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহবান করে। ২৭ জুন অপর আরেক প্রস্তাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কোরিয়াতে জাতিসংঘ বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ২১টি দেশ জাতিসংঘ বাহিনীতে তাদের সৈন্য প্রেরণ করে, এরমধ্যে শতকরা ৮৮ ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য ছিল।

প্রথম দুই মাসে উত্তর কোরিয়া বিজয় অর্জন করে। তারা প্রায় সমগ্র দক্ষিণ কোরিয়া দখল করে নেয়, শুধুমাত্র সর্ব দক্ষিণের পুসান শহর ছাড়া। ১৯৫০ সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ বাহিনী ইনচন অঞ্চল দিয়ে এক প্রচন্ড আক্রমন চালিয়ে উত্তর কোরিয়ার বাহিনীকে দুই ভাগে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। যেসমস্ত উত্তর কোরিয়ার সৈন্য গ্রেফতার এড়াতে পেরেছিলো তাদের কিছু সংখ্যক পশ্চাদপসরণ করে উত্তরে চীন সীমান্তের দিকে চলে যায়, আর কিছু সংখ্যক পাহাড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। পাল্টা অভিযানে জাতিসংঘ বাহিনী সমগ্র উত্তর কোরিয়া দখল করে চীনা সীমান্তের কাছে ইয়ালু নদীর তীর পর্যন্ত চলে আসে। এই সময়ে ১৯৫০ সালের অক্টোবর মাসে চীনা বাহিনী ইয়ালু নদী অতিক্রম করে কোরিয়ায় প্রবেশ করে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। চীনা বাহিনীর আক্রমণে জাতিসংঘ বাহিনী ১৯৫১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ক্রমাগত পশ্চাদপসরণ করতে করতে দক্ষিণ দিকে সরে আসতে থাকে। অধিকাংশ এলাকা জাতিসংঘ বাহিনীর হাতছাড়া হয়ে যায়।

কোরিয়া যুদ্ধের ভাগ্য ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো একবার উত্তর কোরিয়ার দিকে আরেকবার দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে দোলাতে থাকে। এই যুদ্ধে সিউলের দখল চার- চার বার হাত বদল হয়। অবশেষে ১৯৫৩ সালের ২৭ জুলাই একটা যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় দুই কোরিয়ার মাঝে একটা অসামরিকীকৃত অঞ্চল (Korean Demilitarized Zone) গঠন করা হয়, যা দুই কোরিয়াকে দুই দিকে ভাগ করে রাখবে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও দুই কোরিয়ার মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি, ফলে কার্যতঃ দুই কোরিয়ার মধ্যে এখনো যুদ্ধাবস্থা বজায় আছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৭ রাত ১০:৪৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×