ভুটান, চীন এবং ইন্ডিয়া এই তিন দেশের সীমান্ত এলাকা ডোকলামে একটা নির্মাণ কাজকে কেন্দ্র করে চীন এবং ইন্ডিয়ার মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। হুমকি ধমকি। সৈন্য সমাবেশ।
প্রশ্ন হচ্ছে "ইন্ডিয়া কি চীনের সাথে যুদ্ধে যাবে?"
উত্তর হচ্ছে "ইন্ডিয়া চীনের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে না।"
চীনের সাথে ইন্ডিয়ার যুদ্ধে না যাওয়ার কারণ, সৈন্য সংখ্যা বা অস্ত্রশস্ত্র নয়। অর্থাৎ কৌশলগত কারণে নয়। আরো পরিষ্কার ভাবে বললে বলতে হয়, চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে না যাওয়ার পিছনের কারণ সামরিক শক্তি বা দুর্বলতা নয়। যুদ্ধে না যাওয়ার মূল কারণ, বর্তমান সরকারের কাঠামো বা ধরণ এবং অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী রাজনীতি।
যুদ্ধ মূলত একটা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। সামরিক বাহিনী যুদ্ধের ময়দানে লড়াই করলেও, যুদ্ধের সিদ্ধান্তটা তাদের নয়। যুদ্ধের সিদ্ধান্তটা আসে রাজনৈতিক নেতৃত্বর কাছ থেকে। যুদ্ধের ফলাফলের দায়ভাগ রাজনৈতিক নেতাদেরকেই নিতে হয়। যুদ্ধে বিজয়ী হলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব শক্তিশালী হয়, আর পরাজিত হলে কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে চির বিদায় গ্রহণ করতে হয়। এছাড়াও যুদ্ধের প্রভাবে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি প্রভাবিত হয়।
২০১৯ সালের মে মাসে ইন্ডিয়াতে নির্বাচন হবে। দরিদ্র ইন্ডিয়ার অর্থনীতি এমনিতেই ক্ষণভঙ্গুর, চীনের সাথে যুদ্ধ স্বল্প মেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি যাই হোক না কেন, ইন্ডিয়ানদের জীবনযাত্রার ব্যয়ে দর্বিসহ হয়ে উঠবে। তাই চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী হলেও ইন্ডিয়ানদের কাছে এই যুদ্ধ অর্থহীন এবং নিষ্ফলা মনে হবে। ফলে বর্তমান সরকারের আগামী নির্বাচনে পুননির্বাচিত হওয়া সম্ভব হবে না। তাছাড়া ১৯৬২ সালে চীনের কাছে অপমানজনক পরাজয়ের গ্লানি অধিকাংশ ইন্ডিয়ানদের মনে গেঁথে আছে। যদি এইবার পরাজিত হয়, ইন্ডিয়ানরা রাজনৈতিক নেতাদেরকে কোন ভাবেই ক্ষমা করবে না। সুতরাং এই অবস্থায় ইন্ডিয়ার রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষে যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া একেবারেই সম্ভব না।
ইন্ডিয়া যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রাখবে কিন্তু যুদ্ধে যাবে না। যুদ্ধে যাওয়ার চাইতে যুদ্ধের প্রস্তুতি বর্তমান ইন্ডিয়ান সরকারের আগামী নির্বাচনে পুননির্বাচিত হওয়া জন্য সুবিধাজনক। যুদ্ধ প্রস্তুতির কারণে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে, যা আগামী নির্বাচনে বর্তমান শাসক দলের জন্য সুবিধা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:১৮