১. পারিবারিক সদস্য হিসাবে অভিবাসন:
মার্কিন নাগরিক এবং বৈধ স্থায়ী বাসিন্দাদের কতিপয় পারিবারিক সদস্যকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসার জন্য এই ধরণের অনুমতি দেয়া হয়। প্রতিবছর এর সংখ্যা সীমা ৪,৮০,০০০। আবার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় যেমন-সন্তান বা স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে এর কোন সংখ্যা-সীমা নাই। তবে আবেদনকারীকে একটা নিদিষ্ট বয়স হতে হবে এবং আর্থিক সঙ্গতি থাকতে হবে।
২. চাকরিজীবী হিসাবে অভিবাসন:
(ক) অস্থায়ী ভিসা
দক্ষ লোকদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি করার সুযোগ দেয়ার জন্য অস্থায়ী এবং স্থায়ী ভাবে অভিবাসন ভিসা প্রদান করা হয়। অ-অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য ২০ ধরণেরও বেশি অস্থায়ী ভিসা আছে। যেমন--
L ভিসা -- একই কোম্পানির কর্মচারী হিসাবে বদলি হয় যুক্তরাষ্ট্রে আসলে;
P ভিসা -- ক্রীড়াবিদ, এন্টারটেইনার, এবং দক্ষ অভিনেতা;
R ভিসা -- ধর্ম প্রচারক;
A ভিসা -- দূতাবাসের কর্মচারী;
H ভিসা -- বিশেষ কয়েক ধরণের পেশা, যেমন--নার্স, কৃষি কর্মী ইত্যাদি।
অধিকাংশ সময় কর্মচারীদের অস্থায়ী ভিসার ক্ষেত্রে উচ্চ দক্ষতাকে বিবেচনা করা হয়। তবে এই ক্ষেত্রে অবশ্যই কোন কর্মদাতা প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য স্পন্সর করতে হবে। প্রতিবছর একটা নিদিষ্ট সংখ্যায় এই ধরণের ভিসা প্রদান করা হয়।
(খ) স্থায়ী ভিসা
প্রতিবছর ১,৪০,০০০ স্থায়ী চাকরিজীবী হিসাবে অভিবাসন ভিসা প্রদান করা হয়। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই ভিসাকে আবার ৫টা ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন--বিশেষ যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি, উচ্চতর ডিগ্রিধারী পেশাজীবী, যে পেশায় দক্ষ লোকের অভাব আছে সেই ধরণের দক্ষ লোক, বিশেষ পেশার কিছু লোক (ধর্ম প্রচারক বা দূতাবাসের কর্মচারী) এবং যেসব লোক ৫ থেকে ১০ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ করে কমপক্ষে ১০ জন লোকের কর্ম সংস্থান করতে পারবে।
প্রতি দেশের জন্য ভিসা সংখ্যা:
প্রতিটি দেশ থেকে কতজনকে ভিসা দেয়া হবে তার একটা সংখ্যা নির্ধারণ করা থাকে। বর্তমান নিয়ম হচ্ছে কোন একটা দেশের যত মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে তার শতকরা ৭ ভাগের বেশি এক বছরে হতে পারবে না।
৩. শরণার্থী এবং রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থী:
(ক) শরণার্থী: বর্ণ গত, বা কোন বিশেষ সম্প্রদায় গত, বা রাজনৈতিক মতামতের কারণে, বা ধর্মীয় কারণে বা জাতীয় পরিচয়ের কারণে কোন ব্যক্তি দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হলে এবং নিজ দেশে ফিরে গেলে নিপীড়নের সম্মুখীন হওয়ার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য বৈধ অনুমতি প্রদান করা হয়। ঝুঁকির মাত্রা এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই ধরণের ভিসার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ঠিক করা হয়।
প্রতিবছর প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের সাথে আলোচনা করে এর সংখ্যা নির্ধারণ করেন। এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে, কোন অঞ্চল থেকে কতজনকে ভিসা প্রদান করা হবে তা ঠিক করা হয়।
(খ) রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থী: যেসব ব্যক্তি ইতোমধ্যে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে, কিন্তু সে তার দেশে নির্যাতন ভোগ করে এসেছে বা দেশে ফিরে গেলে নির্যাতনের সম্মুখীন হবে বলে ভয় পাচ্ছে তাদেরকে এই ক্যাটাগরিতে ভিসা প্রদান করা হয়। এই ধরণের ভিসার ক্ষেত্রে কোন সংখ্যা সীমা নাই।
শরণার্থী বা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থী হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি পাওয়ার এক বছর পরে এই ধরণের লোকেরা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা (Lawful Permanent Residents) হিসাবে থাকার ভিসা পাবে।
৪. টেম্পোরারি প্রটেক্টেড স্ট্যাটাস: যেসব ব্যক্তি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ ভাবে প্রবেশ করেছে। কিন্তু নিজ দেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা অস্বাভাবিক কোন অবস্থা বিদ্যমান থাকার কারণে বা সশস্ত্র সংঘাত চলার কারণে দেশে ফিরে যেতে পারছে তাদেরকে অবস্থা ভেদে ৬, ১২, বা ১৮ মাসের জন্য এই ধরণের অস্থায়ী ভিসা প্রদান করা হয়। তবে অবস্থার পরিবর্তন না হলে এই ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।
৫. ডাইভারসিটি ভিসা লটারি: যেসব দেশের লোক অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যক যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে, সেসব দেশ থেকে অভিবাসী আনার উদ্দেশ্য এই ক্যাটাগরিতে লটারির মাধ্যমে ইমিগ্র্যাশন ভিসা প্রদান করা হয়। প্রতিবছর এই ক্যাটাগরিতে ৫০ হাজার ভিসা প্রদান করা হয়। এই ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন যোগ্যতা হলো, আবেদনকারীর উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের ডিগ্রি বা এমন কোন পেশার দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, যেই পেশায় নিয়োজিত হতে হলে কমপক্ষে দুই বছরের প্রশিক্ষণ বা দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।
৬. যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব:
সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ। পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস অর্থাৎ গ্রিন কার্ড পাওয়ার পর কম পক্ষে ৫ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন বিবেচনা করা হয়। এই ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে কতকগুলি শর্ত পূরণ করতে হবে, যেমন- বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে, একবারে ৬ মাসের বেশি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বসবাস করা যাবে না, ভাল নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হতে হবে অর্থাৎ ক্রিমিনাল মামলা থাকলে হবে না, ইংরেজি, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস এবং নাগরিক অধিকার বিষয়ে পরীক্ষায় পাস করতে হবে। সর্বোপরি আবেদনের সাথে মোটা অংকের ফি দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন – ১
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন – ২
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন – ৩
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন – ৪
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:১৪