ব্রুকলিনের চার্চ-ম্যাকডোনাল সাবওয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড) স্টেশন। হাসান ‘এ’ ট্রেন ধরে কুইন্সের এস্টোরিয়া যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।অপেক্ষমান অনেক যাত্রী। হঠাৎ চোখ পড়ে অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক বৃদ্ধ,৭/৮ বছরের ১টি ছেলে এবং ত্রিশোর্ধ এক মহিলার দিকে।চোখ ফিরিয়ে নেয় হাসান। কিন্তু,কেন যেন মনেহয় মহিলাকে চিনি।ফের তাকিয়ে দেখে মহিলাটি ছেলেটির হাত ধরে আছে।তবে বাংলাদেশি নিশ্চয়ই। তাই স্বাভাবিক কৌতুহলে জিজ্ঞেস করলো,-আপনাকে কোথায় যেন দেখেছি।
মহিলাটি কোন কথা না বলে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলো। কিন্তু হাসানের মনের কৌতুহল নিভৃত হলোনা। তাই জিজ্ঞেস করলো-
আচ্ছা,আপনি কি বিয়ানীবাজার ছিলেন?
এতক্ষণে মহিলাটি বলে উঠলো, জ্বী।কিন্তু আপনি-আপনি জানেন কি করে।আপনাকেতো নিউ ইয়র্ক দেখেছি বলে মনেহয়না।
ততক্ষণে হাসানের মনে পড়ে গেল-
আপনার নাম শেলি না? আপনি আনসার ভিডিপি-তে চাকরি করতেন। ওপি-ওয়ান প্রোগ্রামে আমেরিকা এসেছেন।
আশ্চর্য! আপনি সব জানেন দেখছি। কিন্তু আপনি কে, ঠিক মনে পড়ছেনা।
আমি হাসান।ওখানে ছিলাম। উপজেলা সহকারি জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার দিলিপকে আমি চিনি।তার সাথে আপনার এফেয়ার্স ছিলনা?
দিলিপ কোথায়, সে আসেনি?
ততক্ষণে মহিলাটি থ’ হয়ে অতিত অবগাহনে।তাকে খানিক অস্বস্থি আর চিন্তাগ্রস্থ দেখাচ্ছে।
কি, কিছু বলছেননা যে?
কি বলবো।আপনিতো সব জানেন।এখন আমারও একটু একটু মনে পড়ছে।আপনি উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে ছিলেন।আমাদের লিডার ফাতেমা আপার সাথে আমাদের অফিসে দেখেছি।
ঠিক বলেছেন।কিন্তু দিলিপের কথা কিছু বলছেননা যে! তবে কি দিলিপের সাথে বিয়ে হয়নি?
না,হয়নি। তাই দিলিপ কেমন করে আসবে।কিন্তু দিলিপের নাম উচ্চারণের সাথে সাথে মহিলাটির হ্নদের ঝঁঙ্কারে কালো মেঘে মুখ ঢেকে গেল। অস্পষ্ট তমশায় বাকরুদ্ধ।
অতঃপর দম টেনে নিয়ে বললো-
দিলিপের মত হ্যান্ডসাম ছেলে কি আমার মত কালো মেয়েকে বিয়ে করবে?
ততক্ষণে ট্রেন স্টেশনে ঢুকে পড়েছে।
ট্রেন ছুটলো। কিন্তু-
যাত্রীদের ব্যস্ততা আর ইস্পাতের রেল লাইন-চাকার ঘর্ষণে- কালো মেয়ে কালো মেয়ে; হাসানের কানে বারবার প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৪