পরিবারে বাবার ভুমিকা তাই শাসনের আবার একই সাথে প্রগাঢ় ভালোবাসা আর নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের। পৃথিবীর সকল বাবার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে রইল শুভেচ্ছা ... বাবা, তোমার জন্য ভালোবাসা। বাবা, তুমি ভালো থেকো।
বাবা দিবস আমাদের দেশে নতুন হলেও অপরিচিত নয়। এখন বলতে গেলে, প্রতিবছরই বাবা দিবস পালিত হচ্ছে এ দেশের বড় শহরগুলোতে। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে বাবা দিবস পালন করা হয়। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। সে হিসেবে এ বছর বাবা দিবস ১৫ জুন, রবিবার। এই দিবসকে সামনে রেখেই আমাদের এবারের আয়োজন।
বাবা দিবসের ইতিহাস
সোনোরা লুইস ডডের মা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে যখন মারা যান, তখন ডডের বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। আর ডডের বাবা উইলিয়াম জ্যাকসন সবে যুদ্ধ থেকে ফিরেছেন। তারপর থেকেই সে দেখেছে তার বাবা তাদের ছয় ভাই-বোনকে মানুষ করার জন্য রাত-দিন কি কঠিন পরিশ্রমই না করছেন। তারা তাদের মায়ের অভাব বুঝতেই পারেনি বলতে গেলে। যেনো বাবাই তাদের মা। বাবাই ছিলো তাদের সব কিছু।
১৯০৯ সালে ডডের বয়স যখন ২৭ তখন সে অবাক হয়েই দেখলো মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য একটি দিন আছে যে দিনটি বিশ্বের প্রায় সবাই পালন করে। অথচ বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের কোনো দিন নেই, যেন বাবাকে কেউ ভালোই বাসে না।
ডড ভাবলো মা দিবসের মতো বাবা দিবস থাকলে কেমন হয়! কিন' তার এ ভাবনা যখন অন্যরা শোনে তখন হেসেই বাঁচে না। এমনকি তাকে নিয়ে এজন্য রঙ্গ-রসিকতা করতেও কেউ বাদ রাখেনি। কিন্তু ডড এতে ভীষণ কষ্ট পেলেও দমলো না একদম, বরং তার মধ্যে জেদ আরো প্রবল হয়ে উঠলো। কারণ সে তার বাবাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। তাই সে আন্তরিকভাবে বাবা দিবস পালনের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে লাগলো। আন-রিক প্রচেষ্টা আর কঠোর পরিশ্রম যে সফলতার মূল চাবিকাঠি সেটা আরেকবার প্রমাণিত হলো। কারণ তার পরের বছর মানে ১৯১০ সালে ওয়াশিংটনের স্পোকান নামে ছোট্ট শহরে (ডডের নিজ শহর) কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে পালিত হলো বাবা দিবস।
তারপর ১৯১৬ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এ দিবসকে সমর্থন করেন। এক সময় এটা তাদের জাতীয় আইনসভাতেও স্বীকৃতি পায়। সেই থেকে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
বাবা দিবস দেশে দেশে
বাবা দিবসের পালনের ইতিহাস খুব বেশি দিনের না হলেও বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৮৭টি দেশ দিবসটি পালন করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সব দেশ একই দিনে বাবা দিবস পালন করে না। বরং বেশির ভাগ দেশের ভিন্ন ভিন্ন দিন রয়েছে বাবাকে ভালোবাসা জানানোর জন্য। এমনকি দেশভেদে বাবা দিবসের রীতিতেও রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য।
প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস পালন করে বেশ কিছু দেশ। এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, অ্যান্টিগুয়া, বাহামা, বুলগেরিয়া, কানাডা, চিলি, কলাম্বিয়া, কোস্টা রিকা, কিউবা, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, গ্রিস, গায়ানা, হংকং, ভারত, আয়ারল্যান্ড, জ্যামাইকা, জাপান, মালয়েশিয়া, মাল্টা, মরিশাস, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ড, পাকিস্তান, পানামা, প্যারাগুয়ে, পেরু, ফিলিপাইন, পুয়ের্টো রিকো, সিঙ্গাপুর, স্লোভাকিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, সুইজারল্যান্ড, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, তুরস্ক, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ভেনিজুয়েলা ও জিম্বাবুয়ে।
এদিকে ইরান বাবা দিবস পালন করে ১৪ মার্চ। আবার মার্চ মাসের ১৯ তারিখে বাবা দিবস পালন করে বলিভিয়া, ইটালি, হন্ডুরাস, পর্তুগাল ও স্পেন।
প্রতিবছর মে মাসের ৮ তারিখে বাবা দিবস পালন করে দক্ষিণ কোরিয়া। অন্যদিকে জুন মাসের প্রথম রবিবার বাবা দিবস পালন করে লিথুনিয়া, ৫ জুনে ডেনমার্ক এবং জুনের দ্বিতীয় রবিবার বাবা দিবস পালন করে অস্ট্রিয়া, ইকুয়েডর ও বেলজিয়াম। এল সালভেদর ও গুয়েতেমালা বাবা দিবস পালন করে ১৭ জুন। নিকারাগুয়া, পোল্যান্ড ও উগান্ডা ২৩ জুন পালন করে বাবা দিবস।
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উরুগুয়ে জুলাই মাসের দ্বিতীয় রবিবার পালন করে বাবা দিবস। ডমিনিকান রিপাবলিক জুলাই মাসের শেষ রবিবার দিবসটি পালন করে।
ফুটবলের জন্য জনপ্রিয় দেশ দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ব্রাজিল বাবা দিবস পালন করে আগস্ট মাসের দ্বিতীয় রবিবার। আগস্টের ৮ তারিখে বাবা দিবস পালন করে তাইওয়ান ও চিন। ফুলবল প্রিয় আরেক দেশ আর্জেটিনা বাবা দিবস পালন করে ২৪ আগস্ট।
সেপ্টেম্বরের প্রথম রবিবার বাবা দিবস পালন করে অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড। আবার একই মাসের পূর্ণিমায় বাবা দিবস পালন করে হিমালয় কন্যা নেপাল।
পশ্চিম ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গ বাবা দিবস পালন করে ৫ অক্টোবর এবং একই মাসের দ্বিতীয় রবিবার বাবা দিবস পালন করে এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে এবং সুইডেন।
আর এশিয়ার আরেক দেশ থাইল্যান্ড ৫ ডিসেম্বর বাবা দিবস পালন করে।
বাবা দিবস : ভিন্ন দেশের ভিন্ন রীতি
বিশ্বের প্রায় ৮৭টি দেশে বাবা দিবস পালিত হয়। কিন্তু এসব দেশের বাবা দিবস পালনের তারিখ যেমন ভিন্ন তেমনি তাদের রীতিও আলাদা আলাদা। সেটাই জেনে নিই চলো।
অস্ট্রেলিয়া
সেপ্টেম্বরের প্রথম রোববার অস্ট্রেলিয়ার বাবা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এদিন বাবাকে শুভেচ্ছা জানাতে সন্তানরা বেছে নেয় ফুল, নেকটাই, চকোলেট বা বাবার প্রিয় কোন কিছু। শুধু তাই নয়, এদিন বাবার সন্মানে পরিবারের সবাই একত্রে সকালের নাস্তা করে। এছাড়া সারাদিন বাবার সাথে কাটায় অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীরা। তাদের বিশ্বাস এতে সন্তানদের সাথে বাবার ভালবাসার বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয়।
ভারত
ভারতে বাবা দিবস পালনের রীতি খুব বেশি দিনের নয়। মূলতঃ পশ্চিমা দেশগুলোর অনুকরণে ভারতে বাবা দিবস পালিত হয়। সামপ্রতিক কালের হলেও ভারতে ক্রমেই এই দিবসটি প্রসার পাচ্ছে। তবে তা এখনো শহরগুলোতেই সীমাবদ্ধ। ভারতে জুনের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস পালিত হয়। এই দিন বাবার সাথে কাটায় ভারতের পরিবারের সদস্যরা। বাবাকে শুভেচ্ছা জানাতে কার্ড, ফুল বা অন্যকিছু বেছে নেয়া হয়। তাছাড়া পরিবারের সবাই মিলে দূরে কোথাও পিকনিক বা সিনেমা দেখাটাও বেশ প্রচলিত।
এছাড়া ভারতের অনেক স্কুলে বাবা দিবসে সামনে রেখে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
আমেরিকা
১৯৭২ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন বাবা দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে প্রতিবছর জুনের তৃতীয় রবিবার আমেরিকায় বাবা দিবস পালিত হচ্ছে। এই দিনটি আমেরিকার পরিবারের সদস্যদের পূণর্মিলনীর মতো। তাই যারা বাড়ি থেকে দূরে থাকে তারা এদিন বাড়ি আসার চেষ্টা করে, যাতে সবাই মিলে একসাথে বাবা দিবস পালন করা যায়। বাবাকে শুভেচ্ছা জানাতে আমেরিকানদের পছন্দের তালিকায় আছে ফুল, কার্ড, চকোলেট, নেকটাই।
দক্ষিণ আফ্রিকা
অন্যান্য দেশের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার অধিবাসীরা তাদের বাবাকে ভালোবাসা প্রকাশের সুযোগ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করে না। তাই তারা প্রতি বছর জুনের তৃতীয় রবিবার বেশ ঘটা করেই বাবা দিবস পালন করে। বাবাকে শুভেচ্ছা জানাতে তারা কার্ড, ফুল, নেকটাই বা হাতে বানানো কিছু উপহার দেয়। তাছাড়া এদিন পরিবারের সবাই একসাথে সময় কাটায়। অনেকেই এদিন বাবার সাথে পিকনিক, মাছ শিকারে বা রেস্টুরেন্টে খেতে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




