somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিল্লী কড়চাঃ কিছু ঘটনার মুখোমুখী

২৬ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০১১ সাল। দিল্লী এয়ারপোর্টের পাশের সরকারী ফাইভ স্টার হোটেল সেন্টুর। অবকাঠামো ও নামে ফাইভ স্টার হলেও সেবাতে টু স্টার। তো সেখানে রুমে ল্যাপটপের থ্রি-পিন, টু-পিন সমস্যায় পড়ে কোন সমাধান না পেয়ে পাশের কিলো দুই দূরের বাজারে গেলাম থ্রি-পিন কিনতে। সাথে বাংলাদেশের নামকরা পাবলিক ভার্সিটির শিক্ষক। চট্টগ্রামের ভদ্রলোক। উনাকে সাথে নেওয়া কারণ উনি নাকি হিন্দি কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো পারেন। আমি এই ভাষাটা কেন যেন এখনো ঠিক ঠাক আয়ত্ত করতে পারি নি।

যথারীতি একটি ইলেকট্রনিকের দোকান খুঁজে বের করলাম। তারপর উনাকে বললাম ‘বলেন আমরা কি কিনতে চাই?’ উনি ইতস্তত করতে করতে দোকানিকে জিজ্ঞেস করলেন ‘থ্রি-প্লাগ হ্যায়’। দোকানী ঠিক বুঝতে পারছে না আমরা কি কিনতে চাই।

‘আপ হামকো ন বুঝতে পারেঙ্গা’।– আমার সঙ্গীর মাথা ঝাঁকিয়ে, চোখ-মুখ বেঁকিয়ে প্রশ্ন।

এই চট্টলা-বাঙলা-হিন্দি ডায়লগ শুনে আমি তো আর হাসি থামাতে পারি না। দোকানীও মনে হয় কিছুটা ঘাবড়ে গেছে। পরে দোকানী আমাদের হিন্দির দৌড় বুঝতে পেরে শুদ্ধ ইংরেজিতে সমাধান দিলেন। এই শহরের আউটস্কার্ট জায়গায় বসে একজন সামান্য ইলেক্ট্রনিকের দোকানী চমৎকার ইংরেজি বলছে। আমরাও চমৎকৃত হলাম।

শানে নুযুলঃ ভারতীয়রা ইংরেজি ভাষাকে লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা করে ফেলেছে। আর এই একটা কারণে বাঙ্গালীদের চেয়ে পশ্চিমা বিশ্বে তারা এক্সেপটান্স বেশি পাচ্ছে।


চানক্যপুরি। দিল্লীর এমব্যাসি এলাকা। হোটেল লীলা প্যালেস ও হাঙ্গেরি এমব্যাসির মাঝামাঝি একটি জায়গা। যেখানে দিল্লীতে বিভিন্ন রাজ্যের গেস্ট হাউস রয়েছে, সেখানে পেট্রল পাম্পের উপরে সুন্দর একটি কফিসপ আছে। ওই জায়গার রাস্তার পাশে ফুটপাতেও একজন চা ওয়ালা (আমার জীবনে খাওয়া অন্যতম সেরা চা; কি সব মসলা দিয়ে বানায়; আশেপাশের অফিস কর্তাদের প্রিয় চায়ের দোকান) ও একজন দক্ষিণ-পূর্ব ভারতের পাহাড়ি ছেলে সন্ধ্যার পরে চিকেন মোমো বিক্রি করে। শীতকালে তাদের ব্যবসা জমজমাট। ঐ তিন ধরণের দোকানেই প্রায়শই যাতায়াতে একদিন লক্ষ করতাম একজন ফুল বিক্রেতা বয়স্ক মহিলা ফুটপাতে সুন্দর সুন্দর ফুল নিয়ে বসে থাকত।

মাঝে মাঝে শ্যামলা করে একটি তিরিশ-পয়ত্রিশ বছরের একটি যুবককেও দেখতাম। একদিন এক গোছা ফুল কেনার উদ্দেশ্যে বুড়িমাকে বলেতেই, আমার গলার টন শুনেই প্রায় শুদ্ধ বাংলায় বলল ‘বাবা, তুমি কি বাংলাদেশ থেকে এসেছ’। আমি হ্যাঁ বলতেই; উনার ঢিলে হওয়া চামড়া কুঁচকানো মুখেও কিছুটা বেদনার ছাপ দেখতে পেলাম। পরে উনি জানালেন উনার বাড়ি নাকি নোয়াখালী।

১৯৬৫ সালে উনি ভারতে আসেন। এরপর এখানেই বিয়ে শাদি করে থিতু হয়েছেন। গত বিশ বছর ধরে এই চানক্যপুরিতে ফুল বিক্রি করছেন। আমাকে বাংলাদেশী জেনে উনার চোখমুখ চিকচিক করছে।

শানে নুযুলঃ দেশ ভাগের পরেও কিছু মানুষ এপার-ওপার থাকলেও আত্মিক সম্পর্কটা এখনো তীব্রই রয়েছে।


দিল্লীতে বেশ কিছুদিন ধরেই থাকছি। একদিন পরিচিত একজন ফোন করে বলল সে এখন দিল্লীতে। পাহাড়গঞ্জে এক হোটেলে উঠেছে। বিদেশ যেতে চায়। প্যারাগুয়েতে। আমি একটু অবাকই হলাম। বাংলাদেশ থেকে মানুষ প্যারগুয়েতেও যায়।

তো উনাদেরকে কনোট প্লেস নামক একটি জায়গায় আসতে বললাম। সেখানে পাল্লিকা বাজার নামে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেট আছে। উপরে পার্ক। সেই পার্কে গেলাম। দেখি উনার সাথে আরেক ভদ্রলোক। সেই ভদ্রলোকের পরিচয় পেলাম। একটি ছোটখাট গার্মেন্টস আছে। ঢাবি থেকে অর্থনীতিতে পাশ দিয়েছে। সাথে কিছু লোককে বিদেশ যেতে সাহায্য করে। উনার নাকি প্যারাগুয়েও ব্যবসা আছে। ওখান থেকে সয়াবিন তেল আমদানি করে। তাই কিছু লোক ওখানে পাঠাচ্ছে। ব্যবসা দেখাশুনার কাজে। আমার পরিচিত জনও সেই সয়াবিনের ব্যবসাতেই যোগ দিবে। আমি তখনো উনার আসল পরিচয় জানতে পারি নি। উনার উত্তরাতে পাঁচতলা বাসা আসে। ছেলে এবার এইসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ছেলেকে জার্মানিতে বিবিএ পড়াবে। আরো খুচরা কথা নন-স্টপ বলে যাচ্ছে। ভালো বলতে পারে।

এই গপ্প সেই গপ্প করতে করতে সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। পাশে কেএফসিতে ঠ্যাং চিবুনোর উদ্দেশ্যে উনাদেরকে নিয়ে গেলাম। কিন্তু উনি নাছোরবান্দার মতো আমাকে বিল দিতেই দিলো না। উনাদের আগামীকাল এমব্যাসি ফেস করতে হবে। বিদায় নিলাম।

তিনদিন পরে ফোন। আমার পরিচিত জন ফোনে বলল এমব্যাসিতে কি একটি কাজে আটকে গেছে। ওদের নিকট যা টাকা ছিল সব শেষ। এমব্যাসিতে আরো কিছু টাকা লাগবে ঐ দিনই। আমার কাছে থাকলে যেন আমি দেই। উনারা রাতেই বা পরেরদিন ফেরত দিবে।

উনারা নিজেরা এসে পনের হাজার রুপি নিয়ে গেল। দু দিন পরে ফোন দিয়ে আমার পরিচিতজনকে না পেয়ে ভদ্রলোককে ফোন দিলাম। জানালেন আমার পরিচিতজন দেশে ফেরত গেছে। আর উনি ভিসা নিয়ে দেশে ফিরবেন। আমি আর টাকার কথা তোলে নি।

পরেরদিন ভদ্রলোক আবার ফোন দিয়ে বলে আরো কিছু টাকা লাগত জরুরী ভিত্তিতে। আমার কেন জানি সন্দেহ হল। এরপরের কাহিনি আমাকে ভীষণ হতাশ করেছে। আমরা ভুলে যাই দেশের বাইরে আমরা আমার প্রিয় জন্মভূমির প্রতিনিধি। আমার প্রতিটা কর্মকাণ্ডে ব্যক্তির চাইতে দেশ বেশি জড়িত। ছোট অপরাধ করলেও ব্যক্তির চাইতে দেশের নাম আগে আসে। বাইরে নিজেকে কেউ গালি দিলে সহ্য করা যায়, কিন্তু মাতৃভূমি নিয়ে খারাপ কিছু বললে অসহ্য মনে হয়। যারা দেশের বাইরে এর ভিতর দিয়ে গেছেন তারা ভাল বুঝবেন।

শানে নুযুলঃ বিদেশের মাটিতেও এইসব দেশি দালালরা দেশের বারোটা বাজিয়ে লাভের গুড় ঘরে তুলছে। আর সাধারণদের কটূ কথা শুনতে হচ্ছে দেশ নিয়ে।

ছবি: সেন্টুর হোটেলের রুম থেকে তোলা একটি বিয়ের অায়োজনের ছবি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৩৫
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×