somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাত্রজীবন রচনা ও একটি লৌকিক প্রেমের অকালমৃত্যু!!!

২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মনটা ভীষণ আঁকুপাঁকু করছে। কতক্ষণে বাড়ি পৌঁছাব। কখন খুলব। কি লেখা আছে ভিতরে? মারাত্মক অস্থিরতা পেয়ে বসেছে আমাকে। এখন মকবুল ডাক্তার আমার হার্টবিট মাপলে নিশ্চিত নিজেই হার্টফেল করবে।

ঘটনাটা খুলে বলি। বিংশ শতকের বিদায়ের গান গেয়ে একবিংশ শতকের মায়াবী যুগ শুরুর দিনগুলোতে এই উথাল-পাথাল পিচ্চি প্রেম কাহিনি। এই আমি যার নায়ক। আর নায়িকা হচ্ছে বিড়ালচোখী ওরফে ধলী ওরফে তাশফিয়া জরী।

গ্রাম থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। এর মধ্যে আবার অর্ধেকটা পথ আল (মাঠের মাঝ দিয়ে মাটির সরু পায়ে হাঁটা) রাস্তা। বাকি মাটির বড় কাঁচা রাস্তা।

বর্ষাকাল। আল পথ কিছু কিছু জায়গায় পানিতে ডুবে আছে। মাটির রাস্তাটুকু কাদায় থকথকে। বেশ যত্ন করে পা টিপে টিপে যাতায়াত করতে হয়। সামান্য অসতর্কতায় কাদামাটির সাথে কোলাকুলি করার সমূহ সম্ভাবনা। কোলাকুলিজম এই ভয়ঙ্কর পিচ্ছিল রাস্তায় একটি নিত্যকার ঘটনা।

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মাঝেই সেদিন ক্লাসে উপস্থিত আমি ও চাচাতো ভাই রাসেল। এক ক্লাসেই পড়ি। প্রেম-ট্রেম কিছু হল না। এই নিয়ে মনঃকষ্টে দিনানিপাত করছি। সেদিন ক্লাসে দেরীতে গিয়ে দেখি অপরুপ রুপবতী এক অচেনা কন্যা সামনের সারিতে বসে ক্লাস করছে।
ইউনিয়ন পর্যায়ের স্কুলে নতুন মেয়ে ভর্তি হয় না বললেই চলে। এখানে প্রায় সবাই সবাইকে চেনা। পাশে বসা রাসেল দেখছি বার বার ক্লাসের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে। আমিও সাধু ছিলাম না।

ক্লাস শেষ হলে রাসেল ঝাঁপ দিয়ে আমাকে ধরে বলল। ওরে ছুট্টু (ভাইবোনের সবার ছোট হওয়াতে এই পিছলা বাতাসি নামটায় আমার আসল নামকে চাবকিয়ে সরিয়ে স্থান দখল করেছে। অনেক চেষ্টা করেও এর থেকে মুক্ত হতে পারি নি।)
-‘আমাকে কিন্তু তোর একটুসখানি সাহায্য করতে হবে’।
-‘কি সাহায্য?’
-‘পরে বলছি’।

এভাবে কয়দিন ক্লাসে চোখাচোখি, হাসাহাসি, কাশাকাশি পাশাপাশি চলল। মেয়ের ঠিকুজিও বের হল। নয়া ফুড অফিসারের মেয়ে।
ইতোমধ্যে জরী উষ্ণ পানির ঝর্ণাধারার প্রস্রবণ হয়ে আমার চৈতালি মাঠে কুলকুল করে বইতে শুরু করেছে। আমি মনে মনে ড্রেনেজ সিস্টেমের কাজ করছি। যেন কোনভাবেই জলাবদ্ধতা না লাগে। যতই নিম্নচাপীয় বৃষ্টি শুরু হোক। যদিও সম্ভাবনা দেখি না।



সবেমাত্র বিমল করের ‘বালিকা বধূ’ শেষ করেছি। মনে মনে খায়েস হয়েছে ইস, আমার যদি এমন একটি বালিকা বধূ থাকত। বালক আমি এই চিন্তায় দিনে আট ঘন্টার নিদ্রা পাঁচ ঘন্টায় নামিয়ে এনেছি। বিড়ালচোখীকে সেই আসনে বসিয়ে দিয়েছি। হায়-হায় রোগে পেয়ে বসেছে আমাকে। ভয়, যদি আমার না সে হয়।

কয়দিন পরেই রাসেল বলল, ‘ওরে, আমাকে একটি চিঠি লিখে দে’। আমি একটু অবাকই হলাম। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম। ‘চিঠি কেন’?

আমার প্রাণের পাখি জরীরে দেবে প্রেমের প্রথম নজরানা হিসেবে। আমি তো শুনে থ। বলে কি এই ধাড়ি রামছাগল। যার জন্য আমি খাল কেটে কেটে ঝর্নার পানির মসৃণ রাস্তা তৈরি করছি, সেই খাল দিয়ে দেখছি কুমির ঢুকে পড়ার পাঁয়তারা করছে। মনে মনে বললাম ‘দাঁড়া, এখনি খালের মুখ বন্ধ করছি’।

কিন্তু মুখে আমার সোজাসাপ্টা জবাব। ‘না, আমি পারব না’। রাসেল নাছোড়বান্দা।

বললাম, ‘তা তুই লিখে দে না’। আমি জানি সে কখনই তা লিখবে না। কারণ তাঁর হায়ারোগ্লেফিক হাতের লেখা সুন্দরীকে পাঠোদ্ধার করতে হলে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিতে হবে।

শেষে গফুর মিষ্টিওয়ালার বালিশ মিষ্টি, এক প্যাকেট বাটার কুকিজ বিস্কুট ও একটি সিনেমার টিকেটের বিনিময়ে রাজি করাল। আর আমি রাজি হলাম এই কারণে যে ধলী কখনই বিট্টু রাসেলের প্রেমে পড়বে না।

তাই মনের মাধুরী মিশিয়ে জীবনের প্রথম প্রেমপত্র লিখলাম।

‘আমার ময়না পাখি। যখন আমি তোমায় প্রথম দেখি, তখনই আমার হল একি! (কোনো একটা বাংলা গানের সুর মেরে দিয়েছিলাম মনে হচ্ছে) তোমার কথা ভাবতে ভাবতে আমার পড়াশুনা শিকায় উঠেছে। রানী, তুমিই পারো এই অবস্থা থেকে টেনে তুলতে। এসো, দুজনে হারিয়ে যাই দূর আকাশে’।

আমার এই চিঠি রাসেলকে দিলাম। শেষে কি লিখব? রাসেল বলল ইতি ‘R’ লিখে দে। ক্লাস শেষে বাড়ি রওয়ানা হওয়ার আগের মূহুর্তে রাসেল জরীর হাতে চিঠি গুঁজে দিয়ে ভোঁ দৌড়।



রাসেলের চিঠি। অথচ আমার সারারাত ঘুম হল না। আসলে রাসেলের হলেও কথাগুলো তো আমার। এর প্রতিউত্তর কি হয়? এই নিয়েও দুশ্চিন্তা ছিল। শেষে ব্যাটা রাসেল মুখের গ্রাস কেড়ে খাবে নাকি। খাটে সারারাত উষ্ঠাউষ্ঠি করে সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মাঝেই রওয়ানা হলাম।

টান টান অপেক্ষার পালা। টোপ ফেলেছে রাসেল। যদিও সেটা আমার বানানো। ভয়, গিলে ফেলবে নাতো। ভুল করলাম কি?

প্রথম ক্লাস রাম মজিদ স্যারের। রাম মজিদ স্যারের নামের সামনে ‘রাম’ মাজেজা হচ্ছে উনি ছাত্রদের পড়াশুনার গাফিলতি ও বেয়াদবীতে যে শাস্তির ব্যবস্থা করেন তা একটু ভিন্ন প্রকৃতির। যেমন উনি যে চড়টা ছাত্রদের দেন তার নাম ‘রামচড়’। উনার হাতের থাবা খেয়ে সপ্তাহান্তে দু-একজন অজ্ঞান হন নি এরকম ঘটনা বিরল। শোনা কথা এমনও দেখা গেছে উনি উনার বিশাল হাতের থাবাটা উঠিয়েছেন কাউকে মারার জন্য। তাতেই নাকি ছাত্ররা ফিট খেয়েছে। এইসব কিংবদন্তি শুনা থাকায় উনার পড়া বা ক্লাসে কেউই বেগড়বাই করতাম না। কাপড় ধোলাইয়ের মতো উল্টে পাল্টে ধোলাই করেন বলে নাম হয়েছে ‘রামধোলাই’। প্রচণ্ড রোদে মাঠের মাঝখানে এক ঠ্যাং-এর উপর দাঁড়িয়ে উচ্চশব্দে হাসতে হবে, এটাকে নাম দিয়েছেন ‘রামহাসি’। একটু উল্টা-পাল্টা দেখলেই এসবের সফল ব্যবহার হত।

রাসেলকে দেখলাম সে তো মহা আনন্দে। সুন্দরী বার বার তাঁর দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে। আমি হতাশ!। মনে মনে নিজের চুল নিজেই ছিড়তে ইচ্ছে করছে। আমি বিশাল ভুল করেছি রাসেলকে চিঠি লিখে দিয়ে। আমার চিঠি দিয়ে রাসেলের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে সুন্দরী! অামি মহা হতাশ!!

একটু পরেই বিড়ালচোখী মিষ্টি মিষ্টি হেসে নিজের আসন থেকে উঠে স্যারের টেবিলে গিয়ে কি যেন দিয়ে আসল। আমার একটু আগেই মরচে ধরা গিটারে আবার নতুন রাগের সঞ্চার হতে শুরু করল। ভিতরে আমার ভালোলাগার সুনামী। কেন? কি জন্য? তা কিন্তু বলছি না। আমি নিশ্চিত কি ওটা। রাসেলের দিকে তাকালাম। ওর চোখ-মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। আমি মনে মনে মজাই পেলাম। যাক, সুন্দরী রাসেল মিঞাকে পছন্দ করে নি।

স্যার চিঠিটি পড়ে হুংকার ছাড়লেন। ‘কোন নচ্ছার পাজির পা ঝাড়া এই কুকাজ করেছে’। আমি রাসেলকে ঠেলা দিয়ে বললাম, ‘বল’। অভয় দিলাম ওকে। ‘’স্যার বেশি মারবে না। খুব বেশি হলে ‘রামহাসি’তেই পার পেয়ে যাবি।‘’

ও ব্যাটা দেখছি সমানে ঘামছে। জরী দেবীর দিকে তাকালাম। মিঠি মিঠি হাসছে। স্যার এদিকে গর্জন করতেই আছে। রাসেল স্বীকার করছে না। ইতিমধ্যে স্যার বলল, ‘‘এই কার কার নাম ‘আর’ দিয়ে শুরু’’।

আমিসহ মোট চারজন দাড়ালাম। আমি রাসেলকে গুঁতোই। বলে দে। কিন্তু ও ব্যাটা নিশ্চল। এদিকে স্যার হাতের লেখা চারজনকেই নিয়ে যেতে বলল। এই কথা শুনে আমার বুকে আফ্রিকান জংলী স্টাইলে ড্রাম বাজাতে শুরু করেছে। আমি রাসেলকে ঝাঁকাতে থাকি। বলে দে। বলে দে বিলায়ের ছাও। বলে দে তুই সেই নচ্ছার!

স্যার খাতা চেক করে কেউটে সাপের মতো চোখ ছোট ছোট করে আমাকে বলল ‘চল, ব্যাটা, অফিসে। কিছু খানাপিনা করি’। আমি নিজের ভেতর সাত রিকটার স্কেলের ভূমিকম্পের টের পেলাম।

কিছুক্ষণ পর নরকের দরজা দিয়ে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে বিধ্বস্ত দেহ ও মন নিয়ে ক্লাসরুমে প্রবেশ করলাম। কোনো কথা না বাড়িয়ে ধীরে ধীরে পা বাড়িয়ে বই-খাতা নিয়ে ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে আসলাম।

রাসেলের সাথেও কথা-টথা আর বলি না। সুন্দরীর চিন্তা তো দূরে থাক, পারলে দশ হাত দূর দিয়ে চলাচল করি। পাগলা কুত্তায় কামড়াইছে নাকি আমারে! আবার বেল তলা! একবার বেল তলার পাশ দিয়ে যেতে গিয়েই মাথা ফাটার দশা! মাফ চাই!

বেশ কয় দিন পর রাসেল বলল বিড়ালচোখী আমাকে কি যেন বলবে। স্কুল ছুটি হলে যেন গেটের বাইরে অপেক্ষা করি। মনে মনে ভাবলাম আবার নতুন কোনো প্যাঁচে ফেলবে নাতো। ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরায়! আমার অবস্থাও এখন তেমন।

স্কুল ছুটির পরে গেটের কাছে আসতেই বিড়ালচোখী আমার হাতে কি একটা গুঁজে দিয়ে হনহন করে চলে গেল। তাকাতেই দেখি এক টুকরো মোড়ানো কাগজ। সাথে সাথে পকেটে চালান করে দিলাম। কেউ যেন দেখে না ফেলে। রাসেল কিছু একটা সন্দেহ করে বলল, ‘কি দিল রে তোকে, চিঠি নিশ্চয়’। আমি না সূচক জবাব দিলাম। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা। তাকে দেখাতে হবে। তা না হলে বাড়িতে বড় আপাকে বলে দেবে। ভয়ে কথা দিলাম।

হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। আগেই বলেছি স্কুল থেকে বাড়ি গোটাটায় মাটির রাস্তা। যেখানে মাটির বড় উঁচু রাস্তা শেষ আর আল জমির রাস্তা শুরু সে জায়গাটা বেশ ঢালু। এঁটেল মাটি হওয়ায় বর্ষাকালে বেশ পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এটা এমন একটি জায়গা যেখানে গ্রামের খুব কম লোক আছে যারা বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে যে সে বর্ষাকালে এখানে পিছলে পড়ে নি। আমিও সেই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে একজন। আমি নিজেও অনেক সময় হালকা পানি দিয়ে আরো পিচ্ছিল করে রাখতাম। যেন অন্যরা ধপাস খায়। বিশেষ করে স্কুলের মেয়েদের ফেলার ধান্ধা।

সৃষ্টিকর্তা হয়ত এই দিনটির অপেক্ষায় ছিল। টেনশনে আছি। কি লিখেছে আমার জরী সোনা। এই অবস্থায় বেখেয়ালে পা ফেলা মাত্র রাস্তার উপর মাথা থেকে জমিতে পপাতধরণীতল। মনে হল মিগ-২৯ এর মতো ল্যান্ড করলাম পানিতে। পানিতে ভিজে কাদা-টাদা মেখে একাকার। হঠাৎ মনে হল আরে পকেটে চিঠি আছে তো। বের করে দেখি ভিজে জোড়া লাগার মতো হয়ে গেছে।

রাসেল পরামর্শ দিল বাড়িতে গিয়ে শুকিয়ে তারপর খুলতে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা। ফ্রেশ হয়ে মাগরিবের নামাজের পর পড়তে বসা। যেহেতু যৌথ পরিবারে থাকি। সকলেই পাটি বিছিয়ে হারিকেনের আলোই পড়াশুনা করতাম। গ্রামে বিদ্যুৎ তখনও যায় নি। পড়ার মাঝে ভেজা চিঠিটা হারিকেনের মাথায় দিয়েছি শুকানোর জন্য।



এদিকে শিক্ষক বড় আপা মাঝে মাঝেই খোঁজ খবর নেয়। পড়াশুনা কেমন চলছে। উনি এসে দেখতে পায় হারিকেনের মাথায় কিছু একটা দেওয়া।

-‘’কিরে ওটা।‘’
-‘‘না কিছু না’।-আমতা আমতা করে বললাম।
-‘না কিছু না মানে। নিশ্চয় কিছু’।
-‘’ওই মানে স্যার রচনা লিখে দিয়েছে ‘ছাত্রজীবন’। ওটা আজকে আসতে ভিজে গেছে। তাই শুকাতে দিয়েছি।‘’

আমার মনে হল কথাটা বিশ্বাস হয় নি আপার।

-‘’দেখি কেমন লিখেছে।‘’

আমি ঝাপ দিয়ে উঠে বললাম, ‘ওটা ছাত্রজীবন রচনায়। অন্য কিছু নয়। ভাল রচনা। এবার পরীক্ষায় আসবে।‘

-তাও দেখি। কেমন লিখেছে? বলে হাতে নিয়ে এখনো আধা ভেজা আধা শুকনো কাগজটা খুলতে শুরু করল। আমার তো আত্নারাম খাঁচাছাড়া। যদি আপা জানতে পারে ওটা ‘ছাত্রজীবন রচনা’ নয় ‘ছাত্রজীবনে প্রেমপত্র’। নিশ্চিত আমার পিঠে বাঁশ ভাঙবে। আমার ছাত্রজীবনের এখানেই দফারফা। আপা খুলছে। আর আমি ভেতরে ভাঙছি। ভীত হরিণের মতো এক পা খাড়া করে রেখেছি। দৌড় লাগাব বাড়ির বাইরে। আর শুকুনের মতো লম্বা গলা করে দেখার চেষ্টা করছি কি লিখেছে আমার জরী সোনা।

গোটাটায় খোলা হলে আপা বলল, ‘কিরে, কিছুই তো বুঝা যাচ্ছে না’।

-‘বুঝা যাচ্ছে না’। আমি ও রাসেল ভয়ে ভয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম। গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার একই সাথে আনন্দ, হতাশা, বেদনার এক অদ্ভুত অনুভূতি হল। আনন্দ কারণ মার খেতে হবে না, চিঠি পড়া যাচ্ছে না বলে। আর হতাশা ও বেদনা কারণ আমি জানতেই পারলাম না আমার জরী সোনা কি লিখেছিল চিঠিতে এই জন্যে।

আসলে চিঠিটি লেখা হয়েছিল জেল কলম দিয়ে। পানিতে ভিজে সেই কালি গোটা কাগজে ছড়িয়ে পড়েছে। কোন শব্দই আর বোঝা যাচ্ছে না।

হতাশায় আমি হাত-পা ছুড়ে বলতে লাগলাম আপাকে, ‘‘তুমি আমার ‘ছাত্রজীবন’ রচনা পড়তে দিলে না। তুমি আমার ছাত্রজীবন শেষ করে দিলে’’। আমার গোপন বিশ্বাস পুরোপুরি শুকোলে হয়তবা এর মানে উদ্ধার করা যেত। যতই ভাবছি ততই আমার কান্নার বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি চিল্লাতে চিল্লাতে বলতে শুরু করলাম, ‘’আমার ‘ছাত্রজীবন’ তুমি পড়তে দিলে না। আমি শেষ হয়ে গেলাম। গজব নেমে আসুক চারিদিকে।’’।

আমি চোখ বন্ধ করে কেঁদে কেঁদে অভিযোগ দিচ্ছি। কিছুক্ষণ পরে সপাৎ করে পিঠে লাঠির বাড়ি পড়াতে সম্বিৎ ফিরে এল। দেখলাম আপা রূদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। আর পাশে রাসেল মিঞা মিচকি মিচকি হাসছে। যা বুঝার বুঝে নিলাম। কিন্তু বুঝলে কি হবে। জানি আজকে গ্রামে একটি বাঁশ ভাঙা হবে।

এভাবেই একটি নিস্পাপ, নিটোল প্রেমের অবগাহনের শুরুতেই এক নিষ্ঠুর পরিসমাপ্তি ঘটেছিল।


পুনশ্চঃ মিশরের স্ফিংসের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সাথে বছরখানেক হলো বিয়ে করা বউ। পাশ থেকে মিষ্টি একটি বাচ্চার শুদ্ধ বাংলা কণ্ঠস্বর শুনে চট করে মাথা ঘুরিয়ে তাকালাম দুজনে। তিরিশের কোঠার মহিলা ও তাঁর হাজবেন্ড সাথে ফুটফুটে বাচ্চা। দুটি চোখ অন্য দুটি চোখে কিছু খুঁজে ফিরছে কি? ও, হ্যাঁ- মেয়েটার চোখ বিড়ালের...।


‘’প্রথমও প্রেমের স্মৃতি ভোলা যায় না, ভোলা যায় না।‘’ -- এখন মুড়ি খান আর শুনুন তপুর কণ্ঠে--------





সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৩৪
৫৭টি মন্তব্য ৫৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×