somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Dr. Brighton, শেখ দীন মোহাম্মদঃ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম ইংরেজি ভাষার বইয়ের লেখক, বৃটেনে ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁর গোড়াপত্তনকারী এবং...!!!!!!

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-‘কত্তবড় স্পর্ধা। তোমার মতো একটি কালা আদমী ইউরোপীয়ান মেয়েকে বিয়ে করার সাহস কেমন করে হয়?’

আঠারো শতকের শেষের দিকে এক শেতাঙ্গ বাবার এই ভয়ানক হুমকী আয়ারল্যান্ডের মাটিতে দাঁড়িয়ে থেকেও ভারতীয় উচ্চাভিলাষী যুবককে দমাতে পারে নি।

মেয়ের বাবার চোখ রাঙানি ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে ধন্যাঢ্য আইরিশম্যানের মেয়ে প্রিয়তমা জেন ডেলিকে নিয়ে ১৭৮৬ সালের হিম ঠান্ডা এক নিশিকালো রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গেলেন দীন মোহাম্মদ আয়ারল্যান্ডের পাহাড়ঘেরা অঞ্চলে। কিন্তু...।

যে সমাজ এখনো নিজেদের উঁচুতলার মানুষ মনে করে তারা কি দীনের এই অপরিণামদর্শী আচরণ মেনে নিবে। ঠুনকো আভিজাত্য যাঁদের আল্পসসম, তাদের তা মেনে নেওয়ার কথাও না। না, মেনে নেয়ও নি।

শর্ত চড়িয়ে দেওয়া হয়। কোন এক তুষার পড়া নিস্তব্দ রাতে দীন মোহাম্মদ শেখকে এংলিকানিজম খ্রিস্টানে দীক্ষিত হতে হয়।

জীবন নিয়ে জুয়াখেলা দীনের এবার নিজেকে ইউরোপীয়দের মতো জাতে তোলার পালা। এই জাতে তুলতে গিয়ে দীন কি তাঁর মা-মাটি-মানুষকে ভুলে গিয়েছিল?

না, যায় নি। সে গল্পই শুনব আমরা আজঃ

White Mughals গ্রন্থের লেখক William Dalrymple ‘দ্যা স্পেকটেটর’ এ লেখা আর্টিকেলে দীনকে উল্লেখ করেছেন এভাবে ‘An Indian with a Triple First’.

তিনিই ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম ব্যক্তি যিনি আয়ারল্যান্ড থেকে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষায় ১৭৯৪ সালে প্রথম বই লিখে প্রকাশ করেছিলেন। বইয়ের নাম--

The Travels of Dean Mahomet,A Native of Patna in Bengal Through Several Parts of India While in the Service of the Honourable East India Company, Written by Himself in a Series of Letters to a Friend.



তিনিই প্রথম দক্ষিণ এশীয় যিনি বৃটেনে সর্বপ্রথম রেস্তরাঁ ব্যবসার গোড়াপত্তন করেন। লন্ডনের জাঁকজমকপূর্ণ এলাকা পোর্টম্যান স্কয়ারে ‘Dean Mahomet's Hindostanee Coffee House’ নাম দিয়ে যুগান্তকারী এই ঘটনার ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নেন। বিবিসির ভাষায় সেখানে উপমহাদেশ ফেরত ব্রিটিশদের জন্য তিনি বাংলার ঐতিহ্যবাহী রান্না চালু করেন। খাঁটি ভারতীয় আমেজ সৃষ্টির জন্য হুকোয় 'ছিলিম' তামাক সেবনের ব্যবস্থাও করেন।



তিনিই প্রথম ভারতীয় তথা বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি যিনি ‘শ্যাম্পু’ করা পশ্চিমা মানুষদের শিখিয়েছিলেন। এই ‘শ্যাম্পু’ নামটার আবিস্কারকও বলা যায় তাকে। shampoo শব্দটি হিন্দি ভাষার ‘চ্যাম্পি’ থেকে এসেছে যার মানে ‘মালিশ’। এজন্য দীনকে ডাকা হত ‘Shampooing Surgeon’. তিনি রাজা চতুর্থ জর্জের জন্য Vapour Bath সিস্টেম চালু করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন। তৎকালীন লন্ডন তথা বৃটেনে তিনি নিজেকে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেন। যদিও পশ্চিমারা অন্য আরো অনেক কীর্তির মতো এই আবিষ্কারও বাটপাড়ির মাধ্যমে নিজেদের করে নেয়।

তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ভেষস গাছপালার বৈজ্ঞানিক উপায়ে “Britain’s First Indian Massage Parlor’ এ থেরাপির ব্যবস্থা করেছিলেন পশ্চিমাদের জন্য। যার জন্য তাকে ডাকা হত ব্রাইটন সার্জন (Dr. Brighton) । তাঁর এই গোসল করার কৌশল এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে ইউরোপের অন্য দেশের রাজা-বাদশারাও দীনের ভেষজ চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসত। কেট এলমস এর লেখায় দেখা যায় এমনি একজন পোল্যান্ডের প্রিন্সেস Poniatowsky শুধুমাত্র বাথিং এর জন্য ব্রাইটনে এসেছিলেন এবং এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।



তিনিই প্রথম ভারতীয় তথা দক্ষিণ এশীয় যিনি পশ্চিমা দেশে গিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক কথার ব্যাপক প্রচলন করেছিলেন। নানারকম সামাজিক, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দক্ষিণ এশীয়দের রাস্তাটি প্রশস্ত থেকে প্রশস্ততর করে গিয়েছেন। আজকে বৃটেনের ৩ মিলিয়নেরও বেশি উপমহাদেশের লোকজনের মাথাউঁচু করে বসবাসের প্রথম ইট তিনিই গেঁথেছিলেন।

বাংলাপিডিয়াক্রাইটেরিয়ন কোয়ার্টারলিতে তোহিদ আহমেদ দীন মোহাম্মদকে এভাবে বর্ণনা করেছেন---

দীন মোহাম্মদ (১৭৫৯-১৮৫১) তাঁর ভ্রমণ বিষয়ক বইয়ে বলেছেন তিনি বিহারের পাটনাতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। যারা কিনা মুর্শিদাবাদের নবাবের সাথে সম্পর্কিত। (এতে বোঝা যায় তাঁর বাঙালি পরিবার নবাবের পতনের পর অন্য অনেকের মতো বাংলা ত্যাগ করে বিহারে নিবাস গড়েন, যদিও এর সত্যতা নিরুপিত হয় নি)। তাঁর বাবা সুবেদারের মর্যাদায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আন্ডারে চাকরিরত ছিলেন। যা তৎকালীন সময়ে সর্বোচ্চ পদবী। তিনি নিজেও এ চাকরিতে পরবর্তীতে যোগ দেন।

আঠার শতকের উন্মাতাল দিনগুলোতে অনেকের মতো মুসলিম শাসকদের পতনের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের অন্য অংশেও নিজেদের প্রভাব বাড়িয়ে তোলে। সেখানে নতুন ফোর্স নিয়োগ হলে দীন মোহাম্মদের বাবাও সেখানে যোগ দেয়। বাবার চাকরি সুবাদে তাঁকে ভারতীয় উপমহাদেশের নানা শহরে ঘুরতে হয়। ফলে তাদের জীবনযাত্রার একটি চিত্র তাঁর মনের গহীন কুঠিরে গাঁথা ছিল যা বই রচনার রসদ যোগায়।

দীনের বন্ধু ছিলেন বৃটিশ নাগরিক ইভান্স বেকার। তিনি কোম্পানির চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে নিজ দেশে ফেরত আসতে চাইলে দীন মোহাম্মদও বন্ধুর সাথে পশ্চিমা দেশে আসার ইচ্ছা পোষণ করেন। এখানে দীনের ভ্রমণেচ্ছু মানসিকতার সন্ধান পাওয়া যায়।


ডেলীর সাথে রোমান্স

দীন মোহাম্মদ আয়ারল্যান্ডের কর্ক শহরে পদার্পণ করেন ১৭৮৪ সালে। ইভান্সের ফ্যামিলি এই ২৫ বছরের টগবগে পড়াশুনা করতে ইচ্ছুক যুবককে স্কুলে ইংরেজি শিক্ষার জন্য পাঠায়। এবং তীব্র ইচ্ছাশক্তির জোরে অতি অল্প সময়ের মধ্যে ইংরেজি ভাষায় বেশ দক্ষ হয়ে উঠেন।

সেখানেই পরিচয় হয় অসম্ভব রুপবতী কন্যা দীনের ক্লাসমেট জেন ডেলির সাথে। জেন ছিল কর্ক শহরের বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। একে তো দীন মুসলিম আবার কালা আদমীর দেশের লোক। স্বাভাবিকভাবেই এই প্রেমের পরিণতি হওয়ার প্রশ্নই আসে না। বুঝতে পেরে একদিন কাওয়া ডাকা ভোরে দুজনে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়।

এভাবে তারা পশ্চিমের পাহাড়ে প্রায় এক বছর লুকিয়ে থাকে। অবশেষে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে জেন ডেলির পরিবার তাদের সন্ধান বের করে। এবং কিছুটা বাধ্য হয়ে তাদের বিয়েকে মেনে নেয়। তবে শর্ত ছিল ক্রিশ্চিয়ানে দীক্ষিত হতে হবে। উচ্চাভিলাষী দীন নিজের নাম পরিবর্তন না করলেও জেনের প্রেমের টানে বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করে নিজেকে ইউরোপীয় সমাজের অন্তর্ভুক্ত করেন।

ইংরেজি বই রচনা ও প্রকাশ

এত কিছুর পরেও দীন তাঁর মা-মাটি-মানুষকে ভুলতে পারেন নি। তাঁর প্রবল ইচ্ছে হল ভারতীয়দের কথা তিনি পশ্চিমাদের জানাবেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৭৯৪ সালে বের করেন তাঁর সেই বিখ্যাত ভ্রমণ বিষয়ক বই। যা বহুদিন দক্ষিণ এশীয়দের অজানায় ছিল।



তিনি শুধু বই লিখেই ক্ষান্ত হন নি। রীতিমত পণ করে মাঠে নেমেছিলেন যে এই বই পশ্চিমাদের পড়িয়ে ছাড়বেন। ফলে নিজে পাবলিশ করে আজকের মতো কর্ক একজামিনার ডেইলিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করেছিলেন। মানুষ হুমড়ি খেয়ে তা কিনেছিল। বিশেষ করে যারা সেসময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাকরি নিয়ে উপমহাদেশে আসত। এই বই ছিল তাদের কাছে এক মূল্যবান সম্পদ। কারণ এতে তাঁর ভারতীয়দের নানা দিক সম্পর্কে অবগত হত।

প্রায় দুশ বছর দীনের এই বই ভারতীয়দের কাছে অজানা এক অধ্যায় হিসেবেই ছিল। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস থেকে ১৯৯৩ সালে পূণঃপ্রকাশিত হওয়ার পরেই এ বই নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।

এরপর মাইকেল এফ ফিশার (Michael F. Fisher) এই বইয়ের নানাদিক আলোচনা করলে এর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। এবং ভারতীয় উপমহাদেশের লোকজনও জানতে পারে দীন মোহাম্মদ সম্পর্কে।

কূটনৈতিক মাহাবুব আলম তাঁর ‘খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার’ বইয়ে দীন মোহাম্মদ ও তাঁর বই নিয়ে লিখেছেনঃ

তাঁর ঢাকার বিবরণ পড়লে মনে হবে যে, শহরটির সঙ্গে দীনের ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল। তবে কি দেশ ছাড়ার আগে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছেই তাকে ঢাকা টেনে এনেছিল? এসব প্রশ্নের সদুত্তর দেওয়া কঠিন। তবে এটুকু মনে করিয়ে দেওয়া সংগত হবে যে, ঐতিহাসিক সিরাজল ইসলামের ধারণা তিনি বাংলার মানুষ এবং পূর্ব বাংলারই। ১৭৮৩ সালে ঢাকা থেকে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌকা করে কলকাতা পৌঁছেন দীন আর বেকার সাহেব।

বইটি দুস্প্রাপ্য। এখন পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে কয়েকটি মাত্র কপির সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রথম খণ্ডের পৃষ্ঠাসংখ্যা ১৯০+৩২, দ্বিতীয় খণ্ডের ১৬২+২০। লেখকের নামের জায়গায় বলা হয়েছেঃ Written by himself, in a series of letters to a friend.’ , মোট আটত্রিশখানা চিঠির আকারে লেখা, মোটামুটি একটি পরিচ্ছদ একটি চিঠি। এ রীতিতে আত্নকাহিনি লেখার নাম ‘Epistolary’ পদ্ধতি। দীন মোহাম্মদ কল্পিত পত্রে প্রাপকের নাম উল্লেখ না করে বরাবর ‘Dear Sir’ বলে সম্বোধন করছেন।


দীন মোহাম্মদের ১৭৮৩ সালের ঢাকা ঘুরে যাওয়ার বিস্তারিত রয়েছে তাঁর বইয়ের ৩৬ নাম্বার পত্রে। সেখানে লিখছেনঃ

আমরা ঢাকায় পৌঁছিলাম, বাংলা প্রদেশের সব থেকে বড় শহরগুলোর একটি, গঙ্গার একটি পূর্ব শাখা নদীর তীরে অবস্থিত। শহরটি প্রস্থে সরু, কিন্তু প্রায় পাঁচ মাইল লম্বা ও নদীপথের অনুসারে আঁকাবাঁকা। ঢাকা সোনা, রুপো ও রেশমের সূচিকার্যের জন্য বিখ্যাত।
সুতি কাপড় ও সূক্ষ্ম ডোরাকাটা আর কাজ করা মসলিন ইত্যাদি তৈরি হয়। দেশের অন্যান্য জায়গায় যা তৈরি হয় তার থেকে অনেক ভালো। সূচের কাজ সব বর্ণনার অতীত, ইউরোপে যা হয় তাঁর চেয়ে অনেক গুণে ভালো এবং লক্ষণীয়, তা মহিলারা করে না, করে পুরুষেরা, তাদের ধৈর্য আশ্চর্যজনক।
(অনুবাদঃ অরুণ নাগ, দীন মোহাম্মদের ভ্রমন বৃত্তান্ত, দেশ)।

নৌবিহারের বর্ণনাঃ

শ্যামসুন্দর নবাবের এক বজরার নাম। এক বিশাল আকৃতির আকর্ষনীয় কারুকার্য খচিত এ নৌকা। ভেনিসের নরপতি যেমন গদি দখলের দিনটি উদযাপন করেন নদীতে নৌবিহার করে, তেমনি ইউরোপের ভেনিস ঢাকায়ও নবাব তাঁর গদি আরোহণের দিনটি উদযাপন করে থাকেন শ্যামসুন্দরে চড়ে নদীতে উৎসব করে।
শ্যামসুন্দর নামের বজরাটি রূপার পাত দিয়ে মোড়ানো। নৌকার মধ্য ভাগে একটি প্লাটফর্মে একটি বেদি স্থাপন করা হয় রূপা দিয়ে মোড়াই করে। বেদিটির চারপাশে সাজিয়ে স্থাপন করা হয় নৌকার নইলচা। মাথার উপরে শামিয়ানা হিসেবে স্থাপন করা হয় একটি সুসজ্জিত সোনার জরির চাঁদোয়া। চাঁদোয়ার নিচে তাকিয়ায় কনুই রেখে আরামে আসন নেন নবাব। শ্যামসুন্দরের সাজ-সজ্জা, মাঝি-মাল্লা প্রভৃতি বাবদ খরচ হয় লক্ষাধিক টাকা।
(অনুবাদঃ সিরাজুল ইসলাম, ঐতিহাসিকের নোটবুক)।

আজকের বৃটেনের রেস্তরাঁ শিল্পের তুলির প্রথম আঁচড়টা তিনিই দিয়েছিলেন। ফলেই ৩ বিলিয়ন ডলার ব্যবসা আজ প্রায় সবটাই বাংলাদেশী তথা উপমহাদেশের হাতে।



কিন্তু দুর্ভাগ্য গুণী এই মানুষের নামই আমরা বেশির ভাগ শুনি নি। এর কারণ কি আমি বুঝে উঠতে পারি নি। ইন্ডিয়ান ইংলিশ লিটারেচার বিষয়ে লিখিত উইকিপিডিয়ার প্রবন্ধেও এ বিষয়ে এক লাইন লিখেই সমাপ্তি টেনেছে। এর বাইরে কোথাও তেমন আলোচনাও চোখে পড়ে না। কিন্তু আমার মতে এটা আরো অনেক বেশি আলোচিত হওয়া দরকার ছিল ভারত, পাকিস্থান, বাংলাদেশে। কারণ দীন মোহাম্মদ যে প্রতিকূল অবস্থায় এত সব অর্জন করেছেন এর সিকিভাগ অর্জন নিয়েও অনেকে নিজেদের এলিট জাতে তুলে রেখেছেন। সে জন্যই ভাবনাগুলো উঁকি দিচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে দীন মোহাম্মদের কেন আলোচিত হওয়া উচিত। কারণঃ

১। যে সময় কালা পানি ডিঙ্গিয়ে বিলেত যাওয়াকে পাপ হিসেবে গণ্য হত, সেখানে দীন রাজা রামমোহনের রায়ের প্রায় অর্ধ-শতাব্দি আগে বিলেতে গমন করেন। এক যুগান্তকারী ঘটনায় বটে।

২। নবাবের তথা মুসলিম শাসনের অবসানের পর মুসলিমরা ইংরেজদের সাহায্য করতে বিরত থাকে। ইংরেজি শিক্ষাতেও আলোকবর্ষ পিছিয়ে পড়ে হিন্দু ভাইদের কাছে। এর পরেও একজন মুসলমান নামধারী (যদিও পরবর্তীতে খ্রিস্টান) কেউ গোটা উপমহাদেশের মধ্যে প্রথম ইংরেজি ভাষায় বই লিখে ফেলেছে এ এক অবিস্মরণীয় ঘটনা হিসেবেই বিবেচিত হওয়া উচিত।

৩। আজকের ভারতীয় তথা বাংলাদেশীদের বৃটেনে রেস্তরাঁ শিল্পে রমরমা অবস্থার পিছনে যে ব্যক্তির ওয়ান ম্যান আর্মির ভূমিকা নিয়ে বিন্দু থেকে সিন্ধুতে পরিণত করেছেন সেই ব্যক্তির নাম আলোচিত না হওয়ার কারণ কি?

৪। শ্যাম্পু শব্দটার ব্যবহার ও ডিকশনারীতে উঠাতে যে ব্যক্তির ত্যাগ-তিতিক্ষার উচ্চতা এভারেস্ট শিখর ছুঁয়েছে তাঁর অবদান কি হিসেবে বিবেচিত হবে?

৫। আজকেরবৃটেনে উপমহাদেশের কমিউনিটির সাড়াজাগানো উপস্থিতিযাঁর হাত ধরে গোড়াপত্তন ঘটেছে সেই মানুষের পরিচিতি এত ঘোলাটে হওয়া কি উচিত?

ব্রাইটনের সেন্ট নিকোলাস চার্চের গ্রেইভইয়ার্ডে শায়িত আছে এই অালোচিত কিংবদন্তিতুল্য মানুষটি।



তথ্যসূত্র: লেখাতে উল্লিখিত ও লিংক যুক্ত করা হয়েছে।
ছবি: গুগল মামা।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৩৫
৩৬টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×