জামাইয়ের ডিম ভেবে আবার চমকে উঠবেন না দয়া করে। এখনও বউয়ের প্যাঁদানিতে জামাইদের অবস্থা এতটা খারাপ হয় নি যে ডিম পাড়া শুরু করবে।
এটা আসলে জামাইয়ের সাথে তেঁতুল ও ডিমের সমাহার। জিনিসটা খোলাসা করছি। কখনও কখনও তেঁতুল ও জামাই মিলে যে জাতীয় মর্যাদার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তারই মোহনীয় গল্প এটা।
Son-in-Law Eggs বা জামাই ডিম (এরচেয়ে জুতসই ভাষান্তর আমার পক্ষে সম্ভব হল না) হল থাইল্যান্ডের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। কখনও ব্যাংককে গেলে ভিক্টরি মনুমেন্টের কাছে ফুড স্ট্রিটে টেস্ট করে দেখতে পারেন। আমাদের ডিমের কারির মতো। কিন্তু ঐ যে তেঁতুল---যার গুণে এটা এখন থাইবাসীদের ট্রেডিশনাল ডিশ। রেসিপি সিম্পল। বাঙালী স্টাইলে সিদ্ধ ডিমকে হালকা গরম তেলে কড়াইয়ে ভেজে দু ফালি করে কেটে নিন। হাল্কা কিছু মশলাপাতি ও সুগার দিন। এরপরে সেখানে কাঙ্খিত তেঁতুলের রস ঢেলে দিন। ব্যাস, হয়ে গেল জামাই ডিম। সহজ ও বিখ্যাত রেসিপি।
পেছনের গল্পটাও শুনুন তাহলে। কেন এটা বিখ্যাত? কিংবদন্তি বলে, থাই শ্বাশুড়ীর মনে হচ্ছে তার মেয়েকে জামাই বাবাজী সুখে রাখছে না। এতে শ্বাশুড়ী আম্মা কিছুটা মনক্ষুণ্ণ। তাই জামাইকে একটু টাইট দেওয়ার জন্য কিংবা ধরেন বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য যে জামাইয়ের তার মেয়ের প্রতি এই অবহেলা করা ঠিক হচ্ছে না। তাই সাধারণ ডিম কারিতে তেঁতুলের ঘোল দিয়ে টক-মিষ্টি-ঝালের এক অদ্ভূত রেসিপি উপহার দেয় শায়েস্তা করার জন্য। জামাই কেন জানি সেটা খেয়ে নাখোস হওয়ার বদলে জমে দই হয়ে যায়। পরে সেটাই কালক্রমে ‘জামাই ডিম’ রেসিপি হিসেবে পৃথিবী বিখ্যাত হয়ে পড়ে।
মানে হচ্ছে শত্রুকে বন্ধুতে রূপান্তরে পাতে একটু তেঁতুলের রস ছড়িয়ে দিলে---মাশাল্লা সবকিছু জমে দই হতে সময় লাগার কথা না।
আমাদের সমাজেও তাই এখন দেখছি তেঁতুলের রসের ছড়াছড়ি। সবাই ধান্ধা করছে সবকিছু যদি জমে ক্ষীর হয় তাতে মন্দ কি!! যে আমচুল আমচুল (টক টক) তেঁতুলের রসে সুশীলরা মুখ বেঁকিয়ে থাকত। তারাও সেটা এখন খেয়ে বলছে। আহ, কী অমৃত একখান মাইরি!! অম্বলের নিদানের জন্য ফার্স্টক্লাস।
অর্থাৎ সময়ের মারিং কাটিং এ তেঁতুলও জাতির কাছে মিষ্টি লাগতে শুরু করে। অম্বল উপশমে সমাদৃত হয়। ভাবছি এবার একটা তেঁতুল বাগান করব। ব্যবসা মন্দ হওয়ার কথা না। কারণ ভবিষ্যতে এর কদর বাড়বে বৈ কমবে না!!!
এবার একটা কৌতুক শুনে নেইঃ
শিক্ষকঃ এই গুড্ডু খাড়া হ ! বল দেখিনি, দুধ থেকে দই তৈরির একটি সহজ ও সুন্দর উপায়।
ছাত্রঃ এ আর এমন কঠিন কি স্যার। এতো ভীষণ সহজ প্রশ্ন। গাভীকে এক বাটি তেঁতুল সুপ খাওয়ালেই হবে।
তাই তো বলি, চারিদিকে এত তেঁতুলের গুণগান ক্যান!! গাভীকে তেঁতুল খাওয়ালেই যদি দুধ জমে দই হয়ে যায়, তাহলে এত সহজ ও সুন্দর পদ্ধতির সদ্ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা কি উচিত আমাদের?
*****************************************************************************************************
@অাখেনাটেন/২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৩০