somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এসব রাইম, ছড়া, ছন্দ কবিতা ঠোঁটের মুখের আশেপাশে আজীবন লুকিয়ে থাকে

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাচ্চা যখন হাঁটা শিখলো, টুকটাক কথা বলতে শিখলো, আহা বাড়িতে কি আনন্দ। বাচ্চাও বাড়ীর চারদিকে মনের আনন্দে দৌড়াদৌড়ি আর মুখে ঠোঁটে লাগিয়ে কথার ফুলঝুড়ি উড়াতে থাকে। মা খাবার সময় কি সুন্দর রাইম বলে খাওয়াচ্ছে, দাদী কি মধুর রাইম বলে ঘুম পাড়াচ্ছে। এটা ছিল আমাদের ছোটবেলার একটা কমন পিকচার। তারপর বাচ্চা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। এক সময় সেসব রাইম সে মুখস্ত করতে থাকে। বাড়িতে কোন মেহমান আসলে বা কোথাও বেড়াতে গেলে সে মনের আনন্দে, অনেক সময় বাবা মা দাদা দাদির আগ্রহে সেসব রাইম মাথা দুলিয়ে হাত নাড়িয়ে সবাইকে শুনাচ্ছে। এক সময় সে স্কুলে যেতে শুরু করল। পাঠ্য বইয়ের সুন্দর সুন্দর ছড়া ,সুন্দর সুন্দর ছন্দ কবিতা মুখস্ত করতে লাগলো। তিন চার ক্লাস পর সে সব কবিতা পরিক্ষার খাতার কবির নামসহ দশ লাইন মুখস্ত লিখতে হচ্ছে। কবির নাম বা কবিতার নাম ভুল হলে, কোন বানান ভুল হলে অথবা দাড়ি কমা মিস হলে মার্ক কাঁটা হচ্ছে। আহা কি মধুর সেই বেড়ে উঠা!!

এই যে রাইমগুলা শুনিয়ে আমাদের ঘুম পাড়ানো হত, আমাদের খাওয়ানো হত, আমরা সেসব অর্থহীন রাইম মুখস্ত করতাম। তারপর আমরা সে সব ছড়া কবিতা মুখস্ত করতাম, স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আবৃত্তি করতাম, পরিক্ষায় খাতায় নির্ভুলভাবে লেখার চেষ্টা করতাম। এসব রাইম, এসব ছড়া, ছন্দ কবিতা কি ভুলে যাওয়া যায়??? এসব দিন বুকের খাঁচায় আজীবন থেকে যায়। এসব রাইম, ছড়া, ছন্দ কবিতা ঠোঁটের মুখের আশেপাশে আজীবন লুকিয়ে থাকে।

ছোটবেলায় পড়া সেসব রাইম, ছড়া, ছন্দ কবিতা থেকে কয়েকটা শেয়ার করলাম

আগডুম বাগডুম
আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে
ডাক -ঢোল ঝাঁঝর বাজে
বাজতে বাজতে চলল ঢুলি
ঢুলি গেল কমলাফুলি
কমলাফুলির টিয়েটা
সুর্যি মামার বিয়েটা ।



গোল করোনা গোল করোনা
গোল করোনা গোল করোনা
খোকন ঘুমায় খাটে
সেই ঘুমকে কিনতে হবে
নবাব বাড়ির হাটে।
সোনা নয় রূপা নয়
দিলাম মতির মালা
তাইতে খোকন ঘুমিয়ে আছে
ঘর করে উজালা ।



বাক বাকুম পায়রা
রোকনুজ্জামান খান
বাক্ বাক্ কুম পায়রা
মাথায় দিয়ে টায়রা
বউ সাজবে কালকি?
চড়বে সোনার পালকি?
পালকি চলে ভিন গাঁ-
ছয় বেহারার তিন পা।
পায়রা ডাকে বাকুম বাক্
তিন বেহারার মাথায় টাক।
বাক্ বাকুম কুম্ বাক্ বাকুম
ছয় বেহারার নামলো ঘুম।
থামলো তাদের হুকুম হাঁক
পায়রা ডাকে বাকুম্ বাক্।
ছয় বেহারা হুমড়ি খায়
পায়রা উড়ে কোথায় যায়?






আতা গাছে তোতা পাখি
আতা গাছে তোতা পাখি
ডালিম গাছে মউ
এত ডাকি তবু কথা
কয়না কেন বউ!



নোটন নোটন পায়রাগুলি
নোটন নোটন পায়রাগুলি
ঝোটন বেঁধেছে
ওপারেতে ছেলেমেয়ে
নাইতে নেমেছে।
দুই ধারে দুই রুই কাতলা
ভেসে উঠেছে
কে দেখেছে কে দেখেছে
দাদা দেখেছে
দাদার হাতে কলম ছিল
ছুঁড়ে মেরেছে
উঃ বড্ড লেগেছে।



আয়রে আয় টিয়ে
আয়রে আয় টিয়ে
নায়ে ভরা দিয়ে
না' নিয়ে গেল বোয়াল মাছে
তাই না দেখে ভোদড় নাচে
ওরে ভোদড় ফিরে চা
খোকার নাচন দেখে যা।



খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়াল
খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়াল
বর্গী এল দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছ,
খাজনা দেব কিসে?
ধান ফুরাল, পান ফুরাল,
খাজনার উপায় কী?
আর কটা দিন সবুর কর,
রসুন বুনেছি।





বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
নদে এল বান,
শিব ঠাকুরের বিয়ে হল
তিন কন্যা দান।
এক কন্যে রাঁধেন বাড়েন
এক কন্যে খান,
এক কন্যে ঘুস্যা করে
বাপের বাড়ি যান।



হাটিমাটিম টিম
হাটিমাটিম টিম
তারা মাঠে পাড়ে ডিম
তাদের খাড়া দুটি শিং
তারা হাটিমাটিম টিম ।



ঘুম পাড়ানী মাসি পিসি!
ঘুম পাড়ানী মাসি পিসি
মোদের বাড়ী এসো
খাট নাই পালং নাই
চোখ পেতে বস,
বাটা ভরা পান দেব
গাল ভরে খেয়ো,
খোকার চোখে ঘুম নাই
ঘুম দিয়ে যেও !



আম পাতা জোড়া জোড়া
আম পাতা জোড়া জোড়া
মারবো চাবুক চড়বো ঘোড়া
ওরে বুবু সরে দাঁড়া
আসছে আমার পাগলা ঘোড়া
পাগলা ঘোড়া খেপেছে
চাবুক ছুঁড়ে মেরেছে!



খোকন খোকন
খোকন খোকন করে মায়
খোকন গেছে কাদের নায়
সাতটা কাকে দাঁড় বায়
খোকনরে তুই ঘরে আয়।





খোকা যাবে রথে চড়ে
খোকা যাবে রথে চড়ে
ব্যাঙ হবে সারতি
মাটির পুতুল লটর পটর
পিপড়ে ধরে ছাতি



আয় আয় চাঁদ মামা
আয় আয় চাঁদ মামা
টিপ দিয়ে যা
চাঁদের কপালে চাঁদ
টিপ দিয়ে যা।
ধান ভানলে কুঁড়ো দেব
মাছ কাটলে মুড়ো দেব
কাল গাইয়ের দুধ দেব
দুধ খাবার বাটি দেব
চাঁদের কপালে চাঁদ
টিপ দিয়ে যা।



কমলা ফুলি
কমলাফুলি কমলাফুলি,কমলালেবুর ফুল
কমলাফুলির বিয়ে হবে কানে মোতির দুল
কমলাফুলির বিয়ে দেখতে যাবে
ফলার খাবে চন্দনা আর টিয়ে,
কোথায় থাকো কমলাফুলি ?
‘সিলেট আমার ঘর’
টিয়ে বলে দেখতে যাব পাখায় দিয়ে ভর।

খুকু যাবে বেড়াতে
খুকু যাবে বেড়াতে
লাল শালিকের পাড়াতে
কি কি যাবে পরে?
কে দেবে তা গড়ে?
ঘুঙুর দিবে পায়ে
মেঘের জামা গায়ে
চাঁদের সুতো কুড়িয়ে
শাড়ী দিব গড়িয়ে
খুকু যাবে বেড়াতে
মেঘপরীদের ডেরাতে
যাবে সে কোন পথ দিয়ে
কে দিবে তা বাঁধিয়ে
রামধনুকের পথখানি
মেঘের বুকে দাও টানি
টিয়ে পাখির পাখ দিয়ে
দিব সে পথ বাঁধিয়ে
খুকু আসবে বেড়িয়ে
দুধ দুব জুড়িয়রিয়



ঐ দেখা যায় তাল গাছ
ঐ দেখা যায় তাল গাছ
ঐ আমাদের গাঁ
ঐখানেতে বাস করে
কাঁনাবগির ছাঁ!
ও বগি তুই খাস কী?
পান্তা ভাত চাস কী?
পান্তা আমি খাইনা
পুঁটি মাছ পাইনা
একটা যদি পাই
অমনি ধরে গাপুস গুপুস খাই .



হনহন পনপন
সুকুমার রায়
চলে হনহন
ছোটে পনপন
ঘোরে বনবন
কাজে ঠনঠন
বায়ু শনশন
শীতে কনকন
কাশি খনখন
ফোঁড়া টনটন
মাছি ভনভন
থালা ঝন ঝন।।

মামার বাড়ি
জসীম উদ্দিন
আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা,
ফুল তুলিতে যাই
ফুলের মালা গলায় দিয়ে
মামার বাড়ি যাই।
মামার বাড়ি পদ্মপুকুর
গলায় গলায় জল,
এপার হতে ওপার গিয়ে
নাচে ঢেউয়ের দল।
দিনে সেথায় ঘুমিয়ে থাকে
লাল শালুকের ফুল,
রাতের বেলা চাঁদের সনে
হেসে না পায় কূল।
আম-কাঁঠালের বনের ধারে
মামা-বাড়ির ঘর,
আকাশ হতে জোছনা-কুসুম
ঝরে মাথার ‘পর।
রাতের বেলা জোনাক জ্বলে
বাঁশ-বাগানের ছায়,
শিমুল গাছের শাখায় বসে
ভোরের পাখি গায়।
ঝড়ের দিনে মামার দেশে
আম কুড়াতে সুখ
পাকা জামের শাখায় উঠি
রঙিন করি মুখ।
কাঁদি-ভরা খেজুর গাছে
পাকা খেজুর দোলে
ছেলেমেয়ে, আয় ছুটে যাই
মামার দেশে চলে।



সংকল্প
কাজী নজরুল ইসলাম
থাকব না’ক বদ্ধ ঘরে
দেখব এবার জগৎটাকে
কেমন করে ঘুরছে মানুষ
যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।
দেশ হতে দেশ দেশান্তরে
ছুটছে তারা কেমন করে,
কিসের নেশায় কেমন করে
মরছে যে বীর লাখে লাখে।
কিসের আশায় করছে তারা
বরণ মরণ যন্ত্রণাকে
কেমন করে বীর ডুবুরি
সিন্ধু সেঁচে মুক্তা আনে,
কেমন করে দুঃসাহসী
চলছে উড়ে স্বর্গপানে।
হাউই চড়ে চায় যেতে কে
চন্দ্রলোকের অচিনপুরে,
শুনব আমি, ইঙ্গিতে কোন
মঙ্গল হতে আসছে উড়ে।
পাতাল ফেড়ে নামব আমি
উঠব আমি আকাশ ফুঁড়ে,
বিশ্বজগৎ দেখব আমি
আপন হাতের মুঠোয় পুরে।



খোকার সাধ
কাজী নজরুল ইসলাম
আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুম-বাগে উঠব আমি ডাকি।
সূয্যিমামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে,
'হয়নি সকাল, ঘুমো এখন'- মা বলবেন রেগে।
বলব আমি, 'আলসে মেয়ে ঘুমিয়ে তুমি থাক,
হয়নি সকাল- তাই বলে কি সকাল হবে না কা!
আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?
তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে!'
ঊষা দিদির ওঠার আগে উঠব পাহাড়-চূড়ে,
দেখব নিচে ঘুমায় শহর শীতের কাঁথা মুড়ে,
ঘুমায় সাগর বালুচরে নদীর মোহনায়,
বলব আমি 'ভোর হল যে, সাগর ছুটে আয়!
ঝর্ণা মাসি বলবে হাসি', 'খোকন এলি নাকি?'
বলব আমি নই কো খোকন, ঘুম-জাগানো পাখি!'
ফুলের বনে ফুল ফোটাব, অন্ধকারে আলো,
সূয্যিমামা বলবে উঠে, 'খোকন, ছিলে ভাল?'
বলব 'মামা, কথা কওয়ার নাই ক সময় আর,
তোমার আলোর রথ চালিয়ে ভাঙ ঘুমের দ্বার।'
রবির আগে চলব আমি ঘুম-ভাঙা গান গেয়ে,
জাগবে সাগর, পাহাড় নদী, ঘুমের ছেলেমেয়ে!



খুকি ও কাঠবেড়ালি
কাজী নজরুল ইসলাম
কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি! পেয়ারা তুমি খাও?
গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? বাতাবি-নেবু? লাউ?
বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর-ছানা? তাও-

ডাইনি তুমি হোঁৎকা পেটুক,
খাও একা পাও যেথায় যেটুক!
বাতাবি-নেবু সকলগুলো
একলা খেলে ডুবিয়ে নুলো!
তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে পুটুস পাটুস চাও?
ছোঁচা তুমি! তোমার সঙ্গে আড়ি আমার! যাও!

কাঠবেড়ালি! বাঁদরীমুখী! মারবো ছুঁড়ে কিল?
দেখবি তবে? রাঙাদাকে ডাকবো? দেবে ঢিল!

পেয়ারা দেবে? যা তুই ওঁচা!
তাই তোর নাকটি বোঁচা!
হুতমো-চোখী! গাপুস গুপুস
একলাই খাও হাপুস হুপুস!

পেটে তোমার পিলে হবে! কুড়ি-কুষ্টি মুখে!
হেই ভগবান! একটা পোকা যাস পেটে ওর ঢুকে!

ইস! খেয়ো না মস্তপানা ঐ সে পাকাটাও!
আমিও খুবই পেয়ারা খাই যে! একটি আমায় দাও!
কাঠবেড়ালি! তুমি আমার ছোড়দি’ হবে? বৌদি হবে? হুঁ!
রাঙা দিদি? তবে একটা পেয়ারা দাও না! উঃ!

এ রাম! তুমি ন্যাংটা পুঁটো?
ফ্রকটা নেবে? জামা দুটো?
আর খেয়ো না পেয়ার তবে,
বাতাবি-নেবুও ছাড়তে হবে!
দাঁত দেখিয়ে দিচ্ছ ছুট? অ’মা দেখে যাও!-
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!



প্রভাতী
কাজী নজরুল ইসলাম
ভোর হলো দোর খোলো
খুকুমণি ওঠ রে!
ঐ ডাকে যুঁই-শাখে
ফুল-খুকি ছোটরে!
রবি মামা দেয় হামা
গায়ে রাঙা জামা ঐ,
দারোয়ান গায় গান
শোন ঐ, রামা হৈ!'
ত্যাজি নীড় করে ভিড়
ওড়ে পাখি আকাশে
এন্তার গান তার
ভাসে ভোর বাতাসে।
চুলবুল বুলবুল
শিস্ দেয় পুষ্পে,
এইবার এইবার
খুকুমণি উঠবে!
খুলি হাল তুলি পাল
ঐ তরী চললো,
এইবার এইবার
খুকু চোখ খুললো।
আলসে নয় সে
ওঠে রোজ সকালে
রোজ তাই চাঁদা ভাই
টিপ দেয় কপালে।
উঠলো ছুটলো ওই
খোকা খুকি সব,
''উঠেছে আগে কে''
ঐ শোনো কলরব।
নাই রাত মুখ হাত
ধোও, খুকু জাগো রে!
জয়গানে ভগবানে
তুষি' বর মাগো রে।

লিচু-চোর
কাজী নজরুল ইসলাম
বাবুদের তাল-পুকুরে
হাবুদের ডাল-কুকুরে
সে কি বাস্ করলে তাড়া,
বলি থাম্ একটু দাঁড়া।
পুকুরের ঐ কাছে না
লিচুর এক গাছ আছে না
হোথা না আস্তে গিয়ে
য়্যাব্বড় কাস্তে নিয়ে
গাছে গ্যে যেই চড়েছি
ছোট এক ডাল ধরেছি,
ও বাবা, মড়াৎ করে
পড়েছি সড়াৎ জোরে!
পড়বি পড় মালীর ঘাড়েই,
সে ছিল গাছের আড়েই।
ব্যাটা ভাই বড় নচ্ছার,
ধুমাধুম গোটা দুচ্চার
দিল খুব কিল ও ঘুসি
একদম জোরসে ঠুসি!
আমিও বাগিয়ে থাপড়
দে হাওয়া চাগিয়ে কাপড়
লাফিয়ে ডিঙনু দেয়াল,
দেখি এক ভিটরে শেয়াল!
আরে ধ্যাৎ শেয়াল কোথা?
ভোলাটা দাঁড়িয়ে হোথা!
দেখে যেই আঁতকে ওঠা
কুকুরও জাড়লে ছোটা!
আমি কই কম্ম কাবার
কুকুরেই করবে সাবাড়!
'বাবা গো মা গো' বলে
পাঁচিলের ফোঁকল গলে
ঢুকি গ্যে বোসদের ঘরে,
যেন প্রাণ আসলো ধড়ে!
যাব ফের? কান মলি ভাই,
চুরিতে আর যদি যাই!
তবে মোর নামই মিছা!
কুকুরের চামড়া খিঁচা
সে কি ভাই যায় রে ভুলা-
মালীর ঐ পিটনিগুলা!
কি বলিস্? ফের হপ্তা!
তৌবা-নাক খপতা।



বাবুরাম সাপুড়ে
সুকুমার রায়
বাবুরাম সাপুড়ে,
কোথা যাস্ বাপুরে?
আয় বাবা দেখে যা,
দুটো সাপ রেখে যা!
যে সাপের চোখ্ নেই,
শিং নেই নোখ্ নেই,
ছোটে না কি হাঁটে না,
কাউকে যে কাটে না,
করে নাকো ফোঁস্ ফোঁস্,
মারে নাকো ঢুঁশ ঢাঁশ,
নেই কোন উৎপাত,
খায় শুধু দুধ ভাত-
সেই সাপ জ্যান্ত
গোটা দুই আনত?
তেড়ে মেরে ডান্ডা
করে দিই ঠান্ডা।



আমাদের ছোট গ্রাম
বন্দে আলী মিয়া
আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর,
থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর৷
পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই,
এক সাথে খেলি আর পাঠশালে যাই৷
আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান,
আলো দিয়ে, বায়ু দিয়ে বাঁচাইয়াছে প্রাণ৷
মাঠ ভরা ধান তার জল ভরা দিঘি,
চাঁদের কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি৷
আম গাছ, জাম গাছ, বাঁশ ঝাড় যেন,
মিলে মিশে আছে ওরা আত্মীয় হেন৷
সকালে সোনার রবি পুব দিকে ওঠে,
পাখি ডাকে, বায়ু বয়, নানা ফুল ফোটে৷.



তালগাছ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে
সব গাছ ছাড়িয়ে
উঁকি মারে আকাশে।
মনে সাধ, কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়,
একেবারে উড়ে যায়;
কোথা পাবে পাখা সে?
তাই তো সে ঠিক তার মাথাতে
গোল গোল পাতাতে
ইচ্ছাটি মেলে তার, -
মনে মনে ভাবে, বুঝি ডানা এই,
উড়ে যেতে মানা নেই
বাসাখানি ফেলে তার।
সারাদিন ঝরঝর থত্থর
কাঁপে পাতা-পত্তর,
ওড়ে যেন ভাবে ও,
মনে মনে আকাশেতে বেড়িয়ে
তারাদের এড়িয়ে
যেন কোথা যাবে ও।
তার পরে হাওয়া যেই নেমে যায়,
পাতা কাঁপা থেমে যায়,
ফেরে তার মনটি
যেই ভাবে, মা যে হয় মাটি তার
ভালো লাগে আরবার
পৃথিবীর কোণটি।

আমার পণ
মদনমোহন তর্কালঙ্কার
সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি,
সারাদিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি।
আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে,
আমি যেন সেই কাজ করি ভাল মনে।
ভাইবোন সকলেরে যেন ভালবাসি,
এক সাথে থাকি যেন সবে মিলেমিশি।
ভাল ছেলেদের সাথে মিশে করি খেলা,
পাঠের সময় যেন নাহি করি হেলা।
সুখী যেন নাহি হই আর কারো দুখে,
মিছে কথা কভু যেন নাহি আসে মুখে।
সাবধানে যেন লোভ সামলিয়ে থাকি,
কিছুতে কাহারে যেন নাহি দেই ফাঁকি।
ঝগড়া না করি যেন কভু কারো সনে
সকালে উঠিয়া এই বলি মনে মনে।

পারিব না
কালী প্রসন্ন ঘোষ
পারিব না এ কথাটি বলিও না আর
কেন পারিবে না তাহা ভাব এক বার,
পাঁচজনে পারে যাহা,
তুমিও পারিবে তাহা,
পার কি না পার কর যতন আবার
এক বারে না পারিলে দেখ শত বার।

পারিব না বলে মুখ করিও না ভার,
ও কথাটি মুখে যেন না শুনি তোমার,
অলস অবোধ যারা
কিছুই পারে না তারা,
তোমায় তো দেখি নাক তাদের আকার
তবে কেন পারিব না বল বার বার?

জলে না নামিলে কেহ শিখে না সাঁতার
হাঁটিতে শিখে না কেহ না খেয়ে আছাড়,
সাঁতার শিখিতে হলে
আগে তব নাম জলে,
আছাড়ে করিয়া হেলা, হাঁট বার বার
পারিব বলিয় সুখে হও আগুয়ান।

কে?
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
বল দেখি এ জগতে ধার্মিক কে হয়,
সর্ব জীবে দয়া যার, ধার্মিক সে হয়।
বল দেখি এ জগতে সুখী বলি কারে,
সতত আরোগী যেই, সুখী বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে বিজ্ঞ বলি কারে,
হিতাহিত বোধ যার, বিজ্ঞ বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে ধীর বলি কারে,
বিপদে যে স্থির থাকে, ধীর বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে মূর্খ বলি কারে,
নিজ কার্য নষ্ট করে, মূর্খ বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে সাধু বলি কারে,
পরের যে ভাল করে, সাধু বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে জ্ঞানী বলি কারে,
নিজ বোধ আছে যার জ্ঞানী বলি তারে।

কাজলা দিদি
যতীন্দ্র মোহন বাগচী
বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে লেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই-
মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?
সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;-
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন, দিদি বলে ডাকি তখন,
ওঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
আমি ডাকি তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
বল মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে!
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে, আমিও যদি লুকাই গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে,
আমিও নাই-দিদিও নাই- কেমন মজা হবে।
ভুঁই চাপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল।
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিও না মা, ছিঁড়তে গিয়ে ফল,-
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবি কি মা বল!
বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই-
এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
লেবুর ধারে পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে'
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতে জেগে রই
রাত্রি হলো মাগো আমার কাজলা দিদি কই?





স্বর্গ ও নরক
শেখ ফজলুল করিম
কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর?
মানুষেরি মাঝে স্বর্গ নরক, মানুষেতে সুরাসুর!
রিপুর তাড়নে যখনই মোদের বিবেক পায় গো লয়,
আত্মগ্লানির নরক-অনলে তখনি পুড়িতে হয়।
প্রীতি ও প্রেমের পূণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরষ্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরি কুঁড়ে ঘরে।

আজিকার শিশু
সুফিয়া কামাল
আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা
তোমরা এ যগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেল।
আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি
তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি।
উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরু সব তোমাদের জানা
আমরা শুনেছি সেখানে রয়েছে জিন ,পরী, দেও, দানা।
পাতালপুরীর অজানা কাহিনী তোমরা শোনাও সবে
মেরুতে মেরুতে জানা পরিচয় কেমন করিয়া হবে।
তোমাদের ঘরে আলোর অভাব কভূ নাহি হবে আর
আকাশ-আলোক বাঁধি আনি দূর করিবে অন্ধকার।
শস্য-শ্যামলা এই মাটি মা'র অঙ্গ পুষ্ট করে
আনিবে অটুট স্বাস্থ্য, সবল দেহ-মন ঘরে ঘরে।
তোমাদের গানে, কল-কলতানে উছসি উঠিবে নদী-
সরস করিয়া তৃণ ও তরুরে বহিবে সে নিরবধি
তোমরা আনিবে ফুল ও ফসল পাখি-ডাকা রাঙা ভোর
জগৎ করিবে মধুময়, প্রাণে প্রাণে বাঁধি প্রীতিডোর।

পল্লী স্মৃতি
সুফিয়া কামাল
বহুদিন পরে মনে পড়ে আজি পল্লী ময়ের কোল,
ঝাউশাখে যেথা বনলতা বাঁধি হরষে খেয়েছি দোল
কুলের কাটার আঘাত লইয়া কাঁচা পাকা কুল খেয়ে,
অমৃতের স্বাদ যেন লভিয়াছি গাঁয়ের দুলালী মেয়ে
পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসে খুশীতে বিষম খেয়ে,
আরো উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে।
চৈত্র নিশির চাঁদিমায় বসি' শুনিয়াছি রূপকথা,
মনে বাজিয়াছে সুয়ো দুয়োরাণী দুখিনি মায়ের ব্যথা।
তবু বলিয়াছি মার গলা ধরে, "মাগো, সেই কথা বল,
রাজার দুলালে পাষাণ করিতে ডাইনী করে কি ছল!
সাতশ' সাপের পাহারা কাটায়ে পাতালবাসিনী মেয়ে,
রাজার ছেলেরে বাঁচায়ে কি করে পৌঁছিল দেশে যেয়ে।"
কল্পপূরীর স্বপনের কাঠি বুলাইয়া শিশু চোখে
তন্দ্রদোলায় লয়ে যেত মোরে কোথা দূর ঘুমলোকে
ঘুম হতে জেগে বৈশাখী ঝড়ে কুড়ায়েছি ঝরা আম
খেলার সাথীরা কোথা আজ তারা? ভুলিয়াও গেছি নাম।
নববর্ষার জলে অবগাহি কভু পুলকিত মনে
গান গাহিয়াছি মল্লার রাগে বাদলের ধারা সনে;
শিশির সিক্ত শেফালী ফুলের ঘন সৌরভে মাতি'
শারদ প্রভাতে সখীগন সাথে আনিয়াছি মালা গাঁথি'।
পল্লী নদীর জলে ভাসাইয়া মোচার খেলার তরী,
কাঁদিয়া ফিরেছি সাঁঝের আলোতে পুতুল বিদায় করি'।
আগামী দিনের আশা-ভরসার কত না মধুর ছবি
ফুঁটিয়া উঠেছে আঁখির পাতায় ডুবেছে যখন রবি।

বড় কে?
হরিশচন্দ্র মিত্র
আপনারে বড় বলে, বড় সেই নয়
লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়।
বড় হওয়া সংসারেতে কঠিন ব্যাপার
সংসারে সে বড় হয়, বড় গুণ যার।
গুণেতে হইলে বড়, বড় বলে সবে
বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে।

আযান
কায়কোবাদ
কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
কি মধুর আযানের ধ্বনি!

আমি তো পাগল হয়ে সে মধুর তানে,
কি যে এক আকর্ষণে, ছুটে যাই মুগ্ধমনে
কি নিশীথে, কি দিবসে মসজিদের পানে।
হৃদয়ের তারে তারে, প্রাণের শোণিত-ধারে,
কি যে এক ঢেউ উঠে ভক্তির তুফানে-
কত সুধা আছে সেই মধুর আযানে।

নদী ও পাখির গানে তারই প্রতিধ্বনি।
ভ্রমরের গুণ-গানে সেই সুর আসে কানে
কি এক আবেশে মুগ্ধ নিখিল ধরণী।
ভূধরে, সাগরে জলে নির্ঝরণী কলকলে,
আমি যেন শুনি সেই আযানের ধ্বনি।
আহা যবে সেই সুর সুমধু স্বরে,
ভাসে দূরে সায়াহ্নের নিথর অম্বরে,
প্রাণ করে আনচান, কি মধুর সে আযান,
তারি প্রতিধ্বনি শুনি আত্মার ভিতরে।

নীরব নিঝুম ধরা, বিশ্বে যেন সবই মরা,
এতটুকু শব্দ যবে নাহি কোন স্থানে,
মুয়াযযিন উচ্চৈঃস্বরে দাঁড়ায়ে মিনার 'পরে
কি সুধা ছড়িয়ে দেয় উষার আযানে!
জাগাইতে মোহমুদ্ধ মানব সন্তানে।
আহা কি মধুর ওই আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।

সফদার ডাক্তার
হোসনে আরা
সফদার ডাক্তার মাথাভরা টাক তার
খিদে পেলে পানি খায় চিবিয়ে,
চেয়ারেতে রাতদিন বসে গোণে দুই-তিন
পড়ে বই আলোটারে নিভিয়ে।

ইয়া বড় গোঁফ তার, নাই যার জুড়িদার
শুলে তার ভুঁড়ি ঠেকে আকাশে,
নুন দিয়ে খায় পান, সারাক্ষণ গায় গান
বুদ্ধিতে অতি বড় পাকা সে।

রোগী এলে ঘরে তার, খুশিতে সে চারবার
কষে দেয় ডন আর কুস্তি,
তারপর রোগীটারে গোটা দুই চাঁটি মারে
যেন তার সাথে কত দুস্তি।

ম্যালেরিয় হলে কারো নাহি আর নিস্তার
ধরে তারে কেঁচো দেয় গিলিয়ে,
আমাশয় হলে পরে দুই হাতে কান ধরে
পেটটারে ঠিক করে কিলিয়ে।

কলেরার রোগী এলে, দুপুরের রোদে ফেলে
দেয় তারে কুইনিন খাইয়ে,
তারপর দুই টিন পচা জলে তারপিন
ঢেলে তারে দেয় শুধু নাইয়ে।

ডাক্তার সফদার, নাম ডাক খুব তার
নামে গাঁও থরথরি কম্প,
নাম শুনে রোগী সব করে জোর কলরব
পিঠটান দিয়ে দেয় লম্ফ।

একদিন সককালে ঘটল কি জঞ্জাল
ডাক্তার ধরে এসে পুলিশে,
হাত-কড়া দিয়ে হাতে নিয়ে যায় থানাতে
তারিখটা আষাঢ়ের উনিশে।



রাখাল ছেলে
জসীম উদদীন

'রাখাল ছেলে! রাখাল ছেলে! বারেক ফিরে চাও,
বাঁকা গাঁয়ের পথটি বেয়ে কোথায় চলে যাও?'
'ওই যে দেখ নীল-নোয়ান সবুজ ঘেরা গাঁ
কলার পাতা দোলায় চামর শিশির ধোয়ায় পা;
সেথায় আছে ছোট্ট কুটির সোনার পাতায় ছাওয়া,
সেই ঘরেতে একলা বসে ডাকছে আমার মা
সেথায় যাব, ও ভাই এবার আমায় ছাড় না!'
রাখাল ছেলে! রাখাল ছেলে! আবার কোথায় ধাও,
পূব আকাশে ছাড়ল সবে রঙিন মেঘের নাও।'
'ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশির-ঝরা ঘাসে,
সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোদে হাসে।
আমার সাথে করতে খেলা প্রভাত হাওয়া ভাই,
সরষে ফুলের পাঁপড়ি নাড়ি ডাকছে মোরে তাই।
চলতে পথে মটরশুঁটি জড়িয়ে দু-খান পা,
বলছে ডেকে, 'গাঁয়ের রাখাল একটু খেলে যা!'
সারা মাঠের ডাক এসেছে, খেলতে হবে ভাই!
সাঁঝের বেলা কইব কথা এখন তবে যাই!'
'রাখাল ছেলে! রাখাল ছেলে! সারাটা দিন খেলা,
এ যে বড় বাড়াবাড়ি, কাজ আছে যে মেলা!'
'কাজের কথা জানিনে ভাই, লাঙল দিয়ে খেলি
নিড়িয়ে দেই ধানের ক্ষেতের সবিজ রঙের চেলি
সরষে বালা নুইয়ে গলা হলদে হওয়ার সুখে
মটর বোনে ঘোমটা খুলে চুম দিয়ে যায় মুখে!
ঝাউয়ের ঝাড়ে বাজায় বাঁশি পঊষ-পাগল বুড়ি,
আমরা সেথা চষতে লাঙল মুর্শিদা-গান জুড়ি।
খেলা মোদের গান গাওয়া ভাই, খেলা লাঙল-চষা
সারাটা দিন খেলতে জানি, জানিইনেকো বসা।'

বৃষ্টির ছড়া
ফররুখ আহমদ

বৃষ্টিএল কাশ বনে
জাগল সাড়া ঘাস বনে,
বকের সারি কোথা রে
লুকিয়ে গেল বাঁশ বনে।

নদীতে নাই খেয়া যে,
ডাকল দূরে দেয়া যে,
কোন সে বনের আড়ালে
ফুটল আবার কেয়া যে।

গাঁয়ের নামটি হাটখোলা,
বৃষ্টি বাদল দেয় দোলা,
রাখাল ছেলে মেঘ দেখে,
যায় দাঁড়িয়ে পথ-ভোলা।

মেঘের আঁধার মন টানে,
যায় সে ছুটে কোন খানে,
আউশ ধানের মাঠ ছেড়ে
আমন ধানের দেশ পানে।

আসমানী
জসীম উদ্দিন

আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,
রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,
তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।
পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের ক-খান হাড়,
সাক্ষী দিছে অনাহারে কদিন গেছে তার।
মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ-রাশি
থাপড়েতে নিবিয়ে দেছে দারুণ অভাব আসি।
পরনে তার শতেক তালির শতেক ছেঁড়া বাস,
সোনালি তার গা বরণের করছে উপহাস।
ভোমর-কালো চোখ দুটিতে নাই কৌতুক-হাসি,
সেখান দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু রাশি রাশি।
বাঁশির মতো সুরটি গলায় ক্ষয় হল তাই কেঁদে,
হয় নি সুযোগ লয় যে সে-সুর গানের সুরে বেঁধে।
আসমানীদের বাড়ির ধারে পদ্ম-পুকুর ভরে
ব্যাঙের ছানা শ্যাওলা-পানা কিল্-বিল্-বিল করে।
ম্যালেরিয়ার মশক সেথা বিষ গুলিছে জলে,
সেই জলেতে রান্না-খাওয়া আসমানীদের চলে।
পেটটি তাহার দুলছে পিলেয়, নিতুই যে জ্বর তার,
বৈদ্য ডেকে ওষুধ করে পয়সা নাহি আর।

নিমন্ত্রণ
জসীমউদদীন

তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে আমদের ছোট গাঁয়
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;
মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি
মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,
মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভায়ের স্নেহের ছায়,
তুমি যাবে ভাই- যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।

ছোট গাঁওখানি- ছোট নদী চলে, তারি একপাশ দিয়া,
কালো জল তার মাজিয়াছে কেবা কাকের চক্ষু নিয়া।
ঘাটের কিনারে আছে বাঁধা তরী,
পারের খবর টানাটানি করি-
বিনাসূতি মালা গাঁথিছে নিতুই এপার ওপার দিয়া;
বাঁকা ফাঁদ পেতে টানিয়া আনিছে দুইটি তীরের হিয়া।

তুমি যাবে ভাই, যাবে মোর সাথে- নরম ঘাসের পাতে,
চুম্বন রাখি অম্বরখানিরে মেজে লয়ো নিরালাতে।
তেলাকুচ-লতা গলায় পরিয়া
মেঠো ফুলে নিও আঁচল ভরিয়া,
হেথায় সেথায় ভাব করো তুমি বুনো পাখিদের সাথে,
তোমার পায়ের রঙখানি তুমি দেখিবে তাদের পাতে।

তুমি যদি যাও আমাদের গাঁয়ে, তোমারে সঙ্গ করি
নদীর ওপারে চলে যাই তবে লইয়া ঘাটের তরী
মাঠের যত না রাখাল ডাকিয়া,
তব সনে দেই মিতালি করিয়া,
ঢেলা কুড়াইয়া গড়ি ইমারত সারা দিনমান ধরি
সত্যিকারের নগর ভুলিয়া নকল নগর গড়ি।

তুমি যদি যাও – দেখিবে সেখানে মটর-লতার সনে,
সীম-আর-সীম হাত বাড়ালেই মুঠি ভরে সেইখানে।
তুমি যদি যাও সে-সব কুড়ায়ে,
নাড়ার আগুনে পোড়ায়ে পোড়ায়ে,
খাব আর যত গেঁয়ো চাষিদের ডাকিয়া নিমন্ত্রণে,
হাসিয়া হাসিয়া মুঠি মুঠি তাহা বিলাইব জনে জনে।

তুমি যদি যাও- শামুক কুড়ায়ে, খুব-খুব বড় করে
এমন একটি গাঁথিব মালা যা দেখনি কাহারো করে;
কারেও দেব না, তুমি যদি চাও
মনের খুশিতে দিয়ে দেব তাও,
গলায় পরিবে ঝুমঝুম রবে পথেরে মুখর করে,
হাসিব খেলিব গাহিব নাচিব সারাটি গেরাম ভরে।

খুব ভোর করে উঠিতে হইবে, সুয্যি উঠারও আগে,
কারেও কবি না দেখিস পায়ের শব্দে কেহ না জাগে।
রেল সড়কের ছোট খাদ ভরে
ডানকিনে মাছ কিলবিল করে;
কাদার বাঁধাল গাঁথি মাঝামাঝি জল সেঁচে আগেভাগে,
সব মাছগুলো কুড়ায়ে আনিব কাহারো জানার আগে।

ভর দুপুরেতে একরাশ কাদা আর একরাশ মাছ,
কাপড়ে জাড়ায়ে ফিরিয়া আসিব আপন বাড়ির কাছ;
'ওরে মুখ-পোড়া ওরে রে বাঁদর।'
গালি-ভরা মার অমনি আদর,
কতদিন আমি শুনি নারে ভাই, আমার মায়ের পাছ;
যাবি তুই ভাই, আমাদের গাঁয়ে যেথা ঘন কালো গাছ।

যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়,
ঘন কালো বন-মায়া মমতায় বেঁধেছে বনের বায়।
গাছের ছায়ায় বনের লতায়,
মোর শিশুকাল, লুকায়েছে হায়!
আজিকে সে-সব সরায়ে সরায়ে খুঁজিয়া লইব তায়,
যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।

চাষী
রাজিয়া খাতুন চৌধুরাণী

সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা,
দেশ মাতারই মুক্তিকামী, দেশের সে যে আশা।
দধীচি কি তাহার চেয়ে সাধক ছিল বড়?
পুণ্য অত হবে নাক সব করিলে জড়।
মুক্তিকামী মহাসাধক মুক্ত করে দেশ,
সবারই সে অন্ন জোগায় নাইক গর্ব লেশ।
ব্রত তাহার পরের হিত, সুখ নাহি চায় নিজে,
রৌদ্র দাহে শুকায় তনু, মেঘের জলে ভিজে।
আমার দেশের মাটির ছেলে, নমি বারংবার
তোমায় দেখে চূর্ণ হউক সবার অহংকার।

আদর্শ ছেলে
কুসুমকুমারী দাশ

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?
মুখে হাসি বুকে বল, তেজে ভরা মন
'মানুষ হইতে হবে'- এই তার পণ।
বিপদ আসিলে কাছে হও আগুয়ান
নাই কি শরীরে তব রক্ত, মাংস, প্রাণ?
হাত পা সবারই আছে, মিছে কেন ভয়?
চেতনা রয়েছে যার, সে কি পড়ে রয়?
সে ছেলে কে চাই বল, কথায় কথায়
আসে যার চোখে জল, মাথা ঘুরে যায়?
মনে প্রাণে খাট সবে, শক্তি কর দান,
তোমরা 'মানুষ' হলে দেশের কল্যাণ।

প্রার্থনা
গোলাম মোস্তফা

অনন্ত অসীম প্রেমময় তুমি
বিচার দিনের স্বামী।
যত গুণগান হে চির মহান
তোমারি অন্তর্যামী।

দ্যুলোক-ভূলোক সবারে ছাড়িয়া
তোমারি চরণে পড়ি লুটাইয়া
তোমারি সকাশে যাচি হে শকতি
তোমারি করুণাকামী।

সরল সঠিক পূণ্য পন্থা
মোদের দাও গো বলি,
চালাও সে-পথে যে-পথে তোমার
প্রিয়জন গেছে চলি।

যে-পথে তোমার চির-অভিশাপ
যে-পথে ভ্রান্তি, চির-পরিতাপ
হে মহাচালক,মোদের কখনও
করো না সে পথগামী।

পাছে লোকে কিছু বলে
কামিনী রায়

করিতে পারি না কাজ
সদা ভয় সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে,-
পাছে লোকে কিছু বলে।

আড়ালে আড়ালে থাকি
নীরবে আপনা ঢাকি,
সম্মুখে চরণ নাহি চলে
পাছে লোকে কিছু বলে।

হৃদয়ে বুদবুদ মত
উঠে চিন্তা শুভ্র কত,
মিশে যায় হৃদয়ের তলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।

কাঁদে প্রাণ যবে আঁখি
সযতনে শুকায়ে রাখি;-
নিরমল নয়নের জলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।

একটি স্নেহের কথা
প্রশমিতে পারে ব্যথা,-
চলে যাই উপেক্ষার ছলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।

মহৎ উদ্দেশ্য যবে,
এক সাথে মিলে সবে,
পারি না মিলিতে সেই দলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।

বিধাতা দেছেন প্রাণ
থাকি সদা ম্রিয়মাণ;
শক্তি মরে ভীতির কবলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।

শিশুর পণ
গোলাম মোস্তফা

এই করিনু পণ
মোরা এই করিনু পণ
ফুলের মতো গড়ব মোরা
মোদের এই জীবন।

হাসব মোরা সহজ সুখে
গন্ধ রবে লুকিয়ে বুকে
মোদের কাছে এলে সবার
জুড়িয়ে যাবে মন।

নদী যেমন দুই কূলে তার
বিলিয়ে চলে জল,
ফুটিয়ে তোলে সবার তরে
শস্য, ফুল ও ফল।

তেমনি করে মোরাও সবে
পরের ভাল করব ভবে
মোদের সেবায় উঠবে হেসে
এই ধরণীতল।

সূর্য যেমন নিখিল ধরায়
করে কিরণ দান,
আঁধার দূরে যায় পালিয়ে
জাগে পাখির গান।

তেমনি মোদের জ্ঞানের আলো
দূর করিবে সকল কালো
উঠবে জেগে ঘুমিয়ে আছে
যে সব নীরব প্রাণ।

আত্মত্রাণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বিপদে মোরে রক্ষা করো
এ নহে মোর প্রার্থনা,
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে
নাই-বা দিলে সান্ত্বনা,
দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।
সহায় মোর না যদি জুটে
নিজের বল না যেন টুটে,
সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি
লভিলে শুধু বঞ্চনা
নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।
আমারে তুমি করিবে ত্রাণ
এ নহে মোর প্রার্থনা,
তরিতে পারি শকতি যেন রয়।
আমার ভার লাঘব করি
নাই-বা দিলে সান্ত্বনা,
বহিতে পারি এমনি যেন হয়।
নম্রশিরে সুখের দিনে
তোমারি মুখ লইব চিনে,
দুখের রাতে নিখিল ধরা
যেদিন করে বঞ্চনা
তোমারে যেন না করি সংশয়।

বীরপুরুষ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মনে করো, যেন বিদেশ ঘুরে
মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।
তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চ'ড়ে
দরজা দুটো একটুকু ফাঁক ক'রে,
আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার 'পরে
টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে।
রাস্তা থেকে ঘোড়ার খুরে খুরে
রাঙা ধুলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে।
সন্ধে হল, সূর্য নামে পাটে,
এলেম যেন জোড়াদিঘির মাঠে।
ধূ-ধূ করে যে দিক-পানে চাই,
কোনোখানে জনমানব নাই-
তুমি যেন আপন-মনে তাই
ভয় পেয়েছ; -ভাবছ, 'এলেম কোথা !'
আমি বলছি, 'ভয় কোরো না মা গো,
ওই দেখা যায় মরা নদীর সোঁতা।'
চোরকাঁটাতে মাঠ রয়েছে ঢেকে,
মাঝখানেতে পথ গিয়েছে বেঁকে।
গরু বাছুর নেইকো কোনোখানে,
সন্ধে হতেই গেছে গাঁয়ের পানে,
আমরা কোথায় যাচ্ছি কে তা জানে,
অন্ধকারে দেখা যায় না ভালো।
তুমি যেন বললে আমায় ডেকে,
'দিঘির ধারে ঐ যে কিসের আলো !'

এমন সময় 'হাঁরে রে-রে-রে-রে',
ওই যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে।
তুমি ভয়ে পালকিতে এক কোণে
ঠাকুর-দেব্তা স্মরণ করছ মনে,
বেয়ারাগুলো পাশের কাঁটাবনে
পালকি ছেড়ে কাঁপছে থরোথরো।
আমি যেন তোমায় বলছি ডেকে,
'আমি আছি, ভয় কেন মা করো !'

হাতে লাঠি, মাথায় ঝাঁকড়া চুল,
কানে তাদের গোঁজা জবার ফুল।
আমি বলি দাঁড়া, খবরদার !
এক পা কাছে আসিস যদি আর-
এই চেয়ে দেখ্ আমার তলোয়ার,
টুকরো ক'রে দেব তোদের সেরে।'
শুনে তারা লম্ফ দিয়ে উঠে
চেঁচিয়ে উঠল, 'হাঁরে রে-রে-রে-রে।'

তুমি বললে, 'যাস নে খোকা ওরে।'
আমি বলি, 'দেখো না চুপ ক'রে।'
ছুটিয়ে ঘোড়া গেলেম তাদের মাঝে,
ঢাল তলোয়ার ঝনঝনিয়ে বাজে,
কী ভয়ানক লড়াই হল মা যে,
শুনে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা।
কত লোক যে পালিয়ে গেল ভয়ে,
কত লোকের মাথা পড়ল কাটা।

এত লোকের সঙ্গে লড়াই ক'রে,
ভাবছ খোকা গেলই বুঝি মরে।
আমি তখন রক্ত মেখে ঘেমে
বলছি এসে, 'লড়াই গেছে থেমে'।
তুমি শুনে পালকি থেকে নেমে
চুমো খেয়ে নিচ্ছ আমায় কোলে-
বলছ, 'ভাগ্যে খোকা সঙ্গে ছিল !
কী দুর্দশাই হত তা না হলে।'

রোজ কত কী ঘটে যাহা-তাহা-
এমন কেন সত্যি হয় না, আহা !
ঠিক যেন এক গল্প হত তবে,
শুনত যারা অবাক হত সবে।
দাদা বলত, 'কেমন করে হবে,
খোকার গায়ে এত কি জোর আছে !'
পাড়ার লোকে সবাই বলত শুনে,
'ভাগ্যে খোকা ছিল মায়ের কাছে।'



কাজের ছেলে
যোগিন্দ্রনাথ সরকার

দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।
পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল;
ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়, ছিঁড়ে দেবে চুল।
দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।
বাহবা বাহবা – ভোলা ভুতো হাবা খেলিছে তো বেশ!
দেখিব খেলাতে, কে হারে কে জেতে, কেনা হলে শেষ।
দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
ডিম-ভরা বেল, দু’টা পাকা তেল, সরিষার কৈ।‘
ওই তো ওখানে ঘুরি ধরে টানে, ঘোষদের ননী;
আমি যদি পাই, তা হলে উড়াই আকাশে এখনি!
দাদখানি তেল, ডিম-ভরা বেল, দুটা পাকা দৈ,
সরিষার চাল, চিনি-পাতা ডাল, মুসুরির কৈ!
এসেছি দোকানে-কিনি এই খানে, যত কিছু পাই;
মা যাহা বলেছে, ঠিক মনে আছে, তাতে ভুল নাই!
দাদখানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ,
চিনি-পাতা চাল, দুটা পাকা ডাল, ডিম ভরা দৈ।

বিষম চিন্তা
সুকুমার রায়.

মাথায় কত প্রশ্ন আসে, দিচ্ছে না কেউ জবাব তার,
সবাই বলে ‘মিথ্যে বাজে বকিস নে আর খবরদার!’
অমনধারা ধমক দিলে কেমন করে শিখব সব?
বলবে সবাই, ‘মুখ্যু ছেলে’, বলবে আমায় ‘গো‐গর্দভ’।
কেউ কি জানে দিনের বেলায় কোথায় পালায় ঘুমের ঘোর?
বর্ষা হলেই ব্যাঙের গলায় কোত্থেকে হয় এমন জোর?
গাধার কেন শিং থাকে না? হাতির কেন পালক নেই?
গরম তেলে ফোড়ন দিলে লাফায় কেন তা ধেই‐ধেই?
সোডার বোতল খুল্লে কেন ফসফসিয়ে রাগ করে?
কেমন করে রাখবে টিকি মাথায় যাদের টাক পড়ে?
ভূত যদি না থাকবে তবে কোত্থেকে হয় ভূতের ভয়?
মাথায় যাদের গোল বেধেছে তাদের কেন ‘পাগোল’ কয়?
কতই ভাবি এ‐সব কথা, জবাব দেবার মানুষ কই?
বয়স হলে কেতাব খুলে জানতে পাব সমস্তই।

কাজের লোক
নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য

মৌমাছি, মৌমাছি,
কোথা যাও নাচি' নাচি'
দাঁড়াও না একবার ভাই।
ওই ফুল ফুটে বনে,
যাই মধু আহরণে,
দাঁড়াবার সময় তো নাই।

ছোট পাখি, ছোট পাখি,
কিচি-মিচি ডাকি ডাকি'
কোথা যাও, বলে যাও শুনি ?
এখন না ক'ব কথা,
আনিয়াছি তৃণলতা,
আপনার বাসা আগে বুনি।

পিপীলিকা, পিপীলিকা,
দল-বল ছাড়ি একা
কোথা যাও, যাও ভাই বলি।
শীতের সঞ্চয় চাই,
খাদ্য খুঁজিতেছি তাই,
ছয় পায় পিল্ পিল্ চলি।

দুটি কবিতা
কৃষ্ণ চন্দ্র মজুমদার


যে জন দিবসে
মনের হরষে
জ্বালায় মোমের বাতি,
আশু গৃহে তার
জ্বলিবে না আর
নিশীথে প্রদীপ ভাতি।


চিরসুখীজন
ভ্রমে কি কখন
ব্যাথিত বেদন
বুঝিতে পারে?
কী যাতনা বিষে
বুঝিবে সে কিসে
কভু আশীবিষে
দংশেনি যারে।

মা
কাজী কাদের নেওয়াজ

মা কথাটি চোট্ট অতি
কিন্তু জেনো ভাই,
ইহার চেয়ে নাম যে মধুর
তিন ভুবনে নাই।

সত্য ন্যায়ের ধর্ম থাকুক
মাথার 'পরে আজি,
অন্তরে মা থাকুন মম
ঝরুক স্নেহরাজি।

রোগ বিছানায় শুয়ে শুয়ে
যন্ত্রণাতে মরি,
সান্তনা পাই মায়ের মধু
নামটি হৃদে স্মরি।

বিদেশ গেলে ঐ মধু নাম
জপ করি অন্তরে,
মন যে কেমন করে
আমার প্রাণ যে কেমন করে।

মা যে আমার ঘুম পাড়াত
দোলনা ঠেলে ঠেলে
শীতল হত প্রাণটা, মায়ের
হাতটা বুকে পেলে।


পাখী সব করে রব
মদনমোহন তর্কালংকার

পাখী সব করে রব, রাতি পোহাইল
কাননে কুসুমকলি, সকলি ফুটিল।
রাখাল গরুর পাল, ল'য়ে যায় মাঠে
শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে।
ফুটিল মালতী ফুল, সৌরভ ছুটিল
পরিমল লোভে অলি, আসিয়া জুটিল।
গগনে উঠিল রবি, লোহিত বরণ
আলোক পাইয়া লোক, পুলকিত মন।
শীতল বাতাস বয়, জুড়ায় শরীর
পাতায় পাতায় পড়ে, নিশির শিশির।
উঠ শিশু মুখ ধোও, পর নিজ বেশ
আপন পাঠেতে মন, করহ নিবেশ।

উত্তম ও অধম
মূল :শেখ সা’দী
অনুবাদ : সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

কুকুর আসিয়া এমন কামড়
দিল পথিকের পায়
কামড়ের চোটে বিষদাঁত ফুটে
বিষ লেগে গেল তাই।
ঘরে ফিরে এসে রাত্রে বেচারা
বিষম ব্যথায় জাগে,
মেয়েটি তাহার তারি সাথে হায়
জাগে শিয়রের আগে।
বাপেরে সে বলে র্ভৎসনা ছলে
কপালে রাখিয়া হাত,
তুমি কেন বাবা, ছেড়ে দিলে তারে
তোমার কি নাই দাতঁ?
কষ্টে হাসিয়া আর্ত কহিল
“তুই রে হাসালি মোরে,
দাঁত আছে বলে কুকুরের পায়ে
দংশি কেমন করে?”
কুকুরের কাজ কুকুর করেছে
কামড় দিয়েছে পায়,
তা বলে কুকুরে কামড়ানো কিরে
মানুষের শোভা পায়?

হাসি
রোকনুজ্জামান খান

হাসতে নাকি জানেনা কেউ
কে বলেছে ভাই?
এই শোন না কত হাসির
খবর বলে যাই।
খোকন হাসে ফোঁকলা দাঁতে
চাঁদ হাসে তার সাথে সাথে
কাজল বিলে শাপলা হাসে
হাসে সবুজ ঘাস।
খলসে মাছের হাসি দেখে
হাসে পাতিহাঁস।
টিয়ে হাসে, রাঙ্গা ঠোঁটে,
ফিঙ্গের মুখেও হাসি ফোটে
দোয়েল কোয়েল ময়না শ্যামা
হাসতে সবাই চায়
বোয়াল মাছের দেখলে হাসি
পিলে চমকে যায়।
এত হাসি দেখেও যারা
গোমড়া মুখে চায়,
তাদের দেখে পেঁচার মুখেও
কেবল হাসি পায়।

এমন যদি হতো
সুকুমার বড়ুয়া

এমন যদি হতো
ইচ্ছে হলে আমি হতাম
প্রজাপতির মতো
নানান রঙের ফুলের পরে
বসে যেতাম চুপটি করে
খেয়াল মতো নানান ফুলের
সুবাস নিতাম কতো ।
এমন হতো যদি
পাখি হয়ে পেরিয়ে যেতাম
কত পাহাড় নদী
দেশ বিদেশের অবাক ছবি
এক পলকের দেখে সবই
সাতটি সাগর পাড়ি দিতাম
উড়ে নিরবধি ।
এমন যদি হয়
আমায় দেখে এই পৃথিবীর
সবাই পেতো ভয়
মন্দটাকে ধ্বংস করে
ভালোয় দিতাম জগৎ ভরে
খুশির জোয়ার বইয়ে দিতাম
এই দুনিয়াময় ।
এমন হবে কি ?
একটি লাফে হঠাৎ আমি
চাঁদে পৌঁছেছি !
গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে
দেখে শুনে ভালো করে
লক্ষ যুগের অন্ত আদি
জানতে ছুটেছি ।

আমাদের দেশ
আ.ন.ম বজলুর রশীদ

আমাদের দেশ তারে কত ভালবাসি
সবুজ ঘাসের বুকে শেফালির হাসি,
মাঠে মাঠে চরে গরু নদী বয়ে যায়
জেলে ভাই ধরে মাছ মেঘের ছায়ায়।
রাখাল বাজায় বাঁশি কেটে যায় বেলা
চাষা ভাই করে চাষ কাজে নেই হেলা।
সোনার ফসল ফলে ক্ষেত ভরা ধান

আনন্দ
আহসান হাবীব

আনন্দ রে আনন্দ, তুই
কোথায় থাকিস বল।
তুই কি ভোরে ফুলের বুকে
শিশির টলমল??
তুই কি সারা দুপুর জুড়ে
খাঁ খাঁ রোদের খেলা?
নাকি সবুজ ঘাসের বুকে
প্রজাপতির মেলা?
অথবা তুই বিকেল বেলা
পাখির ওড়াউড়ি?
নাকি আকাশ ছুঁয়ে ছুঁয়ে
গোত্তা খাওয়া ঘুড়ি?
নাকি গাঁয়ের খেলার মাঠে
লাফিয়ে চলা বল?
আনন্দ রে আনন্দ, তুই
কোথায় থাকিস বল?
আনন্দ রে আনন্দ, বল
কোথায় রে তোর বাসা,
তুই কি আমার মা, নাকি তুই
মায়ের ভালোবাসা?
বাবার হাতে তুই কি উথাল
মাটিতে ধান বোনা?
মায়ের হাতে কুলোয় ভরা
ধানের মত সোনা?
তুই কি আমার ঘরের চালে
ফুরিয়ে যাওয়া রাত?
তুই কি আমার সানকি ভরা
ফুলের মত ভাত??
সকলের মুখে হাসি, গান আর গান।

দূরপাল্লা
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

ছিপখান তিনদাঁড়
তিনজন মাল্লা,
চৌপর দিনভর
দেয় দূরপাল্লা।
কঞ্চির তীরঘর
ঐ চর জাগছে,
বুনোহাঁস ডিম তার
শ্যাওলায় ঢাকছে।
চুপচুপ ঐ ডুব
দেয় পানকোটি,
দেয় ডুব টুপটুপ
ঘোমটার বউটি।
লকলক শরবন
বক তায় মগ্ন,
চুপচাপ চারদিক
সন্ধ্যার লগ্ন।
আর জোর দেড় ক্রোশ
জোর দেড় ঘন্টা,
টান ভাই টান সব
নেই উৎকণ্ঠা।

স্বাধীনতার সুখ
রজনীকান্ত সেন

বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই-
“কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই;
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা 'পরে,
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।''
বাবুই হাসিয়া কহে- “সন্দেহ কি তায়?
কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়;
পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা,
নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।''

খাঁটি সোনা
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

মধুর চেয়ে আছে মধুর
সে এই আমার দেশের মাটি
আমার দেশের পথের ধূলা
খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি।
চন্দনেরি গন্ধভরা,
শীতল করা, ক্লান্তি-হরা
যেখানে তার অঙ্গ রাখি
সেখানটিতেই শীতল পাটি।
শিয়রে তার সূর্ এসে
সোনার কাঠি ছোঁয়ায় হেসে,
নিদ-মহলে জ্যোৎস্না নিতি
বুলায় পায়ে রূপার কাঠি।
নাগের বাঘের পাহারাতে
হচ্ছে বদল দিনে রাতে,
পাহাড় তারে আড়াল করে
সাগর সে তার ধোয়ায় পাটি।
নারিকেলের গোপন কোষে
অন্ন-পানী' যোগায় গো সে,
কোল ভরা তার কনক ধানে
আটটি শীষে বাঁধা আঁটি।
মধুর চেয়ে আছে মধুর
সে এই আমার দেশের মাটি।

ষোল আনাই মিছে
সুকুমার রায়

বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই চড়ি সখের বোটে,
মাঝিরে কন, ''বলতে পারিস সূর্যি কেন ওঠে?
চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে?''
বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফ্যাল্ফ্যালিয়ে হাসে।
বাবু বলেন, ''সারা জীবন মরলিরে তুই খাটি,
জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি আনাই মাটি।''
খানিক বাদে কহেন বাবু, ''বলতো দেখি ভেবে
নদীর ধারা কেমনে আসে পাহাড় থেকে নেবে?
বলতো কেন লবণপোরা সাগর ভরা পানি?''
মাঝি সে কয়, ''আরে মশাই অত কি আর জানি?''
বাবু বলেন, ''এই বয়সে জানিসনেও তা কি
জীবনটা তোর নেহাৎ খেলো, অষ্ট আনাই ফাঁকি!''
আবার ভেবে কহেন বাবু, '' বলতো ওরে বুড়ো,
কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ চুড়ো?
বলতো দেখি সূর্য চাঁদে গ্রহণ লাগে কেন?''
বৃদ্ধ বলে, ''আমায় কেন লজ্জা দেছেন হেন?''
বাবু বলেন, ''বলব কি আর বলব তোরে কি তা,-
দেখছি এখন জীবনটা তোর বারো আনাই বৃথা।''
খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে,
বাবু দেখেন, নৌকাখানি ডুবলো বুঝি দুলে!
মাঝিরে কন, '' একি আপদ! ওরে ও ভাই মাঝি,
ডুবলো নাকি নৌকা এবার? মরব নাকি আজি?''
মাঝি শুধায়, ''সাঁতার জানো?''- মাথা নাড়েন বাবু,
মূর্খ মাঝি বলে, ''মশাই, এখন কেন কাবু?
বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে,
তোমার দেখি জীবন খানা ষোল আনাই মিছে!''

নন্দলাল
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ -
স্বদেশের তরে, যা করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
সকলে বলিল, 'আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল?'
নন্দ বলিল, 'বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?'
তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।'
নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তারে কেবা!
সকলে বলিল, 'যাও না নন্দ, করো না ভায়ের সেবা'
নন্দ বলিল, ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক'
তখন সকলে বলিল- 'হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক।'
নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির,
গালি দিয়া সবে গদ্যে, পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির;
পড়িল ধন্য দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন;
লেখে যত তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশ গুণ;
খাইতে ধরিল লুচি ও ছোকা ও সন্দেশ থাল থাল,
তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল।'
নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি;
সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি;
নন্দ বলিল, 'আ-হা-হা! কর কি, কর কি! ছাড় না ছাই,
কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই?
বলো কি' বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা।'
তখন সকলে বলিল – 'বাহবা বাহবা বাহবা বাহা!'
নন্দ বাড়ির হ'ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি;
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি,
নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে 'কলিসন' হয়;
হাঁটতে সর্প, কুকুর আর গাড়ি-চাপা পড়া ভয়,
তাই শুয়ে শুয়ে, কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল
সকলে বলিল- 'ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।'

আগে আরেকটা ব্লগে প্রকাশিত

শেখ আমিনুল ইসলাম সম্পাদিত বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ৫৮ জন কবির মোট ২২৮টি জনপ্রিয় ছড়া ও কবিতা নিয়ে ই-বুক নক্ষত্র বীথি

ই-বুক নক্ষত্র বীথি'র আরেকটি লিংক
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৮
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×