somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহবাগ এখন পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে (নিউইয়র্ক সমাবেশ থেকে ফিরে এসে)

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ফেইসবুকে ইভেন্ট ক্রিয়েট করা হল - কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে নিউ ইয়র্কে প্রতিবাদ সমাবেশ! (অরাজনৈতিক; এ শুধু প্রাণের তাগিদে শাহবাগের আন্দোলনের সাথে একাত্ম হওয়া!) নামে। স্থান সময় ঠিক করা হল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায়। কিন্তু তুষার ঝড়ের কারণে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় পুলিশের কাছ থেকে সমাবেশ করার অনুমতি পাওয়া গেলনা। তাই সেটা চেঞ্জ করে শনিবার সন্ধ্যা ৭টা করা হল! প্রথমদিকে ভাবছিলাম মানুষ হবে তো, পরে যখন দেখলাম ইভেন্টে ৩৮৪জন গোয়িং দেখাচ্ছে তখন ভাবলাম এর চার ভাগের এক ভাগ আসলেই আমাদের হয়ে যাবে।



দুইটা প্ল্যাকার্ড বানালাম। একটাতে বাংলায় লিখলাম - "শাহবাগের গন-জোয়ারে ভেসে যাক সব রাজাকার" আর আরেকটাতে ইংরেজিতে লিখলাম -
No mercy, Zero compromise, Zero tolerances for war criminal of 1971
আরও দুই একজনকে ফোন করলাম, কেউই এই শীতের মধ্যে যেতে রাজি হলোনা। তাই একলাই বের হয়ে পড়লাম। যাওয়ার সময় ট্রেনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি ফিল করলাম - মনে হল আমি যুদ্ধে যাচ্ছি। সময় যেন ফুরচ্ছিল না, কখন গিয়ে সেখানে পৌঁছবো এই ধরনের একটা ফিলিংস বুকে ধুরু-ধুরু করছিল। অবশেষে গিয়ে পৌঁছলাম, গিয়ে দেখলাম অনেক মানুষ। অনেকে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও একটা প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আস্তে আস্তে মানুষ আরও বাড়তে লাগলো।



চারদিক মিছিলে আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে উঠলো। ৭১ এর হাতিয়ার - গর্জে উঠুক আরেকবার। আর কোন দাবি নাই - রাজাকারের ফাঁসি চাই। কাদের মুল্লা কাদের মুল্লা - তুই রাজাকার তুই রাজাকার। কখন যে নিজেরে মিছিলে ডুবিয়ে দিলাম সেটা বুঝতে পারিনি। স্লোগান গুলো এত শীতের মাঝেও শরীর গরম করে দিয়েছিল - দিস ফিলিংস ওয়াজ টোটালি প্রাইসলেস! আমার পাশে একজন মুক্তিযোদ্ধা দাঁড়িয়েছিলেন। উনি আমার এক হাত ধরে বললেন - এখন মরে গিয়েও শান্তি পাবো বাবা। এত দিন মনে হয়েছিল আমরা মারা গেলে হয়ত সব শেষ হয়ে যাবে, কেউ আর রাজাকারের বিচারের ব্যাপারে কথা বলবেনা। তোমরা আমাদের ধারনাটা ভুল প্রমাণ করেছো, এখন শান্তিতে মরতে পারবো।



জাতীয় সংগীত গেয়ে অনুষ্ঠান শুরু হল। অনেক দিন পরে জাতীয় সংগীতটা গেয়ে খুবই ভাল লাগল। স্লোগানের মাঝেমাঝে গন সংগীতও গাইলাম। এক কোনায় দেখলাম একটা একটা ছোট মেয়ে তার বাবা'র কাঁধে বসে আছে। তার হাতে একটা প্ল্যাকার্ড, তাতে লেখা - রাজাকারের ফাঁসি চাই! একজন বৃদ্ধ চাচা আমাকে বললেন - আমারে একটা প্ল্যাকার্ড দেয়া যাবে? উনাকে একটা প্ল্যাকার্ড দিলাম উনিও প্ল্যাকার্ড নিয়ে আমাদের সাথে দাঁড়িয়ে পড়লেন। অনেক তরুণীদের দেখলাম মাথায় বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ বেঁধে আসছে। এক কথায় বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সব ধরনের মানুষের স্বতস্ফৃর্ত অংশগ্রহণই বলে দিয়েছে শাহবাগ এখন শুধু বাংলাদেশে না - শাহবাগ এখন পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে।


যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে বাসায় ফিরার পর - পরিচিত অনেকে বললেন কি লাভ হল এই শীতের মধ্যে বাহিরে দাঁড়িয়ে এসব করে। আমি তাদের বললাম - কোন লাভ খুঁজে তো আমি সেখানে যাই নাই, গেছি প্রাণের টানে। যখন হাত উঁচিয়ে মিছিল দিলাম - "৭১এ ছিলাম না, এবার তোদের ছাড়বো না" তখন বুকের ভিতর যে অনুভূতিটা কাজ করছিল সেটা প্রকাশ করে কাউকে বুঝাতে পারব না। শুধু এইটুকু বলতে পারব - আজকে সেখানে না গেলে হয়ত কোনদিন অনুমান করতেই পারতাম না যে আমি আমার দেশকে কতটা ভালবাসি।



অনুষ্ঠান শেষে আবার জাতীয় সংগীত গাওয়া হল এবং শপথ নেয়া হল -

শপথনামাঃ
শাহবাগে জনতার মঞ্চে যেমন জনতা যেভাবে যুদ্ধাপরাধীদের দাবিতে শপথ করেছে, আমরাও তাদের সাথে একাত্ম ঘোষণা করে অঙ্গীকার করতে চাই। আপনারাও আমার সাথে অঙ্গীকার করুন।

যদিও আমরা এখানে বিভিন্ন কাজ-কর্মের কারণে রাস্তায় আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারবো না, কিন্তু আমরা শপথ করছি যে, অন্তত যতক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত যে যেভাবে পারি ফাঁসির দাবিতে আমরা সোচ্চার থাকবো! ব্লগে-ফেসবুকে সবসময়েই আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো! নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যেন ফাঁসি নিশ্চিত হয়!

নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে বিভিন্ন দেশের বন্ধুদেরকে আমরা এই বিষয়ে জানাবো। সবাইকে সচেতন করব। আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধাপরাধীদের পরিচিত করে তুলে তাদের একঘরে করে তুলবো!

আমরা যতটুকু পারি, এই সুদূর প্রবাসে যুদ্ধাপরাধীদের প্রভাবমুক্ত থাকবো। যদি তাদের অথবা তাদের কোন সমর্থক-দোসর দেখি তাহলে তাদেরকে এবং তাদের সমস্ত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বর্জন করব!

জয় বাংলা!



শ্লোগানের অংশ বিশেষ চাইলে ক্লিক করেন -

Click This Link



(কার্টেসী ফর শপথনামা টু ব্লগার মিনহাজ, যে এই সমাবেশে উদ্যোক্তা)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩১
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×