ফেইসবুকে ইভেন্ট ক্রিয়েট করা হল - কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে নিউ ইয়র্কে প্রতিবাদ সমাবেশ! (অরাজনৈতিক; এ শুধু প্রাণের তাগিদে শাহবাগের আন্দোলনের সাথে একাত্ম হওয়া!) নামে। স্থান সময় ঠিক করা হল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায়। কিন্তু তুষার ঝড়ের কারণে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় পুলিশের কাছ থেকে সমাবেশ করার অনুমতি পাওয়া গেলনা। তাই সেটা চেঞ্জ করে শনিবার সন্ধ্যা ৭টা করা হল! প্রথমদিকে ভাবছিলাম মানুষ হবে তো, পরে যখন দেখলাম ইভেন্টে ৩৮৪জন গোয়িং দেখাচ্ছে তখন ভাবলাম এর চার ভাগের এক ভাগ আসলেই আমাদের হয়ে যাবে।
দুইটা প্ল্যাকার্ড বানালাম। একটাতে বাংলায় লিখলাম - "শাহবাগের গন-জোয়ারে ভেসে যাক সব রাজাকার" আর আরেকটাতে ইংরেজিতে লিখলাম -
No mercy, Zero compromise, Zero tolerances for war criminal of 1971
আরও দুই একজনকে ফোন করলাম, কেউই এই শীতের মধ্যে যেতে রাজি হলোনা। তাই একলাই বের হয়ে পড়লাম। যাওয়ার সময় ট্রেনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি ফিল করলাম - মনে হল আমি যুদ্ধে যাচ্ছি। সময় যেন ফুরচ্ছিল না, কখন গিয়ে সেখানে পৌঁছবো এই ধরনের একটা ফিলিংস বুকে ধুরু-ধুরু করছিল। অবশেষে গিয়ে পৌঁছলাম, গিয়ে দেখলাম অনেক মানুষ। অনেকে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও একটা প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আস্তে আস্তে মানুষ আরও বাড়তে লাগলো।
চারদিক মিছিলে আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে উঠলো। ৭১ এর হাতিয়ার - গর্জে উঠুক আরেকবার। আর কোন দাবি নাই - রাজাকারের ফাঁসি চাই। কাদের মুল্লা কাদের মুল্লা - তুই রাজাকার তুই রাজাকার। কখন যে নিজেরে মিছিলে ডুবিয়ে দিলাম সেটা বুঝতে পারিনি। স্লোগান গুলো এত শীতের মাঝেও শরীর গরম করে দিয়েছিল - দিস ফিলিংস ওয়াজ টোটালি প্রাইসলেস! আমার পাশে একজন মুক্তিযোদ্ধা দাঁড়িয়েছিলেন। উনি আমার এক হাত ধরে বললেন - এখন মরে গিয়েও শান্তি পাবো বাবা। এত দিন মনে হয়েছিল আমরা মারা গেলে হয়ত সব শেষ হয়ে যাবে, কেউ আর রাজাকারের বিচারের ব্যাপারে কথা বলবেনা। তোমরা আমাদের ধারনাটা ভুল প্রমাণ করেছো, এখন শান্তিতে মরতে পারবো।
জাতীয় সংগীত গেয়ে অনুষ্ঠান শুরু হল। অনেক দিন পরে জাতীয় সংগীতটা গেয়ে খুবই ভাল লাগল। স্লোগানের মাঝেমাঝে গন সংগীতও গাইলাম। এক কোনায় দেখলাম একটা একটা ছোট মেয়ে তার বাবা'র কাঁধে বসে আছে। তার হাতে একটা প্ল্যাকার্ড, তাতে লেখা - রাজাকারের ফাঁসি চাই! একজন বৃদ্ধ চাচা আমাকে বললেন - আমারে একটা প্ল্যাকার্ড দেয়া যাবে? উনাকে একটা প্ল্যাকার্ড দিলাম উনিও প্ল্যাকার্ড নিয়ে আমাদের সাথে দাঁড়িয়ে পড়লেন। অনেক তরুণীদের দেখলাম মাথায় বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ বেঁধে আসছে। এক কথায় বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সব ধরনের মানুষের স্বতস্ফৃর্ত অংশগ্রহণই বলে দিয়েছে শাহবাগ এখন শুধু বাংলাদেশে না - শাহবাগ এখন পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে বাসায় ফিরার পর - পরিচিত অনেকে বললেন কি লাভ হল এই শীতের মধ্যে বাহিরে দাঁড়িয়ে এসব করে। আমি তাদের বললাম - কোন লাভ খুঁজে তো আমি সেখানে যাই নাই, গেছি প্রাণের টানে। যখন হাত উঁচিয়ে মিছিল দিলাম - "৭১এ ছিলাম না, এবার তোদের ছাড়বো না" তখন বুকের ভিতর যে অনুভূতিটা কাজ করছিল সেটা প্রকাশ করে কাউকে বুঝাতে পারব না। শুধু এইটুকু বলতে পারব - আজকে সেখানে না গেলে হয়ত কোনদিন অনুমান করতেই পারতাম না যে আমি আমার দেশকে কতটা ভালবাসি।
অনুষ্ঠান শেষে আবার জাতীয় সংগীত গাওয়া হল এবং শপথ নেয়া হল -
শপথনামাঃ
শাহবাগে জনতার মঞ্চে যেমন জনতা যেভাবে যুদ্ধাপরাধীদের দাবিতে শপথ করেছে, আমরাও তাদের সাথে একাত্ম ঘোষণা করে অঙ্গীকার করতে চাই। আপনারাও আমার সাথে অঙ্গীকার করুন।
যদিও আমরা এখানে বিভিন্ন কাজ-কর্মের কারণে রাস্তায় আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারবো না, কিন্তু আমরা শপথ করছি যে, অন্তত যতক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত যে যেভাবে পারি ফাঁসির দাবিতে আমরা সোচ্চার থাকবো! ব্লগে-ফেসবুকে সবসময়েই আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো! নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যেন ফাঁসি নিশ্চিত হয়!
নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে বিভিন্ন দেশের বন্ধুদেরকে আমরা এই বিষয়ে জানাবো। সবাইকে সচেতন করব। আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধাপরাধীদের পরিচিত করে তুলে তাদের একঘরে করে তুলবো!
আমরা যতটুকু পারি, এই সুদূর প্রবাসে যুদ্ধাপরাধীদের প্রভাবমুক্ত থাকবো। যদি তাদের অথবা তাদের কোন সমর্থক-দোসর দেখি তাহলে তাদেরকে এবং তাদের সমস্ত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বর্জন করব!
জয় বাংলা!
শ্লোগানের অংশ বিশেষ চাইলে ক্লিক করেন -
Click This Link
(কার্টেসী ফর শপথনামা টু ব্লগার মিনহাজ, যে এই সমাবেশে উদ্যোক্তা)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




