somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের মঙ্গল যাত্রা

২৮ শে মে, ২০১২ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মঙ্গল গ্রহ । একটি লাল গ্রহ। হয়ত এই পৃথিবীর পর আমাদের মানুষের নতুন বাসস্থান হতে যাচ্ছে পবর্ত বেষ্টিত লাল মাটির এই গ্রহটি। আমরা মানুষেরা নতুন বাসস্থানের আশায় গ্যালাক্সী থেকে গ্যালাক্সী ঘুরে বেড়াচ্ছি—এই স্বপ্নের প্রথম বাস্তবায়ন হয়ত মঙ্গল গ্রহ থেকেই শুরু হবে। যদিও এখন পর্যন্ত একে মানুষ বসবাস করার উপযুক্ত গ্রহ বলা যায় না, তবুও আমাদের প্রতিনিধি পাঠিয়ে যাচ্ছি আমরা নিয়মিত। সেই প্রতিনিধি গুলো প্রতিনিয়ত মঙ্গল সম্পর্কে আমাদের ধারনার পরিবর্তন করে দিচ্ছে। হয়ত মঙ্গলে বাস করা এলিয়েন রা আমাদের এই যন্ত্রদেখে মুচকি হাসছে।


মঙ্গলে আমরা কম প্রতিনিধি পাঠানোর চেষ্টা করিনি। মোটামুটি ৪৯টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে মঙ্গল জয়ে। সেই জয় হয়ত আমরা এখনও পাইনি, তবে আমরা অভুক্ত মানুষের জ্ঞানের নেশা যতদিন থাকবে ততদিন আমরা চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারি।


স্ফুটনিক-১(Sputnik-1) এর সাফল্যের ধারায় মহাকাশ গবেষণার দিকদর্শী সোভিয়েত ইউনিয়ন কিন্তু ১৯৬০ সালেই প্রথম পাঠিয়ে ছিল মঙ্গলে মহাকাশ যান। মার্স ১৬৬০ এ নামের পাঠানো এই মহাকাশ যান অবশ্য আকাশ পর্যন্ত যেতে পারে নি। তবে তা নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক। “মার্স১৬৬০ বি” এবং “Sputnic 22” একই ভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। থেমে থাকিনি আমরা। মার্স-১ নামের নভোযান ১৯৬২ সালে পাঠানো হয়। এই অভিযানটিকে সফল বলা যায় কারন তা মঙ্গল গ্রহ সর্ম্পকে আমাদের অনেক তথ্য দিয়েছে তার চলার পথে। কিন্তু ১৯৩০০০ কি.মি. যাওয়ার পর সবধরনের যোগযোগ বিছিন্ন করে দেয়। হয়ত এখনও সে ছুটে চলছে মানুষের বার্তা বাহক হয়ে। অথবা কোন মহাজাগতিক বস্তুর দ্বারা ধ্বংস হয়ে গেছে।

১৯৬৪ সাল মার্কিন যুক্তরাষ্টের নাসার নজরে পড়ে এই মঙ্গল গ্রহ। শুরু হয় তাদের মঙ্গল যাত্রা। ম্যারিয়ন নামের প্রথম প্রজেক্ট হাতে নেয় নাসা। ম্যারিয়ন-৩ম্যারিয়ন-৪ এই বোনদের নিয়ে শুরু হয় তাদের মিশন। ৫ নভেম্বর ১৯৬৪ সালে উৎক্ষেপিত ম্যারিয়ন-৩ পৃথিবীই পেরুতে পারেনি। তবে সাফল্য নিয়ে আসে তার ছোটবোনই ম্যারিয়ন-৪। এই ফ্লাইবাই ছোট যানটি মঙ্গলের খুব কাছ থেকে ২১টি ছবি পাঠিয়েছিল। তার পর সে আমাদের সাথে আর যোগাযোগ রাখেনি। কে জানে কি তার কষ্ট? সোভিয়েত ইউনিয়ন কি বসে থাকতে পারে। Zond-2 নামের যানটি অবশ্য সাফল্য আনতে পারে নি। মঙ্গলে পৌছানোর তিনমাস আগে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে সে।


পাচঁ বছর বিরতী দিয়ে নাসা আবার তার মঙ্গল অভিযান শুরু করে। এবারও সেই ম্যারিয়ন। ম্যারিয়ন ৬ এবং ম্যারিয়ন-৭ বোনদ্বয় এবারে যাত্রার জন্য প্রস্তুত করা হয়। মঙ্গলের অন্যতম সফল অভিযান চালায় এই বোনদ্বয়। মঙ্গলের খুব কাছ থেকে পৃষ্টদেশে ছবি পাঠিয়েছিল এই দুই ফ্লাই বাই নভোযান। ও ফ্লাইবাই নভোযান হল যারা কোন কক্ষপথে আটকা পড়ে না বা সারফেসে ল্যান্ড করে না। সামনে দিয়া উড়ে চলে যায়। এই বোনদ্বয় অবশ্য পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেনি। অগাস্ট ১৯৬৯ মাসেই দুইটি প্রজেক্টের সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়। ঐ সময় সোভিয়েট ইউনিয়ন অবশ্যই দুইটি অরবিটার নভোযান পাঠানোর চেষ্টা করে কিন্তু দুটিই ব্যর্থ হয়।

১৯৭১ সালে ম্যারিয়ন-৮ ব্যর্থ হওয়ার পর তার আরেক বোন ম্যারিয়ন-৯ নামের অরবিটার যানটি উঃক্ষেপন করা হয়। ম্যারিয়ন -৯ প্রথম সফল অরবিটার মহাকাশযান। অরবিটার যান আর কিছুই না গ্রহের সাথে কক্ষপথ ধর ঘুরতে পারে। কৃত্রিম উপগ্রহ আরকি। যাই হোক এই অরবিটার টি আমাদের জন্য বেশ কিছু রো ইমেজ পাঠায়। যার দ্বারা আমরা মঙ্গলের পৃষ্টদেশ আর আবহাওয়া সম্পর্কে ধারনা পাই।



সোভিয়েত ইউনিয়ন আবার সদর্পে ফিরে আসে মঙ্গল জয়ে। আরও অত্যাধুনিক কিছু নিয়ে। সেই মার্স প্রজেক্টের ২ নাম্বার নভোযানটি নিয়ে। এর দুটি অংশ একটি হল অরবিটার আর আরেকটি হল ল্যান্ডার যা মঙ্গল গ্রহে ল্যান্ড করবে। বড়ই উচ্চাশা নিয়ে যাত্রার শুরু করে মার্স-২। অরবিটারটি সফল ভাবে স্থাপিত হল। এবার ল্যা্ন্ডার ল্যা্ন্ড করবে মঙ্গলে। কিন্তু বিধিবাম, টেকনিক্যাল প্রব্লেম। মঙ্গলের পৃষ্ট স্বর্শ করার আগেই ধ্বংশ হয়ে যায়। তাতে কি মঙ্গল পৃষ্টতে তো মানুষের কোন যান পড়ল। হয়ত তা ধ্বংসাবশেষ।

একই ভাবে মার্স-৩ এর ল্যান্ডার সফল ভাবে ল্যান্ড করলেও ১৫ সেকেন্ডের মাথায় আবার ধ্বংস হয়ে যায়। মার্স -৪ থেকে ৭ পর্যন্ত পাঠানো অরবিটার আর ল্যান্ডারগুলো কোনটিই তেমন সাফল্য পায়নি।



এবার নাসার পালা ১৯৭১ সালের পর ১৯৭৫ চারবছর বিরতীর পরে ফিরে আসে বিখ্যাত ভাইকিং প্রজেক্ট নিয়ে। যদিও মাএ দুটি মহাকাশযান পাঠানো হয় এই প্রজেক্টের আওতায় কিন্তু এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল মঙ্গল অভিযান এই দুটিই। Viking-1 উক্ষেপন করা হয় ২০ অগাস্ট ১৯৭৫ সালে এবং ১৯৭৬ সালের ২০ জুলাই মঙ্গল পৃষ্টে অবতরন করে।এরও কিন্তু দুইটি অংশ একটি অরবিটার এবং একটি ল্যা্ন্ডার। পুরো ভাইকিং এর উদ্দেশ্য ছিল এলিয়েন জীবন খুজা। এই দ্বায়ীত্ব পালন করতে বিভিন্ন জটিল অংশ গুলো সংযুক্ত করা হয় এর সাথে। এটি নিজেই যেন একটি গবেষনাগার। Viking-1 আমাদের অনেক তথ্য দিয়েছে মঙ্গলে আবহাওয়া মাটি আর প্রকৃতি সম্পর্কে। চমতৎকৃত এই তথ্যতের মধ্যে আছে মঙ্গলে একসময় পানি ছিল। হাজার কিলোমিটার ভ্রমন করে এ অরবিটারটি। ৬বছর ১১৬ দিন ধরে আমদের হাজার হাজার ফটো আর এনালাইসিসের ফলাফল পাঠিয়েছে এই ভাইকিং-১।





ভাইকিং-২ আর একধাপ এগিয়ে ছিল। প্রথম রঙ্গিন ছবি পাঠিয়েছিল এই বোনটি। প্রায় ১৬০০০ হাজার ফটো পাঠিয়েছে ভাইকিং-২। আর মাইলের পর মাইল ছুটে চলেছে জীবনের সন্ধানে। এপ্রিলের ১১ তারিখ ১৯৮০ সালে ছোট এই বোনটি ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আমাদের সাথে। হয়ত আশায় বসে আছে কোন এক মানুষ চালু করে দেবে তার ব্যাটারিটি। বড় বোনটি কিন্তু তখন চষে বেরিয়েছে মঙ্গলে। ১৯৮২ সালে বড়বোনটিও যোগাযোগহীন হয়ে পড়ে।
প্রায় ১৫ বছর পড়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন নতুন প্রজেক্ট নিয়ে আসে। ফোবস নামে এই প্রজেক্টের দুটি মহাকাশ অভিযান ব্যার্থতায় পর্যবসিত হয়। একটি বার চিন্তুা করুন সোভিয়েট ইউনিয়ন একটি বারের জন্য তেমন সাফল্য পায় নি মঙ্গল অভিযানে। তার কপালে হয়ত মঙ্গল ছিল না।



ভাইকিং প্রজেক্টের পর নাসাও অবশ্য অনেক বছর চুপ করে ছিল। আসলে ঐ সময় টা তার ভাইকিং এর পাঠানো তথ্যগুলো পর্যালোচনায় সময় ব্যয় করে। যাই হোক ১৯৯২ সালে তারা আবার ফিরে আসে “মাস অবজারভার” নামের প্রজেক্টটি নিয়ে। এটি একটি অরবিটার টাইপের মহাকাশ যান। অনেক উন্নতি প্রযুক্তির কারিশমা থাকলেও মিশনটি ব্যর্থ হয়। ১৯৯৬ সালে নাসা আবার একটি অরবিটার পাঠায় “মার্স গ্লোবাল সাভেয়ার” নামে। এই অভিযানটি অনেক বাজেট ছিল। এই অরবিটারটি মঙ্গলকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে। মঙ্গলের চৌম্বকত্ব নিয়ে পরীক্ষা করে। এবং মঙ্গলে তরল পানি থাকতে পারে বলে ধারনা দেয়। আসলে এই যানটি অনেক অনেক ভেতরের হাড়ির খবর নিয়ে আসে মঙ্গলের। মধ্যে ২০০৪ সালে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও ২০০৮ সালে এর সাথে পূন: যোগাযোগ করা সম্ভব পর হয়।


সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর রুশ ফেডারেল এজেন্সি তাদের নতুন একটি যান পাঠানো চেষ্টা করে তবে ফলাফল আগের মতই ব্যর্থ। নাসা মার্স পাথফাইন্ডার পাঠানো হয় ১৯৯৬ সালে যা অন্যতম সফল একটি প্রজেক্ট। যদিও মাত্র ১০ মাস পর এর সমাপ্ত ঘোষনা করা হয়।

স্পেস এ নতুন শক্তি হিসেবে জাপান প্রথমবারের মত চেষ্টা করে ১৯৯৮ সালে নজমি নামের যানটি মঙ্গলে পাঠাতে। অরবিটার হলেও এটি মঙ্গলে অরবিটে প্রবেশ করেনি।

যাই হোক নাসার পাঠানো পরবর্তি তিনটি প্রজেক্টই ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে ডীপ স্পেস ২ নামের বেশ ব্যয়বহুল প্রজেক্টও ছিল।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১২ রাত ১২:০৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×