শুধু মনোরোগ সেকটরেই অপচিকিৎসায় প্রতিবছর হাজার হাজার রোগী মারা যাচ্ছে । এ নিয়ে কোন আওয়াজ নেই কেন!!! এর জন্য কারা দায়ী! ডাক্তাররা না অন্য কেউ!! একটু ভেঙেই বলি।
মনোচিকিৎসাশাস্ত্র চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমৃদ্ধ একটি ক্ষেত্র। এলোপ্যাথিক চিকিৎসার ক্ষেত্রের কথা বলছি। বিপুল গবেষনা_-দেশবিদেশের অসংখ্য চিকিৎসক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ধারায় আজকের পর্যায়ে নিবিড় ও যথার্থ চিকিৎসা দেয়ার জন্য আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি।
তবে ঝাড়ফুক ওঝাসহ মনব্যাধি বিশেষজ্ঞের নানা অপচিকিৎসা চলছে এই সেকটরে। বিশেষজ্ঞ সেজে অনেক অপচিকিৎসক চিকিৎসা শাস্ত্র না পড়েই--- সোজা কথায় ডাক্তর না হয়েও দিব্যি মনোচিকিৎসা করছে। তবে ভয়ংকর ব্যাপার হল এটি যে-- এরা কেউ কেউ এলোপ্যাথিক চিকিৎসাও দিয়ে থাকেন। এদের অনেকে ডিপ্রেশন চিকিৎসায় স্নায়ুশীতল কারী ওষুধ হরহামেশা দেন-- এমন অভিযোগ আমরা পাই। জ্বর হলে যেমন প্যারাসিটামল আমরা ডাক্তারকে না জিজ্ঞেস করে খাই-- তেমনি কিছু অপচিকিৎসক চিকিৎসা বিজ্ঞান না পড়েই ওইরকম হাতুড়ে জ্ঞানে কাজটা করেন-- যা ক্রিমিনাল অফেন্স।
ডাক্তারদের নানা খারাপ ব্যাবহার--চিকিৎসায় অবহেলা নিয়ে নানা আন্দোলন হয় এদেশে। এটা হওয়া উচিত। অন্যায়ের প্রতিবাদ অবশ্যই হওয়া উচিত। এটা অধিকারও বটে। কিন্তু দু:খজনক বিষয় হচ্ছে--মানসিক অপচিকিৎসায় প্রতিবছর দেশে কয়েক হাজার নারী শিশু পুরুষ মারা যাচ্ছে-- হাজার হাজার মানুষ অপচিকিৎসার শিকার হয়ে কষ্টের জীবন যাপন করছে-- সে ব্যাপারে কোন সচেতনতা দেখি না।
এই অপচিকিৎসার সাথে মেডিকেল চিকিৎসকদের দূরতম সংশ্রব নেই। অথচ তার বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন সচেতনতা দেখি না। হতে পারে--- এই যে মারা যাচ্ছে এরা গ্রামীন দরিদ্র জনগোষ্ঠির--তারা ওঝা তুকতাকসহ নানা পর্যায়ের অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন।
আমাদেরও দোষ স্বীকার করছি। আমরা সব পর্যায়ে সচেতনতা তৈরী করতে পারছি না।
শহরে নগরের কথা বলছি না কেন-- সেখানে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা ড্রাগ সেন্টারেও ধনবান পরিবারের সন্তানরা অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছে। সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না।
অনেকে আমাদের অর্থলোভের কথা বলবেন। অস্বীকার করি না আমাদের টাকার লোভ আছে। আমরা রোগী এলে ভিজিট নেই। কিন্তু তার বিনিময়ে অপচিকিৎসা দেই না। সময় নিয়ে সঠিক চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করি।
একটু বুঝিয়ে বলি। ওঝা-গ্রাম্য ডাক্তার এমনকি ডাক্তার নয় এমন সব মনোচিকিৎসক নামধারীর অপচিকিৎসার শিকার হয়ে আমার কাছে কিছু রোগী শেষ মুহুর্তে আসেন। ওই অপমনোচিকিৎসকরা করে কি--রোগী যখন প্রায় মরনাপন্ন তখন আমাদের কাছে পাঠায়।
ওঝারা তো মেরেই ফেলে বছরে কয়েক হাজার রোগীকে। আবার নগরের বুদ্ধিমান অপচিকিৎসকরা ড্রাগরোগীদের নানা ভুল চিকিৎসা দিয়ে অতি খারাপ পর্যায়ে আমাদের কাছে পাঠায়।
রোগী দেখেই আমরা কন্ডিশন বুঝি। কেননা আমরা আর যাই হোক--চিকিৎসা বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট শৃংখলার মধ্যে পড়াশোনা করে এসছি। তারপরও চিকিৎসা করি। সেটা ভিজিট নিয়ে বলুন বা মানবিকতার জন্যে হোক-- আমরা রোগী ফেরাই না। এসব রোগী নিয়ে খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। ঝুকি নিয়ে চিকিৎসা করতে হয়।
অনেকে ডাক্তারদের বিরাট ভিজিটের কথা বলেন। ঠিকই বলেন। কিন্তু আপনারা অবাক হবেন-- ওইসব রোগীরা ওঝা ও ড্রাগ সেন্টারে কি পরিমান টাকা পয়সা খরচ করে আসে তা বিস্ময়কর। ওঝাদের কাছে কমবেশী ১০ হাজার থেকে ৩০/৪০ হাজার টাকা খুইয়ে রোগীরা শেষে আমাদের কাছে আসেন। শুধু ডাক্তারদের কসাই বলে আত্মপ্রাসাদ লাভ করলে চলবে না-- ওই বড় কসাইদের বিরুদ্ধে জনমত চাই। তারা তো কোন চিকিৎসা না দিয়েই হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে রোগীকে মেরে পর্যন্ত ফেলছে।
আর ড্রাগ সেন্টারে খরচ করে আসে লাখ লাখ টাকা। সেখান থেকে আসা রোগীদের কাছে এমন সব চিকিৎসকের নাম ঠিকানা পাই যারা কোন দিন মেডিকেল কলেজে পড়েনি-- মেডিকেল শাস্ত্রে তাদের কোন ডিগ্রি নেই। জ্ঞান নেই। অথচ তারা নানা এলাপ্যাথিক ড্রাগ দিয়েছে। এটা ক্রিমিনাল অফেন্স। কেন! সেটা বলা দরকার। প্রতিটি ক্যমিকেল-- এলাপ্যাথিক ওষুধের ক্রিয়া -পাশ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। সেটা আমরা নির্দিষ্ট শৃংখলার মধ্যে প্রথমে পাচ বছর ; পরে হায়ার ডিগ্রি নিতে আরও অনির্দিষ্ট বছরের পর বছর পড়ি। এটা না জেনে ওষুধ দিলে সেটা কি ভয়ংকর-- ভেবেই দেখুন ।
গ্রামীন রোগীরা এমন অবস্থায় আসেন , তখন তাদের ভিজিট দেয়ার টাকা পয়সাও থাকে না। অথচ তারা হাজার টাকা খরচ করে এসেছেন। এই ব্যপারটায় সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। একটু খোজখবর করলে দেখবেন--এই যে অপচিকিৎসায় যারা মারা যাচ্ছেন--শিকার হচ্ছেন--তারা আপনার আমারই কোন আত্মীয়।
তাকে আমার বা আমার কোন সহকর্মীর চেম্বারে আনতেই হবে-- এমন দাবি করছি না। কিন্তু সুচিকিৎসা তার অধিকার। টাকা পয়সা খরচ করে সুচিকিৎসা যেমন পেতে পারেন-- তেমনি অল্প খরচে সুচিকিৎসাও দেশে এখন সুলভ।
আমি অন্তত বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতায় জোর গলায় বলবো-- এই বিএসএম এম ইউর মনোরোগবিদ্যা বিভাগে আমরা সবাই সুচিকিৎসা দেয়ার আপ্রান চেষ্টা করি। পরীক্ষা প্রার্থনীয়। রোগীদের আমরা চেম্বারে ভাগিয়ে নিই না। সর্বসাধারনের জন্য বৈকালিক চেম্বার রয়েছে। সেখানে বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অধ্যাপক -সহযোগী অধ্যাপক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিকিৎসা দেন। সময় নিয়ে সবাই চিকিৎসা দেন। যারা বলেন দেশের চিকিৎসকরা সময় দেন না-- তাদের বলি অন্তত এখানে এসে দেখুন--সময় নিয়ে আমরা দেখি। যেখানে ওই পর্যায়ের একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বার ফি--৭০০-১০০০টাকা-- সেখানে বৈকালিক চেম্বারে মাত্র ২০০ টাকা নেয়া হয়। এটি বর্তমান ভিসি স্যার অধ্যাপক প্রানগোপাল দত্তের অনন্য কাজ। আর আরও কম খরচে আউটডোর চিকিৎসা তো আছেই। সব বিভাগে নিবিড় রোগী দেখা হয়। আর আমাদের মনোরোগ বিভাগে তো আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম ---সময় দেই--রোগী চেম্বারে যেতে বলি না। তারপরও রোগীরা কেন চেম্বারে যায়--সে রোগী ও রোগীদের স্বজনদের আরেক মনস্তত্ব ---ডাক্তারদের নানা দোষের পাশাপাশি সেব্যাপারটিও দায়ী--তা নিয়ে আরেকদিন বলবো।
মনোরোগ কোন দৈব বা গায়েবী রোগ নয়। আর দশটা রোগের মত সাধারন রোগ। অন্য রোগে যেমন কেমিকেল অষুধ দেয়া হয়-- মানসিক রোগেও এলোপ্যাথিক ওষুধ খেয়ে দিব্যি ভাল থাকা যায়। দীর্ঘায়ু থাকা যায়।
আমার ইমেইলে আপনার সমস্যা জানাতে পারেন-- সময় সুযোগ মত আমার পরামর্শদেব। আমার ইমেইল ঠিকানা[email protected]