somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাকবি কালিদাসের মেঘদূত : একটি সচিত্র বর্ণন – ১ম পর্ব

২৮ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ হতে প্রায় ষোলশত বছর পুর্বে ৪র্থ শতকে হিমালয়ের পাদদেশে উজ্জয়িনিতে মহাকবি কালিদাসের জম্ম । তিনি সংস্কৃতে লিখে গেছেন কালজয়ী রচনা মেঘদূত ও শুকুন্তলার মত গ্রন্থ । তাঁর রচনাগুলি হিন্দু পৌরানিক কাহিনী সমৃদ্ধ ।

আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে মেঘের প্রতি বিরহী যক্ষের অর্ঘ্য নিবেদন ও তার মাধ্যমে রামগিরি হতে অলকাপুরীতে তার প্রিয়তমের কাছে বার্তা প্রেরণের ভাষাশৈলী , মেঘের ভ্রমন পথে দেখার মত নদ নদী, পাহাড় পর্বত, দেব দেবী ,আকাশ মাটি ও পানিতে বিচরণকারী জীববৈচিত্রের চারিত্রিক বৈশিষ্টের বিবরণ , সেই সাথে প্রেম লিলার এক অপুর্ব বর্ণন মেঘদুত কাব্য গ্রন্থটিকে করেছে । জগতের প্রায় সকল বিখ্যাত ভাষাবাষীদের কাছে এটি একটি উপভোগ্য কাব্য সম্ভার ।.

১৮১৩ সনে হায়মেন উইলসন একে প্রথম ইংরেজীতে অনুবাদ করেন । তার পর থেকে এই বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থটি পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদিত হয় । পৃথিবীর বিভিন্ন সাহিত্য পর্যালোচনা, যার মধ্যে মালিনাথার পর্যালোচনায় পাশ্চাত্যে এই কাব্যগ্রন্থটি পরিচিতি পায় সমধিক । এই অপুর্ব কাব্যটির বিভিন্ন চমৎকার বর্ণনার উপর ভিত্তি করে অনেক বিখ্যাত শিল্পী আঁকেন সুন্দর সুন্দর চিত্রকর্ম । এর মধ্যে বিখ্যাত চিত্র শিল্পী
নান্না জোসির আঁকা চিত্রকর্ম ব্যাপক পরিচিতি পায় । তার আঁকা ছবি

মেঘদুত এর রূপক গুলি প্রয়োগ হয়েছে বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন রচনাতে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন অবয়বে । অনেক গ্রন্থে রয়েছে এর বর্ণনার আলোকে কিছু মনোহর চিত্রের সংযোজনা । বাংলাতেও রয়েছে মেঘদুতের অনেক অনুবাদ যা আমাদের সামুর অনেক পাঠকের নিকটই নিশ্চয়ই সুপরিচিত ।
বুদ্ধদেব বসু , ড: মুরারিমোহন সেন ও শক্তি চট্টোপধ্যায় এর রচনা হতে ক্ষেত্র বিশেষে খানিক সম্পাদনা করে মহাকবি কালিদাসের মেঘদূত এর একটি সচিত্র অনুলিখন তুলে ধরা হয়েছে এখানে । এটি মুলত: ড: মুরারিমোহন সেন এর অনুবাদ অনুকরণে প্রণীত । তাঁর প্রতি রইল অকৃত্তিম শ্রদ্ধা । ছবিগুলিও নেটের বিভিন্ন সুত্র থেকে সংগৃহীত এবং প্রাসংগীক স্থানে গ্রথিত ।
মেঘদুতের কাব্য বিবরণীতে দেখা যায় কোন এক যক্ষ অত্যধিক পত্নিপ্রেমবশত নীজ কর্তব্য কর্মে অবহেলা করায় তাকে তার প্রভু অলকাপতি কুবের রাজধানী অলকা হতে রামগিরি পর্বতে তরুছায়া নিবির আশ্রমে এক বছরের জন্য নির্বাসিত করেন।

ছবি ১ /২৩ কুবের কতৃক যক্ষকে নির্বাসনে যাওয়ার জন্য দন্ডাজ্ঞা দান


এই নির্বাসন যক্ষের পক্ষে প্রবল বিরহের কারণ হল ।এ সময় তার সকল অলৌকিক ক্ষমতা লোপ করা ছিল । বনবাসকালে রামসীতা এই রামগিরি পর্বতেই কিছুদিন ছিলেন । এখান কার নদনদী সব পুণ্যসলিলা । কালিদাসের মেঘদুতে এটা আসে সুন্দর গাথায়।
সংস্কৃত পন্ডিতগনের মতে মেঘদুত কাব্যে বর্ণিত এই যক্ষ কুবেরের শিবপুজার জন্য পুষ্পচয়নকারী ভৃত্য ছিল । যক্ষ দেবযোন মহিমা সম্পন্ন এবং বিবাহিত । সে তার স্ত্রীর প্রতি বিশেষ অনুরক্ত ছিল । দীর্ঘ এক বছরের বিরহ যক্ষের পক্ষে বড় বেদনাদায়ক ছিল । এই বিরহ বেদনাই মেঘদুত কাব্যের উপজীব্য।

আষাঢ়ের প্রথমদিনে যক্ষের বিরহের আটমাস অতিক্রান্ত হয় । যক্ষ ভাবল আষাঢ় শেষে শ্রাবন মাস আসলে প্রবল বিরহ বেদনায় তার প্রিয়ার প্রাণ সংসয় হতে পারে । এ সময় যদি প্রিয়াকে নীজের কুশল সংবাদ পাঠানো যায় তবে তাতে আশ্বস্ত হয়ে তার জীবন রক্ষা হতে পারে । এ কথা ভেবে যক্ষ মেঘের সাহয্যে নীজের কুশলবার্তা প্রেরণ করতে মনস্থ করল । এ জন্য সে কল্পনার মেঘকে নবপ্রস্ফুটিত গিরিমল্লিকাপুষ্পের অর্ঘ্য নিবেদন করল এবং প্রীতিপুর্ণ বাক্যে স্বাগত জানায়ে তার বক্তব্য পেশ করে ।
মেঘকে তোশামুদ করে বলা হয়েছে মেঘ , পুস্কর, আবর্ত্তক প্রভৃতি ভুবন বিখ্যাত বংশে তার জম্ম । মেঘের বংশের অনেক শ্রেণী আছে এর মধ্যে পুস্কর আবর্তক উচ্চ বংশীয় । তাকে বলা হচ্ছে তুমি দেবরাজ ইন্দ্রের অনুচর , তাঁর প্রধান পুরুষ । তুমি ইচ্ছেমত রূপ ধারণ করে সেখানে খুশী সেখানে বিচরণ করতে পার । তাই বিধির বিধানে যক্ষ প্রিয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে মেঘের সাহায্য প্রার্থনা করছে । বলছে মেঘের ন্যয় মহৎ হৃদয়ের কাছে প্রার্থনা করে বিফল হলেও তা অধমের নিকট হতে প্রাপ্ত সফলতার চেয়ে শ্রেয় ।

মেঘদুতে রয়েছে ১১১টি স্তবক এর পুর্বরাগে ৬৬টি স্তবক ও উত্তর রাগে রয়েছে ৫৫টি স্তবক ।
এই অপুর্ব কাব্যটিকে কয়েক পর্বে ভাগ করে পর্যায়ক্রমে এখানে উপস্থাপনের প্রয়াস নেয়া হয়েছে ।
প্রথমে পর্বে পুর্ব রাগ হতে ৩০ টি স্তবক তুলে ধরা হয়েছে ।

পুর্বরাগ

কর্তব্য অবহেলার কারণে
প্রেমিক যক্ষ হল অভিসিক্ত
এক বছরের তরে ,
পত্নী বিরহিত জীবন
করতে হবে যাপন
রামগিরি আশ্রম পরে,
অভিশপ্ত যক্ষের
অলৌকিক ক্ষমতাও
ছিল যে অবলুপ্ত ।


অলকা হতে রামগিরি
যথায় রাম সিতার বনবাসের মাখা ছিল স্মৃতি
সেথায় সিতার সিনানে জল ছিল পবিত্র অতি
শ্যামল তরুর ছায়ায় স্নিগ্ধ ,সে তীর্থ ভুমেই
হল যক্ষের কস্টময় নির্বাসনের দিবস যাপন ।

মাসের পর মাস গেল কেটে
বিরহ দু:খে শীর্ণ যক্ষের বাহু হতে
স্বর্ণবলয় পড়ল খসে ,
এলো আষাড়ের প্রথম দিবস
দেখল সে পর্বতের সনে
আলিঙ্গনা বদ্ধ এক খন্ড মেঘ
মনে হল প্রমত্ত হস্তী যেন
শৃংগের আঘাতে আঘাতে
মত্ত হয়েছে ভুমি খননের খেলায়
দৃশ্যটি দেখায় বড়ই রমনীয় ।

ছবি-২/ ২৩ খন্ড মেঘ ; প্রমত্ত হস্তী যেন শৃংগের আঘাতে আঘাতে মত্ত ভুমি খননের খেলায়



কোনমতে থাকি চেয়ে কামনা উদ্দিপক জলধর পানে
রাজাধিরাজ অনুচর চিন্তাতগ্ন অশ্রুবাষ্প রাখি সংগোপনে
মেঘ দর্শনে সুখীজনেরও উদাস ব্যাকুল হয় চিত্ত
কি কহিব কন্ঠলিঙ্গনাকাহ্মিণী প্রিয়া হলে দুরে স্থিত্য ।

আসিলে শ্রাবণ যক্ষ ভাবে কেমনে রক্ষিবে দয়িতা জীবন
প্রেরিতে নিজ কুশলবার্তা মেঘদুতে করিল মনন
অভিনব গিরি মল্লিকার কপ্লিত অর্ঘ্য নিবেদিয়া জলধরে
প্রীতিবচনে কুশলাদি শুধাইয়া স্বাগত সম্ভাষণ করে ।

কোথা সেই মেঘ ধুম, জ্যোতি, সলিল আর মরুতের সমাহার
আর কোথায় বা সেই বার্ত-বহন চেতন প্রাণীর যাহা সমুচিত
না করি বিচার ঔৎসুক্যবশে যক্ষ যাচে কৃপা মেঘের সকাশে
চেতনাচেতন নাহি প্রকৃতিতে আর্ত যে জন কামের আবেশে ।

বক্তব্যের সুচনায় মেঘের একটু স্তুতি চাই! যক্ষ বলে বিনম্রতায়
ওগো মেঘ, ভুবনবিদিত পুস্কর আবর্ত্তকাদি বংশে জম্ম তোমার
আমি জানি দেবরাজের প্রধান পুরুষ তুমি কামরূপী অনুচর
বিধিবশে বঁধু হতে দূরে আমি সে কারণ কৃপা যাচি তোমার
অধমের কাছে প্রাপ্তির চেয়ে বিফলতাও শ্রেয় যেচে তা উত্তমে ।

ছবি -৩/২৩ বক্তব্যের সুচনায় মেঘের প্রতি যক্ষের স্তুতি বন্দনা



যারা সন্তপ্ত হৃদয়ে দহন তাদের তো তুমিই একমাত্র শরণ
ধনপতি কুবেরের ক্রোধে প্রিয়ার সান্নিধ্য হতে বিচ্ছিন্ন এখন
আমার কুসল তুমি প্রিয়ার নিকটে যাও নিয়ে করে বহন।
তোমাকে যেতে হবে অলকায় , অলকা যক্ষরাজগনের বিলাসভুমি
তীর্থ ভুমিও বটে ! চন্দ্রের দিপ্তিতে আলোকিত নগরের অট্টালিকা যত ।

ছবি -৪/২৩ চন্দ্রের দিপ্তিতে আলোকিত অলকা নগরের অট্টালিকা যত



তোমায় উড়ে যেতে দেখলে বায়ুপথে মীনকুমারী নারীদের মন
আশায় সঞ্চারিত হবে বুঝবে মিলনকাল এবার বুঝি সমাসন্ন
তারা এলোচুলের প্রান্ত ভাগ তুলে নিয়ে আগ্রহে দেখবে তোমায়
আমার মত পরাধীন ব্যক্তি ছাড়া আর কে আছে যে তোমার উদয়ে
তার বিরহ ব্যকুলা প্রিয়াকে উপেক্ষিপে ।
১০
মৃদুমন্দ বায়ুতে দেখবে গর্বিত চাতক তোমার বা দিকে মধুর কুজনে মত্ত
আকাশে মালার মত সজ্জিত নয়নমোহর বলাকাদল হবে তোমার সেবায়রত
কেননা তোমার সঙ্গে তাদের ক্ষনপরিচয় , তুমি না করলে রচনা আড়াল
বকমিথুনেরা পেতনা সহজে অবকাশ প্রিয়তমের সাথে মিলিত হবার ।

ছবি-৫/ ২৩ নয়নমোহর বলাকাদল দেখা যায় মেঘের চলার পথে সেবায়রত


১১
বাধা হীন বেগে এগিয়ে গেলে আমার পতিপ্রতা পত্নি
তোমার ভ্রাতৃজায়াকে তুমি দিব্য চোখে দেখতে পাবে
সে মিলনের আশায় গুনছে দিন, নিশ্চয় এখনো জীবিত সে আছে
বৃন্ত যেমন ফুলকে রাখে ধরে, আশাও তেমন জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে
আশার বন্ধনটিই বিরহকালে নারীর ভঙ্গুর হৃদয়কে ধরে রাখে ।
১২
গর্জনে তোমার ভুমি ভেদ করে ভুকন্দলী ফুল উঠে এসে করবে ঘোষনা
এবার ধরা ‘অবন্ধ্যা’ অর্থাৎ শস্যশালিনী হবে তোমারই মধুর গর্জন শুনে
মানস যাত্রী রাজ হংসের দল মুখে মৃনাল শব্দ বহন করে কৈলাস পর্যন্ত
তোমার সফর সংগীদল হয়ে পাখার সমীরনে দিবে অনাবিল আনন্দ ।

ছবি-৬/২৩ মেঘের সফর সংগী হিসাবে রাজহংসী দল পাখার সমীরনে মেঘকে দিচ্ছে আনন্দ


১৩
এবার তোমার প্রিয়বন্ধু রামগিরি পর্বতকে আলিঙ্গন পুর্বক কর বিদায় গ্রহণ
রামগিরির পর্বত মেখলায় রয়েছে সব মানবের পুজ্য শ্রীরামচন্দ্রের পদাঙ্কন।
কালে –কালে তোমার সান্নিধ্য লাভেই তার দীর্ঘ বিরহের তাপ হয় নির্বাপন।

ছবি-৭/২৩ মেঘের সান্নিধ্যে রামগিরির পর্বত মেখলায় শ্রীরামচন্দ্রের পদাঙ্কমিশ্রিত স্থানের তাপ নির্বাপন ।


১৪
তোমার যাত্রা পথের যোগ্য সন্ধান দিচ্ছি বলে, এখন মধুর সংবাদ টি শুনে নাও,
যেতে যেতে যখনই তুমি ক্লান্ত হবে তখন শিখরে শিখরে একটু বিশ্রাম করে নিয়ো
যাত্রাপথে জলবর্ষণের ফলে ক্লান্ত হলে তখন একটু হালকা জলপান করে নিয়ো ।
১৫
আকাশ পথে যাওয়ার কালে সরলা সিধ্যাংগণ বিষ্মিত দৃষ্টিতে তোমার দিকে চেয়ে দেখবে
দেখবে আর ভাববে তাইতো ! ঝঞ্জারবেগে কোন পাহাড়ের চূড়া যাচ্ছে বুঝি উড়ে উত্তরে
দিকে দিকে আছে দিঙনাগ, তারা তোমার পথরূধ করতে পারে তুমি তাদের এড়িয়ে যেয়ো
বলা হল তোমার যাত্রা শুরু হবে এই বেতসকুঞ্জ থেকে আকাশ পথে সোজা উত্তর দিকে ।
১৬
তুমি যখন উত্তরে যাবে তখন তোমার দেহে লগ্ন হবে ইন্দ্রধনু,
তোমার দেহে কত শুভা বাড়বে বল তো ! কৃষ্ণ যেমন সুন্দর
ময়ুর পুচ্ছ গোপাল বেশে সাজতেন
তোমার সজ্জাও হবে ঠিক তেমন ।
ছবি-৮/২৩ : দেহলগ্ন ইন্দ্রধনুর শুভায় ময়ুর পুচ্ছ সম গোপাল বেশে মেঘের সাজ


১৭
কৃষিফল তো তোমারই অধীন, তাই জগত বধুরা তোমার দিকে প্রিতির আশায় উড়ে যেতে চাইবে
ছবি -৯/ ২৩ : জগত বধুরদের মেঘের দিকে প্রিতির আশায় উড়ে চলা


আগ্রহে ভরা গভীর দৃস্টিতে ফসলের মাঠ তোমাকে করবে পান !তুমিও হর্ষমনে তাদের উপরে উঠবে,
বর্ষণের ফলে সে ভুমি হবে সৌরবময় নিশ্চই তোমার ভাল লাগবে, সেই সৌরব আঘ্রাণ করতে করতে
একটু বেঁকে পশ্চিম দিকে যেয়ো তারপর আবার উত্তর দিকে তোমার যাত্রা চলতে থাকবে যথাযথ ।

ছবি-১০/২৩ : ফসলের মাঠ করবে জলধরের বারি পান !মেঘও হর্ষমনে তাদের উপরে উঠবে


১৮
একটু বেঁকে পশ্চিমে যেতে তোমার পথে পড়বে আম্রকুট পর্বত এরই অরন্য দাবানলে দগ্ধ হ ওয়ার সময় তোমারই বর্ষণে সে দাবদাব হয়েছিল নির্বাপন্য। পথশ্রমে ক্লান্ত দেখে কৃতজ্ঞ আম্রকোট তখন করবে তোমায় মস্তকে ধারণ ।

ছবি-১১/২৩ : মেঘকে আম্রকুট পর্বতের মস্তকে ধারণ


১৯
ঐ আম্রকুটের কুঞ্জবনে বনচরবধুরা করেন বাস , মহুর্তকাল সেখানে থেকে তুমি কিছু বর্ষণ কোরো – বর্ষণের পর নিশ্চয় তোমার গতি হবে লঘু; তখন তুমি দ্রুত গতিতে অগ্রসর হয়ো ; তখন দেখতে পাবে বিন্ধ পর্বতের পাদদেশে বিশীর্ণ রেবা নদী প্রবাহিতা । বিন্ধ গাত্রে বিচিত্র ধারা দেখলে মনে হবে যেন হস্তির গায়ে বিচিত্র রেখায় রচিত সজ্জা ।

ছবি - ১২/২৩ : আম্রকুটের কুঞ্জবনে বনচরবধুরা


২০
ওগো মেঘ তুমি তো সেখানে বর্ষণ করবেই ; কিন্তু বর্ষণের পর যখন হালকা হবে
তখন গজমত ধারায় সুবাসিত রেবার জরধারা পান করে নিয়ো, তুমি সারবান হলে
বায়ু আর তোমাকে যেখানে খুশী উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারবেনা ।
যে লঘু সেই সর্বাংশে রিক্ত, যে গুরুভারে পুর্ণ তার গৌরব সর্বত্র ।

ছবি-১৩/২৩ : পাহাড়ের বাকে বাকে চলা মনোরম রেবা নদীতে মেঘের জলপান


২১
তুমি যেতে যেতে দেখবে , কোথাও ভুইচাপা ফুটে উঠবে , তোমার বর্ষণ মাটি থেকে মধুর গন্ধ উঠতে থাকবে, সেই গন্ধ আঘ্রাণ করতে করতে বিচিত্র হরিনগুলি তোমার বর্ষণসিক্ত পথে ছুটবে ; সবাইকে তারাই বলে দিবে কোন পথে গিয়েছ তুমি।

ছবি - ১৪/ ২৩ : বিচিত্র হরিনগুলি মেঘের বর্ষণসিক্ত পথে ছুটবে আর সবাইকে বলে দিবে কোন পথে গিয়েছে যে মেঘ


২২
বর্ষণের সময় ভুমিতে পরার আগেই চাতক জলপান করে , এ সব জলবিন্দু গ্রহণে নিপুন চাতকদের দেখতে দেখতে সিন্ধেরা এক দুই করে গুনে যাচ্ছেন সারিবদ্ধ বলাকার দল । এমন সময় হঠাৎ মেঘের গর্জন ! চকিত ভীত ও সংকিত হবে সিধাঙ্গনরা ।
২৩
তোমায় দেখে সিদ্ধাঙ্গনরা সঙ্গে সঙ্গে দাঁয়তের বক্ষে আশ্রয় নেবে
অযাচিত এ আলিঙ্গনে সিদ্ধেরা খুশী হয়ে তোমাকেও সমাদর করবেন
তাছাড়া উৎফুল্য সিন্ধমিথুনদের দেখে তোমারও আনন্দ হওয়ারই কথা।

ছবি - ১৫/ ২৩ : উৎফুল্য সিন্ধমিথুনদের দেখে মেঘের আনন্দিত হওয়ারই কথা


২৪
ওগো বন্ধু আমার প্রিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে যে তুমি দ্রুত পথ চলবে তা আমি জানি
তবু মনে হয় , কুরচি ফুলের সুগন্ধে আমোদিত পর্বতে তোমার কিছু বিলম্ব হতেও পারে।
কুরচিফুলের সুগন্ধের কথা ছেড়ে দিলেও , আকাশে তোমাকে দেখে জলভরা চোখে
তোমার দিকে তাকিয়ে ময়ুরের দল যখন স্বাগত সম্ভাষণ জানাবে, তখন তুমি কষ্ট হলেও
না থেমে আমার দু:খের কথাটা দয়া করে ভেবে একটু তারাতারি চলবার চেষ্টা করবে ।

ছবি -১৬/২৩: মেঘকে ময়ুরের দলের স্বাগত সম্ভাশনের প্রস্তুতি


২৫
এরপর তোমার যাত্রাপথে পড়বে সুন্দর দশার্ণ দেশ। তুমি দশার্ণে উপস্থিত হলে
মানসযাত্রি সেই রাজহংসের দলও সেখানে কিছুদিন থেকে যাবে। দশার্ণের চারদিকে
শ্যামবন, তাদের ফল পরিপক্ক, বাইরে পান্ডূছায়া ভরা কেতকির বেড়া ঘেরা উপবন।
তুমি সেখানে এলে কেতকির কুঁড়ি ফুটে উঠবে ,পথের পাশে বৃক্ষে বৃক্ষে গৃহবলিতুক
পক্ষিরা দেখবে নীড় নির্মাণে রত, সে সকল অবলোকনে তোমার খুব ভাল লাগবে ।

ছবি -১৭/২৩ : বৃক্ষে বৃক্ষে গৃহবলিতুক পক্ষিরা নীড় নির্মাণে রত


২৬
দশার্ণ দেশেরই বিখ্যাত রাজধানী বিদিশা, সেখানে গেলে তোমার বিলাসী হৃদয়ের কামনা হবে পুর্ণ । সেখানে নীল নেত্রবতির স্বাধুজল খানিকটা পান করে নিয়ো, তোমার মনে হবে ঐ নদীরূপিনী নায়িকা ভ্রূভঙ্গে তোমাকে নিষেধ করছে , তার কন্ঠস্বর ব্যক্ত হবে চঞ্চল উর্মীর কলধ্বনিতে , ওদিকে শুনা যাবে তীরোপান্তে তোমারো মৃদু গম্ভীর গর্জন।

ছবি -১৮/ ২৩ : নীল নেত্রবতির স্বাধুজলাধার হতে মেঘের জলপান


২৭
বিদিশা নগরীর উপকন্ঠেই এক সুন্দর পাহাড় নাম নীচৈ: সেই পাহাড়ে বিশ্রাম নেবার জন্য কিছুক্ষন অপেক্ষা করো, তোমার সংস্পর্শে এলে সেখানে প্রস্ফুটিত কদম্ব পুলকিত হয়ে উঠবে । সেখানে নির্জন গিরিগুহা যৌবনবিলাসী প্রেমিকের দল বিলাসিনী রমণীদের সঙ্গে মিলিত হয় , তাদের সুবাসিত অঙ্গের পরিমলে গিরিগুহাগুলি সুগন্ধে হয়ে উঠে পুর্ণ ।

ছবি- ১৯/২৩ : নির্জন গিরিগুহায় যৌবনবিলাসিনী প্রেমিকা নারী


২৮
পাহাড়ে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর আবার তুমি যাত্রা করবে । বননদীর দুই তীরে দেখতে পাবে যুথিকার ঝাড়, সেখানে তুমি তোমার নতুন জলকণা একটু বর্ষণ করে যেয়ো । যে রমণীরা সেই পুষ্পবনে পুষ্পচয়ন করতে আসে ,তারা রৌদ্রে ক্লান্ত , ঘাম ঝরে পড়ছে , ঘাম মুছতে গিয়ে তাদের কর্ণে পরিহিত পদ্মফুলে লাগছে । তুমি তাদের ছায়া দিয়েছ বলেই তাদের ক্ষনপরিচিত বন্ধু , তাই পুষ্পচয়নকারিণীদের প্রসন্ন এবং কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তুমি অভিসিক্ত হবে ।

ছবি – ২০/২৩: পুষ্পবনে রৌদ্রে ক্লান্ত পুষ্পচয়নকারিণী


২৯
উত্তরে তোমার যাত্রা কিন্তু সুজা উত্তরে গেলে চলবেনা পথ একটু বাকা হলেও তোমাকে উজ্জয়িণী দেখে যেতে হবে । উজ্জয়িনীর বিশাল অট্টালিকার ক্রোড়ে একটু বসে যেয়ো , প্রণয়ে বিমুখ হয়োনা সেখানে উজ্জয়নীর পুরললনাদের কি সুন্দর অপাঙ্গদৃস্টি । বিদ্যুত বিকাশের মত নৃত্যময় সে দৃষ্টিই যদি ভোগ না করলে তবে তোমার জীবন ব্যর্থ ।
ছবি - ২১/২৩ : নৃত্যরত উজ্জয়নীর পুরললনা


৩০
পথে নির্বিন্ধা নদী তরঙ্গে তরঙ্গে ছুটে যাচ্ছে , সঙ্গে চলছে হংসের শ্রেণী, ওরা যেন নদীর মেখলা ! হংসের কলরব জলের কলধ্বনি যেন সেই মেখলার মৃদু ঝঙ্কার
ছবি - ২২/২৩ হংসের কলরব জলের কলধ্বনি


বাধাহীন স্থানে সৃস্টি হয়েছে নদীর আবর্ত, ঐ আবর্ত যেন নদী সুন্দরীর নাভিকূপ ! তুমি একটু নেমে এসে এর রস আস্বাদন করে যেয়ো । অনেক কথা বলার শক্তি এদের নাই – নৃত্যের তালে ভাবের বিলাসই নারীর প্রণয়ভাষণ ।

ছবি -২৩/২৩ : নৃত্যের তালে তালে ভাবের বিলাসই নারীর প্রণয়ভাষণ



ধন্যবাদ এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ।

ছবি সুত্র : অন্তর্জাল
কথা সুত্র : যথা স্থানে লিংক দেয়া হয়েছে ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৩
৩৫টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×