somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাকবি কালিদাসের মেঘদুত (মেঘের চলার পথের কিছু চিত্রসহ ) – ২য় পর্ব ।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মহাকবি কালিদাসের মেঘদূত -১ম পর্ব

মেঘদূত – ২য় পর্ব ( ৩১ তম স্তবক থেকে শুরু)

স্তবক - ৩১)
ওগো সুন্দর ! তোমার বিরহে সিন্ধু নদী শুকিয়ে হয়েছে একগাছি বেণীর মতোন
দুই তীরের তরু থেকে জীর্ণ পাতা খসে পরেছে বলেই তার জলের ধারা পান্ডূবর্ণ
নদীটি যেন তার কৃশতা ত্যাগ করতে পারে তার ব্যবস্থাটা তুমিই করো
তুমি বর্ষণ করলেই সে কুলপ্লাবী হয়ে উঠতে পারে ।
ছবি-১/৩২ : সিন্ধু নদী শুকিয়ে হয়েছে একগাছি বেণীর মতোন


৩২)
এরপর তুমি যাবে অবন্তি দেশে ; সেখানকার গ্রাম বৃন্ধেরা উদয়ন কাহিনীতে সুদক্ষ
সেখান থেকে যাবে সম্পদে ও সৌন্দর্যে ‘বিশালা’ ( উজ্জয়িনী, অবন্তীর রাজধানী ) নগরীতে
তোমার মনে হবে বহু পুণ্যফলে যারা স্বর্গে গিয়েছিলেন তারা সবটুকু পুণ্য ক্ষয় হওয়ার আগেই
এসেছেন ফিরে পৃথিবীতে এবং আসার সময় স্বর্গের সৌন্দর্যের এক অংশ এনেছেন সাথে করে ।
ছবি- ২/৩২ : উজ্জয়িনীতে সৌন্দর্যমন্ডিত বিশালা ভবন


৩৩)
এই বিশালায় প্রভাতে শিপ্রার তরঙ্গবাহী শীতল বায়ু বিকশিত পদ্মের গন্ধে মিশে সৌরভময় হয়ে উঠে, সেই বায়ুতে ভেসে আসে সারস দলের মদকল মধুর ধ্বনি । রমণিদের স্তুতিনিপুন প্রিয়তমের মত সেই শিপ্রা বায়ু রাত্রির রতি শ্রমে ক্লান্ত প্রিয়ার গ্লানি করে দেয় দুর ।
ছবি -৩/ ৩২ : বিশালার প্রান্তদেশে তরঙ্গবাহী শিপ্রা


৩৪)
এই উজ্জয়িনীর রমণীরা ধুপ জ্বেলে কেশ করে সংস্কার, সে সুগন্ধী ধুপের ধোঁয়া জানালার পথে বাইরে এসে তোমার দেহের করবে পুষ্টি সাধন সেখানে গৃহে গৃহে পালিত ময়ুরগুলি বন্ধুপ্রীতিবসত তোমাকে দেখে আনন্দ নৃত্যে করবে । প্রাসাদ গুলিতে তুমি দেখবে সুন্দরী রমনীদের পায়ের আলতার চিহ্ন , এই উজ্জয়িনীর প্রাসাদে প্রাসাদে তুমি পথের ক্লান্তি দুর করতে পারবে ।
ছবি - ৪/৩২: সুন্দরী রমনীদের পায়ে আলতার চিহ্ন


৩৫)
উজ্জয়িনীর গন্ধবতী নদীর তীরে চন্ডিকাপাতি মহেশ্বরের মন্দির- সেই পবিত্র মন্দিরে তুমি যেয়ো । মহেশ্বরের কান্তি নীল –তুমিও নীল , তাই তার অনুচর প্রমথগণ তোমার দিকে সাগ্রহে দৃষ্টিপাত করবে । মন্দিরের পাশে এক উদ্যান কম্পিত করে সেই বায়ু গন্ধবতীর পদ্ম গন্ধে আর জলকেলিরত তরুণীদের দেহগন্ধে সুবাসিত ।
৩৬)
ওগো মেঘ , যদি অন্য কোনো সময়ে মহাকালের মন্দিরে উপস্থিত হও , তবে যতক্ষন সুর্য দৃস্টিপথ অতিক্রম করে ততক্ষন অপেক্ষা কোরো । সন্ধায় যখন আরতি হবে তখন তুমি একটু গম্ভীর ধ্বনি কোরো , তোমার সে গর্জনেই ঢাকের প্রয়োজন সিদ্ধ হবে , আর তুমি লাভ করবে দেব সেবার ফল ।
ছবি- ৫/ ৩২ : উজ্জয়িনীর গন্ধবতী নদীর তীরে মহাকালের মন্দির


৩৭)
সেই মন্দিরে দেবদাসীরা নৃত্য করে , মহাকালকে চামর ব্যজন করে. তালে-তালে পাদক্ষপের সঙ্গে সঙ্গে মেখলার ঝঙ্কার উঠে ; তারা ধীরে ধীরে চামর ব্যজন করে , সেই চামর বিচিত্র রত্নখচিত , ক্রমে তাদের হস্ত ক্লান্ত হয়ে আসে ।
ছবি- ৬/ ৩২ : মহাকাল মন্দিরের পাদমুলে ভারত নাট্যম নৃত্য


প্রিয়তমের নখ-খতযুক্ত অঙ্গবিশেষ তোমার বিন্দু বিন্দু বর্ষণ পেলে তারা দৃপ্ত হয়ে তোমার দিকে কটাক্ষ নিক্ষেপ করবে , মনে হবে অসংখ্য ভ্রমর তোমার দিকে ছুটে আসছে ।
ছবি- ৭/৩২ : মেঘদুতের প্রতি দেবদাসীদের কটাক্ষ নিক্ষেপ


৩৮)
এরপর ত্রিলোচনের দীর্ঘবাহুতুল্য বনরাজি সমন্বিত বনে তুমি ব্যাপ্ত হয়ো, নববিকসিত জবার মতো তুমি সন্ধাকালীন রক্তিমবর্ণ ধারণ কোরো , এইভাবে ত্রিলোচনের নৃত্যারম্ভে তাঁর সিক্ত নাগ চর্মের জন্য আগ্রহ নিবারণ কোরো, গিরিনন্দিনীর হৃদয় শান্ত হবে , তিনি শান্ত দৃষ্টিতে তোমার শিবভক্তি দেখে হবেন তুষ্ট ।
ছবি-৮/৩২ : মেঘের প্রতি শিবের তুস্টি প্রদর্শন


৩৯)
উজ্জয়িনির রাজপথে সুচিভেদ্য অন্ধকারে অভিসারিকার দল চলেছে দয়িতের কাছে , সে সময়ে তোমার বিদ্যুৎ যেন একটু ঝলসে ওঠে- সেই বিদ্যুৎকে মনে হবে কষ্ঠিপাথরে স্বর্ণরেখার মতো স্নিগ্ধ, সেই আলোকেই ওদের পথ দেখিয়ে দিয়ো , কিন্তু বর্ষণ করোনা , ওরা যে ভীষণ ভীরু ।
ছবি- ৯/৩২ : দয়িতের কাছে অভিসারিকার দল


৪০)
বার বার ঝলসিত হতে-হতে তোমার বিদ্যুতপ্রিয়া ক্লান্ত হয়ে পড়বেন , তাই সেই রাত্রি কোন প্রাসাদের উপরে চিলেঘরে কাটিয়ে দিও যেখানে পারাবতের দল ঘুমিয়ে আছে । সর্যোদয় হলেই আবার তুমি চলতে শুরু করো – জানো তো, বন্ধুর প্রয়োজন সাধনের ভার নিয়ে পথে কেও করেনা বিলম্ব।
ছবি- ১০/৩২ : মেঘদুতের প্রিয়তম বিদ্যুতপ্রিয়া


৪১)
সে সময়ে কত প্রণয়ী আসবেন , খন্ডিতা নায়িকাদের কাছে এসে তাদের চোখের জল মুছিয়ে দিবেন , তাই তুমি আবার সুর্যের পথ করো না রোদ্ধ । তিনিও তো নলিনীর অশ্রু মুছিয়ে দিতে ফিরে আসছেন , তুমি পথ রোধ করলে তিনি অত্যন্ত কুপিত হবেন ।
ছবি-১১/ ৩২ : সুর্য চলছেন নলিনীর অশ্রু দিতে মুছিয়ে


৪২)
পথে পড়বে গম্ভীরা নদী, তার স্বচ্ছ হৃদয়ের মতো জলে তুমি ছায়াময় দেহে প্রবেশ করতে পারবে । তোমার সেই ছায়ায় পুটিমাছগুলি লাফাতে থাকবে , মনে হবে তোমার গম্ভীরা যেন শ্বেতকটাক্ষবান নিক্ষেপ করছে, জানি তুমি ধৈর্যসাগর , তবু তার ঐ কটাক্ষ ব্যর্থ করে দিওনা , একটু জল বর্ষণ করে যেয়ো ।
ছবি- ১২/৩২ : গম্ভীরা নদীর উপরে মেঘের অবস্থান


৪৩)
গম্ভীরার স্রোতের উপর হেলে পরেছে নীল বর্ণের বেতস লতাগুলি । জলের টানে ওরা নরছে । দুই তীর উম্মোক্ত, তোমার মনে হবে গম্ভীরা যেন তার নিতম্ব থেকে স্থলীত বসন কোনো রকমে দুই হাতে টেনে রাখছে । তুমি যখন তার উপরে লম্বমান হয়ে থাকবে, তখন ওখান থেকে চলে আসা সম্ভব হবেনা । পুর্বে যিনি আস্বাদ পেয়েছেন তেমন ব্যক্তি কি করে এমন অনাবৃত জগনা নারীকে উপেক্ষা করে যাবেন ।
ছবি- ১৩/৩২ : মেঘ ও নারীর রূপক ছবি


৪৪)
তোমার বর্ষণে উচ্ছসিত ধরণীর বুক থেকে এক মধুর সুগন্ধ চারদিক পুর্ণ করবে । জলধারার ধ্বনিতে বায়ু রমণীয় , বড় বড় হাতি সুরের সাহায্যে সেই বায়ু গ্রহণ করবে , ডুমুরের বন সেই বায়ুর স্পর্শে ধীরে-ধীরে পেকে উঠবে, গম্ভীরাকে ছেড়ে যখন তুমি দেবগিরির দিকে যেতে উদ্যত হবে তখন সেই শিতল বায়ু তোমার সেবা করবে ।
৪৫)
সেই দেবগিরিতে কার্তিকেরা নিয়ত অধিষ্ঠিত আছেন। তুমি পুষ্পমেঘের রূপ গ্রহণ করে অজস্র পুষ্পের বর্ষণে তাকে স্নান করিয়ো-আকাশ গঙ্গার জলে সেই পুষ্প সিক্ত করে নিয়ো , দেবরাজ ইন্দ্রের সেনানী রক্ষার জন্যে বালেন্দুশেখর মহেশ্বর যে তেজ অগ্নিতে নিক্ষেপ করেছিলেন তাই কার্তিকের রূপে আবির্ভুত।
ছবি- ১৪/৩২ : দেবগিরিতে কার্তিকেরা নিয়ত অধিষ্ঠিত আছেন


৪৬)
কার্তিকের সেবার পর তার ময়ুরটিকেও একটু নাচিয়ে যেতে হবে , উমা এই ময়ুরকে পুত্রবৎ স্নেহ করেন – চন্দ্রক আঁকা তার পালক আপনিই খসে পড়লে পদ্মফুলের অলঙ্কার ফেলে দিয়ে তিনি কর্ণে পরিধান করেন –মহেশ্বরও তার দিকে স্নেহের দৃষ্টিতে তাকান , তার ললাট চন্দ্রের দিপ্তিতে ময়ুরের চোখ দুটিও উজ্জল হয়ে উঠে, তুমি তোমার গম্ভীর গর্জন করো , পর্বতের গুহায় প্রতিধ্বনিত হয়ে তা দ্বিগুনিত হবে –তাতেই ময়ুর নৃত্য শুরু করবে ।
ছবি-১৫ /৩৩ : মেঘের গম্ভীর গর্জন এর প্রতিধ্বনি শুনে ময়ুরের নাচ


৪৭)
স্বর্গজাত এই কার্তিকের আরাধনা করে আবার তুমি যাত্রা শুরু করবে, আকাশ পথে সিন্ধমিথুন বীণা হাতে আসবেন , তারা তোমার জলকণার ভয়ে পথ ছেড়ে দাঁড়াবেন , একটু অগ্রসর হলে নীচে চর্মস্বতী নদী, যেন রাজা রতিদেবের কির্তীই পৃথিবীতে স্রোতের মুর্তীতে পরিনত হয়েছে ,তুমি তাকে সামান্য দেখতে গিয়ে একটু বিলম্ব করো ।
৪৮)
তুমিও শ্যামবর্ণ যেন কৃষ্ণের বর্ণ তুমি অপহরণ করেছ, তুমি যখন জল সংগ্রহ করতে এই নদীর উপরে ঝুঁকে পড়বে –উপর থেকে সিদ্ধগন তাদের আকাশবিহারী দৃষ্টি নত করে দেখবেন , যেন এক ছড়া মুক্তার মালা , মধ্যে একটি ইন্দ্রনীল মণি! চর্মস্বতী নদী প্রসারিত হলেও দুর হতে দেখাবে একগাছি সুক্ষ সুতার মতো !
ছবি- ১৬/৩২ : ইন্দ্রনীল মণি! চর্মস্বতী নদী


৪৯)
সেই চর্মস্বতী নদী পার হয়ে যাও , পথে পড়বে দশপুর নগর ! সেই নগরের বধুগণ কৌতুহলবশে তোমার দিকে চেয়ে থাকবে । তাদের সুন্দর চোখের ভ্রূলতা বিন্যাস সবারই পরিচিত । তাদের চোখের দিপ্তিতে কৃষ্ণসার মৃগের শোভা ! সেই চোখ তুলে তারা যখন চেয়ে থাকবে তখন মনে হবে শ্বেত বর্ণের কুন্দ-কুসুম উর্ধে নিক্ষিপ্ত হয়েছে আর অনুগামী হয়েছে কৃষ্ণবর্ণ ভ্রমরের পঙক্তি।
ছবি- ১৭/৩২ : দশপুর নগরীর সুন্দর চোখের ভ্রূলতা বিন্যাসীরা তাকিয়ে মেঘের পানে


৫০)
এরপর ‘ব্রহ্মবর্ত’ দেশ , এই দেশ অতিক্রম করে যখন যাবে তখন তার উপর পড়বে তোমার স্নিগ্ধ ছায়া ! ব্রহ্মবর্তের পর ক্ষত্রিয়যুদ্ধের স্বরণসুচক কুরুক্ষেত্র! তুমি যেমন অজস্র বর্ষণে পদ্মমুল ছিন্ন করে দাও , তেমনি গান্ডিবধারী অর্জুন এই কুরুক্ষেত্রে ক্ষত্রিয় রাজাদের মুখের উপর শত শত তিন্ক্ষ শর নিক্ষেপ করেছিলেন ।
ছবি- ১৮/৩২ : কুরুক্ষেত্রে গান্ডিবধারী অর্জুন


৫১)
বন্ধু প্রিতিবশে যুদ্ধবিমুখ হলধারী বলরাম রেবতীনয়ন ,প্রতিবিম্বিত সুরাপাত্র তুচ্ছ করে নদীতীরে করছিলেন অবস্থান –সেই সরু নদী তোমার পথে পড়বে, সেই স্বরস্বতীর পবিত্র জল যদি তুমি পান কর তবে তুমি অন্তরে বিশুদ্ধ হয়ে যাবে, শুধু বর্ণেই থাকবে কালো ।
ছবি- ১৯/৩২ : স্বরস্বতীর মত পবিত্র রেবতীর জল


৫২)
স্বরস্বতি পার হয়ে কনখলের পথে ! কনখলের পাশেই হরিদ্বারে গঙ্গা হিমালয়ের দেহে ধাপে ধাপে নেমে এসেছেন , তোমার মনে হবে সাগর রাজার পুত্রগন যেন এই সিরি বেয়েই স্বর্গে উঠেছিলেন ! খাদে-খাদে জমানো ফেনা গঙ্গার হাসি , তরঙ্গরূপ বাহু দিয়ে তিনি যেন শিবের জটা আকর্ষণ করেছেন! সতীন গৌরীর ভ্রকুটিকে তুচ্ছ করেই যেন গঙ্গা কলধ্বনিতে হেসে উঠেছেন ।
ছবি- ২০/৩২ : গঙ্গার কলধ্বনি


৫৩)
তুমি যদি দিগগজের মতো দেহের পশ্চাদভাগ আকাশে ছড়িয়ে দিয়ে একটু বাঁকা হয়ে গঙ্গার নির্মল স্ফটিকের মতো শুভ্র জল পান করতে চেষ্টা কর তাহলে তোমার কালো ছায়া গঙ্গার সাদা জলে পড়বে ।

৫৪)
এরপর গঙ্গার উৎপত্তিস্থল হিমালয় শিখর ! সেই শিখর তুষারে আচ্ছন্ন বলেই শ্বেতবর্ণ, সেখানে কস্তুরী মৃগের দল এসে বসে, তাদের নাভির কস্তুরী গন্ধে পর্বতের শিখা সুরভিত হয়ে উঠে । পথের ক্লান্তি দুর করার জন্য তুমি যখন সেখানে গিয়ে বসবে তখন মনে হবে ত্রিলোচনের শ্বেত বৃষ কোথাও নরম মাটিতে উৎখাত কেলি করে এসেছে । কিছু পঙ্ক তার শৃঙ্গে লেগে আছে।
ছবি- ২১/৩২ : গঙ্গার উৎপত্তিস্থল হিমালয় শিখর


৫৫)
প্রবল বেগে বায়ু প্রবাহিত হতে থাকলে দেবদারুর শাখায় –শাখায় সংঘর্ষ বাধবে, তাতে জ্বলে উঠবে দাবানল ,পুচ্ছ পুড়তে থাকবে । তখন তুমি সহস্র ধারায় বারিবর্ষণ করে হিমালয়ের পৃষ্ঠ শান্ত করো , যারা মহৎ তাদের সম্পদ তো বিপন্নকে রক্ষা করার জন্যই থাকে সঞ্চিত !
ছবি- ২২/ ৩২ : হিমালয়ের পৃষ্ঠে মেঘের সহস্রধারায় বারিবর্ষণ


৫৬)
হিমালয়ের শরভ মৃগকুল বিচরণ করে , ওদের পথ তুমি ছেড়ে দিয়ো, তবু যদি তারা ক্রোধে লাফিয়ে তোমাকে দ্রুত লঙ্গন করতে চেষ্টা করে তাদেরই হাত-পা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে , তুমি তখন শিলা বৃষ্টি বর্ষণ করে তাদের আচ্ছন্ন করে দিয়ো , ব্যর্থ কাজে মত্ত হলে কে হয় না লাঞ্ছিত !
ছবি- ২৩/৩২ : ব্যর্থ কাজে মত্ত হয়ে মৃগকুল হতে চলেছে লাঞ্ছিত


৫৭)
হিমালয়ের প্রস্তরে চন্দ্রশেখরের পদচিহ্ন স্পষ্ট অঙ্কিত , সিদ্ধগণ সকল সময়ে নানা উপাচারে সেই পদচিহ্নের পূজা করে থাকেন । তুমি ভক্তি নম্রচিত্তে সেই চিহ্ন প্রদক্ষিন করে যেয়ো । যাঁরা শ্রদ্ধার সঙ্গে ঐ চিহ্ন দর্শণ করেন তাদের সমস্ত পাপ হয় ক্ষয় , মৃত্যুর পরে তারা চিরকালের জন্য প্রথম গনের পদলাভের অধিকারী হয়ে থাকেন ।
ছবি- ২৪/৩২ : প্রস্তরে চন্দ্রশেখরের পদচিহ্ন ও ভক্তকুলের তা দর্শন


৫৮)
হিমালয়ের বাঁশের ছিদ্র বাতাশে পুর্ণ ,তাই তাতে মধুর শব্দ নির্গত হতেই থাকে , কিন্নরিদল মিলিত হয়ে শিবের ত্রিপুর বিজয় কাহিণী ঘোষনা করে, সেখানে যদি তুমি তোমার মন্ত্রধ্বনি কর আর যদি সেই ধ্বনি গুহায়-গুহায় ধ্বনিত হয়ে মৃদঙ্গ ধ্বনির মতো শুনায় তবে ওদের শিবসঙ্গীত সার্থক ও সম্পুর্ণ হবে ।
৫৯)
হিমালয়ের পাদদেশে সেই সব বিশেষ বিশেষ স্থান পার হয়ে তোমাকে যেতে হবে এগিয়ে , পথে পাশে পড়বে আর একটা পর্বত, নাম তার হংসদ্বার বা ক্রৌঞ্চরন্ধ্র ।
ছবি- ২৫/৩২ : হংসদ্বার বা ক্রৌঞ্চরন্ধ্র পর্বত


৬০)
পরশুরাম বাণের আঘাতে ঐ রন্ধ্রপথ করেছিলেন নির্মাণ তাই ওটি যেন তার ‘যশোবর্ত্ম’! ঐ পথে পারবেনা তুমি সোজা চলতে, একটু বাঁকা হয়ে দেহ বিস্তার করে তোমাকে উত্তরদিকে হতে হবে অগ্রসর , তখন তোমার শোভা হবে বামনরূপে বলিকে ছলনা করতে উদ্যত বিঞ্চুর শ্যামবর্ণ চরণের মতো ।
ছবি- ২৬/৩২ : বামনরূপে বিঞ্চুর শ্যামবর্ণ চরণ


৬১)
এভাবে উপরের দিকে যেতে যেতে তুমি হবে কৈলাশ পর্বতের অতিথি ! ঐ পর্বতের তুষারে ঢাকা শৃঙ্গগুলি এত স্বচ্ছ যেন মনে হয় দর্পণ, সুরসুন্দরীরা ঐ দর্পণেই করেন প্রসাধন, ঐ পর্বতের সানুদেশ শিথিল হয়ে গেছে রাবনের বাহুর আলোরণে, আকাশ জুরে রয়েছে পর্বতের অজস্র শৃঙ্গ- তুষারে আচ্ছন্ন, তাই কুমদের মত শ্বেতবর্ণ ! দেখলে মনে হবে কৈলাসনাথ শিবের অট্টহাসিই যেন পুঞ্জিভুত শৃঙ্গের আকারে বর্তমান ।
ছবি- ২৭/৩২ : কৈলাশ পর্বতের ( ২১৭৮৮ ফুট ) দৃশ্য


৬২)
কঞ্জল ফুলের গুটির চারদিকে পাপরী মেলা যে স্নিগ্ধ শ্বেতবর্ণ, সেই বর্ণের আভা তোমার; হস্তির দন্ত সদ্য খন্ডিত করলে যে শ্বেতবর্ণ সেই বর্ণের আভা কৈলাসের, সানুদেশে যখন তুমি লগ্ন হবে তখন মনে হবে বলরামের স্কন্ধে যেন একটি শ্যমল উত্তরীয় হল স্থাপিত, সে সকল সৌন্দর্য স্তিমিত নয়নে দর্শণ করতে করতে তুমি পথ চলবে ।
ছবি- ২৮/ ৩২ : কঞ্জল ফুলের চারদিকে পাপরী মেলা স্নিগ্ধ শ্বেতবর্ণ


৬৩)
হর পার্বতির ক্রীড়াশৈল কৈলাশ, এখানে যদি শম্ভূ তার বাহনে চড়ে গৌরীর সঙ্গে করতে চান বিচরণ
তবে তুমি সেখানে গিয়ে ভক্তির ভঙ্গিতে মনিময় মঞ্চের তটদেশে সিড়ির মত নিজেকে স্থাপন করে গৌরিকে উপরে উঠতে সাহায্য করো । তবে সে সময়ে তোমার জলরাশি নিজের মধ্যে রুদ্ধ করে রাখতে হবে ।
ছবি-২৯/ ৩২ : ক্রীড়াশৈল কৈলাশে গৌরীকে পাহাড়ে উঠতে সিরি হয়ে মেঘের সাহায্য করা


৬৪)
সখে, সেখানে অবশ্য সুর সুন্দরীদের হাতের বলয়ের কঠিন আঘাতে তোমার দেহ থেকে জলের ধারা নামবে –মনে হবে যেন ধারা যন্ত্রময় গৃহ থেকে অবিরল ধারায় বর্ষণ হচ্ছে ! যদি তাদের হাত থেকে মুক্তি না চাও তবে শ্রুতি কঠোর গর্জন করো –তারা ক্রিড়ায় মত্ত , ঐ গর্জনেই তাদের মনে ভয়ের সঞ্চার হবে।
৬৫)
ঐ মানস সরোবর ,স্বর্ণকমলে ভরা! এর জল তুমি পান করো ;
ছবি- ৩০/৩২ : কৈলাসের পাদমুলে মানস সরোবর


ক্ষনকাল তোমার জলভরা দেহের কোমল অংশ ঐরাবতের মুখে বিছিয়ে দিয়ো , তাতে ওর প্রীতি জম্মাবে । তারপর কল্পতরু কাঁচ পল্লব ক্ষৌম বস্ত্রের মতো বাতাসে কম্পিত করো । এ ভাবে বিচিত্র ললিত ক্রীড়ায় তুমি কৈলাশকে উপভোগ করো ।
৬৬)
এই কৈলাসের কোলেই অলকা! তুমি কামচারী, ইচ্ছেমত যেখানে খুশি যেতে পারো- অলকা দেখে চিনতে পারবেনা এমনতো নয় । অলকার পাশ দিয়ে গঙ্গা বয়ে চলেছে ;
ছবি-৩১/৩২ : অলকার পাশ দিয়ে গঙ্গা


তোমার মনে হবে , কোন নায়িকা তার প্রনয়ীর কোলে শুয়ে আছে, তবে সুক্ষ বস্ত্র বিস্রস্ত হয়ে পড়েছে । বর্ষাকালে কৈলাসের প্রাসাদ গুলিতে মেঘ জমে, সেই মেঘ থেকে বদ্বুদসহ বারিধারা ঝরে পড়ে । তোমার মনে হবে যেন কোনো নায়িকার মুক্তজাল খচিত অলকদাম ।
ছবি-৩২/৩২ : কৈলাশ পর্বতে অলকাপুরী যেখানে অাছে যক্ষ প্রিয়া



ধন্যবাদ এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ।

পরবর্তী পর্ব দেখার আমন্ত্রণ রইল ।

ছবিসুত্র : গুগল নেট
কাব্য অনুলিপি সুত্র : ১ম পর্বে বিস্তারিতভাবে উল্লেখিত ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৭
৩৩টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×