somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উত্তরের যাত্রা : ২ য় পর্ব – এস্কিমো জীবনাচার দর্শন

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


উত্তরের যাত্রা -১ম পর্ব: মেরুজ্যোতি দর্শন

উত্তর মেরু এলাকা মানুষের কাছে এক রহস্যময় জগৎ। সেখানে আকাশে থাকে অদ্ভুত রঙের অরোরা, আর বছরের দীর্ঘ সময় ধরে চলে আলো আঁধারের খেলা । বরফের তৈরি ইগলুতে বাস করে সেখানকার এস্কিমোরা । কেন তারা বাস করে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর বরফের মধ্যে সে নিয়েও রয়েছে অনেক প্রশ্ন ।

উত্তর মেরুর চারপাশে আলাস্কা , কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও রাশিয়া। উত্তর মেরু এক বিশাল এলাকা যার আয়তন প্রায় সম্পূর্ণ উত্তর আমেরিকার সমান। উত্তর মেরুতে বলতে গেলে সারা বছরই শীত থাকে ও শীতে তাপমাত্রা গড়ে -৪০ ডিগ্রিতে চলে আসে । উত্তর মেরু অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল শুরু হয় জুলাই মাসের মাঝামাঝি এবং থাকে প্রায় আগস্টের শেষ পর্যন্ত । উত্তর মেরুতে সামারে জন্মে বিভিন্ন গাছপালা । উত্তর মেরু জোনের দক্ষিণাংশে আছে বরিল বনভূমি যা তাইগা বা স্নো ফরেস্ট নামেও পরিচিত । এতে ফার, লার্চ, মাউন্টেইন অ্যাশ ও ফায়ারউইডের মতো বার্চ গাছ দেখা যায়। তবে আর্কটিক তুন্দ্রা এলাকায় বার্চ, উইলো, হিথ, লিঙ্গোনেবেরি, বাইবেরি, ব্লুবেরি, আর্কটিক পপি, কটনগ্রাস, লিঞ্চেন এবং মসেস নামের ঘাস দেখা যায়।

ছবি – ১ : শেওলার মত গজানো লিঞ্চেন এবং মসেস ঘাস এবং সামার টাইমে পাথরের ফাটলে ফুটা আর্কটিক পপি


আর্কটিক সাগরের চারপাশে বিভিন্ন সংস্কৃতির বহু মানুষের বাস । এর মধ্যে এস্কিমোরা বাস করে আলাস্কা থেকে শুরু করে কানাডা এবং গ্রিনল্যান্ড এলাকা পর্যন্ত।

ছবি-২ : উত্তর মেরুর এস্কিমো বসবাস এলাকা ( দাগ দেয়া অংশ)



এছাড়া স্ক্যানডিনেভিয়া অঞ্চলের সামি, রাশিয়ায় স্যাকহা, রাশিয়ার উত্তর পূর্ব অংশের নেনেটস এবং সাইবেরিয়ায় চুকচি বিখ্যাত। এদের একত্রে ইনোইট ( Inuit ) বলা হয়। তাদের মধ্যে বহু ধরনের ভাষা প্রচলিত আছে। তবে সবাইকে এস্কিমো হিসেবেই সাধারণত মানুষ চিনে। এ লিখায় তাই এরা এস্কিমো হিসাবেই অভিহিত হবে ।

বর্তমানে আলাস্কা, কানাডা ,সাইবেরিয়া ও গ্রীনল্যন্ডে Yupik , Yuit, এবং Inuit নামের জনগোষ্ঠি মিলে প্রায় ১৫০০০০ এস্কিমো আছে এর মধ্যে গ্রীন ল্যান্ডেই আছে সবচেয়ে বেশী ,প্রায় ৫০ হাজার, যা গ্রীনল্যন্ডের মোট জনসংখা্র শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ । তাই এ পোস্টে এস্কিমোদের বিষয়াদি পর্যালোচনার জন্য গ্রীনল্যান্ডের এস্কিমোদেরকেই বেশী হাইলাইট করা হয়েছে । তবে প্রসঙ্গক্রমে কানাডা ও আলাস্কার এস্কিমোদের কথাও আলোচনায় এসে যাবে ।

গ্রীন ল্যান্ড উত্তর আমিরিকা মহাদেশে অবস্থিত হলেও এর সাথে ইউরোপের ডেনমার্কের এর যোগাযোগটাই বেশী, তাছাড়া এটা মুলত ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রনাধীন একটি স্বায়ত্বসাসিত দেশ ( Self governed country) । এটা পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ , আয়তন প্রায় ২০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার তবে লোকসংখ্যা মাত্র ৬০ হাজারের কাছাকাছি । দেশটা বলতে গেলে সারা বছরই থাকে বরফে ঢাকা । ডেনমার্কের কোপেনহেগেন থেকে এয়ার গ্রীনল্যান্ড এর ফ্লাইট ধরে ৫ ঘন্টায় গ্রীনল্যান্ডে যাওয়া যায় ।

ছবি- ৩ : এয়ার গ্রীনল্যান্ডের একটি যাত্রীবাহী বিমান



এস্কিমো ছাড়াও গ্রীনল্যান্ডে রয়েছে অনেক আকর্ষনীয় পাকৃতিক দৃশ্য, বলা হয়ে থাকে এটা রহস্যময় সমুদ্র বিস্ময় ‘আইস বার্গের’ জন্মস্খান ।

ছবি- ৪ : গ্রীনল্যান্ডের বরফাচ্ছন্য পাহাড়ে আরোহনটাও পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষনীয় ।



এস্কিমোদের বাড়ী ঘর

উত্তর মেরুর অন্যান্য অঞ্চলের মত এখানকার এস্কিমোরা সাধারণত পশুর চামড়া, তিমির হাড়, ঘাসের চাপ, কাঠ ও বরফ দিয়ে ঘর-বাড়ি বানায়। তবে বর্তমানে সেখানে ইওরোপিয়ানদের মতো বাড়িঘরও দেখা যায়।

এসকিমোরা সারা বছর বরফের ঘরে বাস করে না । সাধারনত শীতকালে শিকারের উদ্দেশ্যে সাময়িক বসবাসের জন্য বরফের ঘর বানায় সুবিধামত স্থানে । এগুলি বরফের ব্লগ কেটে তৈরী করা হয় , উপরে একটি ছিদ্রযুক্ত চিমণী থাকে ।

ছবি – ৫ (১) : শক্ত বরফের ব্লগ কেটে ইগলু ঘর তৈরী করার দৃশ্য



উত্তর মেরু এলাকার মানুষ জ্বালানি কাঠের পরিবর্তে ব্যবহার করে মাছের তেল। বিশেষ করে সিল, তিমি এবং সামুদ্রিক প্রাণীর চর্বি দিয়ে তারা ল্যাম্প ও চুলা জ্বালায়।

ছবি – ৫(২) : ইগলুর (Igloo) ভিতরে Kudlip ( soapstone oil lamp) ব্যবহার করে এস্কিমো ফেমিলির লোকজন আলো ও উত্তাপ পায়



স্থায়ী বসবাসের ঘর সাধাররত তৈরী করা হয় কাঠ ও তিমি মাছের হার দিয়ে । সিল এর চামড়ার সাথে মাটির প্রলেপ দিয়ে সে ঘরের ছাদ বানানো হয় । সর্ট সামারের সময় পশুর চামড়ায় তৈরী তাবুতেও এরা বসবাস করে ।

ছবি – ৫(৩) : সিল এর চামড়া দিয়ে তৈরী এস্কিমোদের ঘর



গ্রীন ল্যান্ড এর এস্কিমো বসবাসের এলাকায় ইউরোপিয়ান স্টাইলে তৈরী কিছু বাড়ীঘরও দেখা যায় তবে এগুলি মুলত পর্যটকদের জন্যই নির্মিত, সেখানে গেলে থাকতে পারা যায় আরাম আয়েস করে ।

অধুনা পাহাড়ের পাদদেশে এস্কিমোদের জন্য নগরায়ন প্রক্রিয়াও চলছে ।

ছবি – ৫(৪) : গ্রীনল্যান্ডের উত্তরে ররফাচ্ছন্ন এলাকা ও দক্ষীনাংশের পাহাড়ী এলাকায় এস্কিমোদের নগরায়ন



এস্কিমোদের খাদ্য ও শিকা

উত্তর মেরু এলাকার মানুষ ঐতিহ্যগতভাবেই বহু প্রকার মাছ, সিল, তিমি, বলগা হরিণ ইত্যাদি খেয়ে থাকে। এছাড়াও তাদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে সামান্য শাক ও মূল। এগুলোও উত্তর মেরু অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে হয়ে থাকে। এছাড়াও প্রায় দুই হাজার বছর আগে ইওরোপের কাছের উত্তর মেরুর মানুষ রেইন ডিয়ার ( বগ্লা হরীন) নামের এক ধরনের বড় হরিণ পোষ মানিয়েছে।

ছবি- ৬(১) : সিন্ধোঘোটক তথা ওয়ালরাস ( Walrus), সিল ও বলগা হরিণ



উত্তর মেরু এলাকার মানুষ কাঁচা বা খুব অল্প সেদ্ধ মাংস খেতে অভ্যস্ত। এভাবে মাংস খাওয়া হলে তাতে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। পর্যাপ্ত শাক-সবজি পাওয়া না গেলেও এভাবে তারা ভিটামিন সি পেয়ে যায়। শীতকালে দীর্ঘদিন সূর্যের আলো পাওয়া না গেলেও গ্রীষ্মকালে এ এলাকায় সূর্যের আলো পাওয়া যায়। এ সময় পাওয়া সূর্যের আলোতে এবং বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে তাদের শরীরের ভিটামিন ডিয়ের চাহিদা মিটে যায়।

ছবি – ৬(২) : ডান দিকে এস্কিমোদের ট্রেডিশনাল আইস ফিসিং ও বায়ে একটি এস্কিমো মেয়ে হারপুন দিয়ে মাছ ধরছে



গ্রীস্মের আগমনে বরফ গলে পাহাড়ের রং বদলায় , সেখানে ফুটে উঠতে থাকে কিছু সবুজের সমারোহ , তবে এর স্থায়িত্ব খুবই কম । এ সময়ে অনেক মাইগ্রেটরী প্রাণী যথা বলগা হরিণ ও পাখী চলে আসে ঝাকে ঝাকে ।

ছবি -৭(১) : সামারে বরফ গলে গিয়ে পাহাড়ের রং বদলায়



ছবি -৭(২)( : পাহারের রং বদলানোর সাথে সাথে বলগা হরিণেরা আসে কচি ঘাসের খুঁজে আর তারা হয় সহজেই এস্কিমোদের নিপুন হাতের শিকার



এস্কিমোদের শিকারের যন্ত্রপাতি তৈরি হয় বিভিন্ন প্রাণীর দাত, হাড়, চামড়া, পালক ইত্যাদি দিয়ে। এছাড়াও পাথর এবং কাঠও ব্যবহার করা হয়, তাদের শিকারের জন্য ব্যবহৃত অস্রের মধ্যে হার্পুন, স্পিয়ার থ্রোয়ার, তীর ধনুক, টগলিং হারপুন , স্নো নাইফ উল্লেখ যোগ্য ।

ছবি -৭(৩) : স্পিয়ার থ্রোয়ার দিয়ে এস্কিমোদের মেরু ভাল্লুক শিকার



ছবি - ৭(৪) : ওয়ার হারপুন দিয়ে সিল শিকার



আর্কটিক সাগরে বিচরণ করে সবচেয়ে ছোট প্রজাতির সাদা তিমি বেলোগা ( লম্বায় সর্বোচ্চ ১৮ ফিট , ওজন প্রায় ২ টন যা ডলফিন থেকে আকারে কিছুটা বড় ) । একে এক্সিমোরা কায়াকে ( নোকায়) করে সাগরে গিয়ে হার্পুন দিয়ে শিকার করে । এটা বিলুপ্ত প্রায় সামুদ্রিক প্রাণী হলেও এর শিকারে এস্কিমোদের নেই কোন বারণ ।

ছবি- ৭(৫) : হার্পুণ দিয়ে এস্কিমোদের সাদা বেলোগা ( Beluga ) তিমি শিকার



বেলোগা তিমিকে বদ্ধ জলাশয়েও লালন পালন করা যায় ও এদেরকে দিয়ে সার্কাসও দেখানো হয়ে থাকে ।
ছবি- ৭(৬) : কানাডার ভেনকোবার একোরিয়ামে রাখা একটি বেলোগা সাদা তিমি ।
ডানে Beluga whales show at ocean kingdom Kids learn and fun world, China


সুত্র : https://www.youtube.com/watch?v=MczrVz1zwG0

ছবি - ৭(৭) : টগলিং হারপুন দিয়ে সিল শিকার



তীর ধনুক দিয়েও শিকার করা হয় মেরু ভাল্লুকসহ অনেক প্রাণী । বুকে তীর বিদ্য এই মেরু ভাল্লুকটির চিত্র কর্ম রয়েছে এমিরিকান মিউজিয়াম অফ আর্টে ।

ছবি - ৭(৮) : তীর ধনুক দিয়ে এস্কিমোদের শিকারের দৃশ্য



এস্কিমোরা কেন ঠান্ডা এলাকা ছেড়ে যায় না

এস্কিমোরা কেন প্রচণ্ড ঠাণ্ডা এলাকা ছেড়ে দক্ষিণের নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় চলে আসে না? এটা একটি কমন প্রশ্ন , এস্কিমোদের দক্ষিণের নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় চলে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। তারা সে এলাকাতে বেশ আরাম করেই বেচে আছে। অন্য এলাকায় গেলেই বরং তাদের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় । ১৯৮০ সনে দুজন ডেনিস চিকিৎসক বেঙ ও ডাইবার্জ গ্রীন ল্যান্ডে কাজ করার সময় লক্ষ করেন এস্কিমোরা হার্ট ডিজিস ইমিউনড , সত্য কথা বলতে তারা কোন এস্কিমোকেই হার্ট ডিজিসে আক্রান্ত হতে দেখেন নি । ডেনিস পিপলদের তুলনায় এস্কিমোদের রোগ বালাইএর একটি চিত্র নীচে দেখা যেতে পারে ।

ছবি – ৮ : এস্কিমোদের রোগ বালাইএর একটি তুলনামুলক চিত্র


উৎস : The Eskimo story Click This Link

এস্কিমোদের যাতায়াত ব্যবস্থা

উত্তর মেরু অঞ্চলে এস্কিমোদের যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। এর মধ্যে এস্কিমোদের উদ্ভাবিত বিভিন্ন ধরনের স্লেজ , কায়াক (কাঠের ফ্রেমে সিলের চামড়ায় আবৃত নৌকা) এবং হাটার জন্য স্নো –শু ( জুতা) উল্লেখযোগ্য। তবে বর্তমানে ইঞ্জিন চালিত স্নো- মোবাইল ও ফাইবারগ্লাস দিয়ে তৈরি নৌকা ব্যবহার করা হয়। এখনো স্লেজ সেখানে ব্যাপকভাবে হয় ব্যবহৃত ।

ছবি- ৯(১) : এস্কিমোদের যাতায়াতের জন্য ব্যাবহৃত স্লেজ



ছবি- ৯(২) : এস্কিমোদের যাতায়াতের জন্য সিলের চামড়ায় তৈরী নৌকা ‘কায়াক’



গ্রীনল্যান্ডিক ভাষায় গ্রীনল্যান্ডের নাম Kalaallit Nunaat যার অর্থ হল The Land of the People, কিন্ত আজ হতে প্রায় ২০০০ বছর পুর্বে গ্রীনল্যান্ড হঠাৎ করে জনমানব শুন্য হয়ে পরে , সেখানে কোন মানব বসতিই পাওয়া যায় নাই । এর আগে প্রায় ২৫০০ বছর ধরে সাগরের টানে nomadic people গ্রীনল্যান্ডে এসে বসবাস করলেও হঠাৎ করে বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপটি মানব শুন্য হয়ে পরে । পরে ক্রমে ক্রমে আবার সেখানে এস্কিমোদের জনবসতি গড়ে উঠে এবং থুল জনগুষ্টীর তিমি ও সিল শিকারীরা সেখানে প্রথম স্লেজ ডগ নিয়ে আসে এবং সেগুলিকে স্লেজ টানার কাজে লাগায় ।

ছবি - ৯(৩) : গ্রীন ল্যন্ডের বাফিন বে উপসাগরের কুলে একজন এস্কিমো শিকারী তার টিমের ১৩ টি কুকুরের টানা স্লেজে শিকারে চলেছে



ছবি-৯(৪) : বায়ে বলগা হরিণে টানা স্লেজ , ডানের ছবিতে স্নো-শু বা তুষার জুতা পায়ে লাঠি ভর দিয়ে বরফের উপরে চলার দৃশ্য



এস্কিমোদের পোশাক

উত্তর মেরু এলাকার লোকজনের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পোশাক রয়েছে। বিভিন্ন পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি পোশাক খুব আরামদায়ক । এর মধ্যে সবচেয়ে গরম পোশাক তৈরি হয় বলগা হরিণ ও মেরু ভল্লুকের চামড়া দিয়ে। এছাড়া সিল ও বিভিন্ন পশুর চামড়া দিয়েও পোশাক তৈরি হয়। পাখির পালক ও চামড়া পোশাক তৈরী এবং সাজাতে কাজে লাগে। এ ধরনের পোশাকগুলো অধিকাংশই পশুর নাড়িভুড়ি দিয়ে সেলাই করা হয়। ফলে পোশাকগুলো হয় হালকা, আরামদায়ক ও ওয়াটার প্রোফ ।

২৪ছবি - ১০(১) : পশমসহ কাবিরু রেইন ডিয়ারের ( বল্গা হরিণ) চামড়া দিয়ে তৈরী জ্যাকেট



ছবি -১০(২) : সিল এর চামড়া দিয়ে তৈরী ট্রেডিশনাল এস্কিমো ড্রেস



ছবি -১০(৩) : ওয়ালরাস ও সিলের চামড়া দিয়ে তৈরী ট্রেডিশনাল এস্কিমো ড্রেস



ছবি-১০(৪) : এস্কিমোদের পোশাকের ফ্যাশন



প্রচন্ড শীত ও বরফের মধ্যে চলাচলের জন্য এস্কিমোরা ব্যবহার করে ফুলের সৌন্দর্যময় অপুর্ব প্রযুক্তির জুতা । বলগা হরিণ কিংবা সিলের চামড়া দিয়ে পাঁচ ভাঁজ পর্যন্ত জুতা তারা তৈরী করতে সক্ষম যা তাদের পা ও শরীরকে গরম রাখার জন্য ইনসুলিলের মত কাজ করে ।

ছবি – ১০(৫) : এস্কিমোদের জুতার অপরূপ ডিজাইন ।



এস্কিমোদের বিবাহ

যৌবন সন্ধিক্ষনে এস্কিমো পরুষেরা যখন শিকার করার উপযুক্ত হয় ও মেয়েরা সন্তান জন্মদান উপযোগী হয় তখন সামাজিক মতে তাদের বিয়ে হয় । পুরুষেরা একের অধিক স্ত্রী রাখতে পারে উপরুন্ত নীজের স্ত্রী শারিরিকভাবে অসুস্থ হলে বন্ধুর স্ত্রীকে পারিবারিক দেখবাল ও রান্না বান্নার জন্য ধার করতে পারে ।

ছবি -১১ : এস্কিমো যুগল



এস্কিমোদের খেলাধুলা

এস্কিমোদের বিভিন্ন খেলাধুলার মধ্যে হারপুন নিক্ষেপ রেসলিং ও ডাইস বা লুডু খুব জনপ্রিয়। স্টোরি নাইফিং নামে একটি খেলা বাচ্চাদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। এ খেলায় স্টোরি নাইফ ব্যবহার করে বরফ বা বালিতে বিভিন্ন আকারের কিছু চিহ্ন বা নকশা আকা হয়। এ চিহ্নগুলো দিয়ে তাদের আকর্ষণীয় গল্প বানাতে হয়।

ছবি-১২(১) : বয়স্কদের হার্পুন নিক্ষেপ খেলা এবং স্টোরি নাইফিং নামে এস্কিমো বাচ্চাদের একটি খেলা



এছাড়াও বাচ্চাদের খেলনার মধ্যে আছে বুলরোয়ারার নামের বাদ্যযন্ত্র, ইয়ো-ইয়ো বা ছোট ঘুরন্ত চাকা এবং বিভিন্ন ধরনের পুতুল। এছাড়াও বড়দের শিকার করার যন্ত্রগুলোর মতো দেখতে খেলনা নিয়েও বাচ্চারা খেলাধুলা করে এবং বড় হয়ে শিকারী হওয়ার জন্য নীজেদেরকে গড়ে তুলে ।

ছবি-১২(২) : এস্কিমো বাচ্চাদের খেলার পুতুল



পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের মতোই এস্কিমোরা গান গায়। তবে তাদের কিছু বাদ্যযন্ত্র আছে যা পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায় না। বুলরোয়ারার ড্রাম বা ঢোল উত্তর মেরুর সর্বত্র দেখা যায়।

ছবি-১৩ : ওয়ালরাস এর স্টমাক বা ব্লাডারের তৈরী বুলরোয়ারার ড্রাম বা ঢোল বাজনারত যুবক যুবতি



এস্কিমো সমাজ ব্যবস্থা

এস্কিমো সমাজে কোন ক্লাস স্ট্রাকচার নাই এবং তাদের সম্পত্তির অধিকারও খুব সিমীত । নীজের পোশাক এবং শিকারের সরঞ্জাম ছাড়া বাকি সব কিছুই শেয়ারড প্রোপার্টি ।

ছবি - ১৪ : এস্কিমো সমাজে কোন ক্লাস স্ট্রাকচার নাই, সবকিছুই শেয়ার্ড



সামর্থ অনুযায়ী সমাজে তাদের স্টেটাস নির্ধারিত হয়

ট্রেডিশনাল এস্কিমো ধর্মীয় বিশ্বাসে অন্তরভুক্ত এনিমিজম ও শাহানিজম বিশ্বাস মুলে আধ্যাত্বিক ভাবে আত্নাকে নিরাময়ের বিধান আছে বলে মনে করা হয় । শাহান ধর্ম বিশ্বাস সমাজে বেশ প্রাধান্য বিস্তার করে আছে । এই ধর্মীয় মতবাদে বিশ্বাসীরা মনে করে আত্মা পশু ও মানবে বিচরণ করতে পারে , উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় তারা বায়ুদেবী ‘আশিয়াক’( mistress of wind) এবং ‘সাগর মাতা ( mother of the sea ) তাদের জীবনের সকল বিষয়ের নিয়ামক ।

ছবি –১৫(১) : বায়ু দেবী তথা মিসট্রেস অফ উইন্ড ( ( mistress of wind)



ছবি – ১৫(২) : মাদার অফ দি সি ( Mother of the sea )



সমাজে পরুষের প্রতিপত্তি নির্ভর করে তাদের মাছ ধরা ও পশু শিকাড়ের পারদর্শীতার উপর , আর মেয়েদের প্রতিপত্তি নির্ভর করে তাদের মেয়ে-দর্জিগীরি ও সন্তান উৎপাদন ক্ষমতার উপর । তবে মায়েদের উপরই ন্যস্ত সন্তানের দেখবালের দায়িত্ব ।

ছবি – ১৫(৩) : ঘুমন্ত সন্তান পিঠে নিয়ে এস্কিমো মায়েদের পথ চলা , দুটো বাচ্চাই চলার পথে মায়ের পিঠে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে



সামাজিক ও দেশাত্ববোধক দায়ীত্ব পালনের মহান অনুভুতি

প্রতিটি এস্কিমোর মধ্যেই রয়েছে সামাজিক সংহতি ও দায়িত্বপালনের একটি শক্তিশালী অনুভূতি । কখনো জনবসতিতে ক্ষুধা কিংবা বিপর্যয় নেমে আসলে বয়োবৃদ্ধরা সকলের ঘরে ঘরে গিয়ে তার খবরাখবর নেয়, প্রয়োজনে তাদের নীজের জীবনকে সমর্পিত করে বিপর্যয়ের কাছে , তারা কোন মতেই সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে পছন্দ করেনা । তাছাড়া দেশের বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য এস্কিমোরা এগিয়ে আসে যে কোন মূল্যের বিনিময়ে । এটা সকল দেশে বসবাসকারী এস্কিমোদের বেলাতেই দেখা যায় । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হতে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত সকল যুদ্ধ ও পিছ কিপিং কর্মকান্ডে উত্তর আমিরিকার এবরিজিনাল এসকিমোদের মুল্যবান অবদান স্মরণে কানাডার ওটোয়াতে স্মৃতি ভাস্কর্য স্থাপন করা করা হয়েছে ।

ছবি- ১৬ : Monument to Eskimo and aboriginals war veterans in Confederation Park, Ottawa, Canada



মিথ ও লিগান্ডের উপরে এস্কিমোদের রয়েছে প্রশ্নাতীত বিশ্বাস

এস্কিমোদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে অনেক মিথ , এ মিথ গুলিকে তারা একান্তই সত্য বলে মনে করে এবং এটাও বিশ্বাস করে যে তাদের জনবসতির শান্তি ও শৃংখলা বজায় রাখার জন্য এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । মৃত আত্মার প্রতিও রয়েছে তাদের অগাধ বিশ্বাস , এমন কি তারা বিশ্বাস করে যে মেরু জ্যোতিতে ভর করে ( অরোরা বরিয়ালিস) তাদের মৃত স্বজনেরা এসে নাচানাচি করে, মেরু জ্যোতির রং যত উজ্জল দেখাবে তাদের মৃত স্বজনেরা ততই ভাল ও সুখে আছে বলে হবে ।

ছবি – ১৭(১) : মেরু জ্যোতির সাথে এস্কিমোদের মৃত পরিজনদের নাচানাচির দৃশ্য



আদি এস্কিমোরা আত্মার পুনর্জন্মে বিশ্বাস করত । তারা বিশ্বাস করত যে প্রতিটি পাথর , খড় কুটা ও প্রাণী জীবিত ছিল এবং তাদের আত্মা ছিল । তারা এটাও বিশ্বাস করত যে, মানুষের আত্মা পশু থেকে পশুতে মাইগ্রেট করতে পারে , তাদের এই বিশ্বাস এখনো বলবত আছে ।

সাগর মাতা (Mother of the Sea) এমনি একটি অপুর্ব কল্প কাহিনী যেখানে গ্রীনল্যান্ডে পশুগুলি কিভাবে এসেছে তা বলা হয়েছে এবং পশুগুলি গ্রীনল্যান্ড বাসীদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত করেছে ।

সাগর মাতা মিথ এর সাথে যে বিশ্বাস জড়িত তা হল এই যে এস্কিমো লোকালয়ে কিছু দুস্ট লোকের মন্দ কর্মের ফলে সাগর মাতা ছিল রিরক্ত ।দুষ্ট এস্কিমো যারা বাছ বিচার না করে প্রাণী শিকার করত তাদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য সাগরমাতা তার মাথার লম্বা চুলে বেধে এনে জড় করেছিল । সে সময়ে এক অন্ধ লোক এসে সাগর মাতার চুল চিরুনী দিয়ে আচরিয়ে তার মাথা হতে ময়লাসম চুলবন্ধী সবকটিকে একত্রিত করে দুরে ছুড়ে ফেলে দিল । এর পরেই জীবিত সব প্রাণী সেখানে চলে এল , এ সমস্ত প্রাণীদের মধ্যে ছিল , ভাল্লুক, শিয়াল, গুণ্ঠিত সীল (hooded seal ), শ্মশ্রুধারী সীল ( bearded seal ), বৃত্তাকার সীল (ringed seal ) , বীণা সীল ( harp seal ) , সাধারণ সীল ( common seal ) , সিন্ধুঘোটক (walrus) ও সর্বপ্রকার পক্ষীকুল ।

ছবি – ১৭(২) : পশুকুল যথা মেরু ভাল্লুক, সিল, ওয়ালরাস ও অন্ধলোক পরিবেস্টিত সাগর মাতার ভাস্কর্য



সাগর মাতা ( মাদার অফ দি সি) সম্ভবত এস্কিমোদের মধ্যে প্রচলিত সকল মিথের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ । এই মিথের শিক্ষামুলক দিক এটাই ছিল যে, মানুষ মাত্রাতিরিক্ত লোভী হবেনা এবং সামাজিক ও প্রাকৃতিক নিয়ম রীতিগুলি মেনে চলবে এবং শামানের ( ধর্ম বিশ্বাসের প্রতিভু নেতা ) বিধি বিধান অনুসরণ করবে ।

বিখ্যাত গ্রীনল্যান্ডিক আরটিস্ট Aka Høegh মাদার অফ সি কে নিয়ে একেছেন বিখ্যাত শিল্প কর্ম যা এমিরিকান আর্ট মিউজিয়ামে সংরক্ষিত ও প্রদর্শিত হচ্ছে ।

ছবি- ১৭(৩) : Aka Høegh এর আঁকা মাদার অফ দি সি তথা সাগর মাতার ছবি


সুত্র : Click This Link

এস্কিমো সমাজে প্রচলিত কল্পকাহিনী সুন্দরতম সামাজিক আচার আচরণ গঠনে সহায়তা করেছে । শত বছর ধরে সম্ভবত হাজার বছর ধরেই এসব কল্প কাহিনী যথা Navaranaaq, Kaassassuk প্রভৃতি আলাস্কা ও কানাডা হতে শুরু করে গ্রীন ল্যান্ড পর্যন্ত প্রতিটি এস্কিমোদের মুখে মুখে ফিরত । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে গ্রীনল্যান্ডিক সকল শিশু জানে যে ‘কাসাসুক’ নামের একটি অনাথ শিশু কিভাবে নিদারুন দুঃখকষ্ট সহ্য করার পর দৈব আশীর্বাদে মহাশক্তি অর্জন করেছে ।

কাসাসুক নামক মিথ গল্পটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ

একদা কোন এক এস্কিমো দম্পতির সকল সন্তান জন্মের পর পরই মারা যেতো। অবশেষে তাদের একটি ছেলে সন্তান জন্মের পর দৈবক্রমে বেচে যায়, তারা ছেলেটির নাম রাখে ‘কাসাসুক’ ।

তারা কাসাসুককে খুব ভালবাসতো কিন্ত দু:খ জনক ভাবে কিছুদিন পরেই কাসাসুকের পিতা মাতা তাকে দুনিয়াতে রেখে মারা যায় ।
এই অনাথ ছেলেটি কিছুদিনের মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃস্টি করতে থাকায় সমাজের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায় , ফলে তাকে সমাজ চুত্য করে গৃহ প্রবেশদ্বারের একটি ছোট কুঠুরিতে কুকুরের থাকার জন্য নির্ধারিত জায়গায় আটকিয়ে রাখা হয় । মাঝে মাঝে তাকে ঘরে প্রবেশ করিয়ে ওয়ালরাসের শক্ত কাঁচা চামড়া খেতে দেয়া হতো । বদ্ধ ঘুমোট কুঠুরিতে থাকার সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় কাসাসুকক খুব জোড়ে জোড়ে শ্বাস টানতে হতো বলে ক্রমে ক্রমে তার নাসারন্ধ্র খুব বড় আকারের হয়ে যায় ।

ছবি – ১৭(৪): কাসাসুকের বড় আকারের নাসারন্ধ্র



দীর্ঘ দিন ধরে কাসাসুকের দিবস রজনী এমনি করেই কাটতে থাকে । একদিন ক্ষুধার তারনায় অস্থির হয়ে সে খাদ্যসন্ধানে পর্বতারোহণের যায় । পর্বতারোহণের সময় সে বিশালাকার এক দৈত্যের সামনে পরে যায় , দৈত্য তার মুখের খাবার থেকে কিছু মাংস কাসাসুকের দিকে ছুড়ে দেয়, কাসাসুকের ভিতরে থাকা আত্মা এ সময়ে তাকে প্রভুত শক্তি যোগায় এবং দৈত্যের বিশাল মাংস পিন্ড খেতে সক্ষমতা দেয় । তবে সব খাবার খেতে না পেরে কাসাসুক কান্না শুরু করে দেয় । দৈত্য কাছে এসে তার কান্না দেখে ও জীবনের কষ্টের কথা শুনে তার বন্ধু হয়ে যায় এবং কাসাসুকের মধ্যে প্রচুর শক্তি সঞ্চার করে দেয়ার জন্য মনে মনে ইচ্ছা পোষন করে। তবে তার ইচ্ছাটি একটি কারণে গোপন রাখে ।

একদিন যখন তিনটি মেরু ভাল্লুক কে বরফের উপরে দেখা যায় তখন দৈত্যটি কাসাসুককে একটি বৃহৎ পাথর সরানোর কথা বলে , কাসাসুক পাথরটি সরাতে সক্ষম হলে দৈত্যটি বুঝে যায় কাসাসুকের শক্তি তার সমান হয়েছে,, সে তখন কাসাসুককে সমাজে ফিরে গিয়ে তা ভাল কাজে লাগাতে বলে ।

ছবি - ১৭(৫) : বরফের উপরে ৩ টি মেরু ভাল্লুক



কাসাসুকের এই গল্পটি গ্রীনল্যন্ডের শিল্প ও সাহিত্যে এখন বিখ্যাত একটি কল্পকাহিনী ও কিংবদন্তি হয়ে আছে । কাসাসুককে নিয়ে গ্রীনল্যান্ডিক কথা শিল্পিগন রচেছেন অনেক বিখ্যাত পুথি পুস্তক ।

৪৩ছবি-১৭(৬) : কাসাসুক কল্প কাহিনী নিয়ে বাচ্চাদের জন্য রচিত পুস্তক



গ্রীন ল্যান্ডের রাজধানী Nuuk এর স্ব:শাসন রাজভবনের ( Self Government building ) সামনে কাসাসুক এর বৃহৎ একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে ।এই ভাস্কর্যের চারদিকে সেখানকার কলেজের সদ্য স্নাতক ছাত্রদের নাচের ঐতিহ্যে পরিনত হয়েছে, এখান হতেই তারা সমাজের জন্য মঙ্গলময় কাজে নিবেদিত হতে উদ্ভোদ্ধ হয় ।

ছবি – ১৭(৭) : গ্রীনল্যান্ডের রাজধানী Nuuk এর স্ব:শাসন রাজভবনের ( Self Government building ) সামনে কাসাসুকের বৃহৎ ভাস্কর্য



এস্কিমোদেরকে নিয়ে সাহিত্য ও শিল্প কর্ম

ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই কল্প কাহিণী সমৃদ্ধ মিথ গুলিকে বহু বছর ধরে গ্রীনল্যান্ডের এস্কিমো এলাকা ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করে বিখ্যাত ড্যানিস আর্কটিক এক্সপ্লোরার নুদ রামুসেন (Knud Rasmussen, 1879-1933 ) প্রকাশ করেন 'Greenlandic Myths and Legends' নামে একটি জগত বিখ্যাত পুস্তক, যার মাধ্যমে এস্কিমোদের সাংস্কৃতিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য জগতবাসী জানতে পারে ।

দক্ষীনের সংস্পর্শে এসে এস্কিমোদের জীবন ধারায় অনেকটা পরিবর্তন এসেছে, কুকুর নির্ভর স্লেজের স্থল পরিবহনে অনেকটাই স্থান করে নিয়েছে স্নো –মোবাইলস, এবং শিকারের জন্য হার্পুনের পরিবর্তে রাইফেল স্থান করে নিয়েছে । পোশাক ও সংস্কৃতিতেও এসেছে বেশ পরিবর্তন , গতানুগতিক বিনিময় অর্থনীতিতে এসেছে মুদ্রার প্রচলন । এক্মিমোরা গতানুগতিক আদিম সমাজ ব্যবস্থা হতে আধুনিক অর্থনীতি ও নগরায়নে ঝুকছে ।

উন্নতি হচ্ছে তাদের শিল্প সাহিত্যে ও অন্যন্য অর্থনৈতিক শৈল্পিক কর্মকান্ডে । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় উত্তর আর্কটিক সাগরের শ্বেত তিমির মুখের ভিতরে হা করা অংশে ছাকনীর মত থাকা জালের জালর ( বেলেন) দিয়ে এস্কিমোরা তৈরী করে বেলেন বাসকেট এর মত খুবই মুল্যবান শিল্প কর্ম ।

ছবি- ১৭ : তিমির মুখের ভিতরে হা করা অংশে ছাকনীর মত বেলেন
[img|



ছবি – ১৯ : কালিফোর্নিয়ার সান দিয়াগো মিউজিয়ামে রক্ষিত ওয়ালরাসের দাঁতের (আইভরির ) তৈরী হাতল ওয়ালা তিমির বেলেন দিয়ে তৈরী একটি বাস্কেট



উত্তর মেরু এলাকার অধিবাসী উদ্ভাবিত অনেক প্রযুক্তি আধুনিক সমাজ বরন করে নিয়েছে ।বর্তমানে কানাডিয়ান ও ইওরোপিয়ানরা যেসব স্নো -সুজ, স্লেজ, স্কি ও স্নো -গগলস ব্যবহার করে সেগুলোর আবিষ্কারক মূলত এস্কিমোরাই।

এস্কিমো মৃতদের সমাধি

উত্তর মেরু এলাকার এস্কিমো অধিবাসীরা মৃতদেরকে প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী মাটি বা বরফের উপর রেখে তার উপর পাথর দিয়ে সাজাতো। একে কেয়ার্ন বলা হয়। তবে বর্তমানে সে এলাকার প্রচুর লোকজন খ্রিস্টান প্রথা অনুযায়ী মৃতদেহ কবর দেয়।

ছবি-২০ : পাথর দিয়ে তৈরী এস্কিমো মৃতদের সমাধি কেয়ার্ন



কামনা করি এস্কিমোরা থাকুক সুখে শান্তিতে জীবনে ও মরনে ।

ধন্যবাদ এতক্ষন সাথে থেকে উত্তর মেরু এলাকায় এস্কিমোদের সাথে কিছুক্ষন বিচরণ করার জন্য ।

সকলের তরে রইল বসন্তের শুভেচ্ছা ।

তথ্য ও ছবি সূত্র: আর্কটিক স্টাডিস সেন্টার ও বিভিন্ন ওয়েবপেজ http://nmnh.typepad.com/arctic_studies/


যে যাই বলুক ভাই আমার দেশের মত এমন দেশটি কোথাও নাই, এ যে রূপ কথারি দেশ , ফাগুন যে তার হয়না কভু শেষ, নাই বরফের কোন লেশ , বাতাশ সেথায় মধুর ছোয়া পায় , বসন্তে এত এত ফুল ফোটে, তাই চলুন নীচের গানটি শুনতে শুনতে যাই পরবর্তী চিন্তা ভাবনাতে ।
আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ ভোর ৪:৪৯
৬০টি মন্তব্য ৫৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×