somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল্লাহ কি নিরাকার এবং সর্বত্রে বিরাজমান?

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বলতে শোনা যায়, আল্লাহ সর্বত্রে বিরাজমান।
আসলে কি আল্লাহ সর্বত্রে বিরাজমান?
এবিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে হলে আমরা কার কাছে যাব?
দুনিয়ার কোন মুফতী, মাওলানা কিংবা পিরের কাছে যাব?
আসলে এবিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে একমাত্র কুরআন এবং হাদীসই যথেষ্ট।
আল্লাহ কোথায় আছেন সেটাতো আল্লাহই বলে দিয়েছেন পবিত্র কুরানের মাধ্যমেই।

দলিল-
তাঁর মত কিছু নেই আর, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা শুরা, ৪২: ১১)

পরম করুণাময় আরশের উপর আছেন। (সূরা তাহা, ২০: ৫ আয়াত।)

তোমরা তার থেকে নির্ভয় হয়ে গেলে যিনি আসমানে আছেন,
আর তিনি তোমাদের সহকারে জমিনকে ধ্বসিয়ে দিবেন না?।(সূরা মূলক ৬৭: ১৬ আয়াত)।

বরং আল্লাহ তাকে তাঁর নিকটে উত্তলন করে নিয়েছেন। (সূরা নিসা, ৪: ১৫৮ আয়াত)।

আর তিনিই আল্লাহ যিনি আসমানে আছেন। (সূরা আনআম ৬: ৩ আয়াত)।

নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। (সূরা আরাফ-৭:৫৪)

এ সমস্ত আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাসীর রহ: বলেন: তাফসীরকারকগণ এ ব্যপারে একমত পোষণ করেন যে, তারা আল্লাহ সম্বন্ধে ঐভাবে বর্ণনা করে যেভাবে জাহমীয়ারা (একটি ভ্রষ্ট দল) বলে যে, আল্লাহ সর্বত্র আছেন। আল্লাহ তাআলা তাদের এ জাতীয় কথা হতে পাক পবিত্র ও অনেক ঊর্ধ্বে।
তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সাথেই আছেন। (সূরা হাদীদ, ৫৭: ৪ আয়াত)।
অত্র আয়াতের ব্যখ্যা হল; নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আমাদের সাথে আছেন দেখার দ্বারা, শ্রবনের দ্বারা, যা বর্ণিত আছে তফসীরে জালালাইন ও ইবনে কাসীরে। এই আয়াতের পূর্বের ও শেষের অংশ এ কথারই ব্যখ্যা প্রদান করে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সপ্তম আসমানের উপর উঠানো হয়েছিল, তাঁর রবের সাথে কথোপকথনের জন্য। আর সেখানেই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
ألاَ تأمَنُونيِْْ وَأنا أمِينُ مَنْ فيِ السَّمَاء (وهو اللهُ) (ومعني في السَّماء: علي السَّمَاء) (متفق عليه)
তোমরা কি আমাকে আমিন (বিশ্বাসী) বলে স্বীকার কর না? আমি তো ঐ সত্ত্বার নিকট আমিন বলে পরিগণিত যিনি আসমানের উপর আছেন। (আর তিনি হলেন আল্লাহ)। (বুখারী ও মুসলিম)।

سأَلَ رَسُولُ الله صلي الله عليه وسلَّمَ جَارِيَةً فَقَالَ لَهَا: أيْنَ اللهَ؟ فَقَالَتْ في السَّماءِ قَالَ مَنْ أنا؟ قَالَتْ أنْتَ رَسٌولُ اللهِ قَالَ: أعْتِقْهَا فإنَّها مُؤْمِنَةً . (مسلم)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্রীতদাসীকে জিজ্ঞেস করলেন: বলতো আল্লাহ কোথায়? সে বলল, আসমানে। তারপর তিনি বললেন: বলতো আমি কে? সে বলল: আপনি আল্লাহর রাসূল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একে মুক্ত করে দাও, কারণ সে মুমিনা। (মুসলিম)।

“আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ তায়ালা প্রতি রাতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষনা করতে থাকেনঃ কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন, যে আমার কাছে চাইবে? আমি তাকে তা দিব । কে আছে এমন, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।(বুখারী-১০৭৯ ইঃফাঃ)

আরো দলিল:
সূরা বাকারা-২: ১৪৪< নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর।
ফেরেশতাগণ এবং রুহ আল্লাহ তায়ালার দিকে ঊর্ধ্বগামী হয়। (সূরা মায়ারিজ-৪)
আল্লাহই ঊর্ধ্বদেশে আকাশমন্ডলী স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত- তোমরা এটা দেখেছ। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হলেন (অর্থ্যাৎ সপ্ত আসমানের উপরে আরশে সমাসীন হয়েছেন)। (সূরা রা’দ-১৩:২)
স্মরণ কর, যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! আমি তোমার কাল পূর্ণ করছি এবং আমার নিকট তোমাকে তুলে নিচ্ছি। (আল ইমরান-৩:৫৫)

ফেরাউন নিজেকে আল্লাহ দাবী করেছিল। কাফের হওয়া সত্ত্বে সে মূসা আঃ এর কথা বিশ্বাস করে হামানকে বলেছিল,
ফেরাউন বলল, হে হামান! তুমি আমার জন্য এক সুউচ্চ প্রাসাদ তৈরী কর, যাতে আমি অবলম্বন পাই আসমানে আরোহনের এবং আমি দেখতে পাই মূসা (আঃ) এর রব আল্লাহকে। (সূরা মুমিন-৪০:৩৭-৩৮)

এতেই বুঝা যায় মুসা আঃ আল্লাহর ঠিকানা দিয়েছেন আরশের। আল্লাহ যদি সর্বত্র হতেন তবে ফেরআউন কোন কারণে হামান কে সুউচ্চ প্রাসাদ বানানোর নির্দেশ দিবে?

ঈমানদারের জন্য যরূরী হ’ল, আল্লাহ অবতরণ করেন একথা বিশ্বাস করা এবং কিভাবে করেন সেকথা বলা থেকে বিরত থাকা। কারণ আল্লাহ্র কাজ তাঁর মতই হয় মানুষের মত নয়। সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে রাত হয় এটা আল্লাহ্র ইচ্ছাতেই হয় এবং তাঁর অবতরণ তাঁর ইচ্ছাতেই হয়। পৃথিবীর যে অংশে যখন রাত হয়, সে অংশে তাঁর মর্যাদা অনুযায়ী তাঁর অবতরণ ঘটে। যা অনুভব করার ক্ষমতা মানুষ রাখে না (ছাবূনী, আক্বীদাতুস সালাফ, পৃ: ২)

চার ইমামগণই এ ব্যাপারে একমত যে, তিনি আরশের উপর আছেন, তিনি তাঁর কোন সৃষ্টির সাথে তুলনীয় নন।

সুস্থ বুদ্ধি, বিবেক, আল্লাহ যে আসমানে আছেন তা সমর্থন করে। যদি তিনি সর্বত্রই বিরাজমান হতেন তবে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা জানতেন এবং সাহাবীদের শিক্ষা দিতেন। দুনিয়ার বুকে এমন অনেক নাপাক অপবিত্র জায়গা আছে যেখানে তাঁর থাকার প্রশ্নই উঠে না।।

যদি বলা হয়, আল্লাহ তাআলা তার জাত সহকারে আমাদের সাথে সর্বস্থানে আছেন, তবে তার জাতকে বিভক্ত করতে হয়। কারণ, সর্বত্র বলতে বহু জায়গা বুঝায়। এটাই ঠিক যে আল্লাহ তাআলার পবিত্র জাত এক ও অভিন্ন। তাকে কোন অবস্থাতেই বিভক্ত করা যায় না। তাই ঐ কথার কোন মূল্য নেই, যে তিনি সর্বত্র বিরাজমান। আর এটা প্রমাণিত যে, তিনি আসমানে আরশের উপর আছেন। তবে তিনি তাঁর শ্রবেনর, দেখার ও জ্ঞানের দ্বারা সকল বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবহিত।

আল্লাহর নিজস্ব একক একটি স্বত্ত্বা অবশ্যই আছে, তার হাত, পা চোখ সবই আছে তবে তা দেখতে কেমন তা আমাদের পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব নয়। যদিও কুরআনে বর্নিত আছে, আল্লাহ মানুষকে তাঁর নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। তাই বলে আল্লাহ দেখতে মানুষের মত এটা কি আমরা বলতে পারি? এটা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে এটা বলা যে, আল্লাহর আকৃতি কেমন তা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন। তবে আল্লাহ নিরাকার নন এটাই সত্য। তাঁর আকার অবশ্যই আছে। যেহেতু কুরআনে উল্লেখ আছে আল্লাহর কুরছী (আসন) আছে, আল্লাহ আরশে সমাসীন হয়েছেন, তিনি সবকিছু দেখেন, তিনি সবকিছু ‍শোনেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়াতাআলা) একক স্বত্ত্বা বিশিষ্ট হলেও তাঁকে চর্মচোখে দেখা সম্ভব নয়। আমাদের প্রিয়নবী (সাঃ) আরশে পৌঁছেও আল্লাহকে দেখতে পারেননি, কেবল তারঁ নূর ছাড়া। যদিও তিনি আল্লাহর খুবই নিকটে ছিলেন যা ছিল একটি তীর এবং ধনুকের দূরত্ব মাত্র। মুসা আঃ ও আল্লাহকে দেখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। উদাহরন হিসেবে বলা যায়, আমরা কি সূর্যকে দেখতে পারি? অবশ্যই না। আমরা পৃথিবী থেকে খালি চোখে কেবল সূর্যের আলোটাই দেখতে পারি কিন্তু সূর্যের আকার, গঠন কিছুই দেখিনা। সূর্য কোটি কোটি মাইল দূর থেকেও আমাদের ঘর আলোকিত করে। আল্লাহর সৃষ্টি একটি সূর্য যদি এত দূর থেকে আমাদেরকে আলো দিতে পারে, তাহলে যিনি সূর্যটাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি যত দূরেই থাকুন না কেন, সুদূর আরশ থেকে তিনি আমাদেরকে তারঁ অদৃশ্য নূরের বেষ্টনীতে বেঁধে রেখেছেন। তারঁ কুরছী যদি আসমান-জমিন ব্যাপী হয় তারঁ পক্ষেই সম্ভব আমাদের ঘাড়ের রগের চেয়েও নিকটবর্তী হওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৯
৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×