somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার গোড়াপত্তনের ইতিহাস এবং একটি ধর্মের সম্ভাব্য বিবর্তন

০৮ ই আগস্ট, ২০১২ ভোর ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অন্যান্য জীব জগতের মত মানুষের ইতিহাসও প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকার ইতিহাস। আদিম অরণ্যচারী মানুষ অসহায় বোধ করত শক্তিশালী ঝড় বা দাবানলের কাছে, অন্ধকারের কাছে, আতাতায়ী হিংস্র জন্তুর কাছে, মৃত্যুর কছে, ক্ষুধার কাছে। যখন তারা দেখত তাদের শক্তি ক্ষমতা সীমিত, তারা ভয় পেত। বিশ্বাস করতে চাইত এমন এক শক্তিকে যে তাদের রক্ষা করবে। অসহায়ত্ত্ব থেকে তাদের মধ্যে আসে ভক্তিবোধ। একদল বিশ্বাস করতে চাইত এমন এক শক্তির যা তাদের এসব অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা করবে। আরেক দল বিশ্বাস করতে চাইত সেইসব অশুভ শক্তিকে খুশি করে নিস্তার পাওয়ার। শুরু হয় শুভ এবং অশুভ শক্তির উপাসনা। মানুষের সেই বিশ্বাস, সেই সীমাবদ্ধতাই ধর্মের আকারে কালে কালে বিবর্তিত হয়ে বর্তমান ধর্ম পর্যন্ত চলে এসেছে। এর সবই একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কিন্তু তাইবলে মানুষ কখনো নিজেকে সম্পুর্নভাবে প্রকৃ্তির কাছে সমর্পন করেনি। মানুষের সহজাত বুদ্ধিবৃত্তিক কৌতুহলী মন তাকে তাড়িত করেছে রহস্য উদঘাটন করার। এগিয়েছে সভ্যতা। অরণ্যচারী মানুষের আদিম সহরচসমুহ অরণ্যে থেকে গেলেও মানুষ তার সৃষ্টিশীলতা ও প্রকৃ্তিকে বোঝার সহজাত ক্ষমতা দিয়ে তৈরী করেছে মানব সভ্যতা।

মানুষ তার অভিজ্ঞতায় দেখল তৃণভোজী প্রাণীসমুহ তুলনামুলক নিরীহ হয় যারফলে তাদের শিকার করা সহজ। এই অভিজ্ঞতা থেকে তারা চলে আসতে শুরু করল তৃণ অঞ্চলে। সময় বয়ে চলল, কালের পরিক্রমায় তারা আরো শিখল কিছু নিরীহ প্রাণী অতি সহজের তাদের পোষ মানে। তারা স্থায়ী হতে শুরু করল। কালে কালে তারা দেখল এইসব তৃণ থেকে যে বীজ হয় তা খাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ উপযুক্ত এবং উপাদেয়। বদলে গেল মানুষের ইতিহাস। তারা স্থায়ী চাষাবাদ ও গবাদী পশুপালন শুরু করল। সভ্যতার এই বিবর্তনের ছোঁয়া তাদের বিশ্বাসবোধকেও বিবর্তিত করল। পরিবর্তিত হতে থাকল তাদের উপাসনার ধরন। সাথে মানুষের সহজাত কৌতুহলও থেমে থাকল না। আবিষ্কার করে চলল প্রকৃ্তির নানা গোপন তত্ত্ব।

যাই হোক, আমরা দেখে নেই পৃথিবীর সব থেকে বড় মরুদ্যান নীল নদ এর তীরে গড়ে উঠা প্রাচীন মিশরীয়দের সভ্যতার গোড়াপত্তনের ইতিহাস এবং সেই সাথে একটি ধর্মীয় বিবর্র্তন।

কৃ্ষি ভিত্তিক জীবন ধারণ ও সমাজ ব্যবস্থার মূল শর্ত হচ্ছে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ। যে কারণে আদিম কৃ্ষি ভিত্তি সভ্যতা গুলো আমরা কোন বড় নদীর ধারে দেখতে পাই। মিশরীয় সভ্যতাও মূলত কৃ্ষিকাজের উপর ভর করেই গড়ে উঠেছিল। তাছাড়া মরুর ভেতর এমন পানির উৎস এবং কৃ্ষিকাজের সুব্যবস্থা অনেক দলকে তাড়িত করেছে নীল নদের তীরে বসতি স্থাপন করার। কিন্তু প্রকৃ্তি তার অমোঘ নিয়মের মতো সেখানেও লুকিয়ে রেখেছিল রহস্য। তাদের কাছে স্থায়ী কোন বর্ষপঞ্জি না থাকার কারণে তারা ঠিক জনতনা নীল নদে কখন প্লাবন আসে। যে কারণে স্থায়ীভাবে চাষাবাদ করা সেখানে তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। মানুষ থেমে থাকেনা, চলতে থাকল প্লাবনের সময়ে খোঁজ। তখনকার বিজ্ঞানীরা খেয়াল করে দেখল আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটি সুর্যোদয়ের ঠিক আগে পুব আকাশে দেখা যায় ঠিক সেই সময়টায় নীল নদে প্লাবণ আসে (মধ্য জুন)। শুরু হল সময় গণনা। গোড়াপত্তন হল ইতিহাস কাঁপানো এক সভ্যতার। আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল সেই তারাটির নাম লুব্ধক। ইংরেজীতে সিরিয়াস । যা ক্যানিস মেজর নক্ষত্রমন্ডলে অবস্থিত। গ্রিক মিথোলজি অনুসারে আকাশে এই নক্ষত্র মন্ডল কুকুর হিসেবে চিহ্নিত হয়।


কিন্তু এখানেও সমস্যা থেকে যায়। এটা আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা হলেও আরো কিছু উজ্জ্বল তারা সাথে গুলিয়ে ফেলাটাই সাধারণ মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক ছিল। যে সমস্যার সমাধান করতে সেই সময়ের বিজ্ঞানীগণ কালপুরুষ নক্ষত্রমন্ডলের সহায়তা নেয়। যে নক্ষত্র মন্ডলের ইংরেজী নাম অরিওন । গ্রিক মিথোলজির বিখ্যাত শিকারী যার এক হাতে খড়গ আরেক হাতে সিংহের চামড়া সম্বলিত মাথা।


অরিওন নক্ষত্রমন্ডল


অরিওন নক্ষত্রমন্ডলের মাঝের তিনটা তারাকে একত্রে বলা হয় অরিওন বেল্ট । তিনটি তারার নাম যথাক্রমে আলনিতাক , আলনিলাম এবং মিনতাকা


বিজ্ঞানীগণ দেখলেন এই তিনটি তারাকে সরল রেখা ধরে যদি সরল রেখা টেনে নিচের দিকে যাওয়া হয় তাহলে যে উজ্জ্বল তারার কাছ দিয়ে সেটাই লুব্ধক। নিচের ছবির লাল রেখাটি খেয়াল করুন


হাইপোথিসিসঃ
আমরা অনুমান করে নিতে পারি গ্রিক মিথোলজিতে যেখানে ক্যানিস মেজরকে কুকুর হিসেবে তুলনা করা হয়েছে মিশরীরা সেখানে শেয়াল। সাধারণ মানুষ তাকে ধরে নিয়েছে তাদের এক দেবতা হিসেবে। যার ফলশ্রুতিতে তাদের উপাসনায় এসেছে শেয়াল দেবতা আনুবিস


আনুবিস বা শেয়াল দেবতার সাথে সাথে চলে এসেছে সেই নক্ষত্র প্রদর্শক অরিওন বেল্ট। যার অবস্থান অনুপাতের সাথে মিল পাওয়া যায় গীজার বৃহৎ তিনটি পিরামিডের যা অরিওন কোরিলেশন থিওরী নামে পরিচিত

আর তার কাছেই তাদের প্রধান দেবতা সিংহ মুখের
স্পিংকস মুর্তি। গ্রিক মিথোলজির সেই সিংহের মাথা হাতে শিকারীর সাথে তুলনা করা যায়।


পরিশিষ্টঃ
বিশ্বাস ও কৌতুহলে সংমিশ্রণই মানুষের সভ্যতার ক্রমবিকাশের ইতিহাস। বিশ্বাস মানুষকে দিয়েছে সান্তনা এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয় থেকে মুক্তি, অসহায়ত্ত্বে ভরসা। কৌতুহল দিয়েছে জীবন ধারণের অনুসংগ, এগিয়ে যাওয়ার শক্তি এবং চিন্তার খোরাক।

সব শেষে শিল্পীর কল্পনায় প্রাচীন নীলনদের চিত্র



** লেখার ভুলত্রুটি মার্জনীন



ছবিসুত্র ইন্টারনেট
সকল লিংক উইকিপিডিয়া


উৎসর্গ - ধুসর ইতিহাস হাতড়ে বেড়ানো ব্লগার জ্বিন কফিল ভাই কে
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪৬
৩৫টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×