somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাজাগতিক বিবর্তন তত্ত্বঃ লেপলেসের নীহারিকাবাদ

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথমে যাচ্ছি আজ থেকে ২৫০০ বছর আগে। সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন ডেমোক্রিটাস নামে এক মহামনীষী। উনি বলছেন, আসলে এ বিশ্ব জগত এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার সমন্বয়য়ে গঠিত। প্রতিটি ক্ষুদ্র কণাই একক ভাবে শক্তি ধারণ করে এবং এই শক্তির মাধ্যমেই পারষ্পরিক সংযোজিত এবং বিয়োজিত হয়। এবং এই সংযোজন বিয়োজনের নিয়ত পরিবর্তন কালক্রমে আমাদের এ বিশ্ব জগত সৃষ্টি হয়েছে। আর বিশ্ব প্রকৃতি গঠনের এই ধারাবাহিকতার মাধ্যমেই আমাদের সৃষ্টি। প্রাণ বা আত্না মূলত এইসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার সন্মিলিত একটি জটিল রুপ।


যাইহোক, পরবর্তীতে ১৭ শতকের শেষ ভাগে এসে ফরাসী গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী লেপলেস ( ১৭৪৯-১৮২৭) ডেমোক্রিটাসের প্রাচীন এই তত্ত্বটি গ্রহন করে নেন। এবং এর উপর ভিত্তি করে তিনি তাঁর Mécanique Céleste (গাগনিক কারিগর) গ্রন্থে আমাদের সৌরজগৎ গঠনে নীহারিকার ভুমিকার কথা ব্যাক্ষা করতে সচেষ্ট হন। এবং উক্ত তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে লেপলেস মহাজাগতিক বিবর্তনকে একটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর দাঁড় করান। লেপলেস বলেন, আমাদের এই সৌরজগতের আদি রুপ ছিল নীহারিকার মতো অগ্নিময়, গ্যাসীয় পদার্থ বা মেঘের ধুলিকণার মতো। কালে কালে ক্রম বিবর্তনের ফলে কোন এক নীহারিকা মন্ডল থেকে সৃষ্টি হয়েছে আমাদের সৌরজগত। এসব গ্রহ নক্ষত্রের নিজস্ব গতি প্রকৃত মহাকর্ষ ইত্যাদির প্রাকৃতিক নিয়মের বিশ্লেষণ করে এর ক্রমবিবর্তন ব্যাক্ষা সম্ভব। এসব গ্রহ নক্ষত্র সৃষ্টিকারী নীহারিকাও অসংখ্য পরমাণুর সমন্বয়য়ে গঠিত। কিন্তু নীহারিকা সমূহের প্রচন্ড গতি এসব পরমাণু সমূহকে পারষ্পরিক বিচ্ছিন্ন করে রাখে। যখন কোন নীহারিকা ধীরে ধীরে গতি হারাতে থাকে এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পরমাণু গুলো কেন্দ্রের দিকে ঘনীভূত হতে থাকে। এবং পরমানু গুলো নীহারিকার কেন্দ্রপিন্ডকে ঘিরে আবর্তিত হতে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে নীহারিকার কেন্দ্রস্থল যতই সঙ্কুচিত হতে হতে থাকে পরমাণুগুলো ততই তীব্র বেগে তাকে কেন্দ্র করে ঘুরতে লাগল। ফলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘনীভূত মেঘ দূরে নিক্ষিপ্ত হতে লাগল। এবং এই ঘনীভুত মেঘ সমূহ ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে আরো বেশী ঘনীভূত এবং সংকুচিত হয়ে পড়ল। এভাবেই তৈরী হল গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু। আর নীহারিকার কেন্দ্রস্থল হচ্ছে আমাদের সূর্য।

পৃথিবী গঠনের ব্যাপারে লেপলেসের বলেন, আমাদের পৃথিবী প্রথমে অগ্নিময় গ্যাসীয় পদার্থের মতো ছিল। ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয়ে ওপরের শক্ত আবরণ তৈরী করে এবং দীর্ঘ সময় চলমান এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই পৃথিবীর বর্তমান অবস্থা। লেপলেসের মতে, মানুষ, প্রাণী, জীব, জড় এর সবই এই প্রক্রিয়ার অধীনে ক্রম বিবর্তনের মাধ্যমে তৈরী হয়েছে।

লেপলেস মূলত অন্ধ অচেতন জড় বস্তুকেই মহাবিশ্বের সকল কিছু সৃষ্টির মূল হিসেবে দেখেছেন।


কথিত আছে, লেপলেস তার Mécanique Céleste গ্রন্থটি সম্রাট নেপোলিয়ানের নামে উৎসর্গ করতে চাইলে সম্রাট নেপোলিয়ান এই বলে আপত্তি জানান যে, বিশ্ব সৃষ্টির এই বিরাট গ্রন্থের কোথাও ঈশ্বরের নাম নেই। উত্তরে লেপলেস বলেন, জগত সৃষ্টির ব্যাপারে ঈশ্বর-রূপ প্রকল্পের কোন প্রয়োজন তিনি বোধ করেন নি। তাঁর মতে জগত হলো একটি বিরাট যন্ত্র। সুতরাং যান্ত্রিক নিয়মের সাহায্যেই জগতকে ব্যাক্ষা করা উচিত।


মহাজাগতিক বিবর্তন নিয়ে বিস্তারিত পড়তে প্রখ্যাত আমেরিকান জ্যোতির্বিদ এবং মহাজাগতিক জীববিদ্যা গবেষক স্টিফেন জে ডিক এর একটি চমৎকার প্রবন্ধ - View this link



সবশেষে, ব্লগ ভিজিটের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ (পোষ্টের সাথে সম্পর্কিত নয়) নাসা কতৃক নির্মিত সেপ্টেম্বরের রাতের আকাশপটের গ্রহ নক্ষত্র পরিচিতি মূলক একটি ভিডিও চিত্রের লিংক- View this link




**********

"সে সুধা বচন সে সুখ পরশ
অঙ্গে বাজিছে বাঁশি।।
তাই শুনিয়া শুনিয়া আপনার মনে
হৃদয় হয় উদাসী, কেন না জানি
আমার মন মানেনা , , , , , , "

পোষ্ট লেখাকালীন মাথার খালি দেখি এই গানটা ঘুরঘুর করছে! মনযোগে বিঘ্ন ঘটানোয় ঠাকুক সাবকে মাইনাস X((

গানটি শুনতে চাইলে- View this link ( লিংকের জন্য কৃতজ্ঞতা এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা কে)


১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×