somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাক্তাররা সব কসাই, চলেন ডাক্তার পিটাই!!

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কয়েক মাস আগের ঘটনা। আমাদের নতুন ডাক্তার তাসনূভা সাখাওয়াত বীথি গিয়েছে জীবনে প্রথম বারের মতো নাইট ডিউটি করতে। ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের এই ব্লগারকে যতটুকু চিনি তাতে জানি যে এই মেয়ে এখনও মায়ের আঁচলের নিচ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। যার জন্য তার মা এখনও খাবার নিয়ে পিছে পিছে ঘুরে। যে এখনও ভাবে দূরে কোথাও চাকুরী হলে তার মা'কে সাথে নিয়ে যাবে তাহলেই কোন সমস্যা হবেনা। সেই মানুষটা জীবনে প্রথমবারের মতো রাতের বেলা তার মা'কে ছেড়ে হসপিটালে কেমন লাগছে জানার কৌতুহল হলো। ফেবুতে নক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম এই নতুন অভিজ্ঞতা তার কেমন লাগছে। রিপ্লাই যেটা পেলাম তাতে তার মানসিক অবস্থার আন্দাজ পেয়ে আমার নিজ ঘরে নিরাপদ বলয়ে থেকে আমারই রীতিমতো অস্বস্থি শুরু হয়ে গেলো। দূর থেকে মেসেঞ্জারে বসে এসব কিছুনা ডাক্তার হলে তো এসবে অভ্যস্ত হতেই হবে এসব বলে সাহস জোগানোর মিথ্যে চেষ্টা করলাম। একটু পরে জানালো ওয়ার্ডে নাকি মাত্রই আরেকটা বাচ্চা মারা গেলো, ডেডবডি দেখে তার ভয় লাগছে। আর বলছে এই আতংকে আবার আবার কিছু ভুল করে ফেলে কিনা সেটা নিয়েও তার দুশ্চিন্তার কথা। এবং যতদূর বুঝতে পারলাম তাতে সে তখন রীতিমতো আতঙ্কে কাঁপছে আর আল্লাহ্‌র নাম জপছে এই আশায় যাতে সকাল হয় শীঘ্রই। পরিস্থিতিতে না পড়লে সে আতংকটার আসল রূপ কেমন সেটা বোঝা যায়না ঠিকই কিন্তু অনুমান করাটা দুঃসাধ্য নয়।

যাইহোক, যে জন্য কথাটা বলা। বারডেম হসপিটালে কোন এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কোন এক এএসপি পরিচয়ধারী পুলিশের ইন্ধনে ৬০/৭০ জন মানুষ মিলে ডাক্তারদের বেধড়ক মারধোর করে। পালিয়ে টয়লেটে আশ্রয় নেয়া এক নারী ডাক্তারও তাদের হাত থেকে রেহায় পায়নি। অনেকগুলো মানুষ মিলে টয়লেটের দরজা ভেঙ্গে তাকে বের করে এনে দারূন উন্মাদনায় সবাই মিলে মারধোর করে। রাস্তায় ছিনতাইকারী বা চোর ধরা পড়লে যেভাবে অনেক মানুষ মিলে মারধোর করে কিছুটা হয়তো তেমনই!

এবার সেই নারী ডাক্তারের জায়গায় কল্পনা করুন সেখানে আপনারই বোন বা আপনারই বন্ধু বা আপনারই কোন প্রিয় একজন মানুষের কথা। কোন এক রাতের বেলা ধ্বংসের উন্মাদনায় মত্ত ৬০/৭০ জন মানুষ ধেয়ে আসছে তার দিকে। সে বুঝতে পারে ধরতে পারলেই তার উপর নেমে আসবে অমানুষিক বর্বরতা। জীবনের তাগিদ তাকে খুঁজে ফেরাচ্ছে আত্নরক্ষার পথ। কোন পথ না পেয়ে অবশেষে টয়লেটের ভেতর সে লুকিয়ে ফেললো নিজেকে। কিন্তু পালানো আর হলোনা তার। ধ্বংসের উন্মাদনায় মত্ত মানুষগুলো ঠিকই জেনে গেলো তার অবস্থান। হঠাৎ টয়লেটের দরজায় আঘাত, তারা ভাংবেই দরজা। অবর্ণনীয় আতংক নিয়ে মেয়েটি তার প্রভুর নাম জপ করছে আর ক্ষীণ আশা তার মনে হয়তো মানুষগুলো দরজাটা ভাঙ্গতে পারবেনা। কিন্তু না, মেয়েটির আশা অপুর্ণ রেখেই ভেঙ্গে গেলো সেই দরজা। কিছু লোমশ হাত ধেয়ে আসলো মেয়েটির দিকে। টেনে হিঁচড়ে বের করে আনলো এক পৈশাচিক উন্মাদনা নিয়ে...

নাহ আর বলতে ইচ্ছা করছেনা। আজ খবরটি শুনে বেশ কয়েক মাস আগের সেই রাতের কথা মনে পড়ে গেলো। জীবন মৃত্যুর মাঝের একটি জায়গার জন্য নিজেকে তৈরি করতে গেলে তার জন্য একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানে অধ্যয়নকারীকে মানসিক ভাবে কতটুকু প্রস্তুত করতে হয় সেদিন তার কিছুটা আন্দাজ পেয়েছিলাম। হয়তো এই মেয়েটি বা নারীই হতে পারতো আমাদেরই কোন কাছের একজন মানুষ। এমন একজন মানুষ হয়তো তার প্রিয় মানুষদের বলয়টা এমনই যে তাকে কোন কষ্ট বা আঘাতের অনুভূতি বুঝতে দেয়না।

হয়তো বলবেন ডাক্তাররা খারাপ, ডাক্তাররা কসাই। আসলে ভালো খারাপ মিলিয়েই মানুষের সমাজ। আপনার আমার পেশার মানুষদের মধ্যে যেমন ভালো মানুষ মন্দ মানুষ রয়েছে তেমনি ডাক্তারদের মাঝে। তাই বলে পুলিশ পরিচয় দিয়ে দলবল নিয়ে সংগঠিত হয়ে অনৈতিক ভাবে কারো উপর হামলা করার অধিকার রাষ্ট্র যেমন আপনাকে দেয়নি তেমন দেয়নি হাজার হাজার ধরে চলে আসা মানুষের সামাজিক ও নৈতিক প্রথা।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪২
৭১টি মন্তব্য ৪৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×