স্কুলে ক্লাস করার পর ক্লান্তি লাগলে ভাবলাম; বাসা থেকে একটু রেষ্ট নিয়ে আসি। লেখা-লেখির কাজগুলো প্রয়োজনে ঘন্টা খানিক পরে এসে লিখলেও চলবে। তখন সম্ভবত বেলা ১১টা। সি ব্লক মসজিদের কাছে আসতেই মাইক থেকে ভেসে আসছিলো- একটি শোক সংবাদ---। নামটি চিনে ফেললাম। মূলত: যার ইচ্ছায় ১৯৯৩ সালে তাদের সংগঠনের একটি সাহিত্য সংকলন সম্পাদনা করে দিয়েছিলাম। সংকলনের জন্য বানী এবং লেখা আনতে জনপ্রিয় উপন্যাসিক শ্রদ্ধেয় হুমাযুন আহমেদ এবং নাট্যকার মমতাজ উদ্দিন সাহেবের বাসা পর্যন্ত গিয়েছিলাম। সেই পরিচিতি মানুষটি গত রাত- ১১ টায় ইন্তেকাল করেছেন।
জানাজা হবে- বাদ জহুর। বাসায় এসে হাত-মুখ ধুয়ে তাড়াহুড়া করে আবার স্কুলে গেলাম। হাতের কাজ সেরে নামাযের ২০ মিনিট আগে রওনা হয়ে নামাজ ধরলাম। ঈমাম সাহেব নামাজ বাদ এলান করলেন, জানাজা আছে। জানাযার পর আমরা সুন্নত পড়ব- ইনশাআল্লাহ। এরপর তাঁর লাশ দেখলাম। একটি কথাই ভাবলাম- এরকম তো একদিন আমাকেও যেতে হবে। এটাই প্রকৃত বাস্তবতা।
হ্যাঁ; দুনিয়ার প্রত্যেক নর-নারী, ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা, ইতর-ভদ্র কাউকেই মৃত্যু নামক বাস্তবতাটি ছাড় দিবে না। দু'দিন আগে আর দু'দিন পরে। কিন্তু আমরা কি আমাদের মৃত্যুর পরবর্তী ঘাটির কথা চিন্তা করে পথ চলতে পারছি। না, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা হয়তো: পারছি না। আমাদের সামনে যখন পরিচিত কেউ দুনিয়া ছেড়ে চলে যান, তখন প্রথমত: বিশ্বাসই হতে চায় না তিনি মারা গেছেন। দ্বিতীয়ত: তাদের লাশ দেখলে মনে গভীর ভাবে দাগ কাটে। ফলে, কিছুদিন দুনিয়ার কোন কোলাহলই যেন ভালো লাগতে চায় না। মনে হয়, বাকী সময়টা পরকালের কাজ নিয়ে অতিবাহিত করাটাই যেন বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু বাস্তবে ক'দিন পরে দুনিয়ার মাঝে ডুবে গিয়ে আবার সব ভুলে যাই।
সত্যিই দুনিয়া আমাদের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি আমাদের এ পরীক্ষা। আমাদের প্রথম পরীক্ষা হল; আমাদের প্রত্যেকের স্ব স্ব দেহ। দেহকে কন্ট্রোল করাটা একটা বড় দায়িত্ব। দেহের বিভিন্ন চাহিদা আল্লাহর হুকুম মতো চালানোই হল; মূল কথা। এরপর আশ-পাশের আত্মীয়-স্বজন বা যাদের সাথে আমরা দৈনন্দিন চলা-ফেরা করি তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখাটাও আরেক দায়িত্ব। উভয় কাজের সাথেই ফরজ এবং সুন্নত সম্পর্কযুক্ত। যেমন- মহান আল্লাহর হুকুম মত ফরয ইবাদত পালন এবং সুন্নতের অনুসরণ তথা সত্য পথে চলা, সত্য কথা বলা, অধীনস্থদের সাথে ভাল ব্যবহার, হারাম-হালাল বেছে চলা ইত্যাদি। তাহলে; দুনিয়ার সকল কাজই ইবাদত হিসাবে গণ্য হবে।
দুনিয়াতে চলতে গেলে; আমাদের জীবনে অবশ্য কিছু ঝামেলা আসবে। তখন আমরা যদি মনে করি, এ সব ঝামেলা থেকে ফ্রি হয়ে এরপর ইবাদত শুরু করবো। তবে আমরা বড়ই ভুল করব। দুনিয়াতে বিভিন্ন ঝামেলা থাকাটাই স্বাভাবিক । ঝামেলার সময় ইবাদতে আরো বেশি সময় দেয়া তথা নফল ইবাদত-বন্দেগী বাড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে কাজের ঝামেলা তথা পেশাগত কাজের চাপ কম-বেশি থাকবেই। কিছুদিন আগে এক শুক্রবারে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে নামাজ পড়তে গিয়ে দেখি; সিড়ি কোঠায় লেখা আছে; কাজকে বলুন- আমার নামাযের সময় হয়েছে।
আমাদের মনে রাখতে হবে; মানুষ হিসাবে আমি জন্মেছি বলে আমি আশরাফুল মাখলুকাত। আশরাফুল মাখলুকাত হিসাবে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া আমার হায়াতী জিন্দেগী এক বিশেষ নিয়ামত। আমাদের এমন জীবন গঠন করা উচিত- যে জীবন মহান আল্লাহপাকের সন্তষ্টি অর্জনে সম্ভাব্য ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।
-হাকীম আল-মীযান। রূহানী মেথড সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধ।
ভালো মন্তব্য গ্রহনীয়, মন্দ বর্জনীয়। দু'আর দরখাস্ত।