somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারীর প্রতি অমানবিক আচরণ ও আতিফ আসলাম

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নারীর প্রতি অমানবিক আচরণ ও আতিফ আসলাম

আমাদের এ উপমহাদেশে পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, ইত্যাদি সবক্ষেত্রে নারীর প্রতি নানারকম বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। সঙ্গত কারণেই আমি এবং আমার মত অনেকেই সেটা পছন্দ করেননা। করা উচিত নয়। সৃষ্টিকর্তা যেখানে সামান্য শারীরিক কিছু বৈশিষ্ট্য ছাড়া আর কোন ক্ষেত্রেই নারী-পুরুষে তেমন কোন বিভেদ করেননি, সেখানে ধর্ম এবং সমাজ যে বৈষম্য করে, তা কতটা যুক্তিসংগত?

ইসলাম ধর্মে মেয়েদের যে সম্মান ও অধিকার দেয়া হয়েছে, নানা অজুহাতে তা লংঘণ করা হয়। একটা উদাহরণ দেই। দ্বিতীয় বিয়ে করতে ইসলাম প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নিতে বলেছে। কোন মেয়ে কি সেটা দেয়? কোন পুরুষ কি তা নেয়? তাহলে দ্বিতীয়, তৃতীয়..... বিয়ে কি বৈধ? যদি না হয়, তাহলে বিয়ের পরে শারীরিক সম্পর্ক, বাচ্চা..... এসব কি বৈধ???

সব ধর্মে নারীদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে। সব ধর্মে পুরুষের বহুবিবাহ জায়েজ। মেয়েদের বিশেষ কারণ বশতঃ জায়েজ। বিধবা বিয়ে চালু ও সতীদাহ রদ করতে বিদ্যাসাগরককে ধর্মগুরু ও সমাজের বিরুদ্ধে কম যুদ্ধ করতে হয়নি। ইসলাম ধর্মে আবার জান্নাতেও মেয়েদের প্রতি বৈষম্য ও বহূগামিতাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বেহেশতী পুরুষ পাবে স্ত্রীসহ সত্তর হুর, আর স্ত্রী পাবে শুধুই স্বামী। এর কারণ আল্লাহ ভাল জানেন। তবে সঙ্গত কারণেই আমি বেহেশতী হলে আল্লাহকে অনুরোধ করব অন্ততঃ আমার বেলায় এটা না করতে, যেহেতু বেহেশ্তীদের সব ইচ্ছে পূরণের আশ্বাস তিনি দিয়েছেন।

পরিবার ও সমাজে নারীর স্থান দ্বিতীয় শ্রেণীতে। প্রবাসে আমাদের দেশের লোকেদের মত।

এবার আসি নারীর আর্থিক বৈষম্যের বিষয়ে। এ বিষয়ে আমি আলাদা একটি পোস্টে বিস্তারিত লিখেছি। এখানে অল্প করে উল্লেখ করি।

মেয়েরা সারাজীবন পরনির্ভশীল। বাবা, স্বামী বা ছেলের উপর। তারা জানে স্বামীর অবর্তমানে ওদের অবস্থা কতটা নাজুক হয়। তাদেরকে সবসময় আর্থিক দিক থেকে বঞ্চিত করা হয়। বাবার সম্পত্তি, বিধবা হলে স্বামীর সম্পত্তি ঠিকমত দেয়া হয়না। নিজে উপার্জন করলেও নিজের ইচ্ছামত স্বামী তা খরচ করতে দেয়না। এমন কি দেনমোহরটাও দেয়না। নারীকে বেশীরভাগ পুরুষ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে দেয়না। স্ত্রীধন, তালকের পর খোরপোষ - বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এসব দেয়া হ্য়না। এমনকি বাবার দেয়া যৌতুক বা সম্পদের উপরেও স্ত্রীর কোন নিয়ণ্ত্রণ থাকেনা। কেউ কেউ মোহরানা দেন। কিন্তু সেটা কোন না কোন বিনিয়োগে খাটানো হয় যা স্বামী নিয়ন্ত্রণ করেন।

আমাদের দেশের অনেক বিবাহিত পুরুষরা পরকীয়া করে, পতিতালয়ে যায়, এমনকি কাজের মেয়ের সাথেও সেক্স করতে দ্বিধা করেনা। বিবাহিত ও অবিবাহিত পুরুষরা ধর্ষণ করে যেকোন বয়সের, বিবাহিতা - অবিবাহিতা নারীকে, এমনকি ছোট শিশুরাও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়না। কোন কোন পুরুষ একইসাথে একাধিক প্রেম করাকে 'যোগ্যতা' মনে করে।
যেদিন ধর্ষণে সেঞ্চুরীর পর মিষ্টি বিতরণের খবর জানতে পারি, লজ্জা-ঘৃণা-অপমান-রাগ-হতাশা-কষ্টে কুঁকড়ে গেছিলাম। কি নিদারুণ মানসিক দৈন্যতা !!! ছিঃ!!! আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের মানসিকতা যদি এমন হয় তাহলে অশিক্ষিত পুরুষের আর দোষ কি?

বিশেষ কারণবশতঃ মেয়েরাও পরকীয়া করে। তবে তা পুরুষের তুলনায় নগণ্য। নিম্নবিত্ত পুরুষরা একাধিক বিয়ে করে, তুচ্ছ কারণে তালাক দিয়ে বা না দিয়ে বৌ-বাচ্চা ফেলে আবার বিয়ে করে। মেয়েরা পড়ে অথৈ সাগরে। যৌতুকের জন্য নির্যাতন, এমনকি খুন করে, মতের পার্থক্য হলে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করে, মতপ্রকাশে স্বাধীনতা দেয়না, পারিবারিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার সময় তার সাথে আলোচনা করেনা, ইচ্ছার বিরুদ্ধে বোরখা পরায় বা কোনকিছু করতে বাধ্য করে, লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়, চাকরী ছাড়ায়, এমন কি চলাফেরায় বিধিনিষেধ আরোপ করে স্বামী ও তার পরিবার। কোন বিবাহিত মেয়ের ছেলেবন্ধু থাকা যাবেনা, ফোন করা, দেখা করা যাবেনা- এমন হাজার বাধা। বৌ সুন্দরী হলে সারাজীবন তাকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। এই বুঝি কারো সাথে তার ভাব হয়ে গেল! বিয়ে করেছে মানে তাকে গোলাম হিসেবে কিনে নিয়েছে। তাই তার বিনা অনুমতিতে বউ নিঃশ্বাস ও নিতে পারবেনা। পাকিস্তানী ও মুসলিম দেশগুলোতে বহূবিবাহ অতি সাধারণ ঘটনা। এটি যে কত বড় মানসিক নির্যাতন, সেটা ছেলেরা বুঝত, যদি মেয়েরা একাধিক বিয়ে করত। তসলিমা নাসরিন সেই মানসিক নির্যাতনটা বোঝাতে গিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন।
উন্নত দেশগুলোতে প্রত্যেকটি মানুষের অধিকার সমান। একজন ছেলে যা যা করতে পারবে, একটি মেয়েও তাই। কোন মেয়েকেই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে বাধ্য করা হয়না। জোর করে কোন অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়না। মেয়েরাও মানুষ। আমরা সেটা মনিনা। প্রতি পদে পদে ধর্মীয় ও আর্থ-সামাজিক কারণে মনে করিয়ে দেয়া হয় যে আমি মেয়ে। তাই আমার অবস্থান, স্টেটাস, অধিকার, সুযোগ, যোগ্যতা, ক্ষমতা, ইচ্ছার স্বাধীনতা, বুদ্ধি, সাহস..... ইত্যাদি সব কম। এগুলো কমই থাকবে। কারো বেশী হলে সেটা পুরুষরা সহ্য করতে পারেনা। মেয়েরা সাইকেল চালাতে পারবেনা, পাড়ার বখাটেরা রাস্তা দিয়ে যাবার সময় বাজে কমেন্ট করলে প্রতিবাদ করতে পারবেনা, প্রেম প্রত্যাক্ষ্যান করতে পারবেনা।

যেখানে পুরুষের কিছু যায় আসেনা, সেখানেও তারা মেয়েদের ইচ্ছা বা সাহসী কোনকিছু মেনে নিতে পারেনা। অশিক্ষিত পুরুষদের মধ্যে এই প্রবণতা আরো বেশী। আমি গাড়ী কেনার পর একদিন ড্রাইভারকে পাশে বসিয়ে রোকেয়া হলের পাশের রাস্তা দিয়ে গাড়ী চালিয়ে আসছিলাম। তাই দেখে মাঠে ঘাস কাটা দু'জন লোক বাজে কমেন্ট করল। আমার ইচ্ছা করছিল, নেমে গিয়ে লোকটাকে জিজ্ঞেস করি, "আমার টাকায় কেনা গাড়ী আমি চালাচ্ছি। তাতে আপনার সমস্যা কি জনাব?"

পুরুষরা মেয়েদের আধিপত্য মেনে নিতে পারেনা। কিন্তু অদ্ভূত ব্যাপার হল, অফিস-আদালতে নারীদের অধীনতা মেনে নিতে তাদের তেমন আপত্তি করতে দেখা যায়না। আরো অদ্ভূত ব্যাপার হল, এদেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের নেত্রী মেয়ে !!! হয়ত এঁরা বাবা এবং স্বামীর কারণে ভোট পান। তা না হলে মতিয়া, সাজেদা,....এঁরাও সমান জনপ্রিয় হতেন।

আমার মনে হয় পৃথিবীতে মেয়েদের প্রতি যত বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়, তারমধ্যে মানসিক দিক থেকে সবচেয়ে নির্মম হল স্বামীর বহুস্ত্রীর একসাথে বসবাস। শান্তির ধর্ম ইসলাম কেন এটাকে সমর্থন দিয়েছে, আমি ভেবে পাইনা। একটা মেয়ের জন্য চোখের সামনে তার স্বামীর অন্য স্ত্রীর ঘরে শুতে যেতে দেখাটা যে কতটা অমানবিক, একটু কল্পনা করলেই বোঝা যায়। মেয়েরা এমন করলে পুরুষদের কেমন লাগবে? মাঝরাতে স্ত্রীর মোবাইল ফোন বেজে উঠলে যেখানে পুরুষদের গায়ের সব লোম খাড়া হয়ে যায়, সেখানে...। পুরুষরা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য বহুবিবাহের মত অনেক আইন বানিয়ে নিয়েছে, এখনও নিচ্ছে। ইরানের পার্লামেন্ট আইন পাস করেছে যে বয়স ১৩ বছর হলেই পিতা তার পালক কন্যাকে বিয়ে করতে পারবে। ভাবা যায়?

সম্প্রতি তুরস্কের পার্লামেন্টে পাশ করতে যাচ্ছে একটি আইন। তা হল, ধর্ষক ধর্ষিতাকে বিয়ে করতে রাজী হলেই তার ধর্ষণের শাস্তি মাফ করে দেয়া হবে। এ আইনের প্রকৃত অর্থ হল, কোন মেয়ে স্বেচ্ছায় কাউকে বিয়ে করতে রাজী না হলে তাকে রেপ করলেই বিয়ে করা যাবে। এই হল আমাদের আধুনিক বিশ্বের মানুষদের মানসিকতা।

সৌদিআরব, যেখানে ইসলামের চর্চা সবচেয়ে বেশী বলে আমরা মনে করি। আসুন দেখি, সেখানে নারীর অবস্থা কেমন? ওদেশে পুরুষরা একাধিক স্ত্রীতো রাখেই, এমনকি একই কাজের মেয়ের সাথে বাবা-ছেলে দু'জনেই সেক্স করে। কোন স্ত্রী এর প্রতিবাদ করতে পারেনা। স্বামীরা কোথায়, কখন, কার সাথে কি করে বেড়াচ্ছে, তা জানার অধিকারও স্ত্রীদের নেই। একই কাজ স্ত্রী করলে মাটিতে পুঁতে পাথর মেরে বা গলা কেটে হত্যা করা হয়।কি চরম বৈষম্য!

উঠতি বয়সের মেয়েদেরকে মায়েরা আড়াল করে রাখে যাতে সে কোন ধনী বুড়ার নজরে না পড়ে। পড়লে বাবার হাতে দেনমোহর ধরিয়ে দিয়ে জোর করে হলেও বিয়ে করবে। বিয়ের ব্যাপারে মেয়েদের মতের কোন দাম নেই। বাবা যেখানে দেনমোহর বেশী, সেখানে বিয়ে করতে মেয়েকে বাধ্য করে। কারণ দেনমোহর ৬০% মেয়ে, ৪০% বাবা পায়। যেকোন অপরাধের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের শাস্তি কঠোর হলেও সৌদিদের ক্ষেত্রে তা নমণীয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মোটা জরিমানা দিয়ে দফারফা করা হয়। যেমন, ছেলে বন্ধুদের নিয়ে কাজের মেয়েকে রেপ করলে ডাক্তার খরচ আর জরিমানা দিলেই মাফ। মাটিতে পুঁতে পাথর মেরে খুন করা হয়না। বাইরে বের হবার জন্যই মেয়েরা বোরখা পরে। বাসায় ওদের পোশাক পশ্চিমাদের চেয়েও খোলামেলা। আরবের ধনী পুরুষদের নারী, মদ, জুয়া, ইত্যাদির সুখ্যাতি সারা দুনিয়ায়। ইউরোপের সমকামীদের যে ক্লাবগুলো আছে, তার অধিকাংশের সদস্য হলেন আরবরা।

ক্ষমতাধরদের বেলায় ধর্ম চুপ করে থাকে। তখন মহাভারত অশুদ্ধ হয়না। আপনাদের মনে থাকবার কথা, সুচিত্রা সেনের মুখাগ্নী করেছিলেন মুনমুন সেন। উগ্রপন্থী কট্টর হিন্দুরা সহ গোটা বিশ্ব প্রথমবারের মত দেখল, একজন মেয়ে কারো মুখাগ্নী করছে। কেউ কোন প্রতিবাদ করেনি। কারণ ভারতের পুরা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সেখানে উপস্থিত ছিল।

সম্প্রতি পাকিস্তানে আতিফ আসলামের কন্সার্টের সামনের সারিতে একটি মেয়েকে কয়েকজন পুরুষ দ্বারা নির্যাতিত হতে দেখে আতিফ গান থামিয়ে মেয়েটিকে রক্ষা করেন। সোশাল মিডিয়ায় আতিফের প্রশংসার পাশাপাশি একটি মুসলিম দেশের শালীন পোশাকের একটি মেয়েকে প্রকাশ্যে এভাবে নির্যাতিত হতে দেখে নিন্দার ঝড় ওঠে।

আমাদের দেশেও প্রকাশ্যে থার্টি ফার্স্ট নাইটে, এমন কি দিনের বেলা শত শত লোকের সামনে ১লা বৈশাখে নারীদের উপর নির্যাতন হয়েছে। পুরুষরা ধর্ম ও নারীর পোষাকের দোহায় দিয়ে হলেও মেয়েদের উপর জুলুম করাকে যায়েজ মনে করে। আতিফের কনসার্টে নির্যাতিতা মেয়েটি শালীন, ধর্মীয় পোশাকেই এসেছিল। পোশাকই দায়ী হলে শিশুরা ধর্ষিত হয় কেন?

নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড,... এসব দেশের মেয়েরা খোলামেলা পোষাক পরে। পোষাক রেপের জন্য দায়ী হলে এসব দেশে রোজ রেপ হবার কথা। অথচ এসব দেশে রেপ হয়না বললেই চলে। রেপ কেন, কোন অপরাধই হয়না। আপনাদের মনে থাকার কথা, নেদারল্যান্ডস অপরাধী না থাকার কারণে জেলখানা বন্ধ করে দিচ্ছে। আমাদের দেশের কথা ভাবুন তো!


এর পিছনে প্রধান কারণ পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা। আমরা মেয়েরাও পুরুষদের অধিক সুযোগসুবিধার অধিকারকে মেনে নিয়েছি। ধর্ম ও সমাজ উভয়ে এ বিষয়টিকে মেনে নেয়ার কারণে আমরা অনেককিছু দেখেও না দেখার ভান করি। মেয়েরা প্রতিবাদ করেনা নিরাপত্তাহীনতা ও সামাজিকভাবে হেয় হবার ভয়ে। এটিও কারণ। এছাড়া মেয়েরা শারীরিকভাবে দূর্বল, সত্যিকারের আইনের শাসনের কঠোর প্রয়োগের অভাব, বিপদের সময় আশেপাশের মানুষের সাহায্য না পাওয়া, প্রকৃত শিক্ষার অভাব, মেয়েদের প্রতি হীন মানসিকতা, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের অভাব, অবদমিত শারীরিক চাহিদা ইত্যাদিকে দায়ী করা যায়।

আমাদের দেশের মেয়েরা শাড়ীর আঁচল বা ওড়না দিয়ে ঢেকে বা আড়ালে গিয়ে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ায়। উন্নত দেশগুলোতে রাস্তায়, বাসে, ট্রেনে বা দোকানে মায়েরা বুক খুলে কোলের শিশুকে দুধ খাওয়ায়। ওদের কাছে এটা অতি সাধারণ বিষয়। শিশু মায়ের দুধ খায়, খাবে, এতে কোন অশ্লীলতা নেই। ওটাই স্বাভাবিক। তাই কেউ বাজে দৃষ্টি নিয়ে মায়ের বুকের দিকে তাকাবেনা। একই কারণে বিকিনি পরে মেয়েরা যখন সমুদ্রে বা পুলে নামে, কেউ কৌতুহল নিয়ে তাকায়না। তাকাবে যদি দেখে কেউ শাড়ী বা সালোয়ার কামিজ বা বেশী পোষাকে নামছে। ভাববে, একি অদ্ভূত কাণ্ড! ইহা কিহা??

অথচ আমাদের দেশের পুরুষরা বিশ্রীভাবে যেকোন বয়সের মেয়েদের শরীরের, বিশেষ করে বুকের দিকে তাকায়, তা সে যে বয়সের পুরুষই হোক। নিজের প্রেমিকা বা স্ত্রীর শরীর দেখার যুক্তিসংগত কারণ থাকে। কিন্তু অন্য মেয়ের? ওসব দেশে খুব স্বল্প পোষাকে কোন মেয়েকে দেখলেও পুরুষরা সেভাবে তাকায়না। এরা মেয়েদের বুকটাকে শরীরের একটা অংশ ছাড়া আলাদা কিছু ভাবেনা।

ওসব দেশে আঠার বছর বয়স হলেই সেক্স করার অবাধ স্বাধীনতা পাওয়া যায়, কেউ তাতে বাধা দেয়না। তার আগে কিছুটা বাধা থাকে। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী স্কুল-কলেজ থেকে ফ্রি দেওয়া হয়। তাই উন্নত দেশগুলোতে রেপ হয়না বললেই চলে। হলেও কোন অপরাধী শাস্তি থেকে রেহাই পায়না। কেউ ঘুষ খেয়ে বা রাজনৈতিক সুবিধার কথা ভেবে অপরাধীকে শাস্তি থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করেনা।

ভীড়ের বা অবস্থার সুযোগে আমাদের এ উপমহাদেশের পুরুষরা মেয়েদের গায়ে হাত দেয়। কেন তারা এটা করে? আমি এর কারণটা অনুমান করি এরকম: আমাদের দেশের পুরুষরা বিয়ের আগে সেক্স করতে পারেনা সমাজের নিষেধের কারণে। সবার প্রেমিকা থাকেনা, থাকলেও পূর্ণ তৃপ্তির সুযোগ থাকেনা। পতিতালয় আছে। সেখানে যাবার মানসিকতা, সুযোগ, সামর্থ সবার থাকেনা। পরকীয়া বা রেপ করাও ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু শরীরের চাহিদাটা থেকে যায় মোক্ষমভাবেই। ফলে তারা সুযোগ খোঁজে, কোথাও যদি নারীদেহের স্পর্শে নিজেকে একটু হলেও তৃপ্ত করা যায়। আর সেটুকুও কপালে না জুটলে চোখই ভরসা। যেকোন বয়সী, বিবাহিত-অবিবাহিত, শি ক্ষিত-অশিক্ষিত, যেকোন আর্থ-সামাজিক বা ধর্মের বেশীরভাগ পুরুষই মেয়েদেরকে ভোগের সামগ্রী ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেনা। তাই প্রতিনিয়ত তারা সুযোগ খোঁজে।

আতিফ আসলামকে ভীষণ শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। সেই সাথে ছেলেদের অনুরোধ করছি, মেয়েদেরকে মানুষ ভাবুন, আপনারই মত। কোন মেয়েকে আক্রান্ত হতে দেখলে আতিফের মত সাহায্য করুন। মেয়েরা প্রতিবাদী হোন। বদনামের ভয়ে অন্যায় হজম করবেননা।
মেয়েরা সাহসী না হলে দিনের পর দিন এমন অন্যায় চলতেই থাকবে। কিনতু একবার সাহস করে প্রতিঘাত করতে পারলেই অপরাধীরা হারতে বাধ্য। কারণ অন্যায় ও অন্যায়কারীর কোন নৈতিক ভিত্তি থাকেনা। মেয়েরা নিরাপদ হোক, এই কামনা সবসময়।

আর বাবা-মারা ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে ভাবতে শেখান ছেলে-মেয়ে কেউ কারো অধীনস্ত নয়, সমান। দুজনেই মানুষ - ছেলে বা মেয়ে নয়।


খুব খুব ভাল থাকবেন বন্ধুরা......

http://www.dw.com/bn/যেভাবে-নারীকে-বাঁচালেন-আতিফ-আসলাম/a-37173458?maca=ben-VAS-RSS-Somewherein-Headlines-12717-xml-mrss
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:৪৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×