somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙ্গালীর ব্যাংক ব্যবসা ও বাংলাদেশের আর্থিক খাত-১

২০ শে জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বলে রাখি এটা একটি সিরিয়াস পোস্ট। বাংলাদেশের আর্থিক খাত নিয়ে লিখেছিলাম অনেক আগে, একটা সাপ্তাহিক পত্রিকার জন্য। পরে আর দেইনি, পত্রিকাটি শেষ পর্যন্ত পছন্দ হয়নি বলে। তারপর থেকেই এটা পড়ে আছে। নির্বাচিত সামান্য কিছু অংশ অবশ্য দৈনিক পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। ভাবলাম ব্লগেই দিয়ে রাখি।

পিছন ফিরে দেখা
বিশ্বে ব্যাংক ব্যবসা প্রসার লাভ করেছিল যীশু খ্রীষ্টের জন্মের আগে গ্রীসে উপসানলয়ে। নিরপত্তার কারণেই উপসানলয়গুলো ছিল ব্যবসা বানিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রস্থল। পরবর্তীতে ইতালীর লোম্বার্ডি নামের এক জায়গায় ইহুদি মহাজনরা বাজারে বেঞ্চে বসে অর্থের লেনদেন শুরু করে। এই বেঞ্চ বা ’ব্যাংকো’ শব্দ হতেই ব্যাংক শব্দের উৎপত্তি। তবে সেই ব্যাংক ব্যবসা কিন্তু এখনকার মত ছিল না। তারা স্বর্ণ, রৌপ্য, অন্যান্য অলংকার, মূল্যবান জিনিষপত্র ও অর্থ নিরাপদে রক্ষণাবেক্ষণ করত। অনেক সময় তারা টাকা পয়সা ধারও দিত। আমাদের এখানেও ব্যাংকিং ব্যবসা এভাবেই সৃষ্টি হয়েছিল।
বাঙ্গালী বাংক-ব্যবসায়ীদের পূর্ব পুরুষ হচ্ছে সুবর্ণ বণিকরা। মূলত সোনার ব্যবসায়ীদেরই সুবর্ণ বণিক বলা হতো। ব্যাংক ব্যবসার ক্ষেত্রে তারা কেবল বেঞ্চ নিয়েই বসে থাকত না বরং তারা সাংগঠনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। সে সময় এই বণিকরাই ছিল সবচেয়ে ঐশ্বর্য ও প্রভাবশালী। তবে সমাজের উচ্চ বর্ণরা তাদের এই প্রভাব মেনে নিতে একেবারেই ইচ্ছুক ছিল না। এ কারণে দ্বন্দ্ব ছিলই। তা সত্বেও তাদের এই প্রভাব মধ্যযুগ পর্যন্ত বজায় ছিল। এর পরেই প্রভাব প্রতিপত্তি কমতে থাকে ব্যাংক ব্যবসায় অবাঙালীদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। কথিত আছে বাংলার শাসক বল্লাল সেন (১১৫৮-১১৭৯) যুদ্ধের অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সুবর্ণ বণিকদের কাছে টাকা ধার চেয়েও পাননি। ক্ষুব্ধ বল্লাল সেন সমাজ কাঠামোকে এই ব্যবসায়ীদের সমাজের নীচু পদ মর্যাদা দেন। তারা এ অবস্থা মেনে নিতে পারেনি। এ সময় থেকে তারা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা থেকেও বঞ্চিত হয়। নানা ভাবে সামাজিক প্রতিরোধের মধ্যেও পড়ে যায়। ফলে তারা ব্যবসা টিকিয়ে রাখার পরিবর্তে নিজেদের রা করতেই বেশী মনযোগ দেয়। এ পর্যায়ে তারা ব্যাংক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ হারায়। তারপরেও ব্যাংক ব্যবসায় সুবর্ণ বণিকদের নিয়ন্ত্রণ একেবারেই চলে যেতে দু’তিন শতাব্দী লেগে যায়।
হিরানন্দ সাহু মাড়োয়ার অঞ্চল থেকে পাটনায় এসেছিলেন ১৬৫২ সালে। তিনি সেখানে ব্যাংক ব্যবসা শুর করেন। তিনিই প্রথম ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কর্মচারীদের ঋণ দেয়া শুরু করেছিলেন। এভাবেই ইংরেজদের সাথেও তিনি পরিচিতি লাভ করেন। হিরানন্দের সাত ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মানিক চাঁদ ভাগ্যান্বেষণে ঢাকায় আসেন ও বাংক ব্যবসা শুরু করেন। মুর্শিদকুলি খাঁ তার প্রশাসনিক কেন্দ্র ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করলে মানিক চাঁদ মুর্শিদাবাদেও ব্যাংক ব্যবসার কুঠি স্থাপন করেন। এখানেও তার ব্যবসা জমে উঠে। তার ব্যবসা পাটনা, ঢাকা ও মুর্শিদাবাদ ছাড়াও হুগলী, বেনারস ও কলকাতায়ও প্রসার লাভ করে। এই পরিবার ছিল সেসময়ে ব্যাংক ব্যবসার অপ্রদ্বিন্দ্বী। ১৭১৪ সালে মানিক চাদেঁর মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকার হন ফতেহ চাঁদ। তিনি ১৭২২ সালে জগৎ শেঠ উপাধি লাভ করেন। এর আগেই অবশ্য তিনি ১৭১৭ সালে মুর্শিদাবাদের নওয়াবের টাকঁশালের ভার পান। সে সময় জগৎ শেঠ পরিবার ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী ও ঐশ্বর্যশালী, এমনকি ইউরোপের ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও। তাদের এই প্রভাব বজায় থাকে পলাশী যুদ্ধ পর্যন্ত। এর পর থেকেই তাদের অবস্থা নীচে নামতে শুরু করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে তাদের ব্যবসা মূলত হুন্ডি ও সুদ ব্যবসায় সীমিত হয়ে পড়ে।
জগৎ শেঠ ষড়যন্ত্র করে যে ইংরেজদের এনেছিলেন, তাদের কারনেই তার ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। মূলত ইউরোপীয় ব্যাংকাররা এ দেশে আসতে শুরু করলে তাদের হাতেই ব্যাংক ব্যবসা চলে যায়। ব্যাংক ব্যবসা মুর্শিদাবাদ থেকে চলে যায় কলকাতায়। এ সময় ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের কারণে সর্বত্র ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যাংকিং-এর ব্যাপক প্রসার লাভ করতে শুরু করে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে ব্যাংক অব সুইডেন (১৬৫৮-১৬৬৮), ব্যাংক অব ফ্রান্স (১৭১৪-২০) এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (১৮৯৪)। কলকাতায়ও প্রতিষ্ঠিত হতে তাকে অনেক মার্কেন্টাইল ও এজেন্সী হাউজ। এগুলোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে ইংরেজরা ছাড়াও ছিল ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কর্মচারীরা। তবে ১৮১৩ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী একচেটিয়া বানিজ্যের অধিকার হারানোর পর এই হাউজগুলো আর টিকে থাকতে পারেনি। দেখা গেছে ১৭৭০ থেকে ১৮৩০ সালের মধ্যে কলকাতাতেই ১১টি ব্যাংক এবং ১৮৪৬ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যে লন্ডনের ৯টি ব্যাংকের শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়।

ছবি: বাংলাদেশের প্রথম ৫ টাকার নোট।


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৪
২৮টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×