somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্রব্যমূল্য: এ ব্যর্থতা সম্পূর্ণই বাণিজ্যমন্ত্রীর

২৫ শে আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
‘দ্রব্যমূল্যের দুঃসহ চাপ প্রশমনের লক্ষ্যে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করা হবে। দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সময় মতো আমদানির সুবন্দোবস্ত, বাজার পর্যবেক্ষণসহ বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মজুতদারি ও মুনাফাখোরি সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে, চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে। ‘ভোক্তাদের স্বার্থে ভোগ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ গড়ে তোলা হবে। সর্বোপরি সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য কমানো হবে ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
এই কথাগুলো আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার থেকে নেয়া। এই ইশতেহার আমি হাতের কাছেই রাখি। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে অঙ্গীকার কতখানি রাখতে পারলো তার বিচার করা সম্ভব কেবল ইশতেহার বিশ্লেষন করেই।

২.
আন্তর্জাতিক বাজার এখন অনেকখানি সংযত। বিশেষ করে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের তুলনায় বাজার যথেষ্ট স্থিতিশীল বলা যায়। কিছু পণ্যের দাম বাড়লেও তা আগের মতো লাফ দেয়নি। শেষ ফসল বোরো ভাল হয়েছে। দেশের মধ্যে সরবরাহের কোনো সংকট নেই। সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়েও কোনো অভিযোগ নেই। তারপরেও বাজার স্থিতিশীল বলা যাবে না।
এটিকে আমি বলছি বাজার ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা। আর এর দায় পুরোটাই বাণিজ্যমন্ত্রীর। সরকার প্রধান হিসেবে এর দায় প্রধানমন্ত্রীকেও নিতে হবে। বাজার নিয়ে আসলে সরকারের কোনো পরিকল্পনাই ছিল না। বাণিজ্যমন্ত্রী অনেক কথাই বলেছেন, এখনও বলছেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো পরিকল্পনা দেখতে পাওয়া যায়নি।

৩.
বাণিজ্যমন্ত্রী একের পর এক বৈঠক করেছেন। অনেক ধরণের ব্যবসায়ীদের এসব বৈঠকে থাকতে হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী কেন মনে করলেন মুখের কথাতেই কাজ হবে তা ঠিক বুঝতে পারলাম না। জরুরী অবস্থার সময় ভয় দেখিয়ে যা করা যায়নি, এখন মিষ্টি মিষ্টি কথা বা নসিহত করে তা সম্ভব কী করে হবে?
বাণিজ্যমন্ত্রীর সমস্ত মনোযোগ ছিল খুচরা পর্যায়ের ব্যবসার উপর। কিন্তু পণ্য কোথা থেকে আসছে, কী দামে আসছে, কতটা আসছে, কয় হাত ঘুরে আসছে সেদিকে কোনো নজরই ছিল না। খাদ্যমন্ত্রীর বলার পর বাণিজ্যমন্ত্রীর মনে পড়েছে পরিবহন চাঁদাবাজির কথা। আগে কেন মনে পড়লো না?

৪.
৭ মাস ধরে শুনে আসছি টিসিবি যথেষ্ট পরিমাণ পণ্য আনবে এবং তাতে বাজার স্থিতিশীল থাকবে। বাণিজ্যমন্ত্রী কী একবারও টিসিবিকে ডেকে জানতে চেয়েছেন যে, তাদের এই ক্ষমতা আছে কীনা। বহু বছর ধরে টিসিবি কোনো পণ্যই আমদানি করে না। তারা যা করে তা হচ্ছে আউট সোর্সিং। সুতরাং টিসিবিবে নির্ভর থাকতে হয় অন্যের উপর।
টিসিবির অদক্ষতার একটা উদাহরণ দেই। ১০ হাজার টন চিনির জন্য তারা টেন্ডার দিল। টিসিবি এই তথ্যটাই জানে না যে, সাড়ে ১২ হাজার টনের নীচে চিনি জাহাজে উঠে না। পরে নতুন করে টেন্ডার দেওয়ার পর সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজের অর্ডার দেওয়া হল না। কারণ, একজন বড় ব্যবসায়ী কাজটি পাননি। দরপত্র খোলার দিনই নাকি তিনি বলেছিলেন কিভাবে এই চিনি আসে তা তিনি দেখে নেবেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিসিবি নিয়ে অনেক বাগাড়ম্বর করেছেন টিসিবির ক্ষমতা ও দক্ষতা সামান্যতম বৃদ্ধি না করেই। টিসিবির নিজস্ব তথ্য চাইলেও তারা চেয়ে থাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দিকে। পৃথিবীর সবচেয়ে ভীতু মানুষগুলো কাজ করে টিসিবিতে। টিসিবির কোনো যোগ্যতাই নাই যথেষ্ট পরিমাণ পণ্য আমদানি করে বাজারে হস্তক্ষপে করার। অথচ দিনের পর দিন এই আশার কথা শুনিয়ে ফারুক খান চরম পরিহাস করেছেন মানুষের সাথে। কাল শুনলাম তিনি বলছেন, টিসিবি বেশি পণ্য আনতে পারেনি। এর দায় টিসিবির না, বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের, মন্ত্রীর।

৫.
টিসিবি আবার ডিলার নিয়োগ দিয়েছে। প্রথম চিঠিতে বলা ছিল স্থানীয় সাংসদের সুপারিশ লাগবে। পরে এই ধারাটি তুলে দিলেও বাস্তবে দলের লোকজনই নিয়োগ পেয়েছে। দোকান নেই, তেল ও চিনি রাখার জায়গা নেই-কিন্তু তারা ডিলার। এর দায়ও নিতে হবে বাণিজ্যমন্ত্রীকে।

৬.
গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে কিন্তু আমাদের জানা আছে কি করতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের কাছে থাকতে হবে আন্তর্জাতিক মূল্য, উৎপাদন পরিস্থিতি, আমদানির পরিমাণ, সরবরাহ পরিস্থিতি ও চাহিদার পরিমাণ। আমি নিশ্চিত করে জানি এসব তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে নেই।
আমরা জানি চিনি, ভোজ্যতেল, গম, ডালসহ বেশ কিছু পণ্য নিয়ন্ত্রণ করে হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী। কারা সকলেই তা জানে। এই ব্যবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য কিছুই করেনি বাণিজ্যমন্ত্রণালয়।
কৃষকের হাত থেকে একজন ভোক্তার কাছে পণ্য আসতে ৮ থেকে ১০ হাত ঘোরে। আর এর মধ্যে দাম বাড়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। কৃষক ও ভোক্তার এই দূরত্ব কমাতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ নিয়েও কিছু করেনি।
বাজারে পণ্য তালিকা টানাতে হবে। যদি না টানায়, বা টাঙানো তালিকার চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করে? কোনো শাস্তি নেই। তাহলে বাজার তদারকি দল কি নিয়ে বাজারে নামবে?
তাহলে কী করে আশা করবো সরকার বাজার স্থিতিশীল করতে পারবে?

৭.
অর্থনীতিতে কবওয়েব থিউরি নামে একটি কথা আছে। মোদ্দা কথা হলো একবছর যদি ভাল উৎপাদন হয় এবং কৃষকরা ভাল দাম না পায় তাহলে পরের বছর উৎপাদন কম হবে।
বোরো মৌসুমে ভাল দাম পায়নি কৃষকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামি মৌসুমে ধান উৎপাদন কম হবে এবং তার কিছু লক্ষ্মনও দেখা যাচ্ছে। যেমন, এবার আমন-আউশের বীজ বিক্রি কম হয়েছে। সুতরাং ভবিষ্যত নিয়ে দুঃশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে।
ভারতে এবার খরা। উৎপাদন কম হয়েছে। ভারতকেই এবার আমদানি করতে হবে বলে দেশটির অর্থমন্ত্রী বলেছেন। চাল রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞায় গতবার চালের দাম উঠেছিল ১ হাজার ডলার। সুতরাং এখন থেকেই সাবধান হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।

৮.
সব কিছু মিলিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনার যথেষ্ট কারণ আছে। ব্যর্থতা ব্যবস্থাপনারই বেশি। এই ব্যর্থতা থেকে বের না হতে পারলে এর দায় আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৫:০৭
২০টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×