somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি ও জলছবি !!

০১ লা জুলাই, ২০১৪ ভোর ৬:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


( ছবি গুগল থেকে নেয়া )

ছোট্ট নৌকাটা খুব ধীরে সুস্থে এগিয়ে যাচ্ছে, দেখে মনে হবে নৌকার যাত্রীদের আজ কোনো তাড়া নেই ! চারদিকে খানিক আগেই ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিলো, আর এখন চাঁদের আলোর কি সুন্দর ছায়া পড়েছে নদীর মাঝে। নৌকার মাঝে বসে আসে দুজন, একজনের হাতে কাঠের একটি টুকরো। তাই দিয়ে ছোট্ট নৌকা বয়ে নিতে একটুও কষ্ট হচ্ছে না। তার চোখে অপেক্ষার ছবি আর মুখে এক চিলতে অদ্ভূত হাসি। মাঝ নদী কখন আসবে সেই ভাবনায়, বারবার এদিক সেদিক তাকিয়ে যেনো মাঝ নদী ঠিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নৌকার অন্য প্রান্তে বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে অন্যজন। পাগলাটে এই ছেলের পাল্লায় পড়ে, তার এই নৌকা ভ্রমন। পাগলাটে হলেও তার খামখেয়ালী স্বভাবটাই তার সবচেয়ে পছন্দের। না চাইলেও অদ্ভূত কিছু দেখার আশায় এই মাঝ রাত্রিতে নৌকার নিমন্ত্রণ উপেক্ষা করতে পারেনি। নদীর পাড় ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে, দূরের গাছের ছায়া নদীর কোলে কি ভীষণ আঁধার সৃষ্টি করেছে।

--আচ্ছা রাতের বেলা কি পাখি ডাকে ?

--ধূর, রাতে পাখি পেলে কোথায় ? তাচ্ছিলের সাথে জবাব দেয় ছেলেটা

--এই যে আমি একটু আগেই শুনলাম !!

--আমি যে কিছুই শুনিনি

--আচ্ছা তোমার মাঝ নদী আসতে কতদূর ?

--চাঁদটা দেখলে আজ !

--হুম, আচ্ছা রাত বাড়লে কি চাঁদ বিশাল হতে থাকে ?

--হতে পারে, আমি উঠোনে বসে একবার সারারাত্রি চাঁদ দেখেছিলাম। বিশ্বাস করো, চাঁদটা বিশাল হয়ে আমায় ছোঁয়ার জন্য তার রংটা বাড়িয়ে দিলো।

--চাঁদের আবার রং হয় নাকি ? কিছুটা হেসে বলে উঠে মেয়েটা

--দেখতে জানলে সবকিছুর মাঝেই তুমি রং খুঁজে পাবে।

এই পর্যায়ে এসে কথা থেমে যায় দুজনার। মেয়েটি কথা হাতড়ে বেড়ায় মনের মাঝে আর ছেলেটা নৌকাকে থামিয়ে পানিকে স্থির করার চেষ্টা চালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর নৌকা আর নদীর ঢেউ দুটোয় থেমে যায়। কথোপকথন আবার শুরু :

--আমরা কি মাঝ নদীতে এসে পড়লাম ?

--মাঝ নদী কিনা জানা নেই, তবে এতেই চলবে। তুমি, উঠে এসে নৌকার মাঝখানে বসো

কথা না বাড়িয়ে মেয়েটি এসে বসলো নৌকার মাঝখানে।

--এবার তোমার ডানে তাকাও, খুব আস্তে করে বলে উঠে ছেলেটা ।তার কথা শুনলে মনে হবে, জোরে বললে কেউ শুনে ফেলবে দূর থেকে।

বিশাল চাঁদটার চমত্কার প্রতিবিম্ব পড়েছে জলের মাঝে। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে মেয়েটি, নদী যেনো চাঁদের অপূর্ব এক জলছবি আঁকছে। মনে হচ্ছে, বিশাল চাঁদটা নদীর মাঝে ঘুমিয়ে আছে !! চাঁদের জলছবির ঠিক মাঝ থেকে এক মুঠো জল তুলে নেয় ছেলেটি, কিছুটা নিচুস্বরে বলে উঠে

--এই হচ্ছে চাঁদের জলরং .........এই বলে ছুড়ে দেয় মেয়েটির গায়ে । এরপর মেয়েটির সামনে এগিয়ে এসে, হাতের মাঝে লেগে থাকা জলরংটা ছড়িয়ে দেয় মেয়েটির ঠোঁটের মাঝে।

--তুমি কি ছবি আঁকতে পারো ?

প্রশ্ন শুনে চমকে উঠে মেয়েটি।

--'না' আবেগ মিশানো কন্ঠে বলে উঠে মেয়েটি

--তোমার মাঝে রং লেগে আছে, এসো দুজন মিলে জলরং দিয়ে ভালোবাসার কোনো অসাধারণ ছবি আঁকি।

***** ***** **** **** *** *** *** **** *** *** ****

এক নিমেষে গল্পটা শেষ করে, তার দিকে তাকিয়ে বললাম " কেমন হয়েছে ?" ............অনেকক্ষণ ভেবে সে বললো, " ভালোই, তবে চমত্কার কিছু ডিটেলস বাদ দিলে তুমি ! নদী, রাতের আঁধার, পূর্নিমা, নৌকা, আর ক্যারেক্টার গুলোর আরো ডিটেলস দিলে ভালো হতো ".... চুপচাপ শুনে গেলাম তার কথাগুলো, বললাম " আচ্ছা ধরে নাও, গল্পটা এখনো শেষ হয়নি, জলরং ঠোঁটে মেখে মেয়েটা কি ছবি আঁকবে সেটা তুমিই কল্পনা করে সাজিয়ে দাও" ..................... উত্তরে সে বললো, " আমি চিন্তা করে তোমায় জানাবো, আজ এসো অনেক রাত হয়েছে।"

বাড়ি ফেরার পথে মনে পড়লো, তাকে আজও বলা হলো না মনের সাজানো কথাগুলো। পানির গ্লাসের মাঝে ঘরের ইলেকট্রিক বাতির অদ্ভূত ছায়া দেখে গল্পটা সাজানো। সেদিন ইচ্ছে করেই উঠতে গিয়ে গ্লাসের পানিগুলো ফেলে দিলাম তার চেয়ারে, ভেবেছিলাম হয়তো জলকণাগুলো হাত দিয়েই স্পর্শ করবে। নাহ, কেনো যে টিসু নামক জিনিসটার জন্ম হলো !! বুকের মাঝে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাসটা বেরিয়ে আসলো সাথেসাথে। সেদিন অনেকদূর হেঁটে এসে প্রচন্ড তেষ্টা পাওয়ার পরও, গ্লাসের অর্ধেকটা পানি ছড়িয়ে দিয়েছিলাম তার চেয়ারে। অদ্ভূত কি ইচ্ছে আমার, " হাত দিয়ে জলকণা স্পর্শ করবে এরপর সেই হাত দিয়ে ঠোঁট ছোঁয়া"।....আমার ঠোঁট ছোঁয়া জলকণা তার ঠোঁট স্পর্শ করবে এই আশাতেই গল্পটা সাজানো। নাহ, আমার ভাগ্যটাই এমন, আমার স্পর্শের জলকণা রাজকন্যাকে ছোঁয়ার চেয়ে মাটিকেই বেশি ভালোবাসে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৫১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×