somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ "বর্ষাস্নানে তোমার আমন্ত্রন" (১ম পর্ব)

২০ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক

চা খেতে খেতে পরের কাজগুলো ঝটপট একবার ভেবে নিলো অর্ক। দোকানদার মামার হাতে বিলটা দিয়েই বেরিয়ে পরলো।
শরৎ এর আকাশ। টুকরো সাদা মেঘ। ঝিরিঝিরি হাওয়া। অর্ক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে। প্রথমেই শুভ্র ভাইয়ের সাথে দেখা করতে হবে। উঠতি নেতা। সবথেকে বড় কথা ভাই এর বুদ্ধি হ্মুরধার। তাই এই বিপদ থেকে একমাত্র শুভ্র ভাই অর্ককে বাঁচাতে পারে।

- এই রিক্সা। গুলিস্তানের মোড় যাবা?
হঠাৎ একটা পুলিশ ভ্যান ওর সামনে এসে থামল।
- না ও যাবো না। তয় তুমি যাবা। গুলিস্তান না মতিঝিল থানায়। বেটা পুলিশের সাথে মশকরা।
হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই অর্ক ঘাড়ের উপর পেশীবহুল একটা হাত অনুভব করল। আর তীব্র বেদনায় চোখের সামনে দৃশ্যমান সবকিছুতেই যেন কুয়াশা ভর করলো।

দুই

ইশতিয়াক আহমেদ। বাংলাদেশের হাতে গোনা বড়লোকদের একজন। দুর্দান্ত ক্ষমতা আর পিতৃপ্রদত্ত অঢেল সম্পদের বেঁদীতে দাঁড়িয়ে সামাজিকতার তোয়াক্কা করেন না
তিনি। তার অর্থের পরিমাণ তারই অজানা। হিসেবের সময় কোথায়। কিন্তু আজ তিনি বিক্ষিপ্ত। কপালে চিন্তার ভাঁজ। বারবার বাম হাতের তালুর দিকে তাকাচ্ছেন আর হাসপাতালের করিডোরে পায়চারি করছেন। কপাল চুইয়ে পড়া ঘামে সিক্ত হচ্ছে হসপিটালের ঝকঝকে মেঝে। এসির ঠান্ডা বাতাস হার মানছে তার উদ্বিগ্নতার কাছে। ডাক্তার ওটি থেকে বের হতেই তিনি ছুটে যান। কিন্তু একি। সবকিছু দুলছে কেন। পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নেন ইশতিয়াক সাহেব। আজ যে তাকে শক্ত হয়ে থাকতেই হবে।

তিন

মাথাটা ঝিমঝিম করছে। ভোঁতা একটা যন্ত্রণা। কোথায় আছে অর্ক? চারপাশে তাকাতেই কিছুটা ভরকে যায় ও। কিছুটা দূরেই মাঝবয়সী এক লোক বসে আছে। নখ দিয়ে মেঝের ময়লা খুঁটছে। আর গুনগুনিয়ে গান গাইছে "সুজন বুঝি আইলো না" এই টাইপের কিছু একটা। দুজন একনিষ্ঠ শ্রোতা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সেই গান শুনছে।

- এই তোরে স্যার ডাকছে। আয়।
অজানা আতংকে ভেতরটা কেঁপে ওঠে অর্কের। সম্মোধন তুমি থেকে তুই তে নেমে যাওয়াই এর প্রধান কারন মনে হয়।

সেল থেকে বের করে ওকে একটা রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। একটা তেপায়া ভগ্নপ্রায় টেবিল। টেবিলটার দাঁড়িয়ে থাকাই অর্কের কাছে এক বিশাল বিস্ময়। তিনটে চেয়ার। একটা ফাইলে ভরা সেলফ। গোটা তিনেক আলমারি।  আর যেটার অভাব নেই তা হলো একটা উটকো গন্ধ। অর্ক বসে আছে। মাথার উপর ভনভন করে ফ্যান ঘুরছে। সাথে ওর মাথা।

- এইটা নাকি! এতো পিচ্ছি! দুধ খায়।
- হ স্যার। এইডায়। বদের হাড্ডি। হাজতে বইসা আবার গান গায় "সুজন আমার আইলো না" মুন চায় খাঁচার উপরে একটা লাথ্থি মারি।

পুলিশের কথা শুনে অর্কের আত্মারামের খাঁচাছাড়া জোগাড়। ও তো গান গায় নি। গান গেয়েছে অন্য এক লোক। তাহলে ওর কথা কেন বললো? হাত পা কাঁপছে। নিজেকে বোঝায় অর্ক। মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। মনে করার চেষ্টা করে যে ও কোন অপরাধ করেছে কিনা? না তো। তেমন কিছুই করে নি। শুধু নিলাদ্রীর সাথে ঝগড়ার কথাটা ওর মনে পড়ে। মেয়েটার জন্য বুকের মধ্যে সে চেনা ব্যাথাটা আবার অনুভব করতে থাকে।

চার

- কেমন আছে ও ডক্টর?
- কন্ডিশন খুব একটা ভালো না। বাট উই হোপ শী উইল বি অলরাইট।
- আমি কি একবার দেখা করতে পারি? প্লিজ ডক্টর।
- সরি। সম্ভব না। ওকে আগামী ৭২ ঘন্টা অবজারবেশনে রাখা হবে। ভিজিটরস নট এলাউড।
চারপাশটা ভীষন রকমের অন্ধকার হয়ে ওঠে ইশতিয়াক আহমেদের। একমাত্র মেয়ে। বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন। অর্থের পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে তার এই অসহায়ত্ব পরিহাসের সুরে কানে বাজে সমাজপতি ইশতিয়াকের। মেয়েটা যে কেন এমন করল। সুস্থ স্বাভাবিকই তো ছিল। সাডেনলি কি এমন হলো যে বাঁচার ইচ্ছেটাই ছেড়ে দিল। অবসন্ন মনে ধপ করে করিডোরের মেঝেতে বসে পড়েন। মনে পড়ে লাবন্যের কথা। নীলাদ্রীর মা। ইশতিয়াক আহমেদের স্ত্রী। আর সেই সাথেই মনে পড়ে যায় সেই পাপবোধটা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৫২
১৮টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×