somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ "বর্ষাস্নানে তোমার আমন্ত্রন" (২য় পর্ব)

২১ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গল্পঃ "বর্ষাস্নানে তোমার আমন্ত্রন" (১ম পর্ব)

পাঁচ

নীলাদ্রীর কথা ভাবতে ভাবতে একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায় অর্ক। মনে পড়ে সেই প্রথম দিনের কথা। বৃষ্টি হচ্ছিল। ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে খশরু মামার দোকানে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে ঠোঁট ডুবিয়ে সিগারেটের উষনতা খুঁজতে থাকা অর্কের চোখ আটকে যায় নীলাদ্রীর চোখে। কালো রং এর লেক্সাসের খোলা জানালা দিয়ে অদ্ভুত চোখে অর্কের চোখে তাকিয়ে থাকা নীলাদ্রীকে স্বর্গের অপ্সরীর মতো মনে হয় অর্কের। বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু জলকণায় সিক্ত হয়ে ওঠা ঐ মায়াবী চোখ যেন কিছু বলতে চায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই, অনুভূতি দানা বাঁধার আগেই হুস করে দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে যায় গাড়িটা। ওই চাহুনি অর্কের কাছে রয়ে যায় স্মৃতি হয়ে। টুকরো ভালো লাগা মুহূর্ত আর ছাই হয়ে যাওয়া সিগারেট সাথে বরফ ঠান্ডা চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়ে ছিল অর্ক।

- ওই শালা। কি ভাবিস? হুম।
কনস্টেবলের কথায় বাস্তবে ফেরে অর্ক। ফিরতি প্রশ্ন করে
-- আচ্ছা আমায় ধরে এনেছেন কেন? কি করেছি আমি?
- শালা হারামির বাচ্চা সিনেমার ডায়ালগ মারাও। পুলিশের গুতা খাইছো? এমন জায়গা মারবো যে বইতেও পারবি না হাগতেও পারবি না। ভালো মানুষি ছাড়ো। এখন স্যার যা জিগায় তার উত্তর দে।
কনস্টেবলের কথায় বেশ ভরকে যায় অর্ক। একটু বাম দিকে বসে থাকা প্রায় জলহস্তীর কাছাকাছি সাইজের মানুষটাই যে স্যার সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না ওর। অর্ক ফিরে তাকাতেই লোকটা নড়েচড়ে ওঠে। যদিও নড়তে যে তার বেশ কষ্ট করতে হচ্ছে সেটা তার মুখভঙ্গিতে স্পষ্ট। চেয়ারের ক্যাচ ক্যাচ আওয়াজও সেই কষ্টকে সমর্থন জানায়।

- ইশতিয়াক আহমেদ কে চিনিস?
অর্ক মনে করার চেষ্টা করে। কিন্তু না। এই নামের কাউকেই সে মনে করতে পারছে না।

ছয়

ইশতিয়াক সাহেব একদৃষ্টিতে চেয়ে আছেন নীলাদ্রীর দিকে। মা মরা মেয়েটাকে চিনতেই পারছেন না তিনি। তার এই অদ্ভুত সুন্দর মেয়েটার ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া মুখটায় হাত রাখেন তিনি। হঠাৎ যেন শিউরে উঠলেন। নীলাদ্রীকে ঠিক ওর মায়ের মতোই লাগছে। সেদিনের ছবিগুলো ভেসে ওঠে ইশতিয়াক আহমেদের চোখের তারায়। সেই আর্তনাদ। সেই বেঁচে থাকার আকুতি। বেদনার্ত দুটি চোখের করুন আর্তি। ইশতিয়াক সাহেব কিছুতেই ভুলতে পারেন না সেদিনের সেই বর্ষার সেই রোদন ভরা সন্ধ্যা। যেদিন বিবেককে পরাজয়ে মাথানত করতে হয়েছিল জিঘাংসার কাছে লালসার কাছে। মনের আকাশে মেঘ জমতে শুরু করে সমাজপতি ইশতিয়াকের। চিন্তায় ঘন হয়ে আসে কপালের ভাঁজ। ডক্টরের ডাকে জাগতিক জগতে ফেরেন পুলিশের সর্বোচ্চ পদে আসীন নীলাদ্রীর বাবা ইশতিয়াক আহমেদ।
- মিঃ আহমেদ।
- ইয়েস ডক্টর।
- নীলাদ্রীর কন্ডিশন বেটার দ্যান বিভোর। ও বেশ দ্রুত ইম্প্রুভ করছে। দিস ইজ অ্যা গুড সাইন।
- আচ্ছা ওর এই সাডেন ব্রেক ডাউনের কারন কি মিঃ আতিক।
- শী গট অ্যা শক। দ্যাট লিডস হার ইন দিস সিচুয়েশন। সামথিং হ্যাপেন্ড টেরিবল উইথ হার। ইউ নিড টু বি ভেরি কেয়ারফুল। এনিথিং লাইক দিস শুড নট হ্যাপেন এগেইন।
ইশতিয়াক আহমেদের চিন্তার পারদটা আবার আকাশ চুম্বী হয়ে ওঠে। কি এমন হতে পারে যা নীলাদ্রীকে মৃত্যুর মুখে নিয়ে আসলো। অর্ক নামের সেই ছেলেটা। নাকি তার সেই। না না আজ এতোদিন পর নীলু কিভাবে সে কথা জানবে। এটা অসম্ভব। তাহলে কি অর্ক। হ্যাঁ অর্কই। চোখ দুটো ধপ করে জ্বলে ওঠে ইশতিয়াক সাহেবের।


সাত

কি চাদু মনে পড়ে না তাই না। দাঁড়াও তলায় সিরিজ কাগজ দিয়ে দুইডা ডলা দিলে সব মনে পরবে। মনে করান কোন ব্যাপারই না।

অর্ক হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। ঘোর লাগা দৃষ্টিতে সামনে ঘটে যাওয়া সব কিছু দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়। যেন এখুনি জেগে উঠবে। হঠাৎ নীলাদ্রীর নাম শুনে পেছনে ফিরে তাকায় অর্ক।

- কি রে এবার চমকাইলি কেন? হুম কাহিনী কি?
- মানে আসলে নীলাদ্রী নামে আমার এক পরিচিতা মানে ফ্রেন্ড আছে।
- মানে মানে কম কর। স্যার বইসা আছে। তো সিনেমা দেহনের লাইগা না। তাড়াতাড়ি ঝাইড়া কাশ। এই বললে কন্সটেবল বশির অর্কের পেটে লাঠি দিয়ে নির্দয়ভাবে এক রামগুতা দেয়।
দুদিনের অভুক্ত অর্ক ব্যাথায় কুকড়ে ওঠে। পুলিশ নামক এই জীবদের অমানুষিক নির্যাতন আর জঘন্য ব্যবহারে এক ক্ষোভের সৃষ্ট হয় অর্কের মধ্যে। কিন্তু তা নিজের মাঝেই চেপে রেখে নীলাদ্রীর কথা জিজ্ঞেস করে। এতোক্ষণ পর 'স্যার' সম্মোধনের সেই অতিমানবীয় শরীরের অধিকারী কথা বললো।
- ছেলে তোমার জন্য ভালো হবে যদি তুমি তোমার আর নীলাদ্রীর সম্পর্কে আমাদের বলো।
- কেন? কি হয়েছে? নীলুর কি কিছু হয়েছে? প্লীজ আমাকে বলুন। আমি কথা দিচ্ছি সব কিছু বলবো আমি সব কিছু।
- নীলাদ্রী আমাদের ডি আই জি মিঃ ইশতিয়াক আহমেদের একমাত্র মেয়ে। আর স্যারের কথাতেই তোমায় ধরে আনা হয়েছে।
- কেন?
বেশ বিস্মিত ভাবেই উত্তর দেয় অর্ক।
- নীলাদ্রী হসপিটালে। কনডিশন বেশ সিরিয়াস।
- আকাশ ভেঙে পড়ে অর্কের সামনে। ঝাপসা হয়ে ওঠে চোখের সামনের যাবতীয় সব দৃশ্য। মুহূর্তের মধ্যে বেঁচে থাকাটা অর্থহীন হয়ে ওঠে। হতবিহ্বলের মতো তাকিয়ে থাকে পলেস্তার খোসে পড়া সিলিং এর দিকে।

চলবে....
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:২৭
২৪টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×