somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাত্তরে সংগঠিত যুদ্ধাপরাধঃ হামূদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট

০৯ ই মে, ২০১০ বিকাল ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি পাকিস্তানের প্রধাণ বিচারপতি হামূদুর রহমানকে প্রধান করে “The War Inquiry Commission” গঠন করেন। এই কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তান কেন যুদ্ধে পরাজিত হল ও পূর্ব পাকিস্তানকে হারালো, তার কারণ অনুসন্ধানের জন্য।

কমিশন তিনশ প্রত্যক্ষদর্শীর স্বাক্ষ্য ও যুদ্ধের সময় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে সেনাবাহিনী কর্তৃক আদান-প্রদানকৃত গোপনীয় তথ্যগুলো পরিক্ষা করে দেখেন। কমিশন সর্ব বিস্তৃত স্বেচ্ছাচারীতা, জেনেরেলদের ক্ষমতার অপ-ব্যবহার, বেসামরিক নেতৃত্বের সম্পূর্ণ ব্যর্থতা ও সামরিক শাসকদের নেতৃত্বকেই পাকিস্তান ভাঙার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। এই রিপোর্টে যুদ্ধাপরাধের যে চিত্র উঠে এসেছে, তা দেখে শিউরে উঠতে হয়। স্বভাবতই তিনি অনেক তথ্য চেপে গিয়েছেন; তারপরও একজন পাকিস্তানী নাগরিকের চোখে যে তথ্যগুলো উঠে এসেছে, বাস্তব অবস্থা আরো কত ভয়ঙ্কর ছিলো তা সহজেই অনুমেয়।

কমিশন যে তথ্যগুলো উপস্থাপন করেছেন তার সারমর্ম এমনঃ
১. বেসামরিক নাগরিক ও বাঙালি সৈন্যসহ হাজার হাজার বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়।
২. সারা পূর্ব পাকিস্তান জুড়েই চলে ধর্ষন, লুট, ব্যাংক ডাকাতির মহা-উৎসব।
৩. পাকিস্তানি সৈন্য ও জেনারেলদের মাতলামী; এমনও দেখা গেছে ভারতীয় বোমারু বিমান বোমা বর্ষণ করছে, অথচ পাকিস্তানি অফিসাররা বন্দী নারীদের সাথে পাশবিকতার লালসায় ও অত্যাচারের উদ্দেশ্যে সেনা ক্যাম্পের টর্চার সেলে প্রবেশ করছে।
এই কমিশন পাকিস্তানি আর্মি ও তাদের সহায়ক বাহিনীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিদানের জন্য কোর্ট-মার্শাল করার সুপারিশ করে ছিল।কিন্তু সেনা নিয়ন্ত্রিত পাকিস্তানি সরকারগুলো এই রিপোর্টকে শুধু অবজ্ঞায় করে নি, বরং বিভিন্নভাবে এটাকে গোপন রাখার চেষ্টা করেছে।


কমিশনের প্রধাণ বিচারপতি হামূদুর রহমান তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলী ভুট্টর কাছে চূড়ান্ত রিপোর্টটি হস্তান্তর করেন।

কমিশন পাকিস্তানের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামরিক ও নৈতিক পরাজয়ের স্বরূপ উদঘাটন চূড়ান্ত রিপোর্টটি ১৯৭৪ সালের ২৩ অক্টোবর পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলী ভুট্টর কাছে হস্তান্তর করেন। পাকিস্তান যুদ্ধাপরাধের নির্মম এই স্বাক্ষ্যকে দশকের পর দশক গোপনীয় দলিল (classified) হিসেবে চিহ্নিত করে রাখে।পাকিস্তান সরকার জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে রক্ষিত অনুলিপিটি ছাড়া হামূদুর রহমান কমশনের চূড়ান্ত রিপোর্টের সকল অনুলিপি ধংষ করে ফেলে। কিন্তু ১৯৯৯ সালে ভারতীয় সংবাদপত্রে এই রিপোর্ট হুবুহু প্রকাশ হয়ে পড়লে, বিশ্ববাসী প্রথম জানতে পারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামছদের নিষ্ঠুরতাকে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরেও দানা বেধে উঠতে থাকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সোচ্চার দাবী ও বাংলাদেশের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহবান।

কমিশনের রিপোর্টির কিছু অংশ এখানে উদ্ধৃত করছিঃ
“The excesses committed by the Pakistani Army fall into the following categories:- a) Excessive use of force and fire power in Dacca during the night of the 25th and 26th of March 1971 when the military operation was launched. b) Senseless and wanton arson and killings in the countryside during the course of the “sweeping operations” following the military action. c) Killing of intellectuals and professionals like doctors, engineers, etc and burying them in mass graves not only during early phases of the military action but also during the critical days of the war in December 1971. d) Killing of Bengali Officers and men of the units of the East Bengal Regiment, East Pakistan Rifles and the East Pakistan Police Force in the process of disarming them, or on pretence of quelling their rebellion. e) Killing of East Pakistani civilian officers, businessmen and industrialists, or their mysterious disappearance from their homes by or at the instance of Army Officers performing Martial Law duties. f) Raping of a large number of East Pakistani women by the officers and men of the Pakistan army as a deliberate act of revenge, retaliation and torture. g) Deliberate killing of members of the Hindu minority.”

যার সরল বাংলা অর্থ এমন দাঁড়ায়ঃ
পাকিস্তান আর্মির যুদ্ধাপরাধকে নিম্মোক্তভাবে শ্রেণীকরণ করা যায়ঃ
ক) ২৫ ও ২৬ মার্চ রাত্রে ঢাকায় যখন সেনা অভিযান চলছিল, পাকিস্তান সৈন্য বাহিনী অতিরিক্ত শক্তি অ গোলা বারুদ ব্যবহার করে।
খ) সেনা-বাহিনী কর্তৃক সারাদেশে “sweeping operations” এর নামে অবিবেচনাপ্রসুত ও নিষ্ঠুর গন-হত্যা চলে।
গ) যুদ্ধের শুরুর দিকে ও ডিসেম্বরর ক্রান্তিকালীণ সময়গুলোতে দিকে বুদ্ধিজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ পেশাজীবীদের নির্বিচারে হত্যা করে গণ-কবর দেওয়া হয়।
ঘ) বাঙালি অফিসার বিশেষ করে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ও ইস্ট পাকিস্তান পুলিশের বাঙলি সৈন্যদের নিরস্ত্র করার নামে ও বিদ্রোহের মিথ্যা ও কপট অভিযোগে নির্বিচারে হত্যা করা হয়।
ঙ) পাকিস্তানি অফিসাররা মার্শাল ল ডিউটি পালন করার সময় নির্বিচারে বেসামরিক বাঙালি অফিসার, ব্যবসাহী, শিল্পপতিদের হত্যা করে, ঘর-বাড়িগুলোতে লুট, অগ্নি-সংযোগ করে।
চ) প্রতিশোধ, আক্রোশ ও নির্যাতনের উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানের বিরাট অংশের নারী গোষ্ঠীকে পাকিস্তানি অফিসার ও তাদের দোসরেরা ধর্ষণ করে।
ছ) সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়।

পুরো রিপোর্টির লিংক দেওয়া হলঃ
১।Introduction
২।Cabinet note
৩।Press release
৪।Chapter 1
৫।Chapter 2
৬।Chapter 3
৭।Chapter 4
৮।Chapter 5
৯।Annexure
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১০ বিকাল ৪:২৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×