আমার খেলার মাঠটি ফিরিয়ে দাও
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ - এ কথা বলতে বলতে অনেক সুশীল ব্যক্তি নাকে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। কিন্তু বাস্তবে জাতির ভবিষ্যতের অবস্থা কোথায় যাচ্ছে তার কি কোন খোঁজ রাখেন কেউ ?
শৈশব - এই শব্দটি নিয়ে একটু ভাবুন তো ? কেমন ছবি ভেসে ওঠে মানসপটে ? একটা খোলা মাঠ, বাগান, সুন্দর প্রকৃতির মাঝে দুরন্ত শৈশবের খেলাধূলা। এই দৃশ্য কেবল এখন টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনে দেখি আমরা শহুরে লোকজন।
বাস্তবে শহরে শিশুদের জন্য কোন খেলার মাঠ নেই। কোন খোলা জায়গা নেই। আগে স্কুলে শিশুরা একটা খেলার মাঠ পেত। এখন কিন্ডার গার্টেন ও ইন্টারন্যাশনাল স্কুল নামের ফ্লাট বাড়ির খাচা পেয়েছে।
সে রাতে ঘুমায় ফ্লাট বাড়ির খাচায়, সকালে উঠে শিক্ষার জন্য ঢোকে আরেক খাচায়। আবার বিকেলে ফিরে এসে পুরোনো খাচায়। এভাবে দিনের পর দিন অনেক শিশু জীবন কেটে যাচ্ছে।
আমরা নগর জীবনের নামে তাদের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছি দুরন্ত শৈশব। তাদের খেলাধূলার মাঠ। কেননা নগরে একখণ্ড জমি মানে অনেক ফ্লাটের সম্ভাবনা, অনেক টাকার সম্ভাবনা। কে আর খালি জমি ফেলে রাখে বোকার মতো ? সুতরাং এক ইঞ্চি জায়গা ফাকা রাখা যাবে না। এই মানসিকতার মধ্যে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শৈশব হারিয়ে গেছে।
সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা রাস্তা বানায়, নর্দমা বানায়, কমিউনিটি সেন্টার বানায়। কিন্তু খেলার মাঠ বানাতে তাদের আপত্তি। বরং খুঁজে খুঁজে খোলা জায়গাগুলো ভবন করে ফেলছে সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা।
একটি আদর্শ শহর কেমন হওয়া উচিত জানতে চাইলাম একজন প্রকৌশলীর কাছে। তিনি জানালেন, একটি আদর্শ শহরের ২৫% জায়গা ব্যবহার করা হবে রাস্তাঘাট ও পয়ঃনিষ্কাশনের কাজে। বাকি ২৫% জায়গা থাকবে খালি। পার্ক , খেলার মাঠ বা উদ্যান হবে এ জায়গায়। আর ৫০% জায়গায় হবে মানুষের বাসস্থান।
আজ একটি খেলার মাঠের অভাবে শিশুরা বিনোদন খুঁজে নিতে বাধ্য হচ্ছে অপসাংস্কৃতিক ভিডিও গেম, স্যাটেলাইট টিভি বা অনর্থক আড্ডায়। ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিনোদন হচ্ছে না পরিপূর্ণ। একজন সুস্থ আমুদে মানুষ হিসেবে সে বড় হচ্ছে না। সে ভুগছে নানা রকম শারীরিক ও মানসিক জটিলতায়। এসব জটিলতা থেকে সে হয়ে উঠছে অসামাজিক একাকী মানুষ। এসব একাকী মানুষরাই পরবর্তী জীবনে নানা অপকর্ম যেমন ড্রাগ এডিকশন ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়ছে।
সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার কর্তাব্যক্তিদের নানা কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে তাদের সন্তান নেই। তাদের সন্তানের পরিপূর্ণ বিকাশ দরকার নেই। তাদের দরকার কেবল মুনাফা - সেটা বৈধ বা অবৈধ যাই হোক। জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের ভাবার সময় কোথায় ?
(উপরের ছবিটি আমার বন্ধু এটিএম জামালের তোলা। তার এ ছবিটি এ লেখার অনুপ্রেরণা। )
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?
অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।

১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন
১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন
=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?
যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!
যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।