জাতি হিসেবে আমাদের অনেক অর্জন আছে। কিন্তু একটি জায়গায় আমরা চরমভাবে মার খাওয়া। সেটি হল চলচ্চিত্র। একবিংশ শতাব্দীতে এসে এই শিল্প মাধ্যম এখন ভীষণ শক্তিশালী। নতুন নতুন প্রযুক্তি উজ্জ্বলতর করেছে এই শিল্পমাধ্যমের ভবিষ্যৎ। ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে সিনেমা নির্মাণের ব্যয় কমে এসেছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য চলচ্চিত্র অঙ্গন সেই বৃটিশ আমল থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে। অথচ চলচ্চিত্র থাকার কথা ছিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে। চলচ্চিত্র কর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও এখনও এই অবস্থা বদলায়নি। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর বা ডিএফপি একই সাথে সিনেমা ও পত্রিকার বিষয়ে দেখাশোনা করে। অথচ দুটি সম্পূর্ণ পৃথক বিষয়। সিনেমা কেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এটার কোন জবাব নাই। মূলত বৃটিশ আইনের বলে এই ব্যবস্থা বিদ্যমান। একটি স্বাধীন দেশে যদি পরাধীন দেশের আইনকানুনই বিদ্যমান থাকে, তবে আর স্বাধীন হয়ে লাভ কী ?
যাই হোক, আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের অদূরদর্শিতার কারণে আজও একটি জাতীয় ফিল্ম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হল না। যার ফলে এখনও সিনেমার পরিচালক হতে হলে কাউকে ওস্তাদ মেনে কাজ শিখতে হয়। মধ্যযুগীয় এই ব্যবস্থার ফলে আমাদের চলচ্চিত্রে মেধাবী মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা। নকল গল্প ও নিম্নমানের কাহিনী নিয়ে বানানো চলচ্চিত্র থেকে বহু আগেই শিক্ষিত দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ফলে অশ্লীল চলচ্চিত্র বানানোর ধুম পড়েছিল এক সময়। কিন্তু সেই অশ্লীল চলচ্চিত্র বানিয়েও শেষ রক্ষা হয় নি। সারা দেশে একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে সিনেমা হল।
অন্য দিকে দেশে অনেকগুলো স্যাটেলাইট টিভির পৃষ্ঠপোষকতায় অসাধারণ কিছু ভালো সিনেমা নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। পাওয়া গেছে কিছু মেধাবী চলচ্চিত্র পরিচালক। এই সব মেধাবী পরিচালক বলা যায় স্বশিক্ষিত। তাদের ব্যক্তিগত চেষ্টা ও অধ্যবসায়ের ফলে তারা আজ পরিচালক।
কিন্তু আজকের প্রজন্ম সিনেমা বানানোর প্রযুক্তি ও কৌশল আয়ত্ব করতে হলে কোথায় যাবে ? ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু ফিল্ম ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হয়েছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ের এই সব ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের যা কিছু প্রযুক্তিগত সুবিধা দেয়া দরকার তা দিতে পারছে না কেবল আর্থিক কারণে। অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রযুক্তি ব্যবহার ও হাতে কলমে শিখাতে গেলে কোর্সের ফি বেড়ে যাবে। এত বেশি কোর্স ফি দিয়ে কেউ কোর্স করতে আসবে না।
একমাত্র সরকারী উদ্যোগই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। সিনেমা নির্মাণে অনেক রকম প্রশিক্ষিত লোকের দরকার হয়। দরকার দক্ষ অভিনেতা, পরিচালক, সম্পাদকসহ অন্যান্য কলাকুশলী। এসব কলাকুশলী তৈরি জন্য সরকারী ফিল্ম ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা দরকার।
তা ছাড়া দেশে টিভি চ্যানেলের সংখ্যাও বাড়ছে। এই সব চ্যানেলে প্রশিক্ষিত লোক দরকার। সেই তুলনায় দক্ষ লোকের ভীষণ অভাব।
যথার্থ প্রশিক্ষিত লোকের অভাবে অনেক সম্ভাবনাময় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের যথার্থ বিকাশ ঘটছে না। একটি সরকারী ইনস্টিটিউটই এই অবস্থার অবসান ঘটাতে পারে। একটি স্বাধীন জাতির জন্য মাত্র একটি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা দরকার নয় কি ? ৩৮ বছর তো কাটল, আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে ?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩৬