somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমকামিতার নামে বলাৎকার : স্বাভাবিকত্ব নাকি বিকৃতি ?

০৯ ই জুলাই, ২০০৯ দুপুর ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার এক আত্মীয় এক স্কুলের শিক্ষক। তার মুখে শোনা এই ঘটনাটি।
তার স্কুলটি মোটামুটি নামজাদা। স্কুলে হোস্টেলের ব্যবস্থা আছে। এক হুজুর শিক্ষকের থাকার জায়গা নাই বিধায় তাকে হোস্টেলে থাকতে দেয়া হয়েছিল। তিনি ছাত্রদের পড়াতেন এবং রাতে একটি ঘরে ঘুমাতেন।
কয়েক দিন আগে ক্লাশ সেভেনের এক ছাত্রকে বলাৎকার করলেন তিনি। ঘটনাটা চেপে যেত যদি না ছাত্রটির প্রচুর রক্তপাত হত। ছাত্রটিকে ক্লিনিকে ভর্তি করা হল এবং হুজুর শিক্ষকটি পালিয়ে গেলেন স্কুল ছেড়ে। তারপর বেরিয়ে এল ভয়াবহ তথ্য। তিনি হোস্টেলে থাকার সময় অনেক ছাত্রের সাথেই এই কাজ করেছেন। কিন্তু ছাত্ররা ভয়ে ও লজ্জায় ব্যাপারটি চেপে গেছে।
ছাত্রটি বলাৎকারের শিকার হলেও এ ব্যাপারে কোন মামলা করতে রাজি হল না স্কুল কর্তৃপক্ষ বা ছাত্রটির অভিভাবক। ফলে আপাতত ঘটনাটি চাপা পড়ল।

সমকামিতার নামে বলাৎকার : স্বাভাবিকত্ব নাকি বিকৃতি ?
হোস্টেলগুলোতে এই সমস্যা ব্যাপকভাবে দেখা যায়। আবাসিক মাদ্রাসাগুলোও এ ঘটনা থেকে মুক্ত নয়। আমি নিজে মাদ্রাসার ছাত্র ছিলাম বিধায় আমার এ ধরনের ঘটনা শোনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে সব ছাত্র এড়িয়ে চললেও কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করত না।
আর আমার বাড়ির পাশের এক হাইস্কুলের স্যার তো এ জন্য ছিলেন বিখ্যাত। তার নামের আগে আলু শব্দটি ব্যবহার করা হত। তার এই বদঅভ্যাস সম্পর্কে সব ছাত্রই জানত। কিন্তু কেউ এটা নিয়ে অভিযোগ করত না। বরং ওই শিক্ষককে দেখলে ছাত্ররা রসিকতা করত।
ধর্ষণের বিচার চাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও কিশোরদের বলাৎকার করার কোন শাস্তি আছে কি না আমি জানি না। কিন্তু যে কিশোরটি এই ঘটনার শিকার হয়, তার মনের মধ্যে যৌনতা সম্পর্কে একটা ভীতি ঢুকে যায়। অনেকে পরবর্তী জীবনে আর স্বাভাবিক যৌন আচরণ করতে পারে না। অনেকের বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত ঘটে।

সমকামিতা : কেন বিকৃতি ?
সমকামিতা মানুষের মধ্যে আছে কিন্ত সেটা ব্যাপক মাত্রায় নাই। কিছু কিছু মানুষ সমকামী। কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায় তখনই যখন এই সমকামীটি ধর্ষকামীও হয়ে ওঠে। তারা বলাৎকাল করার জন্য কিশোর বয়সীদের বেছে নেয়। যাদের শিকার হিসেবে বেছে নেয় তারা কিন্তু সমকাম সম্পর্কে তো নয়ই, এমনকি তাদের তখন হয় তো যৌনতা সম্পর্কে কোন ধারণাই গড়ে ওঠেনি। ফলে পরিষ্কারভাবেই বলা যায়, তার যৌন সঙ্গীটির কোন সম্মতি নাই এবং এটা ধর্ষণের মতোই একটা অপরাধ।
অন্য দিকে কে সমকামী সেটা তার গায়ে লেখা থাকে না। ফলে সমকামী ব্যক্তিটি যে কোন ব্যক্তিকেই টার্গেট করে তার আচরণ প্রয়োগ করতে পারে। এই ধরনের আচরণ মানুষকে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ করে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে তৈরি হয় নানা জটিলতা। যত দিন পর্যন্ত সমকামী ব্যক্তিটি আরেক জন সমকামী মানুষকে খুঁজে না পাবে, তত দিন পর্যন্ত সে অনেক মানুষকে বিরক্ত করতেই থাকবে। তাছাড়া সঙ্গী খুঁজে পেলেই যে সে থেমে যাবে, তারও কোন গ্যারান্টি নাই, সে সঙ্গী পাল্টানোর বা একাধিক সঙ্গী রাখার চেষ্টাও করতে পারে। নতুন নতুন সঙ্গীর খোঁজে তারা নতুন নতুন ঝামেলা তৈরি করতেই থাকবে।
আর যারা কিশোর বয়সীদের বলাৎকার করে, তারা কখনও একজন সঙ্গী নিয়ে তৃপ্ত হয় না।
এই চেহারার সমকামিতাকে বিকৃতি না বলে আর কি বলা যায় ?
মনেবিজ্ঞানে বিকৃত যৌনতা হিসেবে সমকামিতাকে গণ্য করা হয়েছে এবং মানসিক ব্যধি হিসেবে এর চিকিৎসা নেয়ার কথাও বলা আছে। এ সব বই কি ভুল ?

প্রকৃতি কি সমকামিতাকে সমর্থন করে ?
অনেকে বলেন, প্রকৃতি সমকামিতাকে সমর্থন করে। তারা অন্যান্য পশুপাখির উদাহরণ সামনে টেনে আনে। কিন্তু সেগুলো তো আসলে উদাহরণ নয়, ব্যতিক্রম। মানুষের মধ্যে সমকামিতা টিকে আছে ব্যতিক্রম হিসেবে। মানবপ্রজাতির খুব সামান্য অংশই সমকামী।
প্রকৃতি সমকামিতাকে সমর্থন করে না। মানুষের মধ্যে পুরুষ ও নারীর জন্মের অনুপাত ১১০: ১০০। তার মানে হল পুরুষ ও মহিলা প্রায় সমান জন্ম নেয়। অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে এই অনুপাতটি খাটে।
পুরুষ ও নারীর সম্পর্কের মূল কারণ নিঃসন্দেহে বংশ বৃদ্ধি ও প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকে থাকা। পুরুষ যদি পুরুষ সঙ্গীতেই সন্তুষ্ট থাকে এবং নারী যদি নারীতে সন্তুষ্ট থাকে তবে বংশ বৃদ্ধি হবে কিভাবে ? প্রকৃতি চায় যে কোন প্রজাতি টিকে থাকুক, সেই অর্থে সমকামিতা প্রকৃতি সমর্থন করে না।

অধিকারের প্রশ্ন
০১) বলা হয় সমকামীদের বিয়ের অধিকার দিতে হবে। বিয়ে একটা ধর্মীয় ব্যাপার। কোন ধর্মই তো সমকামিতাকে সমর্থন করে না। তাহলে ধর্মীয় মতে তাদের বিয়ের কোন সুযোগ নাই। বরং তারা চুক্তিবদ্ধ হতে পারে যে, তারা সমকামী ও যৌনসঙ্গী। তারা চুক্তিবদ্ধ হতে পারে যে, তারা তাদের পারস্পরিক সম্পত্তির উপর অধিকার রাখে এবং তাদের সন্তানরাও তাদের উভয়ের সম্পত্তির উপর সমান অধিকার রাখে। এই বিষয়টাকে বিয়ে বলা যায় না।
০২) বলা হয়, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতো সমকামীদেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে ? কেবল বেঁচে থাকা কেন সুন্দর জীবনযাপন করার অধিকারও তাদের আছে। কিন্তু সমকামিতা যদি একটা মানসিক ও শারীরিক ব্যধি হয়, তবে সেই ব্যধি চিকিৎসা করে সুস্থ করার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
০৩) সমকামীরা সাধারণত বহুগামী হয়। তাদের এই বহুগামিতার ফলে বলাৎকারের ঘটনাকে কোনক্রমেই সমর্থন করা যায় না। বরং এটা একটা অপরাধ।
০৪) সমকামীদের সন্তান জন্মই প্রমাণ করে তারা সব সময় সমকামী থাকে না। তারা বিপরীত লিঙ্গের সাথে মিলিত না হলে সন্তানের জন্মই হত না। তার মানে হল, সমকামী সব সময় সমকামী থাকতে পারে না। এর ফলে বহুগামিতা ভয়াবহভাবে বাড়ে এবং যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে অস্থিরতা বাড়ে। পরকীয়া সম্পর্ক থেকে যেমন খুন-জখম, হানাহানি, মামলা মোকদ্দমা ইত্যাদি হয়, তেমনি এসব সম্পর্ক থেকেও সেই রকম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। তাদের সন্তান উৎপাদন করার জন্য বহুগামিতার দায় দায়িত্ব কে নেবে ?
০৫) যদি দুই বাবার ওরশে (শব্দটা সঠিকভাবে লেখা যাচ্ছে না) যদি ২ সন্তান জন্ম নেয়, তাহলে তারা কি আপন ভাই হবে, নাকি সৎ ভাই ? তাদের বাবাও ভিন্ন, মাও ভিন্ন। ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক বা সম্পত্তির বণ্টন কিভাবে হবে ? ব্যাপারগুলো কি অনেক জটিল নয় ?
০৬) আরেকটি সমস্যা থেকে যায়। তাদের সন্তানরা কি মানসিকভাবে কোন সমস্যায় ভুগবে না ? তারা তো আর স্বাভাবিক বাবা মায়ের সন্তান নয়। হয় তাদের দুটি বাবা, নয়তো দুটি মা। বাবা মায়ের প্রভাব সন্তানদের উপর পড়াই তো স্বাভাবিক। সেই ক্ষেত্রে তারা কি সমকামী হবে ? তাদের মানসিক অস্থিরতা কি তৈরি হবে না ?

সমকামিতা নতুন কিছু নয়
বিভিন্ন দেশের আদালত সমকামিতাকে বৈধ করে দিয়ে এমন একটা ভাব করা হচ্ছে যেন সেটা একটা নতুন বিষয়। আসলে মানব প্রজাতির মতোই পুরোনো বিষয় সমকামিতা। সব ধর্মেই সমকামিতা নিষিদ্ধ। কোন কোন দেশে নিষিদ্ধ। কোন কোন দেশে বৈধ।
কিন্তু নিষিদ্ধ ও বৈধতার ধার না ধেরে সব সমাজে সব সময় সমকামী ছিল এবং আছে। ভবিষ্যতেও তারা টিকে থাকবে। সেটা একটা সামান্য অংশ এবং কখনই সব মানুষ সমকামী হয়ে যাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০০৯ দুপুর ২:৪৫
৪৩টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×