০১)
আমার এক দুলাভাই যাত্রা করতেন। যাত্রায় তার নায়িকা ছিলেন বিখ্যাত চাকভুম চাকভুম অঞ্জু ঘোষ। তিনিও সিনেমায় অভিনয় করতে চেয়েছিলেন। দেখতে ভীষণ হ্যাণ্ডসাম ছিলেন এবং এখনও আছেন।
কিন্তু তার সিনেমার নায়ক হওয়া হয়নি একটা বিশেষ বংশে জন্ম নেয়ার কারণে। তিনি চট্টগ্রামের বিখ্যাত মাইজভাণ্ডার পীরের বংশধর। তার বাবা ঘোষণা দিয়েছিলেন, যদি তিনি সিনেমার নায়ক হন, তবে তাকে ত্যাজ্য পুত্র করা হবে। তিনি তার বাবাকে ভীষণ ভালবাসতেন।
তার বয়স এখন ৫০ ছাড়িয়েছে। এই বয়সেও তিনি আফসোস করেন। কিন্তু তিনি বছরে প্রায় ৬০ হাজার টাকা পান মাইজভাণ্ডার শরীফ থেকে। মাইজভাণ্ডার পীরের যারা বংশধর প্রত্যেকেই মাইজভাণ্ডার শরীফ থেকে বছর শেষে টাকা পান। মাইজভাণ্ডার শরীফের ওরশ ও অন্যান্য আয় থেকে এই টাকা আসে।
০২)
দুলাভাইকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম গদ্দিনশীন পীর সম্পর্কে । উনি বলেছিলেন পীর কোন আরবী শব্দ না। পীর শব্দটি ফার্সি শব্দ । এর অর্থ মুরব্বী। তবে আমরা পীর সম্পর্কে মনে করি উনি বড় আল্লাহর ওলি।
উনি বললেন, পীর ব্যাপারটাই আসলে ঠিক না। একজন লোক জ্ঞানী হতে পারে। কিন্তু মুরব্বী হলেই মানুষ জ্ঞানী হয় না, জ্ঞানী হতে হলে তাকে পড়াশোনা করতে হয়।
তাছাড়া একজন ডাক্তারের ছেলে তো পড়াশোনা ছাড়া ডাক্তার হয় না। একজন ইঞ্জিনিয়ারের ছেলে তো পড়াশোনা ছাড়া ইঞ্জিনিয়ার হয় না। একজন এডভোকেটের ছেলে তো পড়াশোনা ছাড়া এডভোকেট হয় না। প্রত্যেক পেশাজীবীকেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করেই সেই পেশাজীবী হতে হয়। বাবার দোহাই দিয়ে সে হুট করে সেই পেশাজীবী হতে পারে না। তাহলে পীর কেন হয় গদ্দিনশীন ? এর উত্তর উনি দিতে পারলেন না।
০৩)
আমি অনেককেই গদ্দিনশীন পীর বিষয়ে প্রশ্ন করেছি। কেউ কেউ পীরের মুরিদ। তারা বলেছেন, পীর তাদের পার করিয়ে দেবে। কেউ কেউ বলেন, পীর ব্যাপারটা ভুয়া। পীর ছাড়াই ইবাদত করা সম্ভব এবং উচিত। কেউ বলেছেন, পীর ছাড়া ইবাদত করা যায়, তবে একজন মুরব্বী থাকলে মন্দ না।
কিন্তু তারা কেউই বলতে পারেন নি, গদ্দিনশীন পীর হওয়া উচিত কি না ।
০৪)
আমাদের দেশে পীরেরা কী করেন ? তাদের বৈধ আয়ের উৎস কী ? তারা ধর্মের জন্য কী করেন ?
আমাদের দেশের পীরের ওরশ করেন। ওরশ মানে হল জন্মদিন পালন। মূলত সেই ওরশ বা জন্মদিন পালন করা খাজা বাবার নামে বা কোন মৃত পীরের নামে। ইসলামে জন্মদিন পালন করা মানে ওরশ করা বিদআত। তাহলে পীরেরা এটা করেন কেন ?
কারণ ওরশ করলে প্রচুর দান খয়রাত পাওয়া যায়। খরচ করেও সেই দান খয়রাত থেকে প্রচুর টাকা বেচে যায়। মূলত এটা একটা ব্যবসা।
অন্য দিকে আমাদের দেশে পীরদের কোন বৈধ আয় নাই। কয়েক জন ব্যতিক্রম ছাড়া তারা বেশির ভাগই কোন ব্যবসা বা চাকুরি করেন না। তাদের আয়ের প্রধানতম উৎস হল মুরিদদের দান খয়রাত। এই দান খয়রাত এত বেশি যে, তাদের শান শওকত দেখলে অবাক হতে হয়।
আর গদ্দিনশীন পীরদের আরও জঘন্য অবস্থা। আমি এক বংশানুক্রমিক পীরের বাড়িতে গিয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম তাদের বিলাসিতা ও অপচয় দেখে। তারা একজন কোটিপতির চেয়ে বেশি অপচয় করেন। তাদের সম্পদের কোন হিসাব নাই।
০৫)
ধর্মের সমর্থন না থাকলেও বাংলাদেশে পীরতন্ত্রের ব্যাপক প্রসারের পিছনে রয়েছে মাজারের ভূমিকা। একটি মাজারকে দরগা বানিয়ে সেই মাজারের আয় লুটে পুটে খাচ্ছে কোন না কোন পীর।
আমাদের দেশের মানুষ ধর্মভীরু বলে তারা পীর পূজা ও মাজার পূজা করছে। ধর্ম সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকায় তারা পীর যা বলছে সেটাকেই ধর্মের কথা বলে মেনে নিচ্ছে। একবারও সাহস করে জেনে নিচ্ছে না আসলে ধর্ম কী বলেছে। এই পীরেরা বিদআত ওরশ, জলনে জুলুছ, মিলাদ মাহফিল ইত্যাদি করে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
আর অনেক ভণ্ড পীরের চরিত্র সম্পর্কে নানা বাজে কথা শোনা যায়। তাদের মুরিদদের মধ্যে বেশির ভাগ মহিলা হয় এবং এ সব মহিলারা তার পীর বাবার জন্য জান কোরবান করতে প্রস্তুত।
এইভাবেই ভণ্ড পীরেরা তাদের আয়েশি জীবন যাপন করে যাচ্ছে। সেই আয়েশি জীবনযাপন যেন বংশানুক্রমিকভাবে করা যায়, তার জন্য গদ্দিনশীন পীর ব্যবস্থার উদ্ভব।
ইসলাম ধর্ম বান্দা ও আল্লাহর মাঝখানে মাধ্যম হিসেবে কাউকে চায় না। পীর, গদ্দিনশীন পীর ও মাজার কেউই ইসলাম ধর্মানুসারে কোন ব্যক্তিকে পরিত্রাণ দিতে পারে না।
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ১১:৪৫