আগের ঘটনা :
তখন আমি পড়াশোনা করছি। আমার এক বন্ধু তখন ছোট একটা চাকুরি করে। একদিন তার বাসায় গিয়ে তার টেবিলের উপর একটা চিঠি পেলাম। একটি মেয়ের লেখা চিঠি। সুন্দর হাতের লেখা । মেয়েটি আমার বন্ধুকে ভাইয়া বলে সম্বোধন করেছে। খোলা চিঠিটাতে কেবল সামান্য কয়েকটি কথা লেখা। পড়া উচিত না মনে করেও কৌতুহলে পড়ে শেষ করলাম। আহামরি কোন কথা লেখা না, কিন্তু কেমন একটা রহস্যের গন্ধ পেলাম চিঠিটাতে। তখন অল্প বয়স, ভেবেই বসলাম, মেয়েটির সাথে আমার বন্ধুর মনে হয় প্রেমের সম্পর্ক আছে। মেয়েটি তার চিঠিতে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার কথা জানিয়েছে এবং জানিয়েছে একটা বই জরুরীভিত্তিতে কিনতে হবে।
বন্ধুকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করলাম। প্রথমে ও বলতে চাইল না। কিন্তু চেপে ধরায় বলল সেই মেয়েটির কথা।
মেয়েটির বাবা একটা অফিসে পিয়ন। চাকুরি সুবাদে একদিন তার সাথে পরিচয়। পিয়ন লোকটি তার মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমসিম খাচ্ছে বলে জানায় আমার বন্ধুকে। আরও জানায় তার মেয়ে মেধাবী। আমার বন্ধু মেয়েটির বাবার সঙ্গে কথা বলে এবং জানায় যে সে মেয়েটির পড়ার খরচ বহন করতে চায়। মেয়েটির বাবা রাজি হয়। সেই থেকে আমার বন্ধুটি মেয়েটির পড়ালেখার খরচ চালিয়ে আসছে।
আমি বন্ধুর এই ঘটনা শুনে তার প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হলাম। আমার বন্ধু এত ভালো একটা কাজ করতে পারে ভাবিনি কোন দিন। কিন্তু আমার বন্ধু তখন প্রতিজ্ঞা করিয়েছিল, আমি যেন কখনও সেই ঘটনা তার পরিবার বা অন্য কাউকে না জানাই।
এরপর এক যুগ কেটে গেছে। আমার বন্ধু বিয়ে করেছে এবং তার একটা মেয়ে হয়েছে। আমার বন্ধুর বউ কখনও জানে নি, তার স্বামী অন্য একটা মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছে।
কয়েক দিন আগে আমার বন্ধুর সঙ্গে কথা বললাম। সে হাসতে হাসতে বলল, এখনও তোর সেই মেয়ের কথা মনে আছে । ওই মেয়ে মাস্টার্স শেষ করে এখন উচ্চ পদে চাকুরি করছে। বিয়েও হয়েছে একটা ভালো ছেলের সঙ্গে।
সেদিন বন্ধু জানাল, সে এখন আরেকটি মেধাবী ছেলের দায়িত্ব নিয়েছে । ছেলেটি অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পেয়েছে। এই ছেলেকে যে সে সাহায্য করছে এই কথা তার পরিবারের কেউ জানে না।
এই ছেলের দায়িত্ব নেয়ার আগেও সে আরও একটি ছেলের দায়িত্ব নিয়েছিল। সেটার কথা আমিও জানতাম না। ওই ছেলেটি নাকি এখন মাস্টার্স করছে।
আমার বন্ধু খুব ধনী মানুষ নয়। কিন্তু তার মনটা অনেক বড়। তার এই গোপন সাহায্য করার প্রবণতা আমাকে দারুণভাবে মুগ্ধ করে। তার প্রতি বার বার শ্রদ্ধায় অবনত হই।
অবাক লাগে যখন দেখি সে এই সাহায্যের কথা কাউকে জানায় না। এমনকি তার পরিবার ও বন্ধুরাও জানে না।
আমার কথা :
বন্ধুর এই ঘটনা আমাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। একটি অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলের দায়িত্ব নিয়েছি আমি। ছেলেটির বাবা একজন রিক্সাওয়ালা এবং তারা দুই ভাই। তার ব্যাপারে আর কিছু বলা ঠিক হবে না।
আমার মনে হয়, আমরা প্রত্যেকে অনেক অনেক টাকা অপচয় করি। সিগারেট খাই, পান খাই, চা খাই, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারতে গিয়ে অনর্থক লাল পানি খাই। আর কথায় কথায় কোমল পানীয়র বোতল খুলি। কত কত অনর্থক শপিং করি। অথচ এই সামান্য খরচ বাঁচিয়ে একটা জীবন বদলে দেয়ার যোগান দেয়া সম্ভব। একটা অসহায় মানুষকে সম্মানজনকভাবে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করার চেয়ে বড় সাহায্য আর কিছু হতে পারে না।
আমরা প্রত্যেকেই কি পারি না একজন অসহায় দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীর খরচ যোগাতে ? পারি, সে জন্য আমাদের ইচ্ছা-শক্তিই যথেষ্ট।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



