কিছুক্ষণ আগে এনটিভিতে নতুন সিনেমার গল্প নামে একটি অনুষ্ঠান হয়ে গেল। ঈদের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর পরিচালকের কথা ও গান নিয়ে নির্মিত হয়েছে অনুষ্ঠানটি।
মজার ব্যাপার বাংলা সিনেমায় অনেক আগে থেকেই গল্পের খরা চলছিল, এখন চলছে নায়ক - নায়িকার খরা। এবারের ঈদে সাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের ছবিরই প্রাধান্য। বলা চলে প্রায় সব গুলো ছবির নায়ক নায়িকা তারা।
ছবির গানগুলোর খণ্ডাংশ দেখাল সেই অনুষ্ঠানে। গানগুলোর বেশির ভাগই নকল কথা ও সুরে। হিন্দি সিনেমার গানের সুর নকলের পাশাপাশি মনপুরা ছবির নিধুয়া পাথারে গানটিরও নকল গান দেখলাম। নকল করার জন্য আগে কিছু রাখঢাক ছিল, এখন সেটা নাই।
বাংলা ছবির জগতে অত্যন্ত জনপ্রিয় সিনেমা নিঃসন্দেহে মনপুরা। সেই ছবির গান হিসেবে নিধুয়া পাথারে গানটি আরও জনপ্রিয়। এই সিনেমার গান নকল করার বুদ্ধি যেই পরিচালকের মাথা থেকে বেরোয়, সে সুস্থ কোন মানুষ না, নকলবাজের চূড়ান্ত । ওর বিরুদ্ধে মামলা করে জেলের ভাত খাওয়ানো ফরজ।
বাংলা সিনেমার সবচেয়ে বড় সমস্যা গল্পের । আসল গল্প খুঁজে পাওয়া যায় না। কেবল একই গল্প ঘুরে ফিরে সব ছবিতে দেখানো হয়। ফলে দর্শক সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
ডিস চ্যানেল ও ডিভিডির যুগে বাংলা সিনেমার পরিচালকদের টিকে থাকার জন্য দরকার ছিল মৌলিক কাহিনী, মৌলিক গান - হিন্দি ছবির নকল কাহিনী ও গান নয়। কেননা, এখন আমরা আসল সিনেমাটা খুব সহজেই দেখতে পাই। আসল সিনেমা দেখার পর কেন নিন্মমানের নকল সিনেমা আমরা দেখব ?
এই সমস্যা থেকে কিভাবে বেরুনো সম্ভব ?
আমরা একটা স্বাধীন জাতি। আমরা অনেক গর্ব করি আমাদের স্বাধীনতার জন্য। একটি জাতির অন্যতম পরিচয় তুলে ধরে তার সিনেমা। সেই সিনেমা তৈরির জন্য দরকার সিনেমা প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা মানুষ। আমাদের দেশে ফিল্ম সম্পর্কে জানার ও শেখার কোন প্রতিষ্ঠান নাই। আমাদের পাশের দেশ ভারতে অনেক অনেক ফিল্ম ইনস্টিটিউট আছে। পুনে ফিল্ম ইনস্টিউট তো ব্যাপক বিখ্যাত।
ভারতে নায়ক নায়িকা, পরিচালক, সহকারী পরিচালক, স্ক্রিপ্ট রাইটার, গীতিকার, সুরকার প্রায় সবাই বিভিন্ন ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা। বিখ্যাত সঞ্জয় লীলা বানসালি পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ছাত্র ছিলেন। নানা পাটেকার, নাসিরউদ্দিন শাহ ও রাজ বাব্বর ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে পাস করা ছাত্র। তারা সবাই ফিল্ম নিয়ে রীতিমত গবেষণা করেন।
অথচ আমাদের দেশে একটিও ফিল্ম ইনস্টিটিউট নাই। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। ওস্তাদ ধরা পদ্ধতিতে সবাইকে সিনেমার পরিচালক হতে হয়। সিনেমার পরিচালক হওয়ার জন্য যে সব প্রযুক্তিগত ও শৈল্পিক জ্ঞান অর্জন করা উচিত সেটা পদ্ধতিগতভাবে শেখা হয় না। ফলে পরিচালক হওয়ার পর নকল সিনেমা বানানো ছাড়া তার সামনে কোন পথ থাকে না। সেই পথেই হাঁটেন আমাদের এফডিসির পরিচালকরা।
একটি জাতির জন্য একটি মাত্র ফিল্ম ইনস্টিটিউট কি খুব বেশি চাওয়া ? স্বাধীন একটি জাতি হিসেবে আমাদের কি একটি ফিল্ম ইনস্টিটিউট থাকা উচিত নয় ?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




