০১.
যখন ছাত্র ছিলাম, তখন কিছু টিউশনি করতাম। একবার টিউশনী পেলাম এক গদ্দীনশীন পীরের বাসায়। পীরের কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে ইংরেজি পড়াতাম। মেয়েটি আগে দুইবার ইংরেজিতে ফেল করার কারণে এইচ.এস.সি পাস করতে পারে নি।
গেলাম পীরের বাসায় তার মেয়েকে পড়াতে। যা ভেবেছিলাম, তার সাথে কিছুই মিলল না। প্রচণ্ড ধনী সেই পীর। তিন তলা মোজাইক করা বাড়ি । এক তলা ও দোতলা হল তার কার্যালয়। তিনি দোতলায় বসেন।তার খাদেমরাও সেখানে থাকে। আর তার মুরিদের দল এক তলায় থাকে। বাড়ি কিছু দূরে একটা মাজার। মাজারটি এই পীরের বাবার। ওই মাজারটি দর্শন করতে আসে শত শত লোক। পীরের কাছেও আসে শত শত লোক। তারা মাজারেও দান করে এবং পীরের দরগায়ও দান করে। এলাহী কারবার ।
মহিলা মুরিদদের অনেকে তিন তলায় পীরের বাড়িতে যায়। পীরের স্ত্রীর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ চলে। পীরের স্ত্রীও একজন পীর। তিনি মহিলাদের নানা পরামর্শ দেন।
আমি তার মেয়েকে পড়াতে তিন তলায় তাদের বাড়িতে যাই। যে ঘরে পড়াই সেটা তাদের ড্রয়িং রুম। একটা আধুনিক সুসজ্জিত ঘর। এমন কোন আধুনিক জিনিস নাই, যা সেখানে নাই। কোটিপতিদের মতো সাজসজ্জা।
তার মেয়ে আমার সামনে পর্দা করে না। তার বোনেরাও না। তারা সবাই আধুনিক জীবন যাপন করে। তারা টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল দেখে, ভিসিআরএ হিন্দি সিনেমা দেখে।
এক দিন কথায় কথায় আমার ছাত্রী বলে, আমি পড়াশোনা করতে চাই না।
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকাই। সে বলে, আমার বাবার অনেক টাকা, আমরা পড়াশোনা করে কী লাভ বলেন ?
আমি তাকে এই বিষয়টা কখনও বোঝাতে পারি নি। আসলে তার দোষ নাই। তাদের বাড়ির পরিবেশ পড়াশোনার উপযোগী না। তাদের বাড়িতে সারাক্ষণ জমজমাট আড্ডার মতো মানুষের স্রোত লেগে থাকে।
তাদের জীবনযাপন দেখে পীর সম্পর্কে আমার ধারণা বদলে যায়। আগে ভাবতাম, পীর মানে একজন সাধু পুরুষ। কিন্তু বাস্তবে দেখি, পীর মানে একজন ভোগী সংসারী মানুষ। চরমভাবেই তিনি ভোগী।
০২.
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির চেয়ে আরো ভয়াবহ ধর্ম ব্যবসা আমাদের দেশে চলছে। ইসলাম ধর্ম সমর্থন করে না এমন দুটি প্রথা মুসলিম সমাজকে গিলে খেয়েছে। অবৈধ পীর ব্যবসা ও মাজার ব্যবসার মাধ্যমে ধর্মব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ধর্মান্ধ লোকজনের কাছ থেকে ।
পীর বাবারা ওরশ করার নামে বিপুল পরিমাণ দান (?) তুলে নিচ্ছে । অথচ এই ওরশের কোন বিধান ইসলাম ধর্মে নাই। জশনে জুলুস নামে একটা বেদআত রীতিও পালন করছে কোন পীর। তাদের এই সব অনুষ্ঠান পালন করার মূল কারণ হল, মুরিদ বা ভক্তদের পকেট থেকে মালপানি খসানো।
গদ্দীনশীন পীর নামে একটা ভয়াবহ প্রথা আমাদের দেশে আছে। কোন কারণ ছাড়াই পীরের ছেলে পীর হয়। ডাক্তারের ছেলে মেডিক্যালে পড়া ছাড়া ডাক্তার হয় না, ইঞ্জিনিয়ারের ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছাড়া ইঞ্জিনিয়ার হয় না। কিন্তু পীরের ছেলে বলেই একজন পীর হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। মূলত আয়ের এই সহজ রাস্তা ছাড়তে চায় না বলেই পীরেরা এই গদ্দীনশীন পীর ব্যবস্থা তৈরি করেছে।
০৩.
বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় স্পিনিং মিলের মালিক আটরশির পীর সাহেব। আটরশির পীরের এত ধনী হওয়ার পেছনে আয়ের উৎস কী ? মুরিদদের দান খয়রাত ছাড়া আর কিছু না। তার সম্পর্কে যা জানি, তিনিও চরম ভোগবাদী জীবনযাপন করতেন।
শেষ বয়সে তার রাজনৈতিক ক্ষমতা পাওয়ার লোভও জেগেছিল। ফলে তৈরি করেন জাকের পার্টি নামে রাজনৈতিক দল। যদিও ভোট না পেয়ে তার সেই ইচ্ছা শেষ হয়ে গিয়েছিল। তার মুরিদরাই তাদের ভোট দেয় নাই।
বাংলাদেশে আরেক জন বিখ্যাত পীর চরমোনাই পীর। তিনি ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন নামে একটা দল গড়েছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর বর্তমানে তাঁর ছেলে গদ্দীনসীন পীর ও দলটির শীর্ষ নেতা। এই ভদ্রলোকের একমাত্র যোগ্যতা তিনি তার পিতার ঔরশে জন্ম নিয়েছেন।
এভাবে সারা বাংলাদেশেই পীরেরা বংশানুক্রমিকভাবে ধনী মানুষ।
০৪.
ইসলাম সমর্থন করে না এমন কাজ কারবার করে তারা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে দেদার টাকা কামান। ফলে পীরদের অনেক অনেক টাকা আয়। কিন্তু তারা কি আয়কর দেন ? দেন না। তারা কোন দিনও এক পয়সায় আয়কর দেন না। বরং কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও ধর্মীয় কারণ দেখিয়ে আয়কর ফাকি দেন এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন।
তাদের কি এই দেশের নাগরিক হিসেবে আয়কর দেয়া উচিত না ?
০৫.
পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করার ফলে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরে এসেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এর ফলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
পীর ব্যবসা ও মাজার ব্যবসা বন্ধ করারও দাবি জানাই সরকারের কাছে। এই অবৈধ ব্যবসার পক্ষে খোদ ইসলাম ধর্মেই কোন বিধান নাই, বরং এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ একটি ব্যবসা।
ওরশ সংক্রান্ত একটি চমৎকার পোস্ট
মাজার সংক্রান্ত একটি চমৎকার পোস্ট
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১০ দুপুর ১:১৯