somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বালিকা তোমার প্রেমিকের সাজে এসেছে বেনিয়া

৩০ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

০১)
প্রেমে পড়ার একটা বয়স আছে। সেই বয়সে সবাই প্রেমে পড়তে চায়। প্রেমে পড়ার জন্য মন কেমন কেমন করে। সেই বয়সে বালিকা তার চারপাশে কেবল প্রেমিক দেখে। দেখে, তার বাল্য-সাথী কেমন যেন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। তার ভালো লাগে। তার ভালো লাগে এই চোরা দৃষ্টি বিনিময়। কিন্তু একই সাথে অসহ্যও লাগে। লজ্জা, ভয়, দ্বিধা, ব্যথা, সুখ, উদ্বেগ - চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে তাকে।
প্রেমিকের কাছে যেতে চায় বালিকা। কিন্তু একটা সময় মনে হয়, আরও কাছে যাওয়া ঠিক হবে না। সমাজ, সংসার, পরিবার, প্রতিবেশী - অনেক অনেক মুখ তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
অবশেষে কোন একদিন তার বিয়ের সানাই বাজে। তার গোপন প্রেমিকটি পালকির পাশে দাঁড়িয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। দু এক ফোঁটা অশ্রু্ও হয়তো সবার অলক্ষ্যে ঝরে পড়ে। যত দূর দেখা যায়, সে পালকির দিকে তাকিয়ে থাকে।
শেষ হয় একটা গোপন অধ্যায়ের।

০২)
যুগ বদলেছে। আমাদের কল্পনার চেয়ে অনেক দ্রুতই বদলে গেছে চারপাশ। প্রযুক্তি আষ্টেপৃষ্টে ধরেছে আমাদের দৈনন্দিন জীবন। এখন বালিকা এত অপেক্ষা করে না। ভীরু কম্পমান হৃদয়ে চিঠির উত্তর লেখে না। এখন তার মুঠোফোনে ছোট ছোট বার্তা এসে কড়া নাড়ে। সে বার্তার উত্তর দেয়। কখনও মিস কল তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রেমিক তার জন্য উতলা। কিংবা বড় জোর ছাদ বা বারান্দায় লুকিয়ে কয়েক ঘণ্টা কথা বার্তা ও ঝগড়া করে প্রেমিকের সাথে।
তারপর কোন একদিন প্রেমিকের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যায় কোন বন্ধুর বাড়ি। বাড়ি মানে নির্জন ফ্লাট। বন্ধুটি প্রেমিক জুটিকে রেখে হাওয়া হয়ে যায়। এই নির্জনে বালিকার ঠোঁটে মিশে যায় প্রেমিকের ঠোঁট। আরও কিছু ঘটার আগেই বালিকা নিজেকে সামলে নেয়। কিন্তু একদিন এই সামলানোর বাঁধও তার ভেঙ্গে যায়।

০৩)
যতই দিন যাচ্ছে সদ্য তরুণটি ততই নায়কোচিত হয়ে উঠছে। তার পোশাক আশাকের ঝলকানি বাড়ছেই বাড়ছে। স্কিন টাইট জিনসের সাথে স্কিন টাইন রঙচঙে টি শাট। চোখে সানগ্লাস। দিন দিন কেবল কালো থেকে কালো হচ্ছে সানগ্লাস। জেলের কারণে চুলে চকচকে এবং ঝকঝকে স্পাইক। গলায় সোনালি চেইন এবং হাতে ঝকমকে বাহারী ব্রেসলেট। পায়ে চকচকে জুতো। দৈনিক নতুন জুতো। আগে গা থেকে ঘামের গন্ধ আসত, এখন কেবল পারফিউমের গন্ধ ভাসে।
সবচেয়ে বেশি বদলে যাচ্ছে তার হাতের মোবাইল ফোনটি। দিন যত যাচ্ছে ততই দামি মোবাইল ফোন তার হাতে শোভা পাচ্ছে।
সে প্রতিদিন মহল্লার মোড়ে অপেক্ষা করে। ধোড় খোঁজে। মহল্লার উঠতি বয়সের মেয়েদের দিকে তার নজর। কার বাবার টাকা আছে, সেটা মেপে নেয়। তারপর সবচেয়ে মালদার পার্টিকে টার্গেট করে। যে কোনভাবে মেয়ের মোবাইল নাম্বার যোগাড় করে। একদিন সুযোগ বুঝে ফোন লাগায়। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে। প্রথমে পরিচয় না দিলেও পরে জানায় তার পরিচয়। মেয়েটি প্রথমে গাইগুই করে। ছেলেটি মেয়েটির জন্য দামি দামি গিফট কেনে। মেয়েটি পটে যায়। কোন একদিন পটতে পটতে চলে যায় ছেলেটির ফ্লাটে। নির্জন সে ফ্লাটে তারা প্রেমের আবেগে কাছাকাছি আসে। যতটুকু কাছাকাছি হলে সর্বনাশ ঘটে ততটুকু কাছাকাছি হয় তারা।
অন্য দিকে গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা হয় এই সব চিত্র। ভিডিও। যথা সময়ে মেয়ের অভিভাবকের কাছে প্রস্তাব যায়। বিয়ের নয়, টাকার। ব্লাকমেইলিং। ৫ লাখ টাকা না দিলে এই অশ্লীল ভিডিও বাজারে ও ইন্টারনেট ছেড়ে দেয়া হবে। অস্থির হয়ে যায় মেয়ের অভিভাবকমহল। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে যা পারে দিয়ে সামাল দেয় পরিস্থিতি। পরের মাসেই বদলে ফেলে বাসা। পারলে চলে যায় শহর ছেড়ে।
প্রেমিকটির মোবাইল ফোন বদলে যায়। আরও চকচকে হয় তার পোশাক, তার চুল এবং তার চেহারা।
নতুন বালিকার সন্ধানে সে আবারও ওৎ পেতে থাকে মহল্লার মোড়ে।

০৪)
আমাদের বেনিয়া গোষ্ঠী সব কিছুতেই ভেজাল মেশাচ্ছে। তারা খাদ্য ও ঔষধে ভেজাল মিশিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা কামা্চ্ছে। সুতরাং এই ভেজালের দেশে প্রেমই বা ভেজালমুক্ত হবে কেন ? এখন প্রেমিকের বেশে বালিকার জন্য মহল্লার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে বেনিয়ারা।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৪:২৫
৩৯টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×