somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এইটা কি আমি কি না, কে জানে ?

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

০১.
তখন এইচ.এস.সি প্রথম বর্ষে পড়ি। লিকলিকে স্বাস্থ্য এবং গাল-বসা চেহারা নিয়ে মন খারাপ করে ঘুরে বেড়াই। আহা, অনেকের কত সুন্দর চেহারা, কত সুন্দর স্বাস্থ্য, আমার কেন নাই বিধাতা ?
ফিজিক্স পড়তাম এক শিক্ষকের কাছে। একদিন তার ব্যাচে দেরিতে পৌছেছি। তার আগেই আমাকে নিয়ে এক কাণ্ড হয়ে গেছে। শিক্ষক মহোদয় আমার নাম স্মরণ করতে না পেরে অন্যদের জিজ্ঞাসা করলেন , এমুন এমুন ছেলেটা কোথায় ?
অন্যরা তো বুঝতে পারল না, এমুন এমুন ছেলে আসলে কে । তারা একজন আরেক জনের দিকে তাকাল। স্যার মহোদয় তার সুডৌল গালের উপর হাত দিয়ে অবতল লেন্স তৈরি করে বললেন, এমুন এমুন।
এবার সবাই বুঝে ফেলল সেই হতভাগা আমি ছাড়া আর কেউ না। আমার এক সহপাঠী মধুর গলায় উত্তর দিল, স্যার, এমুন এমুন (যথারীতি গালের কাছে অবতল লেন্স দেখিয়ে) ছেলেটা স্যার বাইরে, রিক্সাওয়ালার টাকা ভাঙ্গাতে গেছে।
এই প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে সকাল বেলাই একটা হাস্যরস হয়ে গেল।
আমি তো এত ঘটনা জানি না। নিপাট ভদ্রলোকের মধ্যে স্যারের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, মে আই কাম ইন, স্যার ?
স্যার উত্তর দেয়ার আগেই দেখি, সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমি নিজের দিকে ভালো করে তাকালাম। পোশাক আশাকে কোন সমস্যা আছে কিনা। বিশেষত পোস্ট অফিস খোলা কিনা সেইটা ভালো করে দেখলাম। না, কোন সমস্যা নাই। তাহলে পাবলিক হাসে কেন ?
স্যার আমাকে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। আমি বসতে না বসতেই স্যার আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন। বুঝলাম, এভরিথিং রং। কোন বড় সমস্যা তৈরি করেছি। আমি একবার এর দিকে তাকাই, ওর দিকে তাকাই। দেখি যার দিকেই তাকাই, সে-ই হাসে। বড় বিপদে পড়লাম।
সেই দিন পড়া থেকে বেরিয়েই আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহপাঠীকে চেপে ধরলাম। ব্যাপারটা কী, সবাই আমাকে দেখলে হাসে কেন ? বন্ধুও দেখি কিছু না বলে কেবল হাসে।
অবশেষে তার হাসি-রোগ সারার পর কাহিনী খুলে বলল। আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সিদ্ধান্ত নিলাম, ওই ব্যাটার কাছে পড়ব না। কিন্তু উনি এত ভালো পড়ান যে, আবার ফিরে যেতেই হল।
মাঝখান থেকে ওই ব্যাচে আমার নাম হয়ে গেল এমুন এমুন ছেলেটা।

০২.
চেহারা নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে না এমন মানুষ বিরল। আমরা সবাই জীবনের কোন না কোন মুহূর্তে চেহারা নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগি। কখনও কারো মন্তব্যে, কখনও কারও উপহাসে, আমরা নিজের চেহারার উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি।
বিশেষত মানুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন চেহারা নিয়ে ভীষণ খুঁতখুঁতে হয়ে যায়। যখন চাকুরির ইন্টারভিউয়ে ফেইল মারে, তখনও মনে হয় চেহারাটা আরেকটু স্মার্ট হলে হয়তো হয়ে যেত। আবার বিয়ে সময়ও চেহারা নিয়ে দুশ্চিন্তা কম হয় না। চেহারাটা আর একটু সুন্দর হলে হয়তো পাত্র পক্ষ পছন্দ করেই ফেলত।
আসলে প্রত্যেক মানুষই জন্মায় সুন্দর হয়ে । এ জন্যই শিশুরা সব সময়ই সুন্দর। অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, কোন বদ অভ্যাস, মাদকাসক্তি ইত্যাদির কারণে চেহারা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিন্তু নিজের স্বাস্থ্যের যত্ম নিলে - বিশেষত খাবার, বিশ্রাম ও ব্যায়াম করলে মানুষের স্বাস্থ্যও ভালো হয়, সঙ্গে সঙ্গে চেহারাও ।
নায়িকা রেখা প্রথম বয়সে দেখতে অনেক কুশ্রী ছিলেন। কিন্তু এই রেখাই একটা বয়সের পর সৌন্দর্যের মাপকাঠি হয়ে উঠেছিলেন। নায়িকা রেখা তার এই সৌন্দর্যের জন্য যোগব্যায়ামকে সাধুবাদ দেন। অধুনা শিল্পা শেঠি আরেকটি উদাহরণ। শিল্পা শেঠীও প্রথম জীবনে দেখতে সুন্দর ছিলেন না। কিন্তু যোগ ব্যায়াম করে তিনি এখন নজর কাড়া সুন্দরী। তার একটা বিখ্যাত যোগ ব্যায়াম শেখার ডিভিডিও বাজারে আছে।
যারা অভিনেতা এবং মডেল - তাদের চেহারা দিন দিন ভালো হতে থাকে। ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে তাদের যে রকম চেহারা ফিগার থাকে, কয়েক বছর পর দারুণভাবে সুন্দর হয়ে ওঠে। কারণ তারা নিজেদের যত্ন নেন।

০৩.
আমি কখনও মডেল ছিলাম না। মডেল হওয়ার কোন ইচ্ছাও কোন কালে ছিল না। আমার বিখ্যাত বড় ভাই ও ফটোগ্রাফার এটিএম জামাল আমার কিছু ছবি তুললেন। ছবি তোলার পর আমি তো অবাক । আমার সেই এমুন এমুন চেহারা তার অভিজ্ঞ ও সৃষ্টিশীল ক্যামেরার কারিশমায় বদলে গেছে।
ফ্যাশন ফটোগ্রাফার এটিএম জামাল ছবি তোলেন ভাল। ফটোগ্রাফার হিসেবে তার দক্ষতা অসাধারণ। লাইট ও ক্যামেরা এঙ্গেল মিলিয়ে এমন একটা ভঙ্গি বের করে আনেন মডেলের, যে অবাক হতে হয়। তিনি ফ্যাশন মডেলিং এর জন্য একজন উপযুক্ত ফটোগ্রাফার।
এটিএম জামাল ফটোগ্রাফির পাশাপাশি দেশীয় একটা বুটিক হাউজের মালিক। নারায়ণগঞ্জে তার নকশা নামের বুটিক হাউজটি এক নামে সবাই চেনে। নকশার একটা শাখা চালু হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া এলাকায়। সেই নতুন শাখা উদ্বোধন উপলক্ষে তিনি কিছু ফেস্টুন ডিজাইন করেছেন। সেই ফেস্টুনে মডেল হিসেবে নিয়েছেন হতভাগা এমুন এমুন আমাকে ! :P ও মোর আল্লা :D

এই সেই এমুন এমুন ফেস্টুন।



০৪.
আমার সেই শিক্ষক মারা গেছেন বেশ কিছুদিন আগে। আজ বুঝি তিনি হয়তো আমাকে ঠাট্টা করে বলেছিলেন। কিন্তু তার এই ঠাট্টা আমার জীবনে গভীর ক্ষত তৈরি করেছিল। আমি সব সময় আমার চেহারা নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতাম। অনেক পরে এই হীনমন্যতা কেটে গিয়েছিল। কিন্তু যদি না কাটত তবে একটা জীবন হীনমন্য হয়েই কাটিয়ে দিতে হত।
শিক্ষকদের একটা বাক্য ছাত্রদের জীবনে অনেক প্রভাব বিস্তার করে। তাই যারা শিক্ষক তারা যেন হুট করে কোন ছাত্র সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য না করেন। সেই মন্তব্যের বিষময় ফল হয়তো ছাত্রটাকে সারা জীবন বহন করতে হয়।
আল্লাহ আমার সেই বিখ্যাত শিক্ষককে বেহেশত নসীব করুন।




ফটোগ্রাফার এটিএম জামালের তোলা আরও কিছু ছবি


পুনশ্চ :
ইদানিং যাই লেখি সবই কেবল নিজের ঢাক-ঢোল ফাটানো হয়ে যায়। ব্লগিং ছেড়ে দিতে হবে মনে হয়। সবাই এক সময় বুড়ো হয়, ব্লগারও।


সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:১৩
৩১টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×