somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা সিনেমাকে অনর্থক পচাচ্ছেন : আপনি কারো দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছেন না তো ?

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশের মানুষের একটা প্রবণতা আমার খুব খারাপ লাগে।
আমরা যে কোন শিল্পীকে ছোট করে খুব আনন্দ পাই।

হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার পর তাকে যে মহান শিল্পী হিসেবে প্রমাণ করার জন্য বুদ্ধিজীবী সুশীলরা মুখে ফেনা তুলে ফেলল, তারাই আজ থেকে ২৫ বছর আগে হুমায়ূন আহমেদকে কথায় কথায় অপমান করত। বহুবার শুনেছি, হুমায়ূন আহমেদ খুব সস্তা দরের লেখক। তার লেখা পড়া মানে হল চটি বই পড়া।

আমার মনে আছে, হুমায়ূন আহমেদের বই হাতে আছে বলে কত বাজে কথা শুনতে হয়েছে। আমরা নাকি সস্তা পাঠক, হুমায়ূন যারা পড়ে তারা গাধা ইত্যাদি ইত্যাদি । অথচ যারা বাজে কথা বলেছে তারা এই ২৫ বছরে কিছুই করে নি। স্রেফ বসে বসে গ্যাঁজানো ছাড়া এবং মানুষের সমালোচনা করা ছাড়া তাদের বিশেষ কোন কাজ নাই।

এই রকম এক বিশেষ সুশীল হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার পর তার স্মরণ সভায় উপস্থিত। ওই হারামী হুমায়ূন আহমেদের বইকে চটি বই বলত। সেই হারামী স্মরণ সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি যে কত মহান সাহিত্যিক ছিলেন সেটা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলল। আমার আর সহ্য হয় নি। আলোচনা সভা শেষ হওয়া মাত্র হারামীর বাচ্চাকে ছাই দিয়ে ধরলাম। ২৫ বছর আগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া মাত্র বলল, ওই রকম কোন কথা আমি কোন দিনও বলিনি। পুরোপুরি অস্বীকার করল। এই ভণ্ড গত ২৫ বছরে কী করেছে ? গাঁজার কলকি টানা ছাড়া কিছুই করে নি। ভণ্ড আর কাকে বলে ?

আজকে অনন্ত জলিলকে নিয়ে তামাসা করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে যাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য না করতে পারলে আমাদের নিজের ব্রাহ্মণত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে না। যারা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছে তারা আগামী ২৫ বছরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য কিছুই করবে না। কিন্তু পাকনা পাকনা কথা বলবে।
এরাই আবার অনন্ত জলিল মারা যাওয়ার পর তিনি যে কত মহান শিল্পী ছিলেন এবং তার কত ঘনিষ্ঠ লোক ছিলেন, সেটা প্রমাণ করতে গিয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলবেন।

কেন যেন আমরা শিল্পীদের সম্মান দিতে পছন্দ করি না, তাদের অপমান করে আমাদের খুব আনন্দ লাগে। যেই দেশের যেই রীতি। ।

তার ভুলভাল ইংরেজি ডায়ালগটার মূল ম্যাসেজটা আমার ভালো লেগেছে। ওটার ভুলটা সবার চোখে পড়ছে কিন্তু দেশপ্রেমটা কারো চোখে পড়ছে না।

আপনি বাংলাদেশেরটা খাচ্ছেন, সুতরাং দেশটাকে শ্রদ্ধা করুন। - চমৎকার কথা।

তিনি বলেছেন বলে সেটা পরিহাসের কথা হয়ে যায় না। কেবল বাংলা সিনেমার হিরো বলে তাকে পচানোর কিছু নাই। তার চেয়ে অনেক পচা নায়ক হিন্দি, তামিল, তেলেগু ভাষায় আছে। তারা কিন্তু তাদের পচায় না।
উদাহরণ হিসেবে রজনীকান্তকে নেয়া যেতে পারে। মাদ্রাজে রজনীকান্তকে দেবতার মতো সম্মান করা হয়।

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মধ্যে দোষ গুণ আছে। আলোচনা যদি করতে হয়, দোষগুণ সমেত আলোচনা হবে।

আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলি।

আমার এক বন্ধু জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমা জয়যাত্রার প্রধান সহকারী পরিচালক ছিলেন। এখন তিনি পরিচালক। একটা চমৎকার স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসে আছেন আজ ৫ বছর। কোন প্রযোজক পাচ্ছেন না। কেউ তার ওই সিনেমায় টাকা বিনিয়োগ করতে চায় না। কারণ ওই স্ক্রিপ্টে অশ্লীল কোন নাচগানের অবকাশ নাই। এই হল বাংলাদেশ। সমালোচনা করার পাশাপাশি এই বাস্তবতাটা নিয়াও কথা হোক।

ভালো ভালো সিনেমা অনেক নির্মাণ হয়। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম অনেক ভালো ভালো সিনেমা বানায়। সেই সিনেমাগুলোর টাকা তুলতে হয় টিভিতে চালিয়ে। কেউ হলে গিয়ে সেই সিনেমা দেখে না। কেবল ঢাকার দুই তিনটা সিনেমা হলে মুক্তি দিয়ে কোন সিনেমার লগ্নিকৃত টাকা তুলে ফেলা সম্ভব না।

এই ব্লগে অনেকে বাংলা সিনেমাকে পচায়। ওই পচানিকে অনেকে মুভি রিভিউ বলে তারিফ করে। ওটা মুভি রিভিউয়ের জাতও না । মুভি রিভিউ মানে মুভিকে পচানো না, ভালো মন্দ সব কিছু বলা ।

তারা কিন্তু কোন দিনও সিনেমা হলে যায় না, ভালো সিনেমা মুক্তি পেলেও যায় না, খারাপ সিনেমা মুক্তি পেলেও যায় না। তারা সিনেমা হলের দর্শক না। তারা টিভিতে হিন্দি সিনেমা দেখে বা হলিউডি মুভি দেখে। অথবা তারা ডাউনলোড করে সিনেমা দেখে। তারা যেই সব সিনেমা দেখে সেগুলোর মধ্যে এ রেটেড সিনেমাও থাকে, ফালতু সিনেমা থাকে, উরাধুরা সিনেমা থাকে, ভালো সিনেমাও থাকে। তারা কিন্তু ওই সব সিনেমাকে পচিয়ে কোন রিভিউ দেয় না। ওই সব সিনেমার রিভিউ হিসেবে তারা যা লিখে সেটা ওই মুভি কোম্পানী বিজ্ঞাপন মনে হয়। মনে হয়, তারা ওই মুভির প্রোমোশনাল লিখেছে। প্রশংসায় বিগলিত সেই সব মুভি রিভিউ। নিজের অজান্তেই তারা ওদের দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে।

আমার কাছে মনে হয়, এরা না বুঝেই অন্য কারো দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেকটা তারাও প্রপাগান্ডার শিকার। হিন্দি ও হলিউডি কালচার দ্বারা তারা প্রভাবিত । দেশজ কালচার বা দেশের মুভিকে ছোট করে তারা নিজেকে উচু জাতের বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করে থাকে। আপনি মুভি রিভিউ নামের এই পচানি লেখার আগে একবার অন্তত ভাবুন ---


আপনি কারো দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছেন না তো - নিজের অজান্তেই।


তাদের দেখার তালিকায় কখনও বাংলা সিনেমা থাকে না। এরা মূলত বাংলা সিনেমার দর্শকই না। কারণ হল বাংলা সিনেমা সম্পর্কে নেতিবাচক প্রপাগান্ডা। প্রপাগান্ডা চালিয়ে বাংলা সিনেমাটাকে এতটা খেলো করা হয়েছে যে, এখন যে কোন সিনেমা সেটা ভালো হোক বা মন্দ হোক, বাংলা সিনেমা হলেই পচানো হয়। সুতরাং ভদ্রলোকের সংজ্ঞায় এটা অবশ্যই যোগ করা আছে যে, তিনিই সুশীল ও ভদ্রলোক যিনি হলে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখেন না। যিনি হলে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখেন, তিনি ভদ্রলোক নন। ভালো সিনেমাগুলো এই নেতিবাচক প্রপাগান্ডার শিকার হয়ে সিনেমা হলে দর্শক পায় না। ফলে পুরো ইন্ডাস্ট্রি এখন ধুকছে। এই ভুয়া নেতিবাচক প্রপাগান্ডা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

বাংলা সিনেমাকে পচিয়ে আর যাই হোক, সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কোন লাভ হয় না। দরকার গঠনমূলক সমালোচনা। খুব বেশি দরকার। কিন্তু গঠনমূলক সমালোচনার ভীষণ ভীষণ অভাব। গঠনমূলক সমালোচনা করা ভালো, সেটা ভীষণভাবে দরকার আছে কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই পচানোর কোন মানে হয় না।

অফটপিক : এই পোস্টের মন্তব্য হিসেবে এসেছিল কথাগুলো। কিন্তু দেখলাম, এই বিষয়ে একটা আলাদা পোস্ট হতে পারে। সুতরাং ...
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:২৬
৭৭টি মন্তব্য ৭৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×