somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ কালো চশমা

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিএনজি থেকে নেমে কমলাপুর স্টেশনে যে দৌড়টা দিয়েছিলো আসিফ পুরাই সি্নেম্যাটিক। কিন্তু যেয়ে দেখে ট্রেন যেখানে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। ৩০ মিনিট লেট। ঢাকা টু রাজশাহী গামী। ধরমর করে নরমাল ক্লাসে ওর বগিতে উঠে বসল। সিট খুঁজতে যেয়ে দেখলো ফাকাই আছে। আরিব্বাস পাশের লাইনে তো সাদা ওড়না জড়িয়ে এক সুন্দরী মেয়ে। যাত্রা শুভ। সিটে বসতে হচকিয়ে গেল, তার সামনের সিটে কালো চশমা চোখে পড়া এক গম্ভীর চেহারার লোক। কি কঠোর তার চেহারা। তার পাশের জন ভিজে বেড়াল টাইপ।

রিয়া টেনশন নিয়ে ট্রেনে উঠেছে। ভয়ানক টেনশন। অজানার উদ্দেশ্যে যাত্রা। সাদিক কে সে ভালোবাসে। পাগলের মত। সাদিক রাজশাহীর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। বাসা থেকে রিয়ার বিয়ের কথা বার্তা শুরু হয়েছে। অবস্থা সুবিধার না দেখে সাদিক কে ফোন দিয়ে রাজশাহীর ট্রেনের টিকেট কেটে ফেলেছে। কয়েকদিন সাদিকের ইউনিভার্সিটির কোন মেয়ের কাছে থাকা যাবে এই ভেবে। কিন্তু ট্রেনে উঠে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। কোন এক ছোড়া হুড়মুড় করে ঢুকে তার পাশের লাইনের সিটে বসে গেল। আড়চোখে যে দুইবার তাঁকে দেখছে এটাও খেয়াল করছে রিয়া। তবে ভয় লাগছে সামনে বসা কালো চশমা পড়া লোকটার দিকে। দুই দুবার মাথা ঘুরিয়ে রিয়া কে দেখেছে। যেন রিয়ার যাত্রার উদ্দেশ্য বুঝতে চায়।

আক্ষরিক ও ভাবার্থ এই দুই অর্থে রাজশাহীতে পালিয়ে যাচ্ছে আসলাম সাহেব। এক বেসরকারি কোম্পানির হিসাব নিকাশ দেখতো সে। গতরাতে অফিসে ৬ লক্ষ টাকা ছিল। আজকে ব্যাংকে জমা দেওয়ার কথা আসলাম সাহেবের। ব্যাংকে না দিয়ে সেই টাকা সহিত পালাচ্ছে সে রাজশাহীর দিকে। ৬ লক্ষ তে এই যুগে কিছুই হয় না, কিন্তু আসলাম সাহেব আর ১৫ হাজার টাকায় দিন রাত গাধার খাটুনি খাটতে চাচ্ছে না। কিন্তু সমস্যা বাধায়ছে পাশের সিটের এই লোক। এক্কেবারে তার পাশে বসে আছে। কোন কথা নেই। তার দিকে একবার ঘুরেও তাকায়নি। কিন্তু এমন ভাবে বসে আছে যে সব সম্বন্ধে সে জানে।

আসিফের অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মন। যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। তবে আজকে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে সে একটা খারাপ কাজ করে ফেলেছে। রুম থেকে বের হবার সময় সে কি মনে বন্ধু নিবিরের গ্যালাক্সি এস ফোর টা নিয়ে চলে এসেছে। জানে রাজশাহীতে ১৫ হাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করা যাবে। এই টাকায় ৭ দিন আরামে ঘোরা যাবে। কিন্তু নিজেও জানে না এমন কাজ কেন করল সে।

ট্রেন চলা শুরু করেছে। চলছে যেন তার আপন গতিতে। রাজশাহীর উদ্দেশ্যে। কিন্তু এক নির্দিষ্ট বগিতে তিনজন যাত্রী বড়ই অস্বস্তিতে। আসিফ সমস্যা মানছে সামনের সিটে এই কালো চশমা পরা লোককে। সমস্যা কি লোকটার, মুখ বন্ধ করে তার দিকে তাকিয়ে আছি। এই চশমার কারনে চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু চোখ যেন তার ভিতরটা পরতে পারছে। এক অস্থির অবস্থা। মনে মনে ভাবল নিবির কত কষ্টে টাকা জমিয়ে শখের বসে মোবাইলটা কিনেছিলো। আসিফ কে চাইতেও হত না। এমনি নিবিরের কাছ হতে নিয়ে নিত। আর আজ হুট করে এই কাজ করে ফেলল। কেন? আর সামনের এই লোক কি তার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে? সে কি থট রিডিং পারে...

আশ্চর্য তো লোকটা, ভাবল রিয়া। চশমা একবারো খুললো না। এই যাত্রা পথে একবার তার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়েছে। কিন্তু কি ছিল সেই হাসিতে? বিদ্রূপ? রিয়া তার বাবা মা ছোট ভাই কে ছেড়ে চলে যাচ্ছে রাজশাহীতে? কি হবে বাসায়? কি হবে তার পরিবারের সম্মানের? রাজশাহীতে যেয়েও যদি খারাপ কিছু হয়? একবারো কি ভেবে দেখেছে সে? প্রশ্নগুলো মনের মধ্যে আলোড়ন তুলছে। আর আলোড়ন টাকে ঝড় বানিয়ে ফেলেছে কালো চশমা পরা লোকটার হাসি।

একটু কাশির মত আওয়াজ দিল লোকটা। ট্রেনের বাকি কেউ খেয়াল না করলেও চমকে উঠল আসিফ আর রিয়া। কিন্তু ভয় পেয়ে গেল আসলাম সাহেব। নিশ্চিত লোকটা বুঝে ফেলেছে মনের কথা। লোকটা কি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ? মনে পরে গেল তার অফিসের বসের এক বন্ধু ডিবির বড় অফিসার। সে কি বুঝতে পেরে আগে থেকে লোক পাঠায়ছিল? কিছুক্ষণ পর হয়ত হাতকড়া পরবে তার হাতে। এর চেয়ে টাকাটা রেখে পালিয়ে যায়? টাকাটা পেলে নিশ্চয় কোম্পানি পিছনে লাগবে না। এই লোক বুঝার আগে নেমে যেতে হবে। সামনে গাজীপুর আসছে, হ্যা এইখানে নামতে হবে।

রিয়া সিদ্ধান্ত নিলো সবার প্রথমে, অনেক হয়েছে। এই কালো চশমা লোক টা সব বুঝে। আর থাকা যাবে না। গাজীপুরে নেমে যাবে সে। রেল স্টেশন থেকে খুব সহজে পৌঁছে যাওয়া যাবে বাসের কাছে। বাসে উঠে সোজা ঢাকা। সাহস করে বাবা মার সাথে সাদিকের ব্যাপার টা আলোচনা করি। নিশ্চয় বুঝবে।

ধুস শালা রাজশাহী যাবো না। গাজীপুরেই নেমে যাবো। এই ভাবল আসিফ। গাজীপুর আসুক। এই লোকের সাথে রাজশাহী যাওয়া কুফা। তার আগে ছোট্ট একটা কাজ করতে হবে। নিবিরের আরেকটা নাম্বারে ফোন দিয়ে বলতে হবে, “দোস্ত সরি ভুল করে তোর গ্যালাক্সি এস ফোর নিয়ে আসছি। গাজীপুরে নেমে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি”। গাজীপুরে আসিফের পরিচিত বন্ধু আছে। সে পৌঁছে দিবে। সিম্পল কাজ। এখনই উঠে যেয়ে ফোন দিলে হয়। কিন্তু চশমা আলার পাশের লোকটা কাগজে কি লিখছে?

আসলাম সাহেব কাগজে বের করে লিখলো, “ আমার সিটের উপরে একটা ব্যাগে ৬ লক্ষ টাকা আছে। আপনারা কেউ এইটা কোম্পানির ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়েন”। দিয়ে কোম্পানির ঠিকানা। টিটির হাতে দিলে হবে। আর একটা ফোন করে দিলে ব্যাস। টিটি নিশ্চয় তার মত টাকা মেরে নিবে না

গাজীপুরে এসে ট্রেন থামলো। সবার আগে আসলাম সাহেব ঝড়ের বেগে নেমে গেল ব্যাগ নিয়ে। আসিফ খেয়াল করল না যে আরেকটা ব্যাগ সে রেখে গেছে। ওমা, মেয়েটাও দেখি নেমে যাচ্ছে। গাজীপুরে বাসা নাকি? এতক্ষণ চিন্তায় ওর দিকে খেয়াল করা হয়নি। নিবির কে ফোন দেওয়া হয়েছিল। ঐ ছেলে খালি একটা কথায় বলল, “ধুস শালা একটু খেয়াল করবি না”। আসিফ নিজেই নেমে যাবে। এমন সময় একজন উঠল ট্রেনে, আসিফের সিটের সামনে এসে বলল, “ইকবাল সাহেব, হাত টা দেন, আপনাকে নামিয়ে দেয়”।

ইকবাল, তাহলে ইকবাল নাম লোকটার। কিন্তু নামিয়ে দিতে হবে কেন? আসিফের দিকে তাকিয়ে অপর ব্যক্তি বলে উঠল,”ধন্যবাদ ভাই, আপনারা ইনাকে দেখে রেখেছেন, উনি চোখে দেখতে পান না, তাই কালো চশমা। একা একা আসেন না। কিন্তু এইবার সাথে আসার কেউ ছিল না”। পুরাই থ হয়ে গেল আসিফ। এই জন্যে... খালি হালকা গলায় বলল, “ হেল্প করব কোন?” এইবার কথা বলে উঠল কালো চশমা পরা ইকবাল সাহেব। “ ধন্যবাদ আপনাকে, একাই পারবো আমরা”।

২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×