somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিলেটের ইতিহাস পর্ব ৬

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সিলেট ইতিহাস পর্ব ১
সিলেট এর ইতিহাস ২ য় পর্ব
সিলেটের ইতিহাস ৩য় পর্ব
সিলেটের ইতিহাস পর্ব ৪
সিলেটের ইতিহাস পর্ব ৫
যার ফলে ইংরেজ শাসনকে মানুষ সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেনি । ভিতরে ভিতরে মানুষের মনে বিদ্রোহ পুঞ্জীভূত হতে থাকে । ১৭৮৯ সালে লিণ্ডসে সিলেট থেকে চলে গেলে তার স্থানে জন উইলিস সিলেটের কালেক্ট নিযুক্ত হলেন । উইলিস সিলেট আসিয়া প্রায় লক্ষ টাকা ব্যয়ে সিলেটের জেল নির্মান করেন । ১৭৮৯ সালের জুলাই মাসে জন উইলিস সমগ্র সিলেটের লোক সংখ্যা গণনা করে । তাতে সিলেটের অধিবাসী সংখ্যা ৪৯২৯৪৫ এ পৌঁছে । ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে কোম্পানির শাসন চলেছিল মূলত এবং মুখ্যত লাভজনক ব্যবসায়িক দৃষ্টি ও রীতি পদ্ধতিতেই । আর ইংরেজ আয়করের অর্ধেক মালিক হয়ে পড়ে এবং অপরার্ধেক সরকারের ব্যবহারের জন্য রয়ে যায় । দেশীয় অর্থনীতির স্বনির্ভর সত্তাকে পরনির্ভর করার কার্যক্রম শুরু করা হয় । বৃটিশ সরকার এক চার্টার অ্যাক্ট বলে কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যাধিকার বিলুপ্ত করে এবং দেশের শাসনভার কোম্পানির উপর ন্যস্ত করে । এতে নবাবগণ ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েন । এই সুযোগে কোম্পানির লোকেরা খাজনা আদায়ের নামে অবাধ লুণ্ঠন এবং অত্যাচার শুরু করে দেন । রাজস্ব আদায়ের সুবিদা জন্য সিলেটে ১০ টি কেন্দ্র বা কালেক্টরী বিভাগ স্থাপিত করা হয় । এ কেন্দ্র গুলোর মধ্যে উত্তর শ্রীহট্টে ছিল পারকুল ও তাজপুর এবং জয়ন্তীয়াপুর এই তিনটি । করিমগঞ্জে লাতু এবং দহ্মিণ শ্রীহট্টে নয়াখালি, রাজনগর ও হিঙ্গাজিয়া । হবিগঞ্জেঃ নবীগঞ্জ, লস্করপুর ও শঙ্করপাশা এবং সুনামগঞ্জের কালেক্টরী বিভাগ ছিল রসুলগঞ্জ । তখন সিলেটে নবাবি আমলের নির্দিষ্ট ১৬৪ পরগণা ছিল । ১৭৯৩ সালে উইলিস সিলেট ত্যাগ করেন।

জন উইলিস'র পর ১৭৯৪ সালে রেইট ও জর্জ ইংলিস নামক দুই ব্যক্তি মিলিত হয়ে বর্তমান ছাতক শহরে রেইট ইংলিস এণ্ড কোম্পানী নামে যৌথ কারবার স্থাপন করে চুনা ব্যবসা শুরু করেন । এই কোম্পানীর অভ্যুদয়ের পুর্বে ছাতক একটি সামান্য গ্রাম ছিল। তত্পুর্বে একজন সন্ন্যাসী ভূমীতে একটি ছাতি পোথিয়া তার ছায়ায় বসে তপ করতেন। সন্যাসীকে কেন্দ্র করে লোক আগমন ঘটলে, ক্রমে এই স্থান ক্ষুদ্র হাটে পরিণত হয়। কালক্রমে ছত্রক বা ছাতক বাজার আখ্যা হয়েছে । এই ছাতক বাজারকে কেন্দ্র করে ইংলিস এণ্ড কোম্পানী পূর্ণ উদ্যমে চুনার ব্যবসা চালিয়ে যায়। কোম্পানী চুক্তির করে লোকদের দিয়ে চুনা সংগ্রহ করে কলিকাতায় চালান করত । ১৭৯৭ সালে জন অমুটি নামের কালেক্টর সিলেট আসেন । অমুটির সময় সিলেটে ইট দিয়ে তিন কোঠা বিশিষ্ট এক দালান তৈরি করেন। এ দালানে যতাক্রমে এক কোঠায় সরকারী কাজপত্র সংরক্ষন করা হত, অন্য কোঠায় কর্মচারিদের অফিস ও আরেকটিতে ছিল বিচারালয়। ১৭৯৮ সালের প্রারম্ভে বিভিন্ন প্র্যোজনিয় বস্তুর দাম বৃদ্ধি হলে উত্কৃষ্ট চালের মণ বার আনায় দাড়ায়।

এমনি অবস্থায় ১৮০০ সালে সিলেট শহরে বসানো গৃহ কর । একদিকে দ্রাব্যাদির মুল্যবৃদ্ধি এর মধ্যে গৃহ কর বসানোর কারণ মানুষে কষ্ট বেড়ে যায়। ১৮০৩ সালে অমুটি বিদায় হলেন অস্থায়ী কালেক্টরদের আগমনের কারণ সিলেটবাসীর অভাব অভিযোগের অগ্রগতি থেমে যায় । ১৮০৭ থেকে ১২ সালে অনেক নতুন আবাদি ভূমী বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল । এই বন্দোবস্তই তালুক হালাবাদি মুমাদি ইত্যাদি নামে অভহিত হয়। ১৮১১ সালে গৃহ কর নিয়ে নানা ভাবে উৎপড়িত হন সিলেটের মানুষ । এসময় বর্তমান বন্দর বাজারের নিকট দুপুড়ি হাওয়রে উত্তর পশ্চিমে বিস্তৃত রাস্তার পাশের কিছু সংখক দোকান-পাট ছিল। গৃহ করের চাপের কারণ অনেক গুলো দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় । বর্তমান বন্দর বাজার অনেকাংশেই জলাভুমীতে পরিণত ছিল । পরে এ স্থানে মাটি ফেলে ভরাট করা হলে পুর্বে উল্লেখিত দুপুরি হাওয়র হতে বর্তমান বাজার পর্যন্ত দোকান স্থাপন করা হয়। যা বর্তমানে বন্দর বাজারে পরিণত হয় । ১৮২৪ সালে আসাম সম্পুর্ণ ভাবে ইংরেজদের দখলে আসে। এসময় জয়ন্তীয়ার মধ্যদিয়ে আসামে যাত্রা পথ ছিল । কিন্তু ব্রহ্ম যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ায় এটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন আসামে যাতায়ত সুবিদার জন্য পাণ্ডুয়া চেরাপুঞ্জি হয়ে শিলং পর্যন্ত নতুন রাস্তা প্রস্তুয় করা হয় ।


সিলেট স্বাধীনতা আন্দোলন
ইংরেজদের অত্যাচার নিপিড়নে অতিষ্ট কিছু সংখক মুসলমান নেতৃবৃন্দের চেষ্টায় ১৭৮২ সালের মহররম মাসে মুসলমানদের ধর্মীয় উত্সবের দিনকে কেন্দ্র করে ইংরেজ বিরোধী বিদ্রোহের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়। কিন্তু ইংরেজ অনুরক্ত কয়েকজন লোক লিন্ডসের কাছে এ গোপন পরিকল্পনার কথা ফাঁস করে দেয়। যার ফলে লিন্ডসে পরিস্তিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। এদিকে মুসলমানরা ধর্মীয় কাজ সম্পূর্ণ করে যখন বিদ্রোহের ঘোষণা করেন, সাথে সাথে ইংরেজরা ঝাপিয়ে পড়ে বিদ্রোহিদের উপর। ইংরেজ বাহিনীর হাতে পিস্তল আর বন্দুক, মুসলমান বিদ্রোহিদের হাতে তলোয়ার । এদিনের লড়াই প্রচণ্ড রুপ ধারণ করলো এতে ইংরেজদের গুলিতে শহীদ হলেন সৈয়দ হাদি ও সৈয়দ মাদি সহ আরো অনেক। সিলেটের এ বিদ্রোহকে ভারতে ইংরেজ বিরোধী প্রথম বিদ্রোহ বলে ঐতিহাসিক তাজুল মোহাম্মদ সহ আরো অনেকে লিখেছেন।
১৭৮১ ও ১৭৮৪ সালে পরপর দুটি বিষম বন্যায় সমৃদ্ধপূর্ণ সিলেট ভূমী দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হয়। একদিকে ইংরেজদের লুটরাজ ও উল্লেখিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ বিষম অন্য অভাব দেখা দেয়। সিলেটের তদানিন্তন কালেক্টর লিন্ডসে তার আত্মজীবনিতে লিখেছেন; উল্লেখিত করাল দুর্ভিক্ষ হতে মুক্তি পেতে এ অঞ্চল হতে যে ধান বিক্রয়ের জন্য কলিকাতায় পাঠানো হয়েছিল, তা পুনরায়ন করিতে নৌকা পাঠিয়ে ছিলেন। তাতে কিয়দাংশ ধানই আনতে পেড়েছেন। ইংরেজ দুশ্যাসন ও দুর্যোগে পতিত সিলেটবাসী ধীরে ধীরে ক্ষুব্ধ হয়ে ইংরেজদের বিরোদ্ধে বিদ্রোহে ঘোষণা করেন । ১৭৮২ তে সংঘটিত হয় খাসিয়া বিদ্রোহ, ১৭৮৬ সালে চরগোল্লায় বিদ্রোহ, ১৭৯০ সালে জমিদারদের সাথে বিদ্রোহ । উল্লেখ্য যে, তাজুল মোহাম্মদ সহ অনেক ঐতিহাসিকদের মতে উভয় বাংলার ফকির সন্ন্যাসী সংঘটিত হয়ে ১৭৬৩ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সুচনা করছিলো, তারই ধারাবাহিকতায় জনশক্তি বাড়ানোর নিমিত্তে অলিদের মাজার সহ বিভিন্ন মন্দির ও আখরায় ফকির সন্ন্যাসীরা দল বেঁধে ঘুরা ফেরা করতেন ।

তারা বিশেষ ধরণের পোশাক পরিধান করতেন এবং হাতে লাঠি এবং ত্রিশুল বহন করতেন । ব্রিটিশ কোম্পানীর শাসকরা ফকির সন্ন্যাসীদের এধরণের চলা-ফেরা সংন্দেহের চোখে দেখত। তাই ১৭৭৩ সালের ২১ জানুয়ারী ভারতের বড়লাট ওয়ারেন্ট হেষ্টিংস ফকির সন্ন্যাসীর লাঠি ত্রিশুলসহ ভ্রমন এবং চাঁদা ও বিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যার ফলে ফকির সন্ন্যাসীরা একপর্যায়ে বিদ্রোহে মেতেউঠেন। অনেক হতাহতির পর ১৮০০ সালের দিগে ভারত বর্ষের ঐতিহাসিক ফকির সন্ন্যাসীর এ আন্দোলন প্রায় স্তিমিত হয়ে আসে। তখন সিলেটে আগা মোহাম্মদ বেগের নেতৃত্বে ফকির সন্যাসীরা উত্তপ্ত হয়ে উঠেন। মোহাম্মদ বেগ ১৭৯৯ সালে কাছার হতে ১২'শ ফকির সন্যাসীসৈন্য সহ সিলেটে প্রবেশ করেন। সাথে সাথে এখানকার জমিন্দারগণ তাকে সমর্থন জানিয়ে ইংরেজকে খাজানা প্রদান বন্ধ করে দেন । ফলশ্রুতিতে ইংরেজরা বিন্দাশায় আগা মোহাম্মদের আস্তানা আক্রন করে প্রথমে পারাজিত হয় । পরবর্তিতে ব্রিটিশ ভারতের রাজকীয় বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য পাঠানো হলে, ওদের সাথে যুদ্ধে আগা মোহাম্মদের বাহিনী পেরে ওঠেনি । ফলে প্রাণ দিতে হয় হাজারও সৈন্যকে। এদিকে আগা মোহাম্মদ বেগ উপায়ন্তর না দেখে ত্রিপুরার দিকে পালিয়ে যাওয়ার পথে ইংরেজদের হাতে বন্দি হন এবং ধরা পড়েন তার অনুসারী খাকীশাহ, রামপুর শাহ, নাজির শাহ ও রহিম শাহ সহ অনেক । ইংরেজরা আগা মোহাম্মদের বিচার ঢাকায় না করে কলিকাতায় নিয়ে যায় এবং যাবতজীবনের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৩
১১টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×