somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিলেটের ইতিহাস পর্ব ৭

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সিলেট ইতিহাস পর্ব ১
সিলেট এর ইতিহাস ২ য় পর্ব
সিলেটের ইতিহাস ৩য় পর্ব
সিলেটের ইতিহাস পর্ব ৪
সিলেটের ইতিহাস পর্ব ৫
সিলেটের ইতিহাস পর্ব ৬
১৭৮৬ সালে নভেম্বর মাসে প্রতাপগড়ের জমিদার রাধারাম ব্রিটিশ কোম্পানিকে রাজস্ব দিতে অস্বীকার করে নিজেকে স্বাধীন নবাব ঘোষনা করেন এবং চরগোল্লায় বিদ্রোহ করেন । রাধারামের কুকি সৈন্যবাহিনীর বিরোদ্ধে রবার্ট নিন্ডসে ডেভিডসনের নেতৃত্বে সৈন্য প্রেরিত হয় । খবর পেয়ে রাধরাম তার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ঐতিহাসিক শন বিলের পাড়ে ঘাটি স্থাপন করে । ঐতিহাসিক সৈয়দ মুর্তাজা আলী শনবিল সম্পর্কে লিখেছেন যে তখনকার সময়ে শনবিল ছিল অপ্রসর । সুর্দীঘ এবং গভীর তরঙ্গসংকুল । এই শনবিল সম্পর্কে প্রবাদ ছিল । শনবিলে নড়ে চড়ে রাতায় পরান মারে । শন বিলের উত্তরাংশকে রাতা বিল বলা হয় । ইংরেজ সৈন্যরা শন বিল দিয়ে রাধারামকে আক্রমন করার পরিকল্পনা করেন এবং নৌকা যোগে সৈন্য বাহিনী নিয়ে শন বিল দিয়ে যাত্রা শুরু করেন । ইংরেজরা গোলা বারুদ এবং কামান দিয়ে নৌকা থেকেই শন বিলের তীরে অবস্থানরত রাধারামের সৈন্যবাহিনীর উপর আক্রমন চালান । একদিকে শন বিলের তরঙ্গময় স্রোত আর অন্যদিকে রাধারামবাহিনীর তীর ধনুকের আঘাতে ইংরেজ বাহিনী আর তীরে ভিড়তে না পেরে প্রাণ হারান । পরবর্তিতে ইংরেজরা রাধারামের বন্ধু কানুরামের সহযোগিতায় চরগোলার গোপন স্থল পথের সন্ধায় পেয়ে সে পথ ধরে আবার চরগোল্লায় আক্রমন করেন রাধারামকে বন্দী করেন এবং বাড়ি ঘর পুড়িয়ে ভস্ম করে চরগোল্লা জয় করেন । ১৮২৬ সালে কুকিদের সরদার বুন্তাই'র নেতৃত্বে কুকিরা এবং ১৮২৭ সালে সিলেটের পাণ্ডুয়ায় খাসিয়ারা বিদ্রোহ করেন । ১৮৫৭ সালে সিপাই বিদ্রোহ নামের ভারত ব্যাপি বিষম বিদ্রোহ ঘটিত হয় । সে বিদ্রোহের একটি স্ফুলিঙ্গ সিলেটে ইংরেজদের বিদগ্ধ করতে ধাবিত হলে সিলেটে সংঘটিত সিপাই যুদ্ধ । ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে দেশীয় সৈন্য বাহিনী যখন বিদ্রোহ ঘোষনা করে সে সময় চট্টগ্রামের ৩৩ নং সীমান্ত রক্ষী এবং পদাতক বাহিনী চট্টগ্রামের অস্ত্রগার ও ট্রেজারী লুট করে এবং জেলখানার বন্ধি মুক্তি করে তারা পালিয়ে আসেন সিলেটের দিকে । ত্রিপুরা পার হয়ে সিলেট প্রবেশ করলে সিলেটের মৌলভীবাজার অঞ্চলের পৃথিমপাশার জমিদার গউছ আলী খান তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেন পাহাড়ি অঞ্চলে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন । অন্যদিকে ইংরেজ প্রেরিত এক বিরাট বাহিনী বিদ্রোহী সিপাইদের গতিরোধ করতে প্রতাপগরের দিকে অগ্রসর হন । চট্টগ্রাম হতে আগত সৈন্য সহ তিনশর এবং বেশী স্বদেশী বাহিনী ইংরেজদের মোকাবেলা করতে বড়লেখা থানার পাশে লাতু নামক স্থানে অবস্থান নেন এবং সেই লাতু অঞ্চলে বিদ্রোহী সিপাইদের সাথে ইংরেজ বাহিনীর মুখোমুখি যুদ্ধ হয় । তখন বিদ্রোহী সিপাইদের গুলিতে ইংরেজ সেনাপতি মিষ্টার বিং সহ আরো অনেক ইংরেজ সৈন্য নিহত হন । সে যুদ্ধ ৩রা ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২৩শে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী থাকে । শহীদ হলেন অনেক দেশীয় সিপাই । অবশেষে ইংরেজ বাহিনী সুবেদার অযোধ্যা নামক যোদ্ধার রণ কৌশলে বিদ্রোহী সিপাইদের অনেক জন আহত হলে বাকিরা পালয়ন করেন । এরপর ইংরেজরা বিভিন্ন স্থানে ধাওয়া করে পলাতক সিপাইদের নিহত এবং বন্দি করে সিপাই বিদ্রোহ দমন করেন ।
১৮৭৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আসাম প্রদেশ গঠিত হয় । তখন আসামের ব্যয়ের তুলনায় আয় ছিল অতি নগণ্য । স্থায়ী প্রশাসন পরিচালনায় শিক্ষিত লোকও অভাব ছিল । সিলেট জেলায় লোক বসতি অপেক্ষাকৃত ঘন ছিল । এখানকার লোক শিক্ষাদীক্ষায়ও অগ্রসর ছিল । সিলেটের নিম্নাঞ্চলে ধান ফসলে ভাণ্ডার ছিল । তাছাড়া সে অঞ্চলে কয়লা ও পাথর এবং চুনা প্রভৃতি হতে আয় ছিল প্রচুর । তাই সিলেটের লোকবল ও সম্পদের আয়কে কাজে লাগিয়ে আসামকে উন্নত করতে সেই জেলাকে আসামের সাথে সংযুক্ত করতে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা জারি করেন । সিলেট বাংলার অংশ তাই সিলেটবাসী বাংলার সাথেই থাকতে চান । তাই তারা সরকারের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠেন । প্রশাসন সিলেটবাসীর তিব্র প্রতিবাদে সিলেটকে আসামের সাথে সংযুক্ত করতে ব্যর্থ হয় । তখন ব্রিটিশ ভারতের বড় লাট নর্থব্রুক সিলেটে আসেন । সিলেটের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বড় লাটের সাথে সাক্ষাত করে আসামে যুক্ত করার প্রতিবাদলিপি পেশ করেন। বড় লাট নর্থব্রুক সিলেটে ডিপুটি প্রশাসন সৃষ্টি করে সিলেটের উন্নয়ন গতিশীল রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে নতুন প্রস্তাবের ভিত্তিতে সিলেটকে আসামে যুক্ত করেন ।

বঙ্গভঙ্গ এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের কথা
১৮৮৫ সালে থিওজোফিক্যাল সোসাইটির কিছু সদস্য কংগ্রেস প্রতিষ্টিত করার কারনে গণ আন্দোলনের শুরু হয় । সে সময় সিলেট অঞ্চল থেকে বিপিন চন্দ্র পাল বোম্বের কংগ্রেসে যোগদান করত আন্দোলনে সিলেটবাসীর পক্ষে বহু অবদান রাখে । ১৯০৫ সালে ধর্মীয় বিভাজনের ভিত্তিতে প্রথম পশ্চিমবঙ্গ ভারতীয় বঙ্গ অঞ্চলটিকে পূর্ববঙ্গ থেকে পৃথক করা হলো । হিন্দুরা পশ্চিম বঙ্গ এবং মুসলমানরা পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন । এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পশ্চিম বঙ্গ হতে ব্যাপক ভাবে গণ আন্দোলন শুরু করা হয় । মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব্বঙ্গের মুসলমানরা বিভাগিয় শাসন প্রতিষ্টার আশায় যখন ঢাকায় নতুন নতুন অট্টালিকা যেমনঃ বিচার বিভাগ, হাইকোর্ট, সেক্রেটারিয়েট ও আইন পরিষদ প্রভৃতি নির্মাণে উজ্জীবিত, তখনই এর বিরুদ্ধে প্রশ্চিম বঙ্গ হতে ষড়যন্ত্র শুরু করা হয় । জাতীয়তাবাদি হিন্দু নেতৃবৃন্দ একে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে অনৈক্য এবং মাতৃভূমী বিভক্তিকরণ ইত্যাদি আখ্যায়িত করে তিব্র আন্দোলন আরম্ভ করেন । ফলশ্রুতিতে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয় এবং সিলেটকে আবার আসামে সংযুক্ত করা হয় । বঙ্গভঙ্গের পর থেকে কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দ সম্মেলিত ভাবে যখন ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনে ঝাপিয়ে পরেন । সে সময় সিলেটবাসীও রাজনীতির সাথে আরও ঘনিষ্ট হয়ে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন । বিভিন্ন সময়ে সিলেটের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ খেলাফত আন্দোলনে কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে সিলটবাসীর পক্ষেও অবদান রাখেন । সিলেট শহরে বিভিন্ন সময় অনুষ্টিত হয়েছে রাজনৈতিক সম্মিলন । বালাগঞ্জের আরঙ্গপুর গ্রামে ১৯১৮ সালে অনুষ্টিত উলামা সম্মেলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন মৌলানা আব্দুল হক চৌধুরী, সৈয়দ আফরুজ বখত । ১৯২০ সালে ২২ ডিসেম্বর সর্বভারতীয় কংগ্রেস এবং খেলাফত সম্মিলন অনুষ্টিত হয় ভারতের নাগপুরে । সিলেট থেকে মুসলিমলীগের প্রতিনিধি মৌলানা আব্দুর রহমান সিংকাপনী অনেকজন সহকর্মি নিয়ে উক্ত সম্মিলনে অংশগ্রহন করেন । ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধী মৌলানা আবুল কালাম আজাদ এবং মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ খেলাফত কমিটির আমন্ত্রনে সিলেটের শাহী ঈদগাহ মাঠে অনুষ্টিত সমাবেশে যোগ দিয়েছেন । ১৯৩২ সালে সুরমাভ্যালি কৃষক সম্মিলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন শাহ ইসমাইল আলী । ১৯২১ সালে দুইদিন ব্যাপি মৌলভীবাজারে অনুষ্টিত হয় ভারতীয় খেলাফত সম্মিলন । সে সম্মিলনে ভারত খেলাফত আনন্দোলনের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দের মধ্যে ভারত হতে আসেন প্রখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবিদ মৌলানা হুসেন আহমদ মদনী এবং সরোজিনী নাইডু । সমাবেশের আয়োজক ও অভ্যর্থনা কমিটির প্রথম কাতারের নেতৃবৃন্দ ছিলেন । মৌলানা নাজির উদ্দীন, মৌলানা আব্দুর রহমান সিংকাপনী ডঃ মুর্তজা চৌধুরী, মৌলানা আব্দুল্লা বি, এল ও সৈয়দ আব্দুস সালাম । ১৯২৭ সালে সিলেটের বর্তমান শারদা হলে অনুষ্টিত হয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন সম্মিলন । সে সম্মেলনের অথিতিবৃন্দ ছিলেন বিদ্রোহ কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং বেগম যুবেদা খাতুন চৌধুরী । এভাবেই সিলেটবাসীর উৎসাহে আমন্ত্রীত হয়ে বিভিন্ন সময় ভারতে ব্রিটিশ বিরুধী আন্দোলনের প্রথম কাতারের নেতৃবৃন্দ সিলেটে যান । এবং সিলেটবাসীকে আন্দোলের জন্য উৎসাহিত করেন । ১৯৩৬ সালে সিলেটের সুনামগঞ্জে সংঘটিত হয় কৃষক আন্দোলন । ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সর্বগ্রাসী সংগ্রামে ফলে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ১৯৩৭ সালে বাংলাসহ বিভিন্ন প্রদেশে নির্বাচন অনুষ্টিত হয় । হিন্দু প্রধান প্রদেশ গুলোতে কংগ্রেস মন্ত্রীসভা গঠন করেন । ১৯৩৭ সালে জিন্নাহ ঘোষণা করেন ভারতবর্ষে জাতীয় গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্টা করতে মুসলিমলীগ সবিশেষ আগ্রহী। রাজনৈতিক পটভূমিকায় লৌঙ্হ্মনতে মুসলিমলীগের অধিবেশন হলে, এতে শেরে বাংলা ফজলুল হক উত্তাপিত ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব গৃহিত হয় । লাহোর প্রস্তাবে ভারতের উত্তর ও পশ্চিম এবং উত্তর ও পূর্বে দুটি স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করেন । মহাত্মা গান্ধী সহ জাতীয়াবাদি দল কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ এর বিরোধিতা করেন । ১৯৪২ সালে কংগ্রেস ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলন ভারত ছাড়ো Quit India সুচনা করা হয় । সাথে সাথে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে আন্দোলন জোরদার করা হয় । এতে ব্রিটিশরা বাধ্য হয়ে ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন । সে সাথে হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা রুপ ধারণ করে । ভারত জুরে উক্ত সম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হলেও সিলেট অঞ্চল তখনঅও শান্ত ছিল বলে উল্লেখ পাওয়া যায় ।

পাকিস্তানে অর্ন্তভুক্তির কথাঃ
অবেশেষে ইংরেজ বিদায়ের ঘন্টা বাজিয়ে চললেন । ইংরেজ বিদায়ের সময় ভারতকে বিভক্ত করার পরিকল্পনায় পাকিস্তান সহ দুই বাংলাকে দিখণ্ডিত করা উদ্যোগ নিলেন । সিলেট তখন আসাম প্রদেশের একটি জেলা থাকা সত্তেও মুসলিম প্রধান জেলা ছিল । তাই সিলেট ভারতের না পাকিস্তানে থাকবে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠে । ১৯৪৬ সালে ২৩ শে মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সিলেটে আসেন । বিরাট জনসভায় মুসলমানদেরকে পাকিস্তানের পক্ষে সিন্ধান্ত গ্রহনে উৎসাহিত করে বক্তব্য রাখেন । ১৯৪৭ সালে ৩রা জুন ইংরেজরা ভারত বিভক্তির ঘোষণা দিলেন । ঘোষণা অনুযায়ী সিলেট মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ পুর্ব বঙ্গের সাথে যোগ দেবে কি না তা নিয়ে গণভোটের মাধ্যমে নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত ঘোষিত হলো । শুরু হয় কংগ্রেস এবং মুসলিমলীগের নেতৃবৃন্দের গণ সংযোগ । একদিকে কংগ্রেস নেতা বসন্ত কুমার দাস, বৈদ্যনাথ মুখার্জী, ব্রজেন্দ্র নারয়ণ চৌধুরী প্রমুখ সিলেটকে আসামের সাথে রাখার জন্য প্রাণপণ প্রচারণা চালান । অন্যদিকে নুরুল আমিন,হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন, তমিজ উদ্দীন, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, দেওয়ান আব্দুল বাছিত, ছাত্র নেতা শেখ মুজিবুর রহমান, জিল্লুর রহমান সহ আরো অনেক নেতৃবৃন্দ সিলেটে এসে সিলেটকে পুর্ব বঙ্গ বাংলাদেশ এর সাথে রাখার জন্য প্রচারণা চালাতে থাকেন । অবশেষে ১৯৪৭ সালের ৬ এবং ৭ই জুলাই মাসে গণভোট অনুষ্ঠিত হয় । গণভোটে কমিশনার নিযুক্ত আসামের লিগেল রিমমব্রেসার এইচ এ ষ্টর্ক এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়ীত্ব নেন ডিপুটি কমিশনার ড্রামব্রেক। সিলেটের জনগণ নির্বাচনে ৫২ হাজার ৭ শত ৮০টি ভোটে পাকিস্তানের পক্ষে রায় দেন । কিন্ত রেডক্লিফ রোয়েদাদ অনুযায়ী করিমগঞ্জ মহকুমার পাথারকান্দি, রাতাবাড়ি ও বদরপুর থানা এবং করিমগঞ্জ থানার অধিকাংশ সিলেট থেকে বিচ্যুত হয়ে আসামভুক্ত হয়ে ভারতে সাথে চলে যায় ।

ভাষা আন্দোলনের কথা ।
১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীন হয় এবং ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয় । মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান এবং হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত হলো ভারত। সে বিভক্তির সময় বাংলার মুসলিমপ্রধান পূর্ব ভাগ পুর্ব পাকিস্তান নামে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং হিন্দু প্রধান পশ্চিম ভাগ পশ্চিমবঙ্গ নামে ভারতে চলে যায় । পাকিস্তান নামে দেশটি সৃষ্টি হওয়ার পর, তার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশ এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও বৈষম্য অব্যাহ্ত থাকে । স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের আগ পযন্ত দীর্ঘ ২৩টি বছর ছিল পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ বঞ্চনার ইতিহাস ।ভৌগোলিক ও সংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিল রাজনৈতিক দন্দ্ব । পাকিস্তান সৃষ্টি হলে প্রথমেই আঘাত করা হয় পূর্ব বাংলার ভাষার উপর । রাষ্ট্রের গৃহীত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ৬ কোটি ৯০ লাখ অধিবাসীর মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখই বাংলাভাষী এবং উর্দু সহ আরো অন্যান্য ৭টিরও বেশী ভাষায় কথা বলতো ২ কোটি ৫০ লক্ষ। অর্থাৎ জনসংখার শতকরা ৬৪ ভাগ ছিল বাংলাভাষী আর শতকরা ৩৬ ভাগ লোক অন্যান্য ভাষায় কথা বলতো। তবুও পাকিস্তানের শাসকগোষ্টি শুধু বাঙালীদের দাবিয়ে রাখার জন্য উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়। পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষার সম-মর্যাদার দাবীতে শুরু হয় আন্দোলন। বাঙালী জাতীয়তাবাদি নেতৃবৃন্দ পাকিস্তান গণপরিষদে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে, ঢাকায় এবং কলকাতায় সর্বস্থানে বাংলাভাষার দাবি উত্থাপন করা হয় । শাসক গোষ্টির রাষ্ট্রভাষা উর্দু এর প্রস্তাবের বিরোধীতা করেন । পত্র পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখেন, আব্দুল হক, মাহবুব জামাল জাহেদী, ফররূখ আহমদ, ডঃ কাজী মোতাহের, আবুল মনসুর, আবুল কাশেম এবং ডঃ এনামুল হক সহ আরো অনেকে । আর ওই সময় বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে কলকাতা থেকে প্রকাশিত পত্র পত্রিকায় সব চেয়ে বেশী লেখা বের হয় ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর । বাংলাদেশের ভেতর থেকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা' করার দাবি নিয়ে ১৯৪৭ সালের আগষ্ট মাসে প্রথম লিখা বের হয় সিলেটের আল ইসলাহ পত্রিকায় । প্রবন্ধ লিখেন মুসলিম চৌধুরী । সে লিখার সূত্র ধরে ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখে প্রকাশ্যে জনসভা অনুষ্টিত হয়েছিল সিলেটে ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×