somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন কথা : পর্ব চার ( শারিরিক অসুস্থতা )

০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৩য় পর্বের পর ,
পরে মাসে এক তারিখেই ১৭ দিনের বেতন পাই । গার্মেন্ট সেক্টরে এক তারিখে বেতন দেয় এমন কম ফ্যাক্টরিই আছে । এপেক্স তাদের মধ্যে একটা । এপেক্সের মালিক শ্রমিকের বেতন , পিএফ, বোনাস ইত্যাদি ব্যাপারে আন্তরিক কখনো বকেয়া রাখেনা ।

এপেক্স ফ্যাক্টরিটা গাজীপুর চন্দ্র (চান্দুরা) মোর থেকে একধম কাছে। আশে পাশে গজারির বন । প্রাকৃতিক পরিবেশ বেশ সুন্দর , আমার খুব ভালো লাগে । অক্টোবর মাসের এক তারিখ থেকেই ইকবাল স্যার আর অপিসে আসেনা (রিজাইন দিয়েছেন) । স্বাভাবিক ভাবেই আমার উপর প্রডাকশনে কাজের চাপ এসে পড়ে আর এই সুযোগেই আমি সময়ের আগেই কাজ শিখতে থাকি ।

মাঝে মাঝে কাদরি স্যার আমার কাজের খুজ খবর নিতেন । এক দের মাসের মধ্যেই আমি মোটামোটি মার্কারটা আয়ত্ব করে ফেলি। আমার কাজের পারফরমেন্স এ মাহমুদ স্যারও সন্তুষ্ট আর কাদরি স্যারও খুশি। ছয় মাস পর আমার বেতন দুই হাজার টাকা বাড়িয়ে পাঁচ হাজার করে ।

জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করেও আমি যে ক্যাডে এতো ভালো করেছি এতে কম্পানি খুবই খুশি হয়। একদিন কাদরি স্যার আমায় ডেকে বললেন তোমার মত তোমার যদি আরও বন্ধু থাকে নিয়ে এসো ভালো চাকরি দেবো । আমার খুব কাছের বন্ধু জাহাঙ্গির চাকরি খুজতে ছিলো প্রথমে তাকে নিয়ে আসলাম । যদিও প্রথমে তাকে সরাসরি ক্যাডে ঢুকাতে পারি নাই । তারপর নিয়ে আসলাম আমাদের গ্রামের সম্পর্কে আমার এক মামাকে । যদিও সে বেশিদিন চাকরি করে নাই । তারপর নিয়ে আসলাম আরেক বন্ধু মারফি কে । জাহাঙ্গির ও মারফি এখনও এপেক্স এ আছে ক্যাড ম্যানেজার হিসাবে ।

সবকিছু্‌ই ঠিকমত চলছিলো । প্রতি বছরই ইনক্রিমেন্ট হতো , কাজ দ্রুত শিখতে ছিলাম । ক্যাডে কাজ করার সুবাদে কম্পিউটার মেইনটেনেন্স টা আছতে আছতে শিখতে থাকি যে বিষয়ে ছিলো আমার প্রচুর আগ্রহ । কর্মক্ষেত্রে অনেকেরই সাথে ভালো সম্পর্ক হয় । বাপ্পি ভাই , রোফ , শামিম , মনিদ্র বাবু আরো অনেকেই ।

২০০৪ সালের প্রথম দিকেই হঠাৎ আমার পেটে ব্যাথা হয় । ( শুরু হয় আমার কপালে ভোগান্তি ) আমার আগে থেকেই আই,বি,এস এর সমস্যা ছিলো । প্রথম দিকে ভেবেছিলাম এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে কিন্তু যখন তিন চার দিনেও ব্যাথা কমলো না তখন ডাক্তারের কাছে গেলাম । ডাক্তার প্রথমে কিছু ঔষধ দেন তেতেও না কমলে আল্ট্রাসোনোগ্রাম করতে বলেন । কিন্তু রিপোর্ট এ কোনো সমস্যা ধরা পড়ে না । ডাক্তার আমাকে কিছু গ্যাসট্রিক এর ঔষধ দিয়ে বিদায় দেয় কিন্তু আমার তো সমস্যা কমে না । পেট ফেঁপে থাকে , সব সময় কম বেশি ব্যাথা থাকেই সাথে একটি অসস্তি ভাব ।

তারপর গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট দেখাতে লাগলাম । প্রথমে সাভার তারপর গাজীপুর তারপর ঢাকার পপুলারে কিন্তু না কিছুতেই সমাধান হচ্ছিলো না । সব ধরনের টেস্টই করি এনডোস্কপি , কলনোস্কপি আরো যা যা আছে । পেট ব্যাথা শুরু হবার কয়েকদিন পরেই ঘুমের সমস্যা শরু হয় । প্রথম প্রথম গুরুত্ব দেই নাই । কিন্তু যখন তিন চার দিন একটানা ঘুম না হয়ে মাথা ব্যাথা শুরু হলো তখন বাধ্য হয়ে নিউরোমেডিসিন ডাক্তার দেখালাম । ডাক্তারকে পেটের গ্যাস সমস্যার কাথাও বললাম । ডাক্তার ইসমোপ্লাজল , ট্রিপটিন, ক্লোনোজিপাম , ডায়াজিপাম ইত্যাদি ঔষধ দিলেন ।

ঔষধগুলি খেয়ে ঘুম এর সমস্যা কিছুটা কমে কিন্তু দিনের বেলাও ঝিমাতে থাকি । অফিসের ডরমেটরিতে সবার সাথে ঘুমাতে সমস্যা হতো বলে শুধু রাতে ঘুমাবার জন্য আমি একটি আলাদা রুম নিয়েছিলাম । এই ভাবে প্রায় তিন বছর কেটে যায় । একসময় আমি প্রচন্ড শারিরিক দুর্বলতা অনুভব করি । এতো দুর্বল যে একদিন ক্যারাম খেলতে গিয়ে আমার হাত কাঁপতে দেখে জাহাঙ্গির বললো কিরে তোর শরিরের অবস্থা তো আসলেই বেশি খারাপ । এর ভিতরে ফোনে একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হয় ।;) (এর কথা আগামী পর্বে বলবো ইনশাআল্লাহ )

বাড়ি থেকে শরিরের সব অবস্থা শুনে সিদ্ধান্ত নেয় ছেলেকে বিয়ে করাতে হবে । কারন বাহিরের খাবার খায় বলে তার পেটে সমস্যা করছে । আর একা একা থাকে বলে মানসিক কারনে তার ঘুমে সমস্যা হচ্ছে । আর এই দুই করনে তার শরির এতো দুর্বল । বিয়ে করালে সব সমস্যাই সমাধান হবে । আমি বললাম ঠিক আছে , শুরু হলো পাত্রী দেখার অভিযান ।
সে এক লম্বা কাহিনী , কতো পাত্রীই যে দেখলো / দেখলাম । যেহেতু আমি গার্মেন্ট এ চাকরি করতাম আর অসুখের কারনে ওজন চার কেজি কমে চেহারা কিছুটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো তাই আমাদের প্রত্যাশার পাত্রীরা রাজি হচ্ছিলো না । অবশেষে যারা রাজি হতে পারে তাদের দিকে ছুটলাম কিন্তু বিভিন্ন কারনে একটা না একটা কাহিনী হয়ে বিয়ে পিছাচ্ছিলো ।

অবশেষে আসে মুক্তির দিন । আল্লাহর রহমতে একটা একটা করে প্রবলেম সল্ভ হতে থাকে ....
চলবে .....

আগের পর্বগুলি
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×