![]()
ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি ছিলো আমার প্রচন্ড আগ্রহ ! ছোটদের জন্য বিজ্ঞানীদের জীবনী পড়তে আমার খুব ভালো লাগতো । যখন বই পড়ে জানলাম তারা ল্যাবরেটরিতে দিন রাত প্রচুর পরিশ্রম করতেন তাই আমি ঠিক করলাম আমিও একটা ল্যাবরেটরি বানাবো । আমাদের ঘরে স্টিলের একটি বাক্স ছিলো শুরু করলাম এর ভিতরে বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম জমানো । নাট, বল্টু, ব্লেড, কাঁচি, ম্যাচ যাই পেতাম ওখানে জমাতাম(পর্দাথ বিভাগে) । তাছাড়া হোমিও শিশির ভিতরে লবন, সোডা, তুত, গন্ধক .... (রসায়ন বিভাগ) রেখে বোতলে গায়ে লেবেল লাগিয়ে দিতাম ।
যখনই সময় পেতাম আমার ল্যাবরেটরির সব যন্ত্র পাতি নামাতাম নাড়াচড়া করতাম আবার সব তুলে রাখতাম। তখন আবার আমার, মনের সুখে মুখে গুন গুন করে গান চলে আসতো। মাঝে মাঝে গানের ভলিউম বেরে যেতো । আমার কাজ করবার দেখে পরিবারের সদস্যরা হাসতো বিশেষ করে মেজো আপা । বলতো তুই এই সব কি করস , শুধু একবার নামাস আর একবার তুলস ? কিন্তু আমিতো জানি এই ভাবে ল্যাবরেটরিতে পরিশ্রম করে কতো লোক বড় হয়ে বিজ্ঞানী হয়েছে
একটা ঘটনা বলি : বাড়ির পাশে মুদির দোকানে গেছি তেল কিনতে। দেখি এক লোক টর্চ এর বাল্ব কিনতে এসেছে । দোকানদার দশ পয়সার সাথে গুনার এক মাথা বেঁধে আরেক মাথা বাল্বের প্যাঁচ কাটা সোনালী অংশে বাঁধে । তার পর একটি চাঁন্দা ব্যাটারির নিচে দশ পয়সাটা রেখে বাল্বের চোখা মাথাটা যেমনি ব্যাটারির উপরে ধরলো সাথে সাথে বাল্ব জ্বলে উঠে । আমিতো অবাক বিষয়টা আমি ভালো করে খেয়াল করলাম আর ভাবলাম তাহলে তো আমি একটি ব্যাটারি কিনে আমাদের ঘরের বড় বাল্ব গুলিও জ্বালাতে পারি । (তখন আমি ফোর / ফাইভে পড়ি ওয়াট, ভোল্ট, এম্পিয়ার, এসি, ডিসি এগুলির ধারনা ছিলো না )
মাকে গিয়ে ধরলাম মা' ছয়টা টাকা দাও না । মা বললেন ছ..ছ..ছয় টাকা কি করবি । ( তখন আইসক্রিম বা চকলেট, বাদাম খেতে এক টাকার বেশি লাগার কথা না ) বললাম একটি চাঁন্দা ব্যাটারি কিনবো । এই ব্যাটারি দিয়ে আমাদের ঘরের বড় লাইট গুলি জ্বালানো যাবে । মা কথাটা বিশ্বাস করলেন বলে মনে হলো না । বললেন যা টাকা নাই । এক কথাতেই যে কাজ হবে না এটা আমি জানতাম । তাই মনে মনে আগে থেকেই দীর্ঘ স্থায়ী গ্যাংঙ্গানোর জন্য তৈরী ছিলাম । শুরু করলাম আমার কার্যক্রম ! দাও না ...... দাও .....মা...... ও মা......... দাও ...... ( মা আমাকে একটু বেশি ভালোবাসতেন এখনও বাসে । কাজ যে হতে পারে এই বিশ্বাসে আমার কার্যক্রম চালাতে থাকি )
অবশেষে ত্যাক্ত হয়ে মা বললেন দাঁড়া খুঁজে দেখি । আলমারির ভিতরে চিনামাটির প্লেটের নিচে নিচে খুঁজে এক টাকা আট আনা এই ভাবে ছয় টাকা মিল করে দিলেন । টাকাটা পেয়ে উড়াল দিয়ে দোকান থেকে ব্যাটারি কিনে আনলাম ।
আমাদের ঘরের কোনায় বাহিরে ১০০ ওয়াটের বাল্ব ছিলো , মই দিয়ে সেটা নামালাম । তারপর ধারনা মত কানেকশন করলাম কিন্তু না । আবার চেষ্ট করলাম ! না । আমার তো ঘাম বের হয়ে গেলো ছয়, ছয় টা টাকা । আবার সেই দোকানে গেলাম ব্যাটারি নিয়ে । বললাম আপনার ব্যাটারি ভালো না । দোকানদার আমার সামনে টেষ্ট করে দেখালো জ্বলে । আবার বাসায় এসে কিছুক্ষণ ট্রাই করলাম । কিন্তু যে লাউ সেই লাউই
সবশেষে যখন রেজাল্ট আসলো শূন্য , আমার পিঠকে তৈরী করছিলাম এই বিজ্ঞান গবেষনার প্রতিক্রিয়া ঠেকাবার জন্য কিন্তু আমার মমতাময়ী মা আমার মুখের হতাশা দেখে আমার বিরুদ্ধে কোনো একশনে যান নাই ।
মাকে নিয়ে আমার আর একটি লেখা : আমার সাহসী মা
সবশেষে একটি বিজ্ঞাপন, আপনি এই জরিপে অংশগ্রহন করেছেন কি ?
জরিপ! জরিপ!! বিবাহিত ব্লগার জরিপ!!! ২০১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



