somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অনুপম হাসান
শৈশব আর কৈশোর কেটেছে রংপুরে; আইএ পাসের পর কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল. ও পিএইচডি. ডিগ্রি লাভ। বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত আছি।

অপরবাস্তব-৪ এবং একজন পাঠক, কিছু কথা... [৫ম পর্ব]

১১ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


............. পর্ব-৫

গল্পে বৃহৎ প্লটের সীমাবদ্ধতা...

ব্লগার হিমালয় রচিত 'অতঃপর শূন্য দশমিক পাঁচ' গল্পটি দারুন সম্ভাবনায় বিকশিত হয়ে উঠেছে। গল্পের অনেক অনুষঙ্গ এবং প্রসঙ্গ থাকা সত্ত্বেও পাঠকের আগ্রম ক্রমাগত বাড়তে থাকে কায়সারের 'অগ্নি উপাসক' নামকরণের রহস্য উদ্ঘাটনের প্রতি। কিন্তু সেই রহস্যের জটিলতা ভেদ করার আগেই পাঠক পলাশীর মোড়ের জোক শিশুদের অসহায় জীবন বাস্তবতার ঘেরাটোপে আটকে পড়ে। অতঃপর পলাশী মোড়রের শিশুগুলোর নিত্যদিন একই আচরণের একঘেয়েমিতে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও গল্পে হঠাৎ করেই কায়সারের সহপাঠী কুমুর আগমনে কিছু ঔৎসুক্য অনুভব করে। কিন্তু সেখানেও পাঠকের প্রত্যাশা নিবৃত্ত করেন নি গল্পকার। এমতাবস্থায় গল্পের বহুমুখী অনুষঙ্গ প্রকাশের সঠিক আঙ্গিক হিসেবে মনে হয় উপন্যাসের আঙ্গিকে প্রকাশ করা হলেই হয়তো এতসব অনুষঙ্গ প্রসঙ্গ জমে ওঠার সুযোগ পেত। কারণ, গল্পকার হিমালয় গল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া যুবকের বেকার জীবনে টিউশনি, বিকারে আড্ডা, পথশিশুদের অসহায় জীবন বাস্তবতা কিংবা কুমুদের সম্বন্ধে যেসব ঔৎসুক্য দেখানোর পরেও প্রযুক্তিযুগের ফেইসবুকের মতো প্রসঙ্গও হাজির করেছেন। ফলে কায়সারের জীবনকে জড়িয়ে যেভাবে অনেক অনুষঙ্গের বৃহৎ প্লট সৃষ্টি করেছেন গল্পকার তা প্রকৃতপক্ষে একটি গল্পের সীমায় ধরা সম্ভব বলে মনে হয় না। বৃহৎ প্লটকে গল্পের স্বল্প পরিসরে প্রকাশ করতে গিয়ে গল্পকার কোন প্রসঙ্গ সম্বন্ধেই পাঠকের প্রত্যাশা নিবৃত্ত করতে পারেন নি। পাঠক হিসেবে আশা করি, গল্পকার হিমালয় ভবিষ্যতে এ গল্পের চমৎকার প্লটের প্রতি সুবিচার করে একটি সুপরিসর নভেল উপহার দেবেন।




নীল শার্ট পরা নীতিকথা...

রিজভান হাসান আকাশ নিজেই তার 'দ্বিতীয়বারের আশায়' গল্পের কাহিনীবৃত্তে উত্তম পুরুষের জবানীতে মাথার ওপর গোল চাঁদ আর মাথার ভেতরে টুংটাং পিয়ানোর আওয়াজ নিয়ে রাতে শহরে পরিভ্রমণ করেছেন এবং জেনেছেন-- 'কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর/ মানুষেরই মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেতে সুরাসুর।' গল্পকার রিজভান হাসান মূলত এই নীতিকথা প্রচারকে সামনে রেখেই গল্পের যে মায়াবী জাদু বিস্তার করেছিলেন তা নীল শার্ট পরা লোকটা ঝুপড়ি থেকে তৃপ্তি নিয়ে বেরেয়ে যাওয়ার পর পুনরায় যখন মেয়েটা হাসি মুখে রাস্তায় দাঁড়ায় জীবিকার তাড়নায় তখন পাঠক হোঁচট খায়। অতঃপর গল্পকার যেন সংবাদ পরিবেশনের মতো গল্পেও রিপোর্ট পেশ করেন :

আসলে যৌনতাকে না, মেয়েটার কষ্টটাকে দেখে আমার হঠাৎ লজ্জা লাগছিল। এই সমাজেরই অংশ হিসেবে আমার লজ্জিত হওয়া উচিত বোধহয়।--পৃ.৮৪

অনুপরূপ প্রতিবেদনের প্রতিভাষ্য গল্পের পরিণামে লক্ষণীয় :

মানুষকে সম্ভবত সাজা ভোগ করার জন্য এখানেই ফেলে রেখে যাওয়া হয়, যে খেলাঘরের যে কোন ধরনের অবস্থার জন্য সে নিজেই দায়ী। আজীবন ঘুরে ঘুরে দেখতে হবে নিজেদের কুকর্ম আর নিজের লজ্জায় কষেট বারবার লজ্জিত হতে হবে নিজেকেই।--পৃ.৮৫

অর্থাৎ যে জাদু বিস্তারী ভাষায় গল্পের সূচনা করেছিলেন গল্পকার রিজভান তা শেষাবধি সংবাদ ভাষ্যে পরিণত হলে পাঠক হিসেবে হতাশ না হয়ে উপায় থাকে না। গল্পকার যদি নায়কের মস্তিষ্কের ঘোড় ছেড়ে ফুটপাতের জীবনে না নামতেন কিংবা বাস্তব জীবনের ঘটনাগুলোকে ঘোরের মাঝে কম্পাইল করতে পারতেন, তাহলে এ গল্পের শিল্পিত সার্থকতা সম্বন্ধে শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করা যেত। ভবিষ্যতে গল্প রচনার সময় এ জাতীয় বিষয় বিচ্ছিন্ন হওয়ার ব্যাপারগুলো সচেতনভাবে লক্ষ রাখবেন বলে প্রত্যাশা করি।




চিত্রকরের ইল্যুশানের জগত...

নির্ঝার নৈঃশব্দ্য একজন চিত্রীর মনোজাগতিক ইল্যুশনের বিন্যাস করেছেন 'এর ঘ্রাণ নিতে হয় চোখ বুজে' শীর্ষক চমৎকার একটি গল্পে। এক কথায় বলতে গেলে-- সরলরৈখিক বয়নে চিত্রকর এবং মডেলকে নিয়ে মানসিক বিভ্রম বিষয়ক গল্পটির জন্য গল্পকার নির্ঝার নৈঃশব্দ্যকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

চাঁদের কলঙ্কের ন্যায় গল্পটিতেও একটুখানি বিসদৃশ উপস্থাপনা লক্ষ করা যায়; যথা-- শুরুতে গল্পকার যাকে পাগল আখ্যায়িত করেছেন, পরিণামে সে চিত্রীর মডেল হওয়ার পর জানা যায়, 'সে শাদা শাড়িটা মেঝে থেকে তুলে দেহে' জড়ালে। অর্থাৎ যাকে গল্পকথক প্রথমে পাগল বলে পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন, পরিণামে জানা যায় সে একজন নারী। এই অসঙ্গতিটুকু অবশ্য সকলের চোখে পড়ার মতোও নয়, তারপরও গল্পকারের ভাবা উচিত তিনি কেন গল্পের দেহে অসঙ্গতি রাখবেন! এ অসঙ্গতি ছাড়া এ গল্পের দেহ জুড়ে আছে শিল্পীমনের অবাস্তব জগত বা অতিবাস্তবতার শিল্পিত প্রতিফলন। নির্ঝার নিশ্চয় পরবর্তী সময় এই লিঙ্গ বিভ্রাটের ব্যাপারটি সতর্কতার সাথে খেয়াল করবেন।




অতঃপর জীবিকার জন্য...

আহমেদ রাকিব 'জীবিকা' শীর্ষক গল্পে পিতৃহীন দুর্বল মেরুদণ্ডের রইস মিয়াকে জীবিকার তাগাদায় শহুরে দালান-কোঠার গ্লাস-ক্লিনার হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। যে রইস ৫-৬ তলা বিল্ডিংয়ের হিসেব করতে গিয়ে প্যাঁচে পড়ত, জীবিকার প্রয়োজনে তাকেই শহরের সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিংয়ের গ্লাস ক্লিনারের কাজ নিতে হয়। কারণ, ভয়ের চেয়েও ক্ষুধা মানুষকে বেশি দুর্বল করে দেয়। এমন বাস্তবতায় আহমেদ রাকিব সরল বয়ন পদ্ধতিতে রইস মিয়ার জীবনসংগ্রামের চিত্র শিল্পিত সৌকর্যে উপস্থাপন করেছেন। গল্পটির জন্য আহমেদ রাকিবকে জানাই ধন্যবাদ।

৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×