প্রাকৃতিক আর মনুষ্যনির্মিত অসংখ্য দর্শনীয় স্থান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বাংলাদেশে। যার সকল ঠিকানা আমাদের সকলের হয়তো জানাও নেই। যখনই জীবন হাপিয়ে ঊঠে ঐ সকল স্থান তখন যেন হয়ে ঊঠে কান্তি কাটাবার সুরাহা।
যান্ত্রিক জীবনের কোলহলকে পাশ কাটিয়ে ক্লান্তি কাটাবার এমনই এক চমৎকার ঠিকানার নাম হচ্ছে পাবলাখালি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। জীববৈচিত্র্যময় এই অভয়ারণ্যটি পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম জেলা রাঙামাটির প্রায় শেষপ্রান্তে অবস্থিত। এই শেষপ্রান্তে অবস্থানের কারনেই স্থানটি তুলনামূলক কম পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়।
একশ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব রাঙামাটি শহর থেকে পাবলাখালির। কিন্তু পথের এই সামান্য কষ্টটুকু মেনে নিয়ে পাবলাখালির অভয়ারণ্যে পৌছানোর পর খালি হাতে ফেরার কথা মনেই হয় না। সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝে সবুজের সমারোহ আর ফাঁকে ফাঁকে বয়ে চলা হ্রদের সবুজ পানির যুগলবন্দীতে জীবন এক অনন্য অভিজ্ঞতার ডায়রি খুলে দেয়।
পাবলাখালির উদ্দেশ্যে রাঙামাটি থেকে মারিস্যাগামী লঞ্চে চড়ে নামতে হবে মাইনীমুখ। মাইনীমুখ থেকে ইঞ্জিন নৌকায় করে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় পাবলাখালির বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে। মূলত পাবলাখালি পাহাড়ি বন এবং প্রায় হাজার খানেক ফুট উচ্চতার পাহাড় রয়েছে এই বনের ভেতর।
এ বনে বহু বন্যপ্রাণীর বসবাস প্রাচীন কাল থেকে থাকলেও এ সম্পর্কে ১৯৫৪ সালের এক জরিপের লিপিবদ্ধ আকারে প্রথম তথ্য পাওয়া যায়। তখনকার হিসেব অনুযায়ী প্রায় ২,৫৪০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কাসালং সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রায় ৪৫০ বর্গকিলোমিটার নিয়ে ছিল পাবলাখালির বিস্তৃতি। কিন্তু কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে হ্রদের উপচানো জলে বনের বহু এলাকা নিমজ্জিত হলে এ বনের আয়তন পরবর্তী সময়ে কিছুটা সংকুচিত হয়ে পড়ে। বন্যপ্রাণী আর প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য ১৯৬২ সালের জুন মাসে এটিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
অভয়ারণ্যটি বর্তমানে রাঙামাটি জেলার কাসালং রেঞ্জের দক্ষিণ-পূর্বে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত। নানা সময়ে প্রকৃতি ও পরিবেশের বিপর্যয়ের কারণে পাবলাখালি অভয়ারণ্যের প্রাণীবৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হলেও এখনও এখানে দেখা মেলে বুনো হাতি, বিভিন্ন প্রজাতির বানর, উল্লুক, বুনো কুকুর, বন্য শুকর, সাম্বার হরিণ, বনরুই প্রভৃতির। এ ছাড়া এই অভয়ারণ্যে রয়েছে আদি গর্জন, জারুল, চম্বল, সেগুন, কাঞ্চন, চাপালিশের মতো নানা প্রজাতির গাছ এবং বহু প্রজাতির পাখি।