somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমস্যা উসকে দেয় সবাই, সমাধান দেয় না

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২০১৭ সালে আরাকানের সশস্ত্র গোষ্ঠী (আরসা) মিয়ানমারের সেনা চৌকিতে হামলা চালানোর পর এর প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্বিচারে হামলা শুরু করলো, লাখে লাখে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকতে চেষ্টা করলো। সরকার তাদের বাধা দিলে বেশিরভাগ মানুষ ধর্মের টানে তাদের এদেশে ঢুকতে দেওয়ার জন্য সরকারকে জোরালোভাবে আহ্বান জানাল। বললো, নিজেরা একবেলা খেয়ে হলেও মুসলিম ভাইবোনদের খেতে দেবে, পরনের কাপড় দেবে। দরকার পড়লে বিয়ে করে মেয়েদের উদ্ধার করবে। এরপর মানুষের চাপে সরকার রোহিঙ্গাদের এদেশে ঢুকতে দিতে বাধ্য হলো।

কয়েক বছরে রোহিঙ্গাদের আচরণে লোকজন মোটামুটি ত্যক্তবিরক্ত হয়ে গেল। দরদ নিয়ে তাদের জন্য পুরোনো কাপড় নিয়ে গেলে তারা মুখের ওপর ছুড়ে মারলো। রোহিঙ্গারা যে জাতিগতভাবে উচ্ছৃঙ্খল; এটা বুঝতে সময় লাগল না। দেখা গেল এদের যারা আশ্রয় দিয়েছে, এরা তাদের মাথায় ওপরেই ছড়ি ঘুরিয়েছে৷খুনখারাবি পর্যন্ত করেছে। শেষে সরকার বাধ্য হয়ে এদের জন্য আলাদা আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করলো।

যারা এদের আশ্রয় দিতে বলেছিল, তারা লজ্জায় যেখানে মুখ লুকানোর কথা; সেই তারাই পরে বলেছে সরকার নোবেল পুরস্কারের জন্য রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। কী একটা অবস্থা।

২০২১ সালের এপ্রিলে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির নেতৃত্বে নির্বাচনে জয়ী সদস্যরা জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাও এতে যোগ দেয়। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে থাকা বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে মিলে তারা প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে এবং সব গোষ্ঠীর সমন্বয়ে তৈরি করে ‘পিপল ডিফেন্স ফোর্স’।

২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর একজোট হয়ে হামলা চালায় দেশটির উত্তরের জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু তিনটি বিদ্রোহী বাহিনী, যাদের একসঙ্গে ডাকা হচ্ছে 'থ্রি গ্রুপ অ্যালায়েন্স' নামে। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং আরাকান আর্মি (এএ) নিয়ে এই জোট গঠন করা হয়েছে। তারা একে নাম দেয় ‘অপারেশন ১০২৭’।

এছাড়াও শত শত স্বেচ্ছাসেবী জাতিগত বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দেয়। তাদের সাথে অস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দুই বছরের আপাত অচলাবস্থার অবসান ঘটে। সামরিক বাহিনীকে এই মুহূর্তে সারা দেশে নানা ধরনের হামলার সম্মুখীন হচ্ছে।

অক্টোবরে হামলা শুরু হবার পর থেকে হাজার হাজার সৈন্য তাদের সরঞ্জাম নিয়ে বিদ্রোহী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। অন্যদিকে, সারা দেশে বিদ্রোহী বাহিনীর কাছে সেনাবাহিনী ৪০০রও বেশি সীমান্ত চৌকি হারিয়েছে।

পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছিল সেদেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী, এমনকি সেনাবাহিনীর অনেক সদস্যও। ঝামেলা এখনও শেষ হয়নি। মিয়ানমার চাচ্ছে বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধ হোক। বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরছে।

তবে অতি উৎসাহী অনেকে যুদ্ধ লাগাতে বলছে। যুদ্ধ লাগলে কী হবে; এটা বোঝার মগজ কি এদের নেই? যুদ্ধ লাগলে নিজেরা নিশ্চয়ই গর্তে লুকাবে। এরা ভারত পাকিস্তান ঝামেলা হলেও চায় যুদ্ধ হোক। যুদ্ধ এদের কাছে রোমাঞ্চকর কিছু। যুদ্ধ হলে লাখ লাখ মানুষ যে কী দুর্বিষহ জীবনযাপন করে এরা কি বোঝে না?

আমেরিকা-ব্রিটেনের উসকানিতে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়ালো। দুই বছরে দশ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেল। এরমধ্যে নারী শিশুই বেশি। দানব পুতিন যেখানে তার দেশের বিরোধীদলকেই সহ্য করতে পারে না, অভিযোগ উঠেছে তার সমালোচক বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে কারাগারে হত্যা করেছে; সে কি ইউক্রেনকে সহ্য করবে। ফলাফল তো সবাই দেখতেই পাচ্ছেন। এখন ইউক্রেনের অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। জেলেনস্কি কী করবে? আমেরিকা-ব্রিটেন তো তাকে গাছে তুলে মই কেড়ে নিয়েছে।

কার উসকানিতে জানি না গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে হামলা চালালো। ১২০০ নিরীহ মানুষ মেরে বীরত্ব প্রকাশ করলো। জিম্মি করলো কয়েকশো। কী পরিণতি হবে একবারও ভাবলো না।

জিম্মি উদ্ধারের উছিলায় হামলা চালিয়ে গাজাকে গোরস্থান বানিয়ে ফেলেছে ইসরায়েল। কয়েক মাসে ২৯ হাজারের ওপর মানুষ নিহত হয়েছে। নারী-শিশু-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ কেউই রেহাই পাচ্ছে না। ইসরায়েল বহু বছর যাবত অত্যাচার করছে, তার প্রতিবাদ স্বরুপ ইসরায়েলে হামলা করে ইসরায়েলের ক্ষতির চেয়ে নিজেদের ক্ষতি বেশি করলো না হামাস? এগুলো কে তাদের বলবে?

দানব নেতানিয়াহুকে মনে হয় না কেউ থামাতে পারবে। সে গাজাকে তামা তামা করে ফেলছে। ২৫০ জিম্মি রেখে হামাস কী সুবিধা করবে কে জানে। যদিও শোনা যাচ্ছে যুদ্ধবিরতি করবে হামাস। যদি তাই হয়; এই যে এত এত মানুষ মরল; এদের জীবন কে ফিরিয়ে দেবে?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৮:২৩
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×