somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ষণ ও বিবাহ বিচ্ছেদ: একের অপরাধে অন্যের শাস্তি

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন ধর্ষিতা নারীর মানসিক বিপর্যস্ততা আসে সামাজিক বঞ্চনা থেকে। নারীর পদে পদে বঞ্চনা ও নির্যাতনের ইতিহাস নতুন নয়। যখনই সমাজ নারীকে মানুষের প্রকৃত মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তখনই সমাজে নারী-পুরুষ বৈষম্য একটি প্রধান বৈষম্যে পরিণত হয়েছে। নারী-পুরুষ বৈষম্য থেকে সমাজে এমন মূল্যবোধ বা নৈতিকতা গড়ে উঠেছে যা যুগ যুগ ধরে নারীকে অশ্রদ্ধার পাত্র রূপে স্থান দিয়েছে। কেউ হয়তো বলবেন এটা লেখার কোন প্রসঙ্গ হলো! কিন্তু একটিবার ভেবে দেখুন- আপনি অবিবাহিত একজন যুবক; আপনি কি কোন ধর্ষিতা নারীকে বিয়ে করবেন? সমাজ কাঠামোতে নারীর প্রতি বিরাজমান বৈষম্যমূলক সংস্কৃতি, রীতিনীতি, বিশ্বাস ও মূল্যবোধ এমনই যে আপনি রাজি হলেও আপনার পরিবার রাজি হবেনা। এমতাবস্থায় যে পরিবারে এরকম একজন নারী থাকবেন সেই পরিবারের অবস্থা এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত নারীটির মানসিক অবস্থা একটু চিন্তা করে দেখুন।

নারীকে অধীনস্ত করে রাখার নানা প্রক্রিয়া অব্যাহত। নারীর ওপর সামাজিক নিয়ন্ত্রণ সক্রিয়। নারীর উপর ধর্ষণের প্রতিক্রিয়া দৈহিক, মানসিক এবং সামাজিক। নারীর প্রতি যতো ধরনের সহিংসতা দেখা যায় তার মধ্যে ধর্ষণই হচ্ছে সবচেয়ে প্রচলিত, পুরনো এবং অসামাজিকভাবে কলঙ্কজনক। পুরুষ উৎকৃষ্ট আর নারী নিকৃষ্ট, পুরুষ উর্ধ্বতন আর নারী অধস্তন, পুরুষ সংসারের সর্বময় কর্তা আর নারী পরজীবী, পুরুষ শ্রদ্ধেয় আর নারী অশ্রদ্ধেয়- এ বিশ্বাসমালার লালন পালন, চর্চা, বিকাশ ও প্রসার অকল্যাণকর।এঙ্গেলস নারী ও পুরুষের অবস্থা সম্পর্কে বলেন-‘পরিবারের মধ্যে পুরুষ বুর্জোয়া এবং নারী সর্বহারা।’ নারী ও পুরুষের জৈবিক পার্থক্যকে পুঁজি করে নারীকে শোষণ করারতো কোন যুক্তি নেই। পরিবার থেকে শুরু করে অফিস-আদালতে, কল-কারখানায় ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে নারীকে নিপীড়ন করছে বিকৃত রুচির কিছু পুরুষ।

নারীতো পুরুষের হাতে বিনিময়ের দ্রব্যমাত্র নয়। তাহলে কেন একজন নারী স্বামীর পরকিয়ার প্রতিবাদ করতে যেয়ে কিংবা মদ খেয়ে গভীর রাতে বাসায় ফিরতে মানা করার কারণে শারীরিক নির্যায়তনের মুখোমুখি হবেন? নারীকে নিয়ন্ত্রণ ও শোষণ করবে পুরুষ আবার পুরুষের অপরাধে শাস্তিও পাবে নারী- এটা কোন যুক্তি হলো। পুরুষকে নারীর তুলনায় শ্রেষ্ঠ ও শক্তিশালী বলে মনে করে, নারীর ওপর পুরুষের আধিপত্যকে অনুমোদন করে নারীকে পুরুষের সম্পত্তি বলে গণ্য করা আসলে কতটা মানবিক? নারীরা পুরুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে ও সামাজিকভাবে বৈষম্যের শিকার হবে অথচ নারী যদি অসহায় হয়ে পড়ে তবে সমাজে সে হবে ঘৃণিত পুরুষও তার পাশে দাঁড়াবে না-এটার কোন যুক্তি হতে পারেনা। পুরুষ প্রাধান্যশীল সমাজে পুরুষরা অধিকতর অধিকার ভোগ করে; পুরুষদের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে; পুরুষদের স্বাধীনতা দেয় বেশি; পুরুষদের ক্ষমতাও থাকে বেশি; পুরুষরেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। একদিক থেকে যে বেশি শক্তিশালী ও সামর্থ্যবান দুর্বলের পাশে তার দাঁড়ানোটা নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব আর অন্যদিকে শুধু জৈবিক ভিন্নতার কারণে কাউকে শ্রেষ্ট আর কাউকে পশ্চাদপদ ভাবাটা আদৌ সঠিক নয়।

র্ধষণের সমার্থক শব্দ অর্থে বলাৎকার,নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন বা জোরপূর্বক অভিগমন। নারীর প্রতি যতরকম নিপীড়ন, সহিংসতা দেখা যায় তার মধ্যে ধর্ষণ হচ্ছে সবচেয়ে পুরনো প্রচলিত ও সামাজিকভাবে নারীর জন্য কলঙ্কজনক। হুমায়ুন আজাদ তার ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’ বইতে ধর্ষণ সম্পর্কে বলেছেন, ‘ধর্ষণ হচ্ছে পুরুষ কর্তৃক বলপ্রয়োগে নারী সঙ্গম। বলপ্রয়োগে সঙ্গম হচ্ছে সেই সঙ্গম, যাতে নারীর স্পষ্ট বা প্রচ্ছন্ন সম্মতি নেই। ধর্ষণ পুরুষের এমন আচরণ, যা নারীকে তার সঙ্গী নির্বাচনের অধিকার দেয় না। সাধারণভাবে ধর্ষণ বলা হয় নারীর ‘ইজ্জতহানি’ বা ‘সম্মানহানিকে’ অর্থাৎ নারীর অমতে নারীর ‘ইজ্জত’ বা ‘সম্মানে’ আঘাত হলো। মেঘনা গুহ ঠাকুরতার মতে, নারী নিপীড়নের চূড়ান্ত পর্ব ধর্ষণ। ধর্ষণ হচ্ছে নারীর প্রতি চরম সহিংসতা প্রদর্শনের নামান্তর। এই সহিংসতা আঘাত হানে তার দেহে, তার স্বাতন্ত্র্যতায়, তার সত্তায়, তার আত্মপরিচিতিতে, নিরাপত্তাজ্ঞানে ও মর্যাদাবোধে। আইনের নির্ধারিত সংজ্ঞায় ‘পেনিট্রেশন বা পার্টলি পেনিট্রেশনকে রেপ বা ধর্ষণ বলে।’ অর্থাৎ পুরুষাঙ্গ যদি নারীর যৌনাঙ্গে আংশিক বা পুরোপুরি প্রবেশ করে তবেই আইনের বিচারে ধর্ষণ হয়েছে বলে ধরা হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোর দিকে তাকালেই দেখা যায় যে, বিভিন্ন বয়সের নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে এলাকার বখাটে ছেলেদের দ্বারা, এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা, এমনকি তার নিকটাত্মীয়ের দ্বারা। তবে ধর্ষণই তার শেষ পরিণতি হয়-এরপরও তার উপর চলে নানান নির্যাতন। অনেক সময় ধর্ষিতা কোথাও বিচার চেয়েও পায় না কিংবা চায়তেই পারে না। এভাবেই ধর্ষণের চেহারা যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা আমরা অনেকেই জানি না। কিন্তু বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ধর্ষণ আর দশটা অপরাধ থেকে ভিন্ন। ধর্ষিতা নারীকে সামাজিকভাবে খুবই বিব্রতকর অবস্থার মুখে পড়তে হয়। জানুয়ারি হতে সেপ্টেম্বর, ২০০০ এই নয় মাসে ৪ শতাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করার পর পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৯১-১৯৯৪ এ ধর্ষণের মামলা হয়েছে ১ হাজার ৭২৩ টি। ১৯৯৬-১৯৯৯ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৮ হাজার ১৩৭ টি। (ইত্তেফাক ৮.১০.২০০০)

প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়। এ ধরনের ঘটনা থেকে শিশুরা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। সমাজের নিম্নস্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, ঘটছে। সমাজে ধর্ষণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নারীর বিরুদ্ধে প্রবল যৌনাত্মক নিপীড়ন, নির্যাতন ও অত্যাচারের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ধর্ষণের মাধ্যমে। নারীর প্রতি চূড়ান্ত নির্যাতন হল ধর্ষণ। যখন একজন নারী ধর্ষিত হয় তখন ঐ নির্দিষ্ট ঘটনাতেই এটা সীমাবদ্ধ থাকে না। সমাজের সকলে মিলে এর দায়ভার নারীর উপর চাপিয়ে দেয় এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে ধর্ষিতাকে বারবার ধর্ষণ করা হয়। বিভিন্ন মানবাধিকার ও নারী সংগঠনের জরিপে দেখা গেছে কেবলমাত্র ২০০২ সালেই ধর্ষণের পর খুন হয়েছে ৮৩ জন। অন্য একটি সূত্র থেকে জানা যায়, এদেশে ১৩-১৮ বছরের কিশোরী ধর্ষণের ঘটনার ৫৭% ই হয় গণধর্ষণ। এসব ধর্ষিতাদের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশে (৮%) শেষ পরিণতি হয় মৃত্যু।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ বিলস এর এক সমীক্ষা রিপোর্টে জানা গেছে ২০০৪ সালে সারাদেশে ৫৭ জন কর্মজীবী নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। (আজকের কাগজ, ১৭ জানুয়ারি ২০০৫)। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, জানুয়ারিতে ৫১ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এছাড়া বরিশালে ৬ টি জেলায় ২০০৪ সালের মে মাসে থেকে ২০০৫ এর এপ্রিল পর্যন্ত ১৩ টি ধর্ষণের চেষ্টা ঘটেছে। (জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, সংবাদ এবং ভোরের কাগজ, ফেব্রুয়ারি-জুলাই ২০০৫)। ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে ১০৮ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। (জনকণ্ঠ, ১ জানুয়ারি ২০০৫)।২০০৪ সালের (জানুয়ারি-মার্চ) সংবাদত্রে প্রকাশিত ধর্ষণের সংখ্যা ২২০ টি।জানুয়ারি-ডিসেম্বর ২০০৩ ধর্ষণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মোট ধর্ষণের ঘটনা ১৩৮১ টি এবং ধর্ষণজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ১৪৩ টি।(উৎস: আইন ও শালিস কেন্দ্র)।

ধর্ষণ শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয় পৃথিবীর অনেক দেশেরই সমস্যা। বিশ্বে প্রতি ৬ মিনিটে একজন নারী ধর্ষিতা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৫ জন পূর্ণ বয়স্ক নারীর একজন এবং প্রতি ৬ মিনিটে এক নারী ধর্ষিত হয়। প্রতিবছর জ্ঞাত ধর্ষণের সংখ্যা ১৩০,০০০। মেক্সিকোতে প্রতি ৫-১৫ মিনিটে একজন নারী ধর্ষিত হয়। প্রতিবছর জ্ঞাত ধর্ষণের ঘটনা ২০,০০০; নৌকায় ভাসমান ভিয়েতনামী উদ্বাস্তু নারীদের ৩৯ ভাগ সাগরে অপহৃত ও ধর্ষিত হয়। কলম্বিয়ায় প্রতি ১০ জন নারীর একজন ধর্ষিত হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতি ১.৫ মিনিটে একজন নারী ধর্ষিত হয়। প্রতিবছর ধর্ষণের শিকার হয় প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার নারী। বিশ্বে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ধর্ষণের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ বিভিন্ন বয়েসী নারী ধর্ষিত হয়। বলকান যুদ্ধের সময় বসনিয়া-হাজর্গোভিনয় ২০ হাজারেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়। রুয়াণ্ডায় ১৯৯৪ এপ্রিল থেকে ১৯৯৫ এপ্রিল পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার নারী ও মেয়ের সংখ্যা ১৫ হাজার ৭ শ আড়াই লাখের বেশি।

বাংলাদেশে ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসেই প্রায় ১২ শ বিভিন্ন বয়সী নারী ধর্ষণ বা গণধর্ষণের শিকার হয়। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সালের জুন পর্যন্ত শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতনের তথ্যচিত্র- ধর্ষণ/বলাৎকার-১২, যৌন নির্যাতন-১, মানসিক নির্যাতন-৬(সূত্রঃ আসক বুলেটিন সেপ্টেম্বর ২০০৭, পৃ.২৮)।আসক বুলেটিন, ডিসেম্বর, ২০০৩ ও জানুয়ারি ২০০৪ তে প্রথম আলো, ভোরের কাগজ, সংবাদ, ইত্তেফাক, জনকণ্ঠ, যুগান্তর, ইনকিলাব, দিনকাল, বাংলাবাজার, দি ডেইলি স্টার ও সংগ্রাম-এর সূত্রে তৈরিকৃত ২০০৩ (ধর্ষণ) সালে নারী নির্যাতন সংক্রান্ত রিপোর্টে দেখা যায়-ধর্ষণের পর ধর্ষিতাকে হত্যা করা হয়েছে, অনেক ধর্ষিতা আত্মহত্যা করেছেন, অনেক মামলা নেয়া হয়নি, অনেকে মামলা করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, মামলা করার কারণে অনেক পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছে।পুলিশ হেফাজতে ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে, একক ধর্ষণ হয়েছে, গণ ধর্ষণ হয়েছে এমনকি নিরাপত্তাবাহিনী কর্তৃক ধর্ষণ হয়েছে।

যারা শহরে বাস করে এবং মনস্তাত্ত্বিকের সাথে সংযোগ আছে এবং তার আইনি সহায়তা নেবার অর্থনৈতিক সামর্থ্য আছে; তাদের খুব নগণ্য সংখ্যক লোকই তা করে থাকে। বেশিরভাগ মানুষই চায় না যে, ঘটনাটি লোক জানাজানি হোক । কার্যত নিরবতা অবলম্বন করবার প্রবনতা এতটাই বেশি যে খুব সামান্যই চোখে পড়ে । ধর্ষণের শিকার হওয়া একজন ‘ভিকটিমের’ সাথে কথা বলে দেখুন। সাধারণত এব্যাপারে তার সাথে কথা বলার সময় সে খুব সংকোচবোধ করবে এবং বিষণ্ন মুখে বসে থাকবে। তাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলে সে কোনটির উত্তর দিবে, কোনটি এড়িয়ে যাবে। অনেক সময় নিয়ে সে আস্তে আস্তে কথা বলবে। তার ভিতর যে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে তা তাকে দেখলেই বোঝা যাবে। সরাসরি কথা না বললে মোটেই এ কষ্ট উপলব্ধি করতে পারবেন না।একটি কেইস স্টাডি থেকে এটি স্পষ্ট হবে।

স্বপ্না তখন দশম শ্রেণীতে পড়ত। যশোরের চৌগাছা থানার ধুলিয়ানি হাইস্কুলে। স্বপ্নার দারিদ্র্য পরিবার। শিশির ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। অশ্লীল বিনোদনে মেতে থাকে। খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে। পড়াশুনা ও ছেড়ে দিয়েছে। বেকার ঘুরে বেড়ায়। ধূমপান করে প্রকাশ্যেই, মাদকেরও অভ্যাস আছে। তবে সে বখাটে হলেও মামা চেয়ারম্যান হওয়ায় কেউ তেমন কিছু বলার সাহস পায় না। শিশির স্বপ্নাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। এতে স্বপ্না হতচকিয়ে যায় এবং ভয়ে দ্রুত বাসায় ফেরে। তবে বাসার কাউকে কিছু বলেনি। পরদিন স্কুলে যাবার পথে শিশিরের সাথে দেখা। সে বলে, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’। শিশিরের সাথে তার আরো অনেক বন্ধুরা ছিল। স্বপ্না জোর গলায় বলে ‘আমি তোকে ঘৃণা করি’। ঘটনা এভাবেই এগুতে থাকে। শিশির প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের ক্ষোভে এবং বন্ধুদের সামনে অপমানিত হবার লজ্জায় ক্রোধে ফেটে পড়ে। সামাজিক প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা দেখাবার জিদ চেপে বসে। তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। ২০০৫ সাল। স্কুল থেকে ফেরার পথে শিশিরের নেতৃত্বে উৎপেতে থাকা কয়েকজন এক সাথে স্বপ্নাকে ধরে ফেলে। মুখ বেঁধে ধর্ষণ করে। ক্ষেতের মাঝে ফেলে রাখে। পরে কে একজন এ অবস্থায় তাকে দেখে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দেয়।

স্বপ্না তখন মনের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। একবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিল। কথা কম বলত, চুপচাপ থাকত, কাজেকর্মে প্রাণচঞ্চলতা ছিল না। হীনমন্যতায় ভুগত, পড়াশুনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। কথাবার্তায় আত্মবিশ্বাসের অভাব লক্ষ করা যেত। নিজেকে গুটিয়ে রাখত। সামাজিকভাবে নানা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়ে একেবারে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল। ‘নষ্ট মেয়ে’ ‘বিয়ে হবে না’-ইত্যাদি মন্তব্য শুনে তার যন্ত্রণা আরো বাড়ত। গ্রামীণ শালিসে উল্টো স্বপ্নাকে দোষারোপ করা হয়। নানান দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে অবশেষে আইনের আশ্রয়ও নেয় নি। স্বপ্নার এক চাচা ঢাকায় থাকেন। তিনি স্বপ্নাকে ঢাকায় বাসায় এনে রাখেন। তিনি ও তার স্ত্রী উভয়েই উচ্চশিক্ষিত। তারা স্বপ্নাকে উৎসাহিত করেন, সাহস যোগান। তাদের উৎসাহে অনুপ্রেরণায় স্বপ্না পড়াশুনা চালাতে থাকে এবং গ্রামের স্কুল থেকেই এসএসসি পরীক্ষায় এ গ্রেড পেয়ে পাশ করে। পরে চাচার বাসায় থেকেই বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এইসএসসি পাশ করেন। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ও সংঘর্ষ বিষয়ে পড়াশুনা করছেন।

কেইসকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, শ্রেণী বৈষম্য নারী ধর্ষণের অন্যতম কারণ। স্বপ্নার দরিদ্রতা ও শিশিরের ক্ষমতার সম্পর্ককে ধর্ষণের সাথে সম্পৃক্ত করে দেখা যায়। শুধু আমাদের দেশেই নয় মেক্সিকো, ক্যামেরুন, পেরু, চিলি এবং আরব দেশগুলোতে যাদের সামাজিক প্রতিপত্তি বেশি তারা বিত্তহীন নারীদের ধর্ষণ করে বেশি। শিশির অশ্লীল বিনোদনে মেতে থাকে। বর্তমানে ইন্টারনেট বা হিন্দি ও ইংরেজি ছবির রেপ সিনগুলো কিশোর-কিশোরীদের মনের পর্দায় যৌন আকাক্সক্ষার উদ্রেক করে। এই যৌন আকাক্সক্ষাটি যৌন সংসর্গ ঘটাতে প্ররোচিত করে। চলচ্চিত্র দর্শকদের মধ্যে যে সম্মোহন ছড়ায় তা জমা হয়, গ্রথিত হয় তাদের স্নায়জালে; অতঃপর তার ক্রিয়া চলে ছবিঘরের বাইরেও।শিশির পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। মনোবিজ্ঞানী হোলির মতে, ‘‘কালচারাল ব্যাকগ্রাউণ্ডটা বড় ফ্যাক্টর ধর্ষনের জন্য সন্দেহ নেই। মানুষ শরীরের ক্ষুধার চেয়ে মনের পিপাসাকে গুরুত্ব দেয় বেশি। যৌনতার কাজে এগুলোর আগে মানুষের যেসব স্তর আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো শিক্ষা বা সংস্কৃতির দিকটা। তবে কিছু জৈবিক কারণও দায়ী। যে পুরুষের শরীরে খুব বেশি হরমোন ক্ষরণ হয়, যাকে অতি সক্রিয় বলা হয়, সেই পুরুষের যৌন ইচ্ছা বেশি হতে পারে। সুপ্রারোনাল গ্র্যাণ্ডের কর্টেকস থেকে অতি মাত্রায় হরমোন নিঃসৃত যদি হয় বা পিটুইটারি গ্ল্যাণ্ড যদি ফেল করে তাহলেও পুরুষের যৌনক্ষুধা অস্বাভাবিক ধরনের বেশি হয়। আর এই ধরনের পুরুষের যদি শিক্ষা বা সংস্কৃতির ভিতটা জোরালো না থাকে তাহলে মুহূর্তের উত্তেজনায় সে ধর্ষণকারী হয়ে উঠতে পারে।’ ‘তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। স্কুল থেকে ফেরার পথে...’। বিশিষ্ট অপরাধ বিজ্ঞানী ড. উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, ‘বিশেষ সময়ে, বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে অনেকেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধর্ষণ করে ফেলেছেন। অথচ সুস্থ মাথায় ভাবলে এটা একটা অস্বাভাবিক কাজ। এসব ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক যৌন ক্ষুধা, সুযোগ, পরিস্থিতি সবই কারণ।’

‘...সামাজিক প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা দেখানোর জিদ চেপে বসে।’ সমাজবিজ্ঞানী মেলিনোস্কি বলেন, ‘ধর্ষণ অবশ্য তাৎক্ষণিক আনন্দ দিতে পারে, কিন্তু অনেক সময়েই এটা বিকৃত কামের একটা রূপ। এটা হতে পারে সামাজিক প্রতিপত্তি এবং ক্ষমতা দেখাবার আনন্দ। যার জন্য গণধর্ষণ হয়। কোনো সামাজিক শ্রেণী তার থেকে দুর্বল শ্রেণীর ওপর ক্ষমতা দেখাবার জন্য এই কাজ করে। ‘...বেকার ঘুরে বেড়ায়। মাদকেরও অভ্যাস আছে।’ আর মাদকদ্রব্য ও বেকারত্বের অভিশাপ নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাকে উস্কে দেয়। স্বপ্নার ধর্ষণের পরের যে আচরণ তার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ধর্ষণের ঘটনা ঘটার ফলে তার মনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছিল। এর ফলে তার মধ্যে বিভ্রম বা ভিল্যুশণ মনোরোগের লক্ষণ দেখা যায়। তার মধ্যে আত্মপীড়ন বা সেলফ টরচারিং অ্যাটিচ্যুড দেখা যায়। ফলে বিষণ্নতা তাকে পেয়ে বসেছিল।

এসব ছাড়াও আরো কিছু সমস্যা যেমন-হীনমন্যতাবোধ, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, নিজেকে গুটিয়ে নেয়া, সকল পুরুষের প্রতি অযৌক্তিক ঘৃণাবোধ ইত্যাদি ধর্ষণ প্রসূত মনোরোগ স্বপ্নার মাঝে দেখা যায় ধর্ষণ পরবর্তী সময়ে। যা তার মনস্তাত্ত্বিক বিপর্যস্ততাকে নির্দেশ করে।‘সামাজিকভাবে নানান বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়ে...’ স্বপ্না ঘটনার জন্য কোনোভাবেই দায়ী নয়। অথচ তার ওপর সামাজিক কলঙ্ক লেপনের চেষ্টা চলে, সামাজিক গঞ্জনা সইতে হয়। পরিবারের কাছেও সে হয়ে পড়ে বিশেষ করুণার পাত্রী। সামাজিক বঞ্চনা তার আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত হানে ও মর্যাদাহানি ঘটায় ও নিজের প্রতি আস্থাহীনতা সৃষ্টি করে। সামাজিক দিকের কথা চিন্তা করে এ গ্লানি নিরবে সয়ে যাওয়া এবং ধীরে ধীরে নিজের মাঝে এই নেতিবাচক অভিজ্ঞতাকে লালন করা ব্যক্তিত্বে চরম বিপর্যয় নেমে আসে। এর ফলে সৃষ্ট মানসিক সমস্যা আর সামাজিক সমস্যা ডেকে আনে।

সামাজিক নিয়বিধি নারীকে শিক্ষা দিচ্ছে ‘তুমি নারী তাই তোমার জন্যে ঘরের বাইরেটা নিরাপদ নয়।’ তাই তো নির্যাতনকারী শিশিরের কোনো শাস্তি হয় না, গ্রাম্য সালিশে নির্যাতিত নারী স্বপ্নাকেই আরও বেশি লাঞ্ছনা ও অপমানের মুখোমুখি হতে হয়। তাকেই দাঁড় করানোর অপচেষ্টা চলে নির্যাতনের কারণ হিসেবে। নারী প্রতিনিয়ত ঘরে বাইরে এমনকি কর্মস্থলে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে (চৌধুরী, ২০০১)। নারীর যৌন হয়রানির শিকার হওয়া, ধর্ষিত হওয়া কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে বাসের জন্য অপেক্ষা করাই খারাপ লক্ষণ এবং তখন তাকে ‘চরিত্রহীন’ কিংবা ‘খারাপ মেয়ে’ নামকরণ করা এ সমাজের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। স্বপ্নার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয় নি।

গত ১৩ আগস্ট ২০০৫ সাল দৈনিক প্রথম আলোর একটি ২ রিপোর্ট ছিল এরকম-‘পাবনায় চেয়ারম্যান ও পুলিশের সালিশে ধর্ষিতাকে একঘরে, ধর্ষক নির্দোষ’ এই রিপোর্টে জানা যায়, পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলায় চাঁদপুর গ্রামে গত ৪ আগস্ট রাতে এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার সালিশে মেয়েটাকেই দোষী সাব্যস্ত করে একঘরে করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। জানা যায়, ফরিদপুর পৌরসভার উত্তর টিয়াপাড়ার সন্ত্রাসী সোহেল রানা দশম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। মেয়েটি এতে রাজি না হওয়ায় তাকে নানাভাবে উত্যক্ত করা হয়। অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে মেয়েটির স্কুলে যাওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ করলে ক্ষিপ্ত সোহেল রানা দলবল নিয়ে মেয়েটিরি বাড়ি গিয়ে সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। মেয়েটির পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি, চেয়ারম্যান ও পুলিশ ধর্ষকের পরিবার থেকে মোটা অংকের টাকা খেয়ে সালিশে তাদের একঘরে হওয়ার রায় দেয়। এই সালিশেই পুলিশ মামলা না নেয়ার ঘোষণা দেয়। এমনকি আদালতে মামলা করলে গ্রাম থেকে উচ্ছেদের হুমকি দিয়েছে পরিবারটিকে।

সাধারণত পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে নারীর ধর্ষণ ঘটলে তারা সহজেই পার পেয়ে যায়। দিনাজপুরের ইয়াসমিনের ধর্ষণ ও হত্যাকারী পুলিশদের বিচারের জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। চট্টগ্রামে ধর্ষিত সীমার ধর্ষক ও হত্যাকারীরাও পার পেয়ে গেছে। আদালত প্রাঙ্গণে ধর্ষিত হয়েছে শিশু তানিয়া। এখনো তার কোনো সুরাহা হয় নি। কিছুদিন আগে সেনাকর্তৃক নারী ধর্ষিত হয়েছে। পুলিশের ব্যারাকে পাওয়া গেছে যুবতীর লাশ। (৩.১২.০০ বাংলাবাজার)

উপরিউক্ত রিপোর্ট দুটি বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থার দুটি খণ্ড চিত্র। ধর্ষণের শিকার হচ্ছে নানা বয়সী নারী। অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু কন্যারাও ধর্ষণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বিভিন্ন সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, স্কুলের শিক্ষক এমনকি প্রধান শিক্ষক, কলেজ-মাদরাসার শিক্ষকও ছাত্রী ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য ঘটনা ঘটিয়েছেন। ধর্ষণকারী যখন হয় সামাজিকভাবে প্রভাবশালী কেউ। যেমন-ডাক্তার, অ্যাডভোকেট, সেনাসদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক কোনো নেতা তখন প্রতিকারের প্রত্যাশাটও পরিণত হয় দুরাশায়। আর দুষ্টের দমনের দায়িত্ব যাদের ওপর ন্যস্ত, আইনের পোশাকধারী সেই পুলিশ যখন অপরাধ দমনের পরিবর্তে ধর্ষণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তখন এই সমাজকে ধিক্কার দেয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

সমাজের শিক্ষিত ও কথিত উঁচু শ্রেণীর মানুষ যেমন অবতীর্ণ হয় ধর্ষকের ভূমিকায় তেমনি এই তালিকায় আছে সন্ত্রাসী , বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ক্যাডার বেকার ও ভবঘুরেরাও। ধর্ষণ শুধু অপরিচিতদের মাধ্যমেই হয় না। অতিপরিচিত, ঘনিষ্ঠজন এমনকি পরম শ্রদ্ধেয়(!) আত্মীয়ের দ্বারাও ধর্ষনের ঘটনা ঘটে। কে, কখন ধর্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে তা আগে ভাগেই বলা যায় না। সে জন্য নারীকে সব সময় উদ্বেগ ও আতঙ্কের মধ্যে কাটাতে হয়। কোথায় এবং কার কাছে সে নিরাপদ তা সে জানে না। ধর্ষিতা যদি দরিদ্র পরিবারের হয় এবং তাকে সমর্থন করার মত কেউ না থাকে তাহলে তাদের দীর্ঘসময়ের জন্য চিকিৎসাহীন অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। অনেক সময়ের কেস যদি গুরুতর না হয়, সচেতনতার অভাব এবং ভিকটিমের বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থা থাকে ডাক্তারের কাছে যেতে বাঁধা দেয়। এর অর্থ এই যে প্রকৃতপক্ষে সংঘটিত ধর্ষণের মধ্যে অর্ধেকের কম আদালত পর্যন্ত যায়।

ধর্ষিতা মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে আসে এক অর্তে মৃত্যুমুখী হয়েই বেঁচে থাকে। দৈহিকভাবে নারীর ক্ষতিসাধণ হয় তার উপর পাশবিক নির্যাতনের ফলে; যেমন-প্রবল রক্তপাত, সন্তান প্রসবে জটিলতা, ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাত, যৌন ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত শরীল এবং তার ফলে ভবিষ্যতে সন্তান ধারণে অক্ষম হওয়া। এছাড়া সময়মত সুচিকিৎসার অভাব নারীকে নির্ঘাত পঙ্গুত্ব কিংবা মৃত্যুর দিকেও ঠেলে দিতে পারে। ধর্ষিতা নারী এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। স্বাভাবিক চলাফেরা জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। সারাক্ষণ একটা ভয় বা নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি তার উপর বিভীষিকার মতো চেপে বসে। বাবা মা তার পড়াশোনা বন্ধ করে বিয়ে দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। অনেক সম্ভাবনার বীজ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। কখনো কখনো আইনী ব্যবস্থা নিতে গিয়ে বিফল হতে হয় দুর্নীতিপরায়ন এবং প্রভাবশালীদৈর মদদপুষ্ট পুলিশের কারণে। আইনের সহায়তা নিতে গিয়ে আরো বেশি দুর্ভোগ নেমে আসে তার জীবনে। পরিণতিতে নারীর যে মানসিক বিপর্যয় দেখা দেয় তার প্রভাব হতে পারে সুদূরপ্রসারী। ধর্ষিতা নারীর স্বাভাবিক চলাফেরা ও জীবনযাপন ব্যাহত হয়। মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিক মেলামেশায়, রাস্তায় নিঃশঙ্কচিত্তে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নির্যাতিত মেয়েটি নিজেকে ঘরের কোনে বন্দি করে ফেলে।

ধর্ষিতা নারী চরম সহিংসতার শিকার হবার পরও আরো মানসিক নির্যাতনের পাত্র হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। সামাজিকভাবে অপদস্ত হওয়ার কারণে বা দৈহিক ও মানসিক দিক দিয়ে অপদস্ত হওয়ার কারনে ব্যক্তি বিশেষ আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়ে। ধর্ষিতা নারীর জন্য ধর্ষনের সহিংসতা শারীরিক বা মানসিক আঘাত এমন অমানবিক অবস্থার সৃষ্টি করে যা তাকে অস্থির করে তোলে।অনেক ক্ষেত্রেই নিজ পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধব তাকে প্রত্যাখ্যান করে। এটাই তাকে বেশি পীড়া দেয়। ফলে তার মানসিক অবস্থা আরও বিপদসঙ্কুল হয়ে যায়। তাই এক সময় সে নিজ পরিবার ও সমাজকে প্রত্যাখ্যান করে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়।

সাম্প্রাতিককালে নারীর প্রতি সহিংসতা মারাত্মক আকার ধারণা করেছে। যা নারীর মানবাধিকার আর মৌলিক স্বাধীনতা উপভোগের পথে বাধা হয়ে ওঠে এবং তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমনকি নিশ্চিহ্ন করে ফেলে।ধর্ষিতা নারী যখন ধর্ষিতা হওয়ার অভিযোগ করে সমাজ তার অভিযোগ আমলই দিতে চায় না। এক্ষেত্রে ধর্ষিত নারীই সমাজে হয় প্রতিপন্ন হয়ে থাকে। ব্রাউন মিলার বলেছেন, নারীকে যখণ যৌন বস্তুতে নামিয়ে আনা হয় তখন ধর্ষূণ বাড়ে। কমে না, এর ফলশ্র“তি এ সমাজে আমরা দেখতে পাই।

১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট দিনাজপুরে ইয়াসমিন নামে পনের বছরের এক কিশোরীকে ভোর রাতে একদল পুলিশ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার নাম করে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভ্যানে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যা করে রাস্তায় লাশ ফেলে দেয়। এই বর্বর ও পৈশাচিক ঘটনার প্রতিবাদে দিনাজপুরবাসী ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদী জনতাকে শান্ত করতে শেষ পর্যন্ত পুলিশকে গুলি চালাতে হয়। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান অন্তত ৭ জন। আমাদের দেশে ধর্ষিত লাঞ্ছিত অপমানিত ইয়াসমিনের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। তাদের প্রতিকারহীন বোবা কান্নায় চারদিকের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতি ও শিথিল মূল্যবোধের কারনে নারী নির্যাতনের মামলাগুলো অনেকক্ষেত্রেই যথাযোগ্য গুরুত্বের সঙ্গে থানায় গ্রহণ করা হয় না। নির্যাতনকারী যদি প্রভাবশালী হয় তাহলে মামলা না নেয়া, ভিকটিমকে অযথা হয়রানি করার ঘটনা প্রায়ই ঘটে, যদিও বা মামলা নেয়া হয় তো ভালোভাবে তদন্ত করা হয় না। ধর্ষিতা নারীর ন্যায়বিচার পাওয়ার পথটি এতো দুরূহ যে বিচারের বাণী অধিকাংশে ক্ষেত্রে নীরবে নিভৃতে কাঁদে। ধর্ষণের সঠিক, সহজ, দ্রুত ও কঠোর বিচার হলে নির্যাতনের পরিমাণ কিছুটা হলেও হ্রাস পেতো বলে ধারণা করা হয়।

সমাজে ধর্ষণের শিকার নারীর প্রতি বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অধিকাংশ ধর্ষণের ঘটনাই গোপন করে যাওয়া হয়। ফলে থানায় ধর্ষণের অভিযোগ খুবই কম আসে। আইনি প্রক্রিয়াটিও নারীর জন্য খুব সহায়ক নয়। সে জন্য অনেক মামলাই আদালত পর্যন্ত গড়ায় না। আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার মতো ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্যে অনেকেই যেতে চায় না। আবার পরিবার থেকেও কখনো কখনো নিরুসাহিত করা হয়। থানায় যাওয়া, মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো, আদালতে দাঁড়ানো, সবটাই নারীর জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। এ অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে অনেকেই চায় না। আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়াকে অনেকেই দ্বিতীয়বার ধর্ষণের শিকার হওয়ার শামিল বলে মনে করেন। এই অবস্থায় একদিকে যেমন ধর্ষণকারী সহজে রেহাহই পেয়ে যায়, অন্যদিকে তেমনি সমাজে জন্ম নেয় আরেকটি ধর্ষণের সম্ভাবনা।

ধর্ষণ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের পদক্ষেপসমূহ হচ্ছে, ১.ঘটনার যথাযথ বিচার করা, বিচারাধীন মামলায় দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস করে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা ও রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করা।২.ধর্ষিতাদের জন্য পৃথক, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত সেল, মনিটরিং সেল ও চাঞ্চল্যকর মামলার ক্ষেত্রে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের ব্যবস্থা ও তদন্ত কাজে উর্ধ্বতন কর্তৃপকেষর তদারকীর ব্যবস্থা থাকতে হবে। ৩.বিচারকার্য ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের সততার সাথে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করা। ৪.ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ডাক্তার, তদন্ত কর্মকর্তাদের মামলার প্রয়োজনে সাক্ষ্য প্রদানের ব্যবস্থা করা ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ৫.আক্রান্তদের সুচিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসকের জন্য জরুরী ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করা ও দ্রুত চিকিৎসার জন্য ধর্ষিতাদের হাতের নাগালে সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা। ৬.জনগণকে সচেতন করার লক্ষে বেতার ও টেলিভিশনসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মাধ্যম ও প্রিন্টিং মিডিয়াতে ধর্ষণকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং ধর্ষিতাদের ভয়াবহ ভোগান্তির চিত্র জনসমক্ষে তুলে ধরা। ৭.ধর্ষিতা তার পরিবারের সহযোগিতা কল্পে অপরাধী সনাক্ত করা, থানায় সোপর্দ করতে সহায়তা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে মানসিকভাবে সুস্থ করে তুলতে পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশিদেরকে মানবিক গুণাবলী নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য সচেতন করে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৮.শিক্ষার প্রাথমিক স্তরেই যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত আইন সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা ফলপ্রসূ হবে। ৯.ধর্ষিতাদের আইনী সহায়তা, চিকিৎসা, চিকিৎসা-পরবর্তী পুনর্বাসনকল্পে তথা বিভিন্ন আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত করার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সরকারকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। অন্যদিকে বেসরকারি পর্যায়ে আরো বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। ১০.ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ১১.ধর্ষন আইনসহ পারিবারিক আইনসমূহ সংশোধনের বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। সেই সাথে যাতে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ধর্ষিতা নারী শারীরিক ও মানসিকভাবেই নির্যাতিত শুধু নয়, সামাজিকতায় ভীষণভাবে আঘাত হানে। এক্ষেত্রে সমাজব্যবস্থা অবশ্যই দায়ী। ‘সমাজ’ ও ‘রাষ্ট্র’ কেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। নারীকে শুধু ব্যক্তিগত কৌশল, সচেতনতা কিংবা সরাসরি প্রতিরোধই নয় নিজেকে রক্ষার সাথে সাথে সমষ্টিগতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রয়োজন সামাজিক প্রতিরোধ। আমাদের দেশে কতো মেয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও বলা যায় যে, এ ধরনের ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে। ধর্ষণের শিকার অনেক মেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকে লেখাপড়া ছাড়ছে, ঘরমুখী হয়ে পড়ছে। যাতে অসংখ্য মেয়ের জীবন বিপন্ন হয়ে না পড়ে সে জন্য তাদের সামগ্রিক অগ্রগতির স্বার্থেই ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। আর পরিবারের সদস্যদেরও উচিত, মেয়েকে দায়ী না করে তার পাশে দাঁড়িয়ে মানসিক শক্তি যোগানো। পরিবারের সমর্থন পেলে এসব মেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হবে না এবং আত্মহত্যা করতে উদ্যত হবে না। ধর্ষণের মুলোৎপাটনের জন্য সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সজাগ করতে হবে এর বিরুদ্ধে; কারণ এর উৎপত্তিস্থল এই সমাজই। নির্যাতনের প্রতিকারের জন্য সাধারণ মানুষের মন-মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে এবং এইসব ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে প্রবল সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে প্রতিরোধ গড়ে না উঠলে শুধু আইন দিয়ে এসব ঠেকানো যাবে না।

আর স্বামীর অস্বাভাবিক আচরণ কিংবা শশুর শাশুড়ীর নির্যারতনে নিরুপায় হয়েও অনেক নারীকে চরম অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে স্বামীর ঘর ছাড়তে হয়। যেই সমাজে বাল্যবিবাহ আছে, যৌতুক প্রথা আছে সেই সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদের সম্ভাবনাও আছে।এখন স্বামী যদি পর নারীতে আসক্ত হয়, মদ জুয়ায় লিপ্ত থাকে, যৌতুকের জন্যে মারধর করে তারপরও কেন নারীকে দাম্পত্য জীবন চালিয়ে যেতেই হয়? শারীরিক নির্যােতন, মানসিক নির্যারতন সহ্য করে কেন নিজেকে নি:শেষ করে দেয় নারী? কারণ একবার বিয়ে হলে তা জীবনের বিনিময়ে হলেও আত্মপরিচয় টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ধরে রাখতে হয়। কয়টি ছেলে কিংবা ছেলের পরিবার আছে যারা বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে এমন নারীর সাথে বিবাহ বন্ধন গড়ে তুলতে চাইবে! কোন উচ্চশিক্ষিত ভাল পাত্র যদি মানবিক বা নৈতিক বিবেচনায় এমন কোন অসহায় নারীকে জীবন সঙ্গীনী হিসাবে গ্রহণও করে সমাজ কি এটাকে ভাল চোখে দেখে?-দেখে না।তাহলে যে সমাজ দুর্বলের পক্ষে দাঁড়ায়না, নির্যাবতিত বা বঞ্চিতের পাশে দাঁড়ায় না সে সমাজটা কি খুব ভাল সমাজ?-মোটেই না। একের অপরাধে অন্যের শাস্তি হতে পারে না। তাই প্রচলিত মূল্যবোধ পরিবর্তন করতে হবে, নির্যাতিতাকে নয়, নির্যাতনকারীকে নিন্দা করতে হবে, মানবিকতাবোধ জাগ্রত করতে হবে।


তথ্যসূত্র:
চৌধুরী, মাজেদা হোসেন ও পারভীন, শাহনাজ, ‘বাংলাদেশের নারীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা: একটি তুলনামূলক চিত্র: প্রবন্ধ সংকলন, সংখ্যা-১৫, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: উচ্চতর সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র, ২০০২
রহমান, হামিদা, অধিকার আন্দোলনে নারী সমাজ, ঢাকা : নওরোজ কিতাব বিজ্ঞান, ১৯৯৬
মুন্নী, শাহেদা ফেরদৌসী, নারী নির্যাতন নিয়ে পুরুষরা কীভাবে, উন্নয়ন পদক্ষেপ, ১০ম বর্ষ, বত্রিশতম সংখ্যা, মার্চ-এপ্রিল ২০০৪
মেঘণা গুহ ঠাকুরতা, আমার বাংলাদেশ, ঢাকা, সানিকে, ২০০০, পৃ. ৬৯
খানম, রাজিয়া, ‘নারী ও পিতৃতন্ত্র: একটি দার্শনিক বিশ্লেষণ, ক্ষমতায়ন, ২০০৪, সংখ্যা ৬, পৃষ্ঠা ২১-৩৬
তালুকদার, মনির, ‘ধর্ষণের সমাজতত্ত্ব/মনস্তত্ত্ব, উন্নয়ন পদক্ষেপ, চতুর্থ বর্ষ, ত্রয়োদশ সংখ্যা, জুলাই- সেপ্টেম্বর ১৯৯৮
কাকলী, নাছিমা খাতুন, দুর্দশাগ্রস্ত বাংলাদেশের কিশোরী, উন্নয়ন পদক্ষেপ, তেত্রিশতম সংখ্যা, ১০ম বর্ষ, আগস্ট ২০০৪
রহমান, শাহীন, লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতন, উন্নয়ন পদক্ষেপ, পঞ্চম বর্ষ, পঞ্চদশ সংখ্যা, জানুয়ারি-মার্চ ১৯৯৯, পৃ. ৪৩-৪৫
নির্বাচনকেন্দ্রিক নারীর প্রতি সহিংসতা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, উন্নয়ন পদক্ষেপ, অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০০৬
রহমান, শাহীন, জেণ্ডার প্রসঙ্গ, স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট, ডিসেম্বর ১৯৯৮
আসক বুলেটিন ডিসেম্বর ২০০৩, জানুয়ারি ২০০৪
ঠাকুরতা, মেঘনাগুহ, ‘নারীবাদী দৃষ্টিতে ধর্ষণ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন’, নারী প্রতিনিধিত্ব ও রাজনীতি, পৃ. ১৪১
সুলতানা, শাহজাবীন, হক, মো: এনামুল, ‘বাংলাদেশে নারীর সার্বিক নিরাপত্তাহীনতার ধরণ: বিশ্লেষণমূলক পর্যালোচনা, ক্ষমতায়ন, ২০০৪, সংখ্যা-৬, পৃষ্ঠা ৮৭-১০০
মেয়েদের উত্যক্ত ও হয়রানির বিরুদ্ধে প্রয়োজন সামাজিক প্রতিরোধ, উন্নয়ন পদক্ষেপ, দ্বাদশ বর্ষ, নবম সংখ্যা, সেপ্টেম্বর ২০০৬
অশুচি, ধর্ষণ বিরোধী ছাত্রী আন্দোলন, জানুয়ারি, ১৯৯, প্রকাশনা সংকলন

৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×